শনিবার | ২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:১১
Logo
এই মুহূর্তে ::
রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার ক্যের-সাংরী কথা : নন্দিনী অধিকারী সুপারি তথা গুবাক থেকেই এসেছে গোয়ার নাম : অসিত দাস রোনাল্ড রসের কাছে জব্দ ম্যালেরিয়া : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় উনিশের উত্তরাধিকার : শ্যামলী কর কেট উইন্সলেটের অভিনয় দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জিং ভূমিকার ৩টি চলচ্চিত্র : কল্পনা পান্ডে হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলা — আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংকট : সুব্রত কুমার দাস সিন্ধুসভ্যতার ভাষা যে ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার প্রমাণ মেলুহা তথা শস্যভাণ্ডার : অসিত দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (শেষ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস জাতিভিত্তিক জনগণনার বিজেপি রাজনীতি : তপন মল্লিক চৌধুরী গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালশাঁসের চাহিদা : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (ষষ্ঠ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস ভারতের সংবিধান রচনার নেপথ্য কারিগর ও শিল্পীরা : দিলীপ মজুমদার চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (পঞ্চম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস আলোর পথযাত্রী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (চতুর্থ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস কন্নড় মেল্ল থেকেই সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম মেলুহা : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

তরল সোনা খ্যাত আগর-আতর অগুরু : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ২৫০ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ৩ মে, ২০২৫

‘অগুরু চন্দন তনুঘন লেপন, শোভিছে মালতী মালে’…. (পদাবলী)

অগৌর অগোর অগুরু আগুরু কৃষ্ণচন্দন… কত নামেই না ডাকা হয় এই সুগন্ধী ভেষজকে। চরক সুশ্রুতে অগুরুর বেশ কিছু উল্লেখ পাওয়া যায়। এটিকে কৃষ্ণচন্দন বলা হলেও এটি কিন্তু চন্দন নয়। জগন্নাথের পূজা বা স্নানযাত্রার মতো অনুষ্ঠানে জল শুদ্ধ করতে অগুরু কাঠ ব্যবহার করা হয়। জগন্নাথদেবকে গোপালবল্লভভোগ (প্রথম নৈবেদ্য) অর্পণ করার সময় অগুরু ব্যবহার করা হয়। আগর কাঠকে তাই ঈশ্বরের কাঠ বলা হয়।

অগুরু কাঠ শুধু জগন্নাথের পূজায় নয়, হিন্দু দেব-দেবী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সুগন্ধী লাগাতে বা ধূপ হিসেবে ব্যবহার করা হয় অগুরু কাঠ। পূর্ব এশিয়া ও জাপানের মানুষ আগর কাঠ ব্যবহার করে পুজোর অর্ঘ্য হিসেবে। এই কাঠ মধ্যপ্রাচ্যেও যথেষ্ট সমাদৃত। ঘরে নিত্য পূজায় ধর্মীয় বাতাবরণ তৈরি করতে আগর কাঠের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা সুগন্ধী ধূপ বা তরল ব্যবহার করা হয়। হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, চীনা লোকধর্ম এবং ইসলামে আগর কাঠকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়। প্রায় সব ধর্মের মানুষই আগর আতর ও আগর কাঠের গুঁড়ো ব্যবহার করে থাকেন।

আগর কাঠকে হিন্দিতে ‘আগর’, তামিলে ‘আকিল’, অসমিয়ায় ‘সাঞ্চি’ এবং বাংলায় ‘আগর গাছ/গ্যাস’ বলা হয়। আগর কাঠ তার ঔষধি বৈশিষ্ট্য এবং সুগন্ধি বৈশিষ্ট্যের কারণে অত্যন্ত মূল্যবান।

অগুরু কাঠ থেকে তৈরি তেল বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান সুগন্ধি হিসেবে পরিচিত। এটি পারফিউম, স্কিন কেয়ার ও কসমেটিক্সেও ব্যবহৃত হয়।

পদার্থটি আসলে ছত্রাক জাতীয় এবং পাওয়া যায় এক ধরনের গাছ থেকে। এর আদিবাসস্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রেন ফরেস্টগুলো। তবে হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলে ভুটান মালয় মায়ানমার বাংলাদেশের শ্রীহট্ট এবং আমাদের দেশে অসম মিজোরাম ও মনিপুরের এই গাছ জন্মায়। অগুরু গাছের বীজ বপণের উৎকৃষ্ট সময় হলো মার্চ থেকে এপ্রিল। জমির উপর কিছুটা বালি ছড়িয়ে দিয়ে বীজ ফেলতে হয়, তারপর আবার বালিতে বীজগুলো ঢেকে দিয়ে জল ছিটিয়ে দিলে তিন চার দিনের মধ্যেই বীজ থেকে অঙ্কুর বের হয়। স্বাভাবিকভাবে এই গাছগুলি পরপক্ক হতে সময় লাগে ২৫ থেকে ৩০ এমনকি পঞ্চাশ বছরও। তবে পাঁচ থেকে দশ বছর বয়সের গাছে আগর জমা হতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের গায়ে কালো কালো ছোপ পড়তে থাকে এবং সেই ছোপ পূর্ণ হতে সময় লাগে চার থেকে ছয় বছর। গাছের এই কালো অংশই আগর কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আগর কাঠের তেলের উপাদান অত্যন্ত জটিল, যেখানে ১৫০টিরও বেশি রাসায়নিক যৌগ শনাক্ত করা হয়েছে। কবিরাজি বা আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা বলেন অশেষ প্রকারের গুরু অর্থাৎ গুণান্বিত তাই এর নাম অগুরু। অগুরুর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে ব্যবহার রয়েছে, যেমন হাঁপানি, গেঁটেবাত, আর্থ্রাইটিস, প্রদাহ, চর্মরোগ, চুলের সমস্যা, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, মুখের দুর্গন্ধ, হৃদরোগের অসঙ্গতি, জ্বর, ক্রমাগত হেঁচকি, লিভারের রোগ ইত্যাদি।

অগরুর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্যথা এবং প্রদাহ কমিয়ে জয়েন্টের ব্যথা এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ অনুসারে, অগরু তেল নিয়মিত জয়েন্টে ম্যাসাজ করলে জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

টিপস :

ক. ২-৫ ফোঁটা আগরু তেল নিন।

খ. এতে ১-২ চা চামচ নারকেল তেল যোগ করুন।

গ. আক্রান্ত স্থানে আলতো করে ম্যাসাজ করুন।

ঘ. জয়েন্টের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে এই প্রতিকারটি দিনে একবার ব্যবহার করুন।

মধুর সাথে আগরু পাউডার গ্রহণ করলে শ্বাসনালী থেকে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা অপসারণ এবং ব্রঙ্কাইটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

আগরু তার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে লিভারকে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে এবং এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণে লিভারে প্রদাহ কমাতে পারে।

রোপন (নিরাময়) বৈশিষ্ট্যের কারণে একজিমার মতো ত্বকের অবস্থা নিয়ন্ত্রণে নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে সেই তেল ত্বকে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ইউনানীতে অগুরুর নাম উদহিন্দ। ইউনানি চিকিৎসকদের মতে অগুরুর কাঠ জীর্ণ অতিসার, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। আগর কাঠ মালয় ও চাইনিজদের আদি চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগ নিরাময়ের ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

বিশ্বে আগর আতর দ্রব্যের রপ্তানি বাজার রমরমা। বছরে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৬০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ব্যবসার মূল কেন্দ্র হলো সিঙ্গাপুর। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আগর উড চিপস ও আতরের চাহিদা প্রবল। ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়া কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম হল আগরের মূল উৎপাদনকারী দেশ। এটি আরব দেশে ‘উদ’ আর মালয়েশিয়ায় ‘গাহারু’ নামে পরিচিত। এইসব দেশগুলোতে এটি একটি লাভদায়ক বাণিজ্যিক পণ্য।

আগর কাঠের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে মান অনুযায়ী পাঁচ থেকে দশ হাজার ডলার। আবার এই গাছের যে কালো কাঠ থেকে আগর পাওয়া যায় সেই কাঠ প্রতি কিলোগ্রাম ভারতীয় মুদ্রায় এক লক্ষ আশি হাজার টাকার মতো। শুধু ওষুধ আর আতর তৈরি নয় আগরকাঠ শীতপ্রধান দেশে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয় যা ইংরেজিতে বলা হয় ফায়ারপ্লেস উড। এছাড়া আগরকাঠের গুঁড়া প্রক্রিয়াজাত করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান এর মত কয়েকটি দেশে ২০/২২টি পণ্য তৈরি করা হয়ে থাকে। আগরকাঠ থেকে আতর তৈরি করার পর পরিত্যক্ত অংশগুলি আগরবাতি তৈরির কারখানায় বিক্রি করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এর ভালো বাজার দর পাওয়া যায়।

আগরকাঠ সমৃদ্ধ প্রাপ্তবয়স্ক একটি গাছের দাম ৫ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। গুণগতমানের নিরিখে এক তোলা বা ১২ গ্রাম আগর আতরের দাম হতে পারে পাঁচ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাই একে তরলসোনা বলা হয়। তবে আতর খুব সহজে পাওয়া যায় না যথেষ্ট শ্রমসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। এমনকি আগর আতর বা তেল তৈরি হতেও মাস খানেকের মতো সময় লেগে যায়।

আমাদের দেশে ত্রিপুরায় বহুকাল থেকেই আগর গাছের চাষ হয়ে আসছে। এই রাজ্যে আগর গাছকে রাজ্য বৃক্ষ হিসেবে গণ্য করে। ব্যবসায়ীরা আগে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি রাজ্য থেকে আগরকাঠ সংগ্রহ করে মধ্য অসমের হোজাই এলাকায় নিয়ে যেত। সেখানে আগড় কাঠ থেকে তেল বের করে মুম্বাই হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে রপ্তানি করতো। ত্রিপুরার অর্থনীতির জন্য ত্রিপুরা সরকার আগর গাছের চাষ এবং বাণিজ্যকে উৎসাহিত করছে। ত্রিপুরা সরকার আগর গাছের চাষকে উৎসাহিত করার জন্য আগর গাছের চারা বিতরণ, আগর গাছ থেকে তেল তৈরির কারখানা স্থাপন, আগর গাছের বাণিজ্যকে বৈধতা দেওয়ার মত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে দিনাজপুরে বহু বছর ধরে আগর গাছের (Aquilaria agallocha) চাষ হয়।

আগর গাছ ও আতর একটি অতি মূল্যবান সম্ভাবনাময় সুগন্ধি। আভিজাত্যের প্রতীক হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে এখনও এ আগর শিল্পটি অবিকশিত। মধ্যপ্রাচ্যসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এর বিপুল চাহিদা রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য এই চাষের সম্প্রসারণ ও গবেষণা অত্যন্ত জরুরী। প্রয়োজন ব্যক্তিকর্তৃক উদ্যোগ এবং সরকারি উদ্যোগ।

শেষে বলি, ভেষজ এই সুগন্ধি প্রফুল্ল রাখে আমাদের মন। সে কি কম পাওয়া প্রকৃতির এমন আরোগ্য নিকেতনে!


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন