সোমবার | ১৪ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৫০
Logo
এই মুহূর্তে ::
সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ : তপন মল্লিক চৌধুরী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (পঞ্চম পর্ব) : জমিল সৈয়দ যশোধরা — এক উপেক্ষিতা নারীর বিবর্তন আখ্যান : সসীমকুমার বাড়ৈ কলকাতার কাঁচাভেড়া-খেকো ফকির ও গড়ের মাঠ : অসিত দাস ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ রামনবমী পালন এবং হুগলী চুঁচুড়ার শ্রীরামমন্দির : রিঙ্কি সামন্ত ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (তৃতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ মিয়ানমারে ভূমিকম্প — প্রতিবেশী দেশের জনগণের পাশে বাংলাদেশ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (দ্বিতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ হুমায়ুন-এক স্মৃতি-এক আলাপ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সনজীদা যার সন্তান : শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ অবসর ঠেকাতেই মোদী হেডগেওয়ার ভবনে নতজানু : তপন মল্লিক চৌধুরী লিটল ম্যাগাজিনের আসরে শশাঙ্কশেখর অধিকারী : দিলীপ মজুমদার রাঁধুনীর বিস্ময় উন্মোচন — উপকারীতার জগৎ-সহ বাঙালির সম্পূর্ণ মশলা : রিঙ্কি সামন্ত রামনবমীর দোল : অসিত দাস মহারাষ্ট্রে নববর্ষের সূচনা ‘গুড়ি পড়বা’ : রিঙ্কি সামন্ত আরামবাগে ঘরের মেয়ে দুর্গাকে আরাধনার মধ্য দিয়ে দিঘীর মেলায় সম্প্রীতির মেলবন্ধন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’ পত্রিকার ২২তম বর্ষ উদযাপন : ড. দীপাঞ্জন দে হিন্দিতে টালা মানে ‘অর্ধেক’, কলকাতার টালা ছিল আধাশহর : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অন্নপূর্ণা পূজা ও বাসন্তী পূজার আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী

নন্দিনী অধিকারী / ১৮৪ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫

সুন্দরী আন্নিদো। যেমন তার গড়ন-পেটন, নাক-নক্সা, তেমনি সে সুশীলা। কোন কাকভোরে পূবপাহাড়ের মাথার আকাশে যখন একটু একটু রঙের ছোঁয়া লাগে, তখন তার ঘুম ভাঙে। ঘরের খোঁয়াড়ে বাঁধা লালঝুঁটি কুঁকড়োগুলো গলার শির ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে ডেকে তাদের ভগবান সূর্যকেই যেন সুপ্রভাত জানায়। আন্নিদো পা টিপে টিপে বিছানা ছাড়ে। তাদের বাঁশ-কাঠের ঘরে পা ফেলায় বড় আওয়াজ খচমচ, খচমচ। মা বাবা জেগে না যায়!

সকালে উঠেই অনেক কাজ তার। খোঁয়াড়ের মুরগী আর শুয়োরগুলো খাবার জন্যে হা পিত্যেশ করছে! তাদের খুদকুঁড়ো দিয়েই ঘরের লাগোয়া একটুকরো জমিটা একটু খুঁড়ে দিতে হবে। সেখানে আন্নিদো লাগিয়েছে মুলো আর সর্ষে। লকলকিয়ে তারা বেড়ে উঠছে। আন্নিদোর দেখে দেখে আর আশ মেটে না। পাহাড়ের কোলে তাদের ছোট্ট গ্রাম হংও বড় সুন্দর। ঐ বুঝি সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ল পাহাড়ে পাহাড়ে। পাইন গাছের মাথায়। এবার জেগে উঠবে তাদের গোটা গ্রাম। সবুজ ধানের খেত হেসে উঠবে। আন্নিদো কাঠকুঠো জ্বেলে ভাত রেঁধে আর মাংস ঝলসিয়ে দৌড়বে ধানের খেতে। সেখানে সখিদের সঙ্গে গল্প করতে করতে দিনভর কাটিয়ে দেবে চাষের কাজে।

আন্নিদোকে নিয়ে তার মা-বাবার গর্বের শেষ নেই। বাঁশের কোঁড় দিয়ে তার হাতের রাইশাক সেদ্ধ সবাই চেটেপুটে খায়। বন থেকে কাঠ কুড়োনোর সময় ঐ মেয়ে কি জানি সব ঘাসপাতা যোগাড় করে আনে। ভাত সেদ্ধ করার সময়, মাংস ঝলসে তাতে কুঁচিয়ে ছড়িয়ে দেয়। খাবারের স্বাদ বাড়ে। জড়িবুটি জানে আন্নিদো। তার মত কাপড় বুনতে, পুঁতির মালা গাঁথতে হং গ্রামে আর কেউ পারে না।

কবে বিয়ে দেবে এমন সর্বগুণসম্পন্না মেয়ের? পাড়াপড়শীর কৌতুহল আর প্রশ্নের শেষ নেই!

‘অতি বড় সুন্দরী না পায় বর

অতি বড় ঘরণী না পায় ঘর!’

তাই তো আন্নিদোর মা-বাবার বড় চিন্তা। উপযুক্ত পাত্র কোথায় পাওয়া যায়। এবার ফসল তোলার ‘ড্রী’ উৎসবে ভগবান সিইকির কাছে মানত করেছে আন্নিদো-র মা-বাবা, হে ঈশ্বর আমাদের মেয়ে খুব তাড়াতাড়ি যেন ঘর বর পায়! না হলে যে আমরা মরেও শান্তি পাব না।

কি আশ্চর্য রাতে স্বপ্ন দিলেন সিইকি! আন্নিদোর মা-বাবা দু-জনেই স্বপ্নাদেশ পেল, “মেয়ের কপালে, নাকে উল্কি এঁকে দাও। নাসা রন্ধ্রে পরিয়ে দাও বেতের তৈরি ইয়াপিং হুলো। দেখবে খুব তাড়াতাড়ি তোমার মেয়ে সুপাত্রস্থ হবে।”

যেমন কথা তেমনি কাজ! মুখের উল্কি আর নাকছিপি নিয়ে সুন্দরী আন্নিদো খুব তাড়াতাড়ি পাশের গাঁয়ের জোয়ান ছেলে চাদের গলায় মালা দিল। ভগবান সিইকি-র আশীর্বাদে তাদের সুখের সংসারে সম্পদের বন্যা। কাঠ-বাঁশের ঘর সন্তানসন্ততিতে ভরা চাঁদের হাট।

ভগবানের আশীর্বাদের কথা প্রচার হয়ে গেল আপাতিনিদের ঘরে ঘরে। তাদের ‘নাগো’ অর্থাৎ উৎসব মঞ্চে পুরোহিত বিধান দিলেন এবার থেকে সব আপাতিনি বালিকাদের প্রথম রজোদর্শনের পর মুখে উল্কি আঁকা হবে। নাসারন্ধ্রে পরিয়ে দেওয়া হবে বেত বা কাঠের টুকরো দিয়ে তৈরি ছিপি বা ইয়াপিং হুলো।

ব্যস, কয়েকশো বছর ধরে ইয়াপিং হুলো আটকে রইলো আপাতিনি মেয়েদের নাকের ফুটোয়। প্রথম সূর্যের আলো পাওয়া অরুণাচল প্রদেশ। তার নিম্ন সুবর্ণসিঁড়ি জেলার আপাতিনি আদিবাসী মেয়েরা এইভাবেই বিস্ময়ের কারণ হয়ে উঠলো জগতের চোখে।

ধীরে ধীরে পরিবর্তনের স্রোত বৃষ্টি ধারার মত নেমে এল পাহাড়ের গা বেয়ে। চাঁদসূর্যের উপাসক আপাতিনিদের খ্রীষ্টান মিশনারীরা খ্রীস্টের বাণী শোনাল। এককালের নিয়মনিগড়ে বাঁধা আদিবাসীদের গ্রাম্য জীবন বিস্তৃত হল দিকে দিকে। শিক্ষার আলো পুরোনো রীতিনীতিকে বর্জন করতে চাইলো। মেয়েরা আর পরলো না নাকের ঐ অদ্ভুত গয়না। সাজতে চাইল না মুখের উল্কি সাজে। স্বাধীন হল তারা।

তবু নয় নয় করেও রয়ে গেল আপাতিনিদের কিছু রীতিনীতি, নিয়ম। সাজপোশাক, খাদ্যাভ্যাস। না হলে যে, হিমালয়ের পদাশ্রিত এই সুন্দর সবুজ উপত্যকা থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে আপাতিনিরা। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এক আদিম প্রকৃতি উপাসক সহজ-সরল জীবনধারা।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন