শনিবার | ২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:২৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার ক্যের-সাংরী কথা : নন্দিনী অধিকারী সুপারি তথা গুবাক থেকেই এসেছে গোয়ার নাম : অসিত দাস রোনাল্ড রসের কাছে জব্দ ম্যালেরিয়া : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় উনিশের উত্তরাধিকার : শ্যামলী কর কেট উইন্সলেটের অভিনয় দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জিং ভূমিকার ৩টি চলচ্চিত্র : কল্পনা পান্ডে হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলা — আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংকট : সুব্রত কুমার দাস সিন্ধুসভ্যতার ভাষা যে ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার প্রমাণ মেলুহা তথা শস্যভাণ্ডার : অসিত দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (শেষ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস জাতিভিত্তিক জনগণনার বিজেপি রাজনীতি : তপন মল্লিক চৌধুরী গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালশাঁসের চাহিদা : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (ষষ্ঠ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস ভারতের সংবিধান রচনার নেপথ্য কারিগর ও শিল্পীরা : দিলীপ মজুমদার চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (পঞ্চম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস আলোর পথযাত্রী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (চতুর্থ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস কন্নড় মেল্ল থেকেই সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম মেলুহা : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী

নন্দিনী অধিকারী / ৩৯৩ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫

সুন্দরী আন্নিদো। যেমন তার গড়ন-পেটন, নাক-নক্সা, তেমনি সে সুশীলা। কোন কাকভোরে পূবপাহাড়ের মাথার আকাশে যখন একটু একটু রঙের ছোঁয়া লাগে, তখন তার ঘুম ভাঙে। ঘরের খোঁয়াড়ে বাঁধা লালঝুঁটি কুঁকড়োগুলো গলার শির ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে ডেকে তাদের ভগবান সূর্যকেই যেন সুপ্রভাত জানায়। আন্নিদো পা টিপে টিপে বিছানা ছাড়ে। তাদের বাঁশ-কাঠের ঘরে পা ফেলায় বড় আওয়াজ খচমচ, খচমচ। মা বাবা জেগে না যায়!

সকালে উঠেই অনেক কাজ তার। খোঁয়াড়ের মুরগী আর শুয়োরগুলো খাবার জন্যে হা পিত্যেশ করছে! তাদের খুদকুঁড়ো দিয়েই ঘরের লাগোয়া একটুকরো জমিটা একটু খুঁড়ে দিতে হবে। সেখানে আন্নিদো লাগিয়েছে মুলো আর সর্ষে। লকলকিয়ে তারা বেড়ে উঠছে। আন্নিদোর দেখে দেখে আর আশ মেটে না। পাহাড়ের কোলে তাদের ছোট্ট গ্রাম হংও বড় সুন্দর। ঐ বুঝি সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ল পাহাড়ে পাহাড়ে। পাইন গাছের মাথায়। এবার জেগে উঠবে তাদের গোটা গ্রাম। সবুজ ধানের খেত হেসে উঠবে। আন্নিদো কাঠকুঠো জ্বেলে ভাত রেঁধে আর মাংস ঝলসিয়ে দৌড়বে ধানের খেতে। সেখানে সখিদের সঙ্গে গল্প করতে করতে দিনভর কাটিয়ে দেবে চাষের কাজে।

আন্নিদোকে নিয়ে তার মা-বাবার গর্বের শেষ নেই। বাঁশের কোঁড় দিয়ে তার হাতের রাইশাক সেদ্ধ সবাই চেটেপুটে খায়। বন থেকে কাঠ কুড়োনোর সময় ঐ মেয়ে কি জানি সব ঘাসপাতা যোগাড় করে আনে। ভাত সেদ্ধ করার সময়, মাংস ঝলসে তাতে কুঁচিয়ে ছড়িয়ে দেয়। খাবারের স্বাদ বাড়ে। জড়িবুটি জানে আন্নিদো। তার মত কাপড় বুনতে, পুঁতির মালা গাঁথতে হং গ্রামে আর কেউ পারে না।

কবে বিয়ে দেবে এমন সর্বগুণসম্পন্না মেয়ের? পাড়াপড়শীর কৌতুহল আর প্রশ্নের শেষ নেই!

‘অতি বড় সুন্দরী না পায় বর

অতি বড় ঘরণী না পায় ঘর!’

তাই তো আন্নিদোর মা-বাবার বড় চিন্তা। উপযুক্ত পাত্র কোথায় পাওয়া যায়। এবার ফসল তোলার ‘ড্রী’ উৎসবে ভগবান সিইকির কাছে মানত করেছে আন্নিদো-র মা-বাবা, হে ঈশ্বর আমাদের মেয়ে খুব তাড়াতাড়ি যেন ঘর বর পায়! না হলে যে আমরা মরেও শান্তি পাব না।

কি আশ্চর্য রাতে স্বপ্ন দিলেন সিইকি! আন্নিদোর মা-বাবা দু-জনেই স্বপ্নাদেশ পেল, “মেয়ের কপালে, নাকে উল্কি এঁকে দাও। নাসা রন্ধ্রে পরিয়ে দাও বেতের তৈরি ইয়াপিং হুলো। দেখবে খুব তাড়াতাড়ি তোমার মেয়ে সুপাত্রস্থ হবে।”

যেমন কথা তেমনি কাজ! মুখের উল্কি আর নাকছিপি নিয়ে সুন্দরী আন্নিদো খুব তাড়াতাড়ি পাশের গাঁয়ের জোয়ান ছেলে চাদের গলায় মালা দিল। ভগবান সিইকি-র আশীর্বাদে তাদের সুখের সংসারে সম্পদের বন্যা। কাঠ-বাঁশের ঘর সন্তানসন্ততিতে ভরা চাঁদের হাট।

ভগবানের আশীর্বাদের কথা প্রচার হয়ে গেল আপাতিনিদের ঘরে ঘরে। তাদের ‘নাগো’ অর্থাৎ উৎসব মঞ্চে পুরোহিত বিধান দিলেন এবার থেকে সব আপাতিনি বালিকাদের প্রথম রজোদর্শনের পর মুখে উল্কি আঁকা হবে। নাসারন্ধ্রে পরিয়ে দেওয়া হবে বেত বা কাঠের টুকরো দিয়ে তৈরি ছিপি বা ইয়াপিং হুলো।

ব্যস, কয়েকশো বছর ধরে ইয়াপিং হুলো আটকে রইলো আপাতিনি মেয়েদের নাকের ফুটোয়। প্রথম সূর্যের আলো পাওয়া অরুণাচল প্রদেশ। তার নিম্ন সুবর্ণসিঁড়ি জেলার আপাতিনি আদিবাসী মেয়েরা এইভাবেই বিস্ময়ের কারণ হয়ে উঠলো জগতের চোখে।

ধীরে ধীরে পরিবর্তনের স্রোত বৃষ্টি ধারার মত নেমে এল পাহাড়ের গা বেয়ে। চাঁদসূর্যের উপাসক আপাতিনিদের খ্রীষ্টান মিশনারীরা খ্রীস্টের বাণী শোনাল। এককালের নিয়মনিগড়ে বাঁধা আদিবাসীদের গ্রাম্য জীবন বিস্তৃত হল দিকে দিকে। শিক্ষার আলো পুরোনো রীতিনীতিকে বর্জন করতে চাইলো। মেয়েরা আর পরলো না নাকের ঐ অদ্ভুত গয়না। সাজতে চাইল না মুখের উল্কি সাজে। স্বাধীন হল তারা।

তবু নয় নয় করেও রয়ে গেল আপাতিনিদের কিছু রীতিনীতি, নিয়ম। সাজপোশাক, খাদ্যাভ্যাস। না হলে যে, হিমালয়ের পদাশ্রিত এই সুন্দর সবুজ উপত্যকা থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে আপাতিনিরা। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এক আদিম প্রকৃতি উপাসক সহজ-সরল জীবনধারা।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন