শনিবার | ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১:০৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
বল পয়েন্ট কলমের জার্নির জার্নাল : রিঙ্কি সামন্ত মহেঞ্জোদারো নামের নতুন ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস পরিসংখ্যানে দারিদ্রতা কমলেও পুষ্টি বা খাদ্য সংকট কি কমেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী অথ স্নান কথা : নন্দিনী অধিকারী তন্ত্র বিদ্যার বিশ্ববিদ্যালয় চৌষট্টি যোগিনীর মন্দির : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মেসোপটেমিয়া ও সিন্ধুসভ্যতার ভাষায় ও স্থাননামে দ্রাবিড়চিহ্ন : অসিত দাস ধরনীর ধুলি হোক চন্দন : শৌনক দত্ত সিন্ধুসভ্যতার ভাষা মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবির নামে : অসিত দাস বিস্মৃতপ্রায় জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় ভাষায় সিন্ধুসভ্যতার মেলুহার ভাষার প্রভাব : অসিত দাস বঙ্গতনয়াদের সাইক্লিস্ট হওয়ার ইতিহাস : রিঙ্কি সামন্ত নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘ঝড়ের পরে’ ভালো থাকার পাসওয়ার্ড (শেষ পর্ব) : বিদিশা বসু গাছে গাছে সিঁদুর ফলে : দিলীপ মজুমদার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড : বিদিশা বসু সলিমুল্লাহ খানের — ঠাকুরের মাৎস্যন্যায় : ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা : মিল্টন বিশ্বাস নেহরুর অনুপস্থিতিতে প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদও ৩৭০ অনুমোদন করেছিলেন : তপন মল্লিক চৌধুরী সিঁদুরের ইতিকথা আর কোন এক গাঁয়ের বধূর দারুণ মর্মব্যথা : দিলীপ মজুমদার সাহিত্যিকদের সংস্কার বা বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে শ্রীপাণ্ডবা বা নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত দশহরার ব্যুৎপত্তি ও মনসাপূজা : অসিত দাস মেনকার জামাই ও জামাইষষ্ঠী : শৌনক ঠাকুর বিদেশী সাহিত্যিকদের সংস্কার ও বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই প্রভু জগন্নাথদেবের শুভ স্নানযাত্রার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

অথ স্নান কথা : নন্দিনী অধিকারী

নন্দিনী অধিকারী / ১৬৪ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫

প্রখর গ্রীষ্মের অগ্নিস্নানে আমরা যখন দগ্ধ হচ্ছি তখন গতকাল হৈহৈ করে শ্রী জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা সম্পন্ন হল।

মহাপ্রভুর স্নানযাত্রা, সে কি আর আমাদের মত ব্যস্ততায় বাথরুমে দু’মগ জল ঢেলে চলে আসা? তাঁর জন্যে মন্দিরের উত্তর দিকের কূপ থেকে ১০৮ স্বর্ণ কলসে জল ভরা হবে। মন্ত্রোচ্চারণ আর তুলসী পাতা দিয়ে তার শুদ্ধিকরণ। তারপর সেই জল সুগন্ধিত করা হবে গোলাপের পাপড়ি, বেলফুল, অগুরু, চন্দন দিয়ে। তিন ভাইবোনকে স্নান বেদীতে বসিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ, শাঁখ, কাঁসরঘন্টার মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হবে রাজকীয় সে পুণ্যস্নান।

স্নান, আমাদের এই নিত্যকর্মটি ‘এসো করো স্নান নবধারাজলে’, বা ‘সাগর জলে সিনান করি সজল এলোচুলে’ বলে রবীন্দ্রনাথ রোমান্টিক করেছেন।

ধার্মিকমানুষরা স্নানের সময় ‘ওঁ গঙ্গে চ যমুনেচৈব গোদাবরী সরস্বতী। নর্মদা সিন্ধু কাবেরী জলেহস্মিন্ সন্নিধিন্ কুরু’ মন্ত্রোচ্চারণ করেন। এর অর্থ গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, গোদাবরী, নর্মদা, সিন্ধু ও কাবেরী নদীর জল যেন এই স্থানে বিদ্যমান হয়। এ আর কিছুই নয়, ভারতীয় সংস্কৃতিতে অত্যন্ত পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ এই নদীগুলির প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসার প্রকাশ।

যে কোনো শুভ কাজের আগেই স্নান করা বিধেয়। নদীতে স্নান আরো পুণ্য কর্ম। নৈরঞ্জনা নদীতে অবগাহনের পর সিদ্ধার্থ ধ্যানে বসলেন। সরযূ নদীতে ডুব দিয়ে দস্যু রত্নাকর রামনাম জপতে শুরু করলেন। মুসলমানরা নামাজ করার আগে ওজু করেন। মধ্যপ্রাচ্যের জর্ডন নদীতে স্নান করে বা সে জল মাথায় ছিটিয়ে খৃষ্টানরা খ্রীস্টধর্মে দীক্ষিত হন।

হিন্দু শাস্ত্রে মান্ত্র, ভৌম, আগ্নেয়, বায়ব্য, দিব্য, বারুণী ও মানস এই সাত প্রকার স্নান বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়, যেমন পূজা, মন্ত্র পাঠ, বা আধ্যাত্মিক উন্নতি।

মান্ত্র স্নান : মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে স্নান করা (যেমনটি আমাদের পুরোহিত মশাই পুজো করার আগে জল ছিটিয়ে করান)

ভৌম স্নান : মাটি বা জলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে স্নান করা।

আগ্নেয় স্নান : আগুন বা গরম জলে স্নান ।

বায়ব্য স্নান : বাতাস বা মেঘের সাথে স্নান করা। (এটি বেশ রোমান্টিক)

দিব্য স্নান : প্রাকৃতিক বা অলৌকিক শক্তির সাথে স্নান করা (অত্যন্ত রোমাঞ্চকর)

বারুণী স্নান : বারুণী মন্ত্র বা জল ব্যবহার করে স্নান করা।

মানস স্নান : মন বা ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে স্নান করা। (শীতকালে মাঝেমধ্যে এটি করা যেতে পারে)।

শ্রী কৃষ্ণদাস কবিরাজ বিরচিত শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃতে সে যুগের ভগবানের মূর্তির স্নানাভিষেকের একটি সুন্দর চিত্র আমরা পাই। এই বইটি ভক্তিরস ছাড়াও মধ্যযুগীয় সমাজ সংস্কৃতির নানা বিষয় আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরে।

বৃন্দাবনে চৈতন্যদেবের ভক্ত মাধবপুরী বাল গোপালের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করছেন,

 গ্রামের ব্রাহ্মণ সব নবঘট লঞা

গোবিন্দ কুন্ডের জল আনল ছানিঞা।।

 নব শত ঘট জল কৈল উপনীত।

নানা বাদ্য ভেরী বাজে স্ত্রীগণে গায় গীত।।

 কেহ গায় কেহ নাচে মহোৎসব হৈল।

দধি দুগ্ধ ঘৃত আইলো গ্রামে যত ছিল।।

 ভোগ সামগ্রী আইলা সন্দেশাদি যত।

নানা উপহার তাহে কহিতে পারি কত।।

 তুলস্যাদি পুষ্প বস্ত্র আইল অনেক।

আপনি মাধবপুরী করে অভিষেক।।

 অঙ্গমলা দূর করি করাইলা স্নান।

বহু তৈল দিয়া কৈল শ্রীঅঙ্গ চিক্কণ।।

 পঞ্চগব্য পঞ্চমৃতে স্নান করাইয়া।

মহাস্নান করাইলা শত ঘট দিয়া।।

 পুনঃ তৈল দিয়া কৈল শ্রীঅঙ্গ চিক্কণ।

শঙ্খ গন্ধোদকে কৈল স্নান সমাপন।।

এতো গেল সে যুগের কথা। সম্প্রতি কুম্ভের শাহী স্নানের ঘটাপটা এবং দুর্ভোগ দেখে আমরা চমকে উঠেছি। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে পুণ্যার্থীদের জন্য তেইশটি কূয়োর জলে স্নান। প্রথমে অগ্নিতীর্থমের অত্যন্ত নোনতা জলে ডুব স্নান। তারপর একটির পর একটি কুয়োর জল দুটি লোক বালতি করে মাথায় ঢালে। এই স্নানে কতটা পুণ্যার্জন করেছিলাম জানি না, তবে নিদারুণ এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সে কথা বলতে পারি।

স্নানের বিলাসিতা জড়িয়ে আছে ‘হামাম’ শব্দটির সঙ্গে। এই আরবি শব্দটির অর্থ স্নানাগার। ইসলামী দেশগুলিতে সর্বসাধারণের জন্যে ব্যবহৃত এই আরামদায়ক স্নানের ব্যবস্থাকে তুর্কি স্নান ও বলা যেতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য থেকেই এই স্নান সংস্কৃতির প্রসার হয়েছিল। স্ত্রী পুরুষ তাঁদের পৃথক হামামে স্নানের আনন্দ নিতেন। সেখানে স্টীমবাথের ব্যবস্থাও থাকত। অবসর বিনোদন, আলাপ আলোচনা, সামাজিক মেলমিলাপ ছিল হামাম আভিজাত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

স্নান নিয়ে এমন অনেক কথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সুন্দরী ক্লিওপেট্রা তাঁর ত্বকের ঔজ্জ্বল্য অম্লান রাখতে গাধার দুধে স্নান করতেন। স্পেনের রাণী ঈসাবেলা নাকি গোটা জীবনে মাত্র দু’বার স্নানঘরে গেছিলেন। সাধে কি জনাব মির্জা গালিব, ‘জিন্দেগী হ্যায় তো নহানে কা ভি এক কাহানি হ্যায়’ লিখে স্নানকে দার্শনিকতায় নিয়ে গেছেন!

পরিসংখ্যান জানাচ্ছে আমাদের প্রতিদিন পাঁচ মিনিটের স্নানে বছরে ৩৬,৫০০ লিটার জল খরচ হয়। পৃথিবীর জলস্তর যেভাবে কমে আসছে, আমরা কি এমন বেহিসেবী স্নান করা নিয়ে একটু ভাবব, না একটা সময় আমাদের শাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী মানসস্নানেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে!


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “অথ স্নান কথা : নন্দিনী অধিকারী”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন