শুক্রবার | ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:১৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
সিনেমা প্রেমীদের হোলির গান : রিঙ্কি সামন্ত দোলের আগের দিনের চাঁচর নিয়ে চাঁচাছোলা কথা : অসিত দাস খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল — দোলা লাগল কি : দিলীপ মজুমদার শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বৃন্দাবন যাত্রা (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত সিঙেরকোণ-এর রাধাকান্ত এখনও এখানে ব্যাচেলর : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বৃন্দাবন যাত্রা (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত বাজারে ভেজাল ওষুধের রমরমা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী বাঙালি বিজ্ঞানীর গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘কুড়কুড়ে ছাতুতে’ ক্যানসার নিকেশ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বোলপুর কি সত্যিই বলিপুর : অসিত দাস রাখাইন পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের উপর প্রভাব : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন অসুখী রাজকন্যাদের লড়াইয়ের গল্প : রিঙ্কি সামন্ত বিশ্ব থেকে ক্যানসারকে নির্মূল করতে গবেষণায় একের পর এক সাফল্য রূপায়ণের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কল্পনার ডানায় বাস্তবের রূপকথা : পুরুষোত্তম সিংহ হাইকোর্টের রায়ে ভাবাদিঘীতে তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরুর নির্দেশ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমছে, সঙ্কটে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল : তপন মল্লিক চৌধুরী ফল্গু নদীর তীরে একটি ছোট শহর এই বুদ্ধগয়া : বিজয় চৌধুরী শাহিস্নান নয়, আদতে কথাটি ছিল সহিস্নান : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ভূতের গল্পো ‘হোমস্টে’ রহস্য ঘেরা বলিউডের নক্ষত্রপতন : রিঙ্কি সামন্ত বাঁকুড়ার দু-দিন ব্যাপী দেশীয় বীজ মেলায় দেশজ বীজের অভূতপূর্ব সম্ভার পেজফোর-এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ২০২৫ এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সরস্বতীর উৎস সন্ধানে : অসিত দাস ‘সব মরণ নয় সমান’ সৃজনশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে যথোচিত মর্যাদায় স্মরণ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সিপিএম-এর রাজ্য সম্মেলন, তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে খামতি রয়েছে দলে : তপন মল্লিক চৌধুরী প্রথম পাঠ — মার্কসবাদের বিশ্বভ্রমণ : সন্দীপন চক্রবর্তী বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে ‘খানাকুল বাঁচাও’ দাবিতে সরব খানাকুল-সহ গোটা আরামবাগের মানুষ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত ত্র্যম্বকেশ্বর দর্শনে মোক্ষলাভ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ দোলপূর্ণিমা ও হোলি ও বসন্ত উৎসবের  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বাংলা নামের ইতিবৃত্ত : নির্বেদ রায়

নির্বেদ রায় / ৪৫৭ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন হয়ে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। আর সেই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে বিধানসভায় পাশ হয়ে গেছে। গত ২৬ জুলাই ২০১৮ এই প্রস্তাব পাশ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে সিলমোহর পেতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

বামফ্রন্ট ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট দেখিয়ে বলছে যে, ১৯৯৯ সালে এই ভাবনা তারা ভেবেছিল, কিন্তু আজ থেকে দু-বছর আগে কার্যত কাজটি শুরু করে বর্তমান রাজ্য সরকার। দু-বছর আগে রাজ্য সরকার বাংলা, ইংরেজি আর হিন্দি ভাষায় তিনটে নাম প্রস্তাব করে পাঠায়— বাংলা ভাষায় প্রস্তাব করে ‘বাংলা’, ইংরেজিতে ‘Bengal’ আর হিন্দি ভাষায় ‘বঙ্গাল’ শব্দ দিয়ে। কিন্তু দু-বছর পরে যখন প্রস্তাবটি ফিরে এলো, তখন জানানো হলো যে, তিন ভাষায় তিনটি নাম নয়, একটিমাত্র নাম পাঠালে তবেই বিবেচনা করা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘না’ বলতে কেন্দ্রীয় সংস্থা এই সময়টা খরচ না করলেও পারতেন। সে কথা বাদ দিলেও, যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো রাজ্য সরকার সবার সম্মতি নিয়ে পাশ করে বিল সংসদে পাঠালেন। সংসদ এই বিল সহজ সংখ্যাধিক্যে বা simple majority-তে পাশ করে তারপর রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। এই কাজ হয়ে গেলে সরকারি দফতরে, চিঠিপত্রে ‘বাংলা’ নামটি চালু করা যাবে। এখন প্রশ্ন হলো রাজনীতির। আরও বহু ক্ষেত্রের মতো এ ক্ষেত্রেও নিয়ম হলো রাজনীতিমুক্ত রাখা বিষয়টিকে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা এ ব্যাপারে কম কাজ করে। কাজ করে রাজনৈতিক দল বা নেতার ইচ্ছা। তাঁর বিচারে এই নামকরণের ফলে কোন দল কতটা সুবিধায় পড়বে, কে কতটা অসুবিধায় পড়বে এই সমস্ত কঠিন অঙ্ক, জটিল সমীকরণ।

ভারতবর্ষে স্বাধীনতার পরে আজ পর্যন্ত ক-বার এই প্রক্রিয়া চলেছে? মোট আট বার— ১) পূর্ব পাঞ্জাব থেকে পাঞ্জাব। ২) ইউনাইটেড প্রভিন্স থেকে উত্তরপ্রদেশ। ৩) হায়দরাবাদ থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ। ৪) ট্রাভাঙ্কোর-কোচিন (ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন) থেকে কেরালা। ৫) মধ্য ভারত থেকে মধ্যপ্রদেশ। ৬) মাদ্রাজ স্টেট থেকে তামিলনাড়ু। ৭) উত্তরাঞ্চল থেকে উত্তরাখণ্ড। ৮) উড়িষ্যা থেকে ওড়িশা আর প্রস্তাব হলো— ১) পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা।

আসলে, পশ্চিমবঙ্গ নয়— নাম পরিবর্তনের মূল কারণ ওয়েস্ট বেঙ্গল নামটি। অন্তত কিছু মানুষের মতামত সেরকম। মন্ত্রীমশাই বিধানসভায় নাকি সেভাবেই প্রস্তাব এনেছিলেন। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের সভায় রাজ্যের মধ্যে ওয়েস্ট বেঙ্গলের ডাক পড়ে সবার শেষে। তখন ভাঙা হাট, লোকজন কথা শোনার অবস্থায় থাকে না। ফলে ২৯টি রাজ্যের মধ্যে ঊনত্রিশ নম্বরের ভাগ্যে যা জোটে সেটুকু নেহাত বরাদ্দ ছাড়া কিছু নয়।

কথাটা উল্লেখযোগ্য। আর চিন্তার বিষয়ও বটে। যদিও বিশিষ্টরা এই কথা মানতে রাজি নন। তাঁরা নামের ক্ষেত্রে মূল শব্দ আর তার ইতিহাস-ভূগোল নিয়ে চিন্তা করতে বেশি আগ্রহী। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথাবার্তা একটু জানা-বোঝাও তো দরকার। ফলে এ প্রসঙ্গেও দুটো দিক থেকে যাচ্ছে। প্রথম দিকে আছে ‘বিরোধী বক্তব্য’, বিরোধী বলতে আমরা সাধারণভাবে রাজনৈতিক বিরোধীদের বুঝে থাকি বটে, কিন্তু এসব ক্ষেত্রে তার কোনও সমস্যা নেই। নাম বদলের প্রস্তাব বিধানসভায় কোনও বিরোধী মুখ দেখেনি। সুতরাং বিরোধিতা নেই। কিন্তু বিধানসভায় না থাকলেও কিছু বিশিষ্ট মানুষ— তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বা ঐতিহাসিকদের সংখ্যা কম নয়— সুতরাং, তাঁদের বক্তব্য উড়িয়ে না দিয়ে শোনার চেষ্টা করাই ভালো।

কী বলছেন তাঁরা? বলছেন, নামকরণে সমস্যা আছে। কি রাজ্যের ক্ষেত্রে, কি শহরের ক্ষেত্রে। কী ধরনের সমস্যা? বলছেন, সমস্যা অনেক। যেমন— নামের ইতিহাস ও তার ভৌগোলিক ব্যাখ্যা। দুই, নমের বানান। ওঁরা জোর দিয়ে বলছেন যে, ‘কলকাতা’ নামকরণের সময় এটি ভাবা হয়েছে কি? ‘কলকাতা’ নামটি বেছে যখন নেওয়া হলো তখন পণ্ডিত মানুষের লেখাপত্র বা মতামত নেওয়ার জন্য ‘কলকাতা’-র নামের বানান নাকি ঠিক হয়নি। কবি-সাহিত্যিকরা যে বানান ব্যবহার করেন সেই বানান সঠিক হয় না বহুক্ষেত্রে— অর্থহীন হয়ে পড়ে। ‘কলকাতা’ নামটিরও সেই দশা। অর্থহীন নাম, অন্ততপক্ষে সুনীতিকুমার, সুকুমার সেন, রাধারমণ মিত্র কি পরমেশ্বরণ থাঙ্কাপ্পান নায়ারের বিস্তারিত ব্যাখ্যা অনুসারে।

রাজ্যের নামের ক্ষেত্রে যেন সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। লক্ষ্য করা দরকার যে ‘কলকাতা’ নামকরণের ক্ষেত্রেও এই বিধানসভার পূর্ণ সমর্থন পাওয়া গেছিল। এ কথাও হয়তো ঠিক। কিন্তু ভুল থেকে গেল। ‘বাংলা’ নামটির ক্ষেত্রেও এই সমস্যা নাকি আছে।

পণ্ডিত মানুষ নই, তাই শব্দের অর্থ বা তার ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে পারবো না। তবে লোকমুখে যে দু-একটি কথা কানে আসে তার মধ্যে ‘বাংলা’ না ‘বাঙ্গালা’ তা নিয়ে একটা সংশয় আছে, আর দ্বিতীয় কথাটি বুঝতে কষ্ট হয়নি— অবিভক্ত রাজ্যের প্রায় তিন ভাগের দু-ভাগ চলে গেছে অন্য দেশে যখন, তখন এই খণ্ডিত এক তৃতীয়াংশের নাম ‘বাংলা’ হবে কী করে? কেন্দ্রীয় সরকার হয়তো আরও প্রশ্ন রাখবে। কিন্তু বাংলার সাধারণ মানুষ কী বলছেন?

সাধারণ মানুষ ‘কলকাতা’, না ‘কলিকাতা’, না ‘কোলকাতা’— কোনটা ঠিক বা কোনটা ভুল তা নিয়ে বড়ো চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়েননি। কলকাতার তিনশো বছরের জন্মদিন ঠিক না ভুল, তা নিয়েও বিশেষ ভাবনায় মাথা খারাপ করেননি। তাঁরা নিত্যদিনের আনন্দ আর দুঃখ নিয়েই দিন কাটিয়েছেন। মাঝখানে উৎসব হলে সেখানে গিয়ে আনন্দের সামান্য ছিটেফোঁটা গ্রহণ করেছেন। ওই আনন্দটুকু নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন। মাননীয় হাইকোর্ট বা তার রায় কী হয়েছে, কেন হয়েছে তাই নিয়ে সময় কাটাননি।

‘বাংলা’ নামের ক্ষেত্রেও তার বড়ো কোনও অন্যথা হবে বলে মনে করি না। তাহলে নাম পাল্টানোর অর্থ কী? অর্থ বা প্রয়োজন একটা এবং সেটাই প্রধান ও মুখ্য। বাকি কারণ থাকতে পারে, কিন্তু মুখ্য নয়, প্রবলতরও নয়। সেটা হলো সামনের দিকের চেয়ার পাওয়া। না দিতে চাইলে দখল করা। এই কাজটা সমর্থন করে রাজ্য বিধানসভা—সব দল। সেটা স্বাভাবিক। প্রত্যেক সদস্য চাইবেন নিজের রাজ্য সামনে থাকুক। এক্ষেত্রে তার কোনও বিরোধ নেই।

এই সোজা কাজ এত ব্যাকরণ, ইতিহাস আর ভূগোল  ঘেঁটে করতে হবে এটা মানুষ মানতে চায় না। সামনাসামনি তর্ক-বিতর্ক হলে তাঁরা হয়তো এড়িয়ে যাবেন, কিন্তু বিশিষ্টদের যুক্তি বা চিন্তা, তাঁদের নামকরণ বা নাম পরিবর্তনের কার্যকারণকে দূরে ঠেলে দিতে পারে কি? বোধ হয় না। সেক্ষেত্রে মন্ত্রিমণ্ডলী বা বিধানসভা যা বলছে, সেটা তাঁদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। সংবাদমাধ্যমের কাছেও প্রায় তাই। দু-একদিন ছোটোখাটো বিরোধের কথা বেরোলে ভালো, তারপর খবরের ভিড়ে হারিয়ে যাবে, অথবা বড়ো করে রাজনৈতিক সংবাদের কথা বলে, এক কোনায় ছোটো করে বেরোনো সংবাদকে দূরে ঠেলে সরিয়ে দেবেন লোকজন। সুতরাং, মানুষের কথায় ‘বাংলা’ নাম মেনে নেওয়া ভালো। কথাটা নেহাত কথার কথা নয়। এই কথার কিছু সারবস্তুও আছে, যেটা সময়ের বিচারে ছেড়ে দেওয়া ভালো।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন