আজ বরং ড্রয়িংরুম বা লাউঞ্জে রাখা ফিশ অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছেদের সংসারের গল্প বলি। বাইরে থেকে দেখতে যতই মনে হোক এরা সুখে সংসার করছে, ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন এরাও কিন্ত চিরসুখী নয়। সব থেকে জেনে আশ্চর্য হবেন, আমরাও যে যে জিনিস নিয়ে একে অপরের সাথে ঝগড়া করি ঠিক এরাও নিজেদের খাবার, নিজের পার্টনার, নিজের এলাকা নিয়ে রীতি মতো কোমর বেঁধে মারামারি করে। মানুষের মতো কেবল ধর্ম বা রাজনীতি নিয়ে এরা লড়েনা।
মাছেদের আগ্রাসন শুরু হয় এলাকা দখল নিয়ে। কিছু মাছ আছে ভবঘুরে গোছের। খেয়েদেয়ে অ্যাকোয়ারিয়ামে বিন্দাসভাবে এখানে সেখান ঘুরে বেড়ায়। আর কিছু মাছ আছে “ভোজনং যত্রতত্র শয়নং হট্টমন্দিরে” টাইপের। ফিসট্যাঙ্কের একটি নির্দিষ্ট জায়গা তাদের দখলে থাকে, যেমন ধরুন লাল, নীল, হলুদ রঙিন পাথরের নকল গুহা কিংবা কাঠের গুড়ি বা আমাজন (amazon), কাকাম্বা, রেড আমাজন (red amazon), লিলি (lily), ক্রিপ্টোকলিন (cryptocolin) ইত্যাদি জলজ গাছের তলায়। আসলে এগুলো ওদের লুকিয়ে থাকার বা আরাম নেওয়ার জায়গা।
এইসব জায়গায় মাছ কিছু কিছু মাছকে আসতে দিলেও সবাইকার প্রবেশ নিষেধ। অপছন্দের মাছ প্রবেশ করলেই রীতিমতো মারকুটে হয়ে পড়ে এরা। এদেরকে বলা হয় টেরিটরিয়াল ফিস।
এই ধরনের মাছেরা নিজের প্রজাতির মাছেদের একেবারেই পছন্দ করে না। অর্থাৎ কিনা রং, প্যাটার্ন, আকৃতি সেই মাছের হুবহু হলে তারাই টার্গেট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেমন ধরুন, একটি বেটাফিশ (betta fish) এর শত্রু কোনোভাবেই নন বেটাফিশ হতে পারেনা।
গাপ্পি মাছ
শুধু তাই নয় একই প্রজাতি এবং একই জেন্ডারের হলে এলাকায় আগ্রাসন শুরু হয়। আসলে পরিবারকে সুরক্ষা দিতে শুধু মানুষ নয়, দিতে চায় মাছেরাও। তার কারণও রয়েছে।
অ্যাকোয়ারিয়ামের মধ্যে সে একটা নিজস্ব জায়গা তৈরি করেছে যেখানে হবে ব্রিডিং এবং ডিমেরা যাতে নিরাপদ থাকে সেই ব্যবস্থাও সে করবে। একই লিঙ্গের হলে সে হতে পারে তার চরম প্রতিদ্বন্ধী।
প্রথমে মাছ দেখে নেয় অন্য মাছটি কি চাইছে! যদি শুধু এলাকা দখল করতে চায়, তবে ছোটখাটো লড়াই করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু যদি মাছটির দৃষ্টি তার পার্টনারের উপর পড়ে, তবে লড়াই নিশ্চিত। আর যদি এলাকায় ঢুকে আসা মাছটি বিপরীত লিঙ্গের হয় তবে তার সঙ্গে বন্ধন বা মেটিংয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
মাছেরা খুব স্মার্ট হয়, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের চোখের আড়ালে এরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে। আসলে ২৪ ঘন্টা তো আর অ্যাকোয়ারিয়ামের দিকে চোখ খুলে বসে থাকা সম্ভব নয়! শুধু পরে যখন কাচের দেওয়ালে নাক ঠেকিয়ে আপনার কাছে খাবার চাইতে আসবে, তখন দেখতে পাবেন এদের বিভক্ত পাখনা, চেনা মাছ হঠাৎই অচেনা আগ্রাসী হয়ে উঠেছে, অঞ্চলের পরিবর্তন, স্ক্র্যাচ এবং স্ক্র্যাপ, এবং স্পষ্ট ক্ষতগুলির মতো জিনিসগুলির উপর লড়াইয়ের সমস্ত লক্ষণ। আর হ্যাঁ, লক্ষ্য রাখুন কোনও মাছ লুকিয়ে পরেছে কিনা।
ফ্লাওয়ার হর্ন মাছ
তাই নতুন মাছ আনার আগে আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামের ল্যান্ডস্কেপ পুনর্বিন্যাস করুন। দেখে নিন যে আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামে প্রচুর লুকানোর জায়গা রয়েছে। এটি আক্রমনাত্মক মাছকে এই জায়গাগুলির একটিতে তাদের অঞ্চল তৈরি করতে সাহায্য করবে এবং এটি অ্যাকোয়ারিয়ামে কম আক্রমনাত্মক মাছকে অবাধে সাঁতার কাটতে দেবে। মাছের এলাকা দাবি করার সমান সুযোগ রাখুন।
ট্যাঙ্ক overstock করবেন না. একটি আক্রমণাত্মক মাছ ভিড় অনুভব করলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
অ্যাকুরিয়ামপ্রেমীদের কাছে গাপ্পি (Guppy Fish) বেশ প্রিয় মাছ। নানা রঙের মাছটির প্রধান সৌন্দর্য লেজে। খুব দ্রুত এরা ডিম পাড়ে। আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামে যদি গাপ্পি মাছ থাকে এবং আপনি যদি একজন মহিলা এবং তিন জন পুরুষ গাপ্পি যোগ করেন, তবে পুরুষরা মহিলাটিকে মারা না যাওয়া পর্যন্ত হয়রানি করবে। এটি দেখতে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এই নিয়মের পরিবর্তে, একজন পুরুষ এবং তিন জন মহিলার অনুপাত প্রয়োজন। এইভাবে, পুরুষ তার মনোযোগ বিভক্ত করবে এবং নারীদের ততটা হয়রানি করবে না। একটি শান্তিপূর্ণ অ্যাকোয়ারিয়াম রাখার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গোল্ড ফিশ
খুবই সুন্দর দেখতে, গায়ের মধ্যে ফুলের মত অনেক দাগ থাকা মাছের নাম হলো ফ্লাওয়ারহর্ন ফিশ (Flowerhorn Fish)। অ্যাকুরিয়ামে এর সঙ্গে অন্য কোন মাছ রাখলে ফ্লাওয়ারহর্ন তাকে মেরে ফেলবে। শুধু তাই নয় ফ্লাওয়ারহর্ন এর সঙ্গে ফ্লাওয়ারহর্ন রাখতে চাইলে রাখা যায় না।
অ্যাকোয়ারিয়াম এবং মাছ বাস্তুশাস্ত্রের জগতে তাৎপর্যপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। বৈদিক বিজ্ঞান অনুসারে, অ্যাকোয়ারিয়াম ঘরে রাখা শুভ এবং তাদের সাথে শক্তিশালী শক্তি যুক্ত থাকে। আশ্চর্যের কিছু নেই, বাস্তুশাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা সর্বদা তাদের বাড়ি এবং অফিসে বাস্তু ত্রুটিগুলি উন্নত করার জন্য সুপারিশ করছেন অ্যাকোয়ারিয়াম।
অ্যাকোয়ারিয়ামে (Aquarium) নেতিবাচক শক্তিকে ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা রয়েছে। প্রাচীন বাস্তু নীতি অনুসারে, এই পৃথিবীর প্রতিটি উপাদান নির্দিষ্ট শক্তির স্তরের সাথে যুক্ত, এবং তাদের মধ্যে একটি হল মাছের অ্যাকোয়ারিয়াম। ফেং শুই বলে, গোল্ডফিশ (gold fish) হল এব্যাপারে সবচেয়ে লাভজনক। এই মাছটি সৌন্দর্য এবং সম্প্রীতির প্রতীক।
বেটাফিশ
বিজ্ঞান বলে, মাছ দেখা এবং জলের বুদবুদ শব্দ শোনার ফলে সেরোটোনিন (serotonin) উৎপাদন হয়, যা মস্তিষ্ককে এন্ডোরফিন বাড়াতে উদ্দীপিত করে। ফলাফল? ইতিবাচক অনুভূতি। এই ন্যাচারাল হরমোন স্ট্রেস কমিয়ে দেয়, ঘুমের জন্য ভাল। তাই ভালো থাকতে অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছেদের সংসার পাততেই পারেন।
অনেক কিছু জানলাম,সম্মৃদ্ধ হলাম,প্রতিটি শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকে বয়ান শিল্পীর ভালোলাগা,ভালোবাসা এক আকাশ মুগ্ধতা।
অনেক শেখা অনেক জানা মাছের শরীর মাছরাঙা
চমৎকার পরিবেশন*এক আকাশ মুগ্ধতা*
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
Khub sundar
থ্যাঙ্ক ইউ