শুক্রবার | ৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:২৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
নেহরুর অনুপস্থিতিতে প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদও ৩৭০ অনুমোদন করেছিলেন : তপন মল্লিক চৌধুরী সিঁদুরের ইতিকথা আর কোন এক গাঁয়ের বধূর দারুণ মর্মব্যথা : দিলীপ মজুমদার সাহিত্যিকদের সংস্কার বা বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে শ্রীপাণ্ডবা বা নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত দশহরার ব্যুৎপত্তি ও মনসাপূজা : অসিত দাস মেনকার জামাই ও জামাইষষ্ঠী : শৌনক ঠাকুর বিদেশী সাহিত্যিকদের সংস্কার ও বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

নিষ্কাম কর্মযোগের আরেক নাম ফলহারিণী কালীপূজা : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৪৫২ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০২৩

১৮৭৩ সালের জ্যৈষ্ঠ আমাবস্যার ভরা নিশি। মা ভবতারিনীর বিশেষ পূজার আয়োজনে দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়িতে প্রচুর মানুষের সমাগম। বাজছে রোশনচৌকি। লোচক্ষুর আড়ালে শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরেও চলেছে কালীপূজার অন্যরকম আয়োজন। ভাগ্নে হৃদয়রাম তাঁর মামার পূজার আয়োজনে যথাসাধ্য সাহায্য করে চলে গেছেন মা ভবতারিণীকে ফলহারিণীরূপে পূজা করতে। দিনু পূজারী রাধাগোবিন্দের রাত্রিকালীন সেবা সেরে এসে ঠাকুরকে পূজার আয়োজনে সাহায্য করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। ঠাকুর বসে আছেন উত্তরে মুখ করে। দক্ষিণ দিকে সাজানো পূজার সমস্ত উপকরণ। কেবল আলপনা আঁকা পূজার বেদিতে প্রতিমা নেই।

রাত নটা বাজলো। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রীশ্রীমাসারদা এলেন ঠাকুরের ঘরে। প্রথম ধাপের পূজার সমস্ত আচার দেখে অর্ধবাহ্য দশা হলো শ্রীমায়ের। ঠাকুর মায়ের দু-পায়ে আলতা, কপালে সিঁদুরের টিপ, অঙ্গে নতুন বস্ত্র পরিধান করালেন। শ্রীমায়ের কাছে এই ঘটনার বর্ণনা শুনে শ্রীরামকৃষ্ণের ভাইঝি লক্ষ্মীমণি শ্রীমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তুমি যে অত লজ্জা করো, কাপড় কি করে পরালেন গো?’ মা উত্তর দেন, ‘আমি তখন যে কিরকম হয়ে গিছলুম।

ধূপধুনার গন্ধে ম ম করছে ঘর। শ্রীরামকৃষ্ণ মন্ত্র উচ্চারণ করছেন আর মা সারদা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বিভোর হয়ে রয়েছেন। বিভিন্ন বর্ণনায় মায়ের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, রাত্রি দু-প্রহরের পরে ঠাকুরের জ্ঞান আসে। ঠাকুর মন্ত্রপূত পবিত্র গঙ্গাবাড়ি দিয়ে মায়ের অভিষেক করলেন। তারপর উচ্চারণ করলেন প্রার্থনামন্ত্র, “হে বালে হে সর্বশক্তির অধীশ্বরী মাতঃ ত্রিপুরসুন্দরী, সিদ্ধিদ্বার উন্মুক্ত কর, এঁর (শ্রীশ্রীমার) শরীরমনকে পবিত্র করে এঁতে আবির্ভূতা হয়ে সর্বকল্যাণ সাধন কর!” “(O lady, O mather Tripurasundari, who art the controller of all powers, open the door to perfection; purify her (the holy mother’s) body and mind, manifest Thyself in her and be beneficent.)”

শ্রীরামকৃষ্ণের সেই প্রার্থনার পর শ্রীমা আর সাধারণ মানুষ রইলেন না — হয়ে উঠলেন সর্বশক্তির আধার, সিদ্ধিদাত্রী, কল্যাণী মহাদেবী। চন্ডিতে ব্রহ্মা যার স্তুতি করেছেন অর্থাৎ সৃষ্টির পূর্বে বীজরূপে সমগ্র বিশ্ব যাঁর গর্ভে বিধৃত, যাঁকে তিনি জগতরূপে প্রসব ও পরিপালন করেন এবং অন্তকালে সংহরণ করেন — সেই মহাশক্তিই অষ্টাদশবর্ষিয়া মানবীয় দেহাবলম্বনে ষোড়শী রূপে দক্ষিণেশ্বরে পুজিতা হলেন।

এখানে শ্রীরামকৃষ্ণের প্রার্থনা মন্ত্রটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। শক্তির আরাধনা বলতে আমাদের মনে কালীতত্ত্বের কথাই উঠে আসে। শাস্ত্র বলে কালি, তারা, লক্ষ্মী, সরস্বতী প্রভৃতিগণ শক্তির বহুরূপ। এঁরা সকলেই পরাশক্তির ভিন্ন ভিন্ন অংশ বা বিভূতি। কিন্তু “শ্রীবিদ্যা” বা “ষোড়শী বিদ্যা” শক্তি দেবতার মধ্যে মুখ্যা বা প্রকৃতি স্বরূপা। মোক্ষের একমাত্র কারণ শ্রীবিদ্যা, এতে কোন সংশয় নেই। কালি সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে ষোড়শী পূজা করতে হয়। কারণ এই পূজাতেই সাধকের সাধন জীবনের পরিসমাপ্তি হয়।

তাই শ্রীরামকৃষ্ণদেব ভবতারিনীর নানারূপ দর্শন লাভের পরই সর্বশেষে শ্রীবিদ্যার উপাসনায় অগ্রসর হয়েছিলেন। তৈলঙ্গস্বামী, বামাক্ষ্যাপা, রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত থেকে শুরু করে শ্রীরামকৃষ্ণদেব পর্যন্ত একাধিক সিদ্ধ সাধক এইভাবে সাধনার পরিসমাপ্তি করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের বিশেষত্ব ছিল এই যে তিনি কোন মাটির বা ধাতব প্রতিমাকে শ্রীবিদ্যার উপাসনা না করে শুদ্ধপবিত্র স্বত্তগুনে পূর্ণ প্রকাশিতা কোন অভিষিক্তা নারীকে (মা সারদা) মানবীয় দেহাবলম্বনে ষোড়শী রূপে সাক্ষাৎ দেবী জ্ঞানে পূজা করেছিলেন। এরকম পূজা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি করেননি ভগবত ভক্তির বিহ্বলতায় আপ্লুত হয়ে বহুজনের হিতার্থে ও বহুজন সুখার্থে তিনি মাকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন।

সেদিন ষোড়শপচারে মায়ের পূজা সম্পন্ন হল। একে একে সমস্ত উপাচার নিবেদনের পর ঠাকুর মাকে ভোগ দিলেন। নিবেদন করা ভোগের মিষ্টি তিনি নিজের হাতে মাকে খাইয়ে দিলেন। তখন বাহ্যজ্ঞান শূন্য হয়ে শ্রীমা সমাধিস্থ। ঠাকুরও অর্ধবাহ্যদশায় মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে সমাধিস্থ হলেন। পূজা ঘরের সব কটি দরজা বন্ধ। সমাধিস্থ পূজক সমাধিস্থা দেবীর সঙ্গে আত্মস্বরূপে পূর্ণভাবে মিলিত ও একীভূত হলেন।

এরকম অবস্থায় রাত্রির দ্বিতীয় প্রহর কেটে গেল। এবার ঠাকুরের মন ধীরে ধীরে বাহিরে বাহ্যভূমিতে ফিরে আসলো। অর্ধ্যবাহ্যদশায় তিনি দেবীকে আত্মনিবেদন করেছেন। নিজের সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার বারো বছরের সাধনার ফল ও জপের মালা প্রভৃতি সর্বস্ব জগতমাতারুপিনী মায়ের চরণে চিরকালের জন্য বিসর্জন দিলেন। পূজা শেষে মূর্তিমতী বিদ্যারূপিণী মানবীয় দেহাবলম্বনে ঈশ্বরীয় উপাসনাপূর্বক ঠাকুরের সাধনার পরিসমাপ্তি হলো, তাঁর দেহ মানবত্ব সর্বতোভাবে সম্পূর্ণতা লাভ করল। ফলহারিনী কালীপূজার দিন শ্রীরামকৃষ্ণ মূর্তিমতী শ্রী বিদ্যারূপিণী শ্রীশ্রীমাসারদাদেবীর দেহাবলম্বনে আদ্যাশক্তিকেই পূজা করেছিলেন বলে আজ শ্রীরামকৃষ্ণমঠে এই পূজা ‘ষোড়শী-পূজা’র নামেই পরিচিত।

এই পুজাতে ঠাকুর জগৎ কল্যাণের জন্য শ্রীমায়ের দেহ-মনে মহাশক্তি জগৎমাতাকে জাগ্রত করে বহুজন হিতার্থে সংঘের অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে মাসারদাকে চির প্রতিষ্ঠিতা করে গেলেন। যাতে তিনি ভক্তের কর্মফল হরণ করে তাকে সৎ বুদ্ধি দান করবেন ও সৎ কর্মের দিকে পরিচালনা করবেন। শ্রীরামকৃষ্ণ নিজের মাধ্যমে জগতকে শিক্ষা দিলেন ফলহারিনি মায়ের কাছে আত্মনিবেদনের। জৈষ্ঠ মাসে বঙ্গে আম জাম লিচু তরমুজ কাঁঠাল ইত্যাদি ফলের মরশুম। ভক্ত তার প্রিয় মাকে এই সময় নানা ফল দিয়ে ভোগ দেবেন এটাই তো স্বাভাবিক। সঙ্গে নিবেদন করেন ভক্তি ও প্রেমের অর্ঘ্য। মা দুহাত পেতে নেন ভক্তের দেওয়া ফল, ভক্তের ইহকাল পরকালের সমস্ত ভার আর দুহাত উজাড় করে দেন ভক্তের অভীষ্টফল।

রামকৃষ্ণদেব সেদিন–নারী যে কোন অংশে দুর্বল নয়, উপেক্ষনীয় নয়, নারী শক্তির জাগরণের উপরই যে সমগ্র জগতের কল্যাণ নির্ভর করছে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ দেব নারী মাত্রই মাতৃভাব পোষণ করতেন বলেই তিনি পত্নীকে ব্রহ্মময়ী ভাবের উপলব্ধিতে ষোড়শী পূজার মধ্য দিয়ে নিজে অন্তরে মহাভাবের পূর্ণ ঘট স্থাপনে সক্ষম হয়েছিলেন।

আজ নিত্যমুক্ত মোক্ষদায়ীনি মায়ের কোলে অবস্থান করেও আমরা বিদ্যা অর্থ ক্ষমতা মান-সম্মান আভিজাত্যের অহংকারে বদ্ধ হয়ে মাকে ভুলতে বসেছি। মায়ের অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে হলে আমাদের সংকীর্ণ জ্ঞান ও অহংকারকে ত্যাগ করতে হবে। বাধা বিঘ্ন অত্যাচার উৎপীড়ন সকলই আমাদের জীবনে আসবে। জটিল কুটিল সূক্ষ্মবুদ্ধিরূপ শাণিত অস্ত্রে বাধা নিবারণে উদ্যত হতে গিয়ে আমরা যেন মাকে না ভুলি।

ফলহারিণী কালীপূজার পূর্ণ তিথিতে মানুষ যখন পুজোর অপরিহার্য অঙ্গ ফল হাতে নিয়ে কল্পতরুমূলে গিয়ে দাঁড়াবে তখন এটাই হবে তার প্রার্থনা মন্ত্র, ‘মা ফলটি নাও, আর ফলের ফলটিও নাও।’ নিষ্কাম কর্মযোগ অর্থাৎ কর্মের ফল–লাভ লোকসান সুখ-দুঃখ সব কিছুই মায়ের পাদপদ্মে অর্পণ করতে হবে। তবেই পাওয়া যাবে ফলহারিণী কালীপূজা প্রসাদ।


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “নিষ্কাম কর্মযোগের আরেক নাম ফলহারিণী কালীপূজা : রিঙ্কি সামন্ত”

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন