গভীর নিম্নচাপের ফলে টানা কয়েক দিন ধরে ভারীবৃষ্টি, বিশেষ করে পুরুলিয়া বাঁকুড়া প্রভৃতি এলাকার বৃষ্টির জলে দ্বারকেশ্বরের ভয়ংকর জলস্রোত এবং তার উপর ডিভিসির ছাড়া জলে প্লাবিত আরামবাগ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। হাজার হাজার মানুষ জলবন্দী, ভেঙে পড়েছে বহু বাড়িঘর, হাটবাজার জলের তলায় এমনকি পানীয় জলের সমস্যা বহু এলাকায়। বুধবার বন্যা পরিদর্শনে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি দোষারোপ করে বলেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য টাকা বরাদ্দ না করা, ড্যামগুলির সংস্কার না করা ও ডিভিসি থেকে অপরিকল্পিতভাবে জল ছাড়ার ফলেই মানুষের এই দুর্দশা।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্নার বক্তব্য, ‘ডিভিসি বলছে, আড়াই লক্ষ কিউসে জল ছাড়া হয়েছে কিন্তু আমাদের মনে হয় সাড়ে তিন লক্ষ কিউসেকেরও বেশি জল ছাড়া হয়েছে কাউকে কিছু না জানিয়ে। তারা যদি একবারে জল না ছেড়ে খেপে খেপে ছাড়ত তাহলে এত ক্ষতি হতো না। কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত নীতি এর জন্য দায়ী। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যদি টাকা দিত তাহলে ঘাটাল আরামবাগ প্রভৃতি জায়গায় বন্যার নাম থাকত না। তার উপর ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। নদী বাঁধের কাজ করতে পারা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে,এই এলাকায় সাতটি ব্লকের সমস্ত কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কৃষি দপ্তরকে বলা হয়েছে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব প্রস্তুত করতে। এই মুহূর্তে মানুষের জীবন রক্ষা করাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এখন পর্যন্ত কোন প্রাণহানির খবর নেই। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী পরিদর্শনে এসেছিলেন তিনি বিডিও, এসডিও ডিএম সহ বিভিন্ন আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন যাতে ত্রাণ পেতে মানুষের কোন অসুবিধা না হয় তা দেখার জন্য।
বৃষ্টির প্রকোপে গত রবিবার থেকেই এলাকায় বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসন বারবার অনুরোধ করেছে। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি যে এত ভয়ংকর আকার নেবে তা তখন কল্পনাও করা যায়নি। খানাকুল দুই ব্লকের ধান্যঘড়ি এলাকায় রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস ওই এলাকাকে প্লাবিত করেছে। এছাড়া মুণ্ডেশ্বরীর বাঁধ বাঁধ ভেঙেছে কাবিলপুর এলাকায়। খানাকুল ১ ব্লকের কিশোরপুর এলাকায় দারকেশ্বরের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এই ব্লকের কলিম্বা এলাকায় কানাদ্বারকেশ্বরের বাঁধ ভেঙে জলের তলায় চলে গেছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। আরামবাগ ব্লকের হরিণখোলার দর্জিপোতা এলাকা, রাউতবার এলাকার নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বহু গ্রাম।
এলাকার সমস্ত রাস্তাঘাট জলমগ্ন যানবাহন চলাচল বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে ব্যাপক ক্ষোভে ফুঁসছেন খানাকুল তথা আরামবাগ মহকুমা এলাকার মানুষজন। প্রতিবছর বন্যায় নদী বাঁধ ভাঙ্গে, বিপুল টাকা খরচ করে মেরামত হয় কিন্তু অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ হওয়ায় বারবার তা ভেঙে যায়। এমনকি এলাকার রাস্তাঘাটের কাজকর্ম অত্যন্ত নিম্নমানের বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে আরামবাগ মহকুমা জুড়ে চূড়ান্ত অব্যবস্থার অভিযোগ প্রশাসনিক মহলের প্রতি। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী পরিদর্শনে এলে হরিণখোলা এলাকায় তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বেশ কিছু মানুষ।
অনেকেই চান মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলুন, তাঁর কাছে সঠিক খবর হয়তো পৌঁছোচ্ছে না, চোখের সামনে দিয়ে সরকারি টাকার অপচয় হচ্ছে। কিন্তু এই বন্যা পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখার সময় সুযোগ না থাকা বা তিনি খুব অল্প সময়ে শুধু একটিমাত্র জায়গা ছুঁয়ে ঘাটালের দিকে চলে যাওয়ায় জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বেচারাম মান্না অবশ্য মন্তব্য করেছেন, ‘সাধারণ মানুষের ক্ষোভ নয় এটা বিজেপির পরিকল্পিত ব্যাপার।’