১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালের রবিবার, নদীয়া জেলার সর্বপ্রথম মরণোত্তর দেহদান ও চক্ষুদান বিষয়ক আন্দোলনকারী কুসংস্কার বিরোধী সাহিত্য বিজ্ঞান সংগঠন রাখী পত্রিকার উদ্যোগে রাখী পত্রিকার সভাপতি সম্মাননীয় বিমল সরকার মহাশয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় স্পোর্টস ভিলেজে ‘শ্যামল রঞ্জন সরকার স্মৃতি বিজ্ঞান কেন্দ্র’ (চকদিগনগর, কালীরহাট, কৃষ্ণনগর-১) এ অনুষ্ঠিত হল একদিনব্যাপি পরিবেশবান্ধব ভেষজ আবীর তৈরির একটি কর্মশালা।
প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাখী পত্রিকার অত্যন্ত আপনজন সফল ভেষজ আবীর ও পরিবেশ বান্ধব সামগ্রীর ব্যবসায়ী সম্মাননীয়া কোয়েলি সেনগুপ্তা ম্যাডাম।
এই কর্মশালাটিতে সমস্ত পরিবার-সহ বিভিন্ন সংগঠনের উৎসাহী সংগঠকরা ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। ভেষজ আবীর কীভাবে তৈরি হয় এই আগ্রহে শেখার জন্য স্থানীয় অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন নদীয়া জেলার নাকাশীপাড়া হাই স্কুল (উ.মা) স্কুলের প্রধান শিক্ষক ড. অমিত কুমার দত্ত মহাশয় (এর আগেও ড. অমিত কুমার দত্ত মহাশয়ের পরিচালিত স্কুলে রাখী পত্রিকা উদ্যোগে মরণোত্তর দেহদান ও চক্ষুদান এর বিষয়ে একটি মনোজ্ঞ স্লাইড সহযোগে ছাত্র-ছাত্রীদের উপযোগী অনুষ্ঠান করে এসেছে।), বেথুয়াডহরীর ‘অল্পগল্প’ Cafe এর কর্ত্রী রুম্পা ত্রিবেদী (স্বপরিবার), বাদকুল্লার সফল বুটিক ব্যবসায়ী স্বপ্না সরকার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ফুলিয়া কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এর শ্রদ্ধেয় কার্তিক প্রামানিক ও তার সহধর্মিনী প্রিয়া ঘোষ প্রমূখ।
আজ এই কর্মশালা শুরুর একেবারে প্রারম্ভিক পর্বে সম্মাননীয় ড. অমিত কুমার দত্ত মহাশয় রাখী পত্রিকার প্রতিনিধি সৃজনী সরকার এর হাতে তুলে দিলেন পূরণ করা মরণোত্তর দেহদান ও চক্ষুদানের বেশ কিছু ফর্ম। উনি এবং ওনার পরিবার ইতিমধ্যেই মরণোত্তর দেহদান ও চক্ষুদানের অঙ্গীকার পত্র পূরণ করে ফেলেছেন। এরপর কোয়েলি ম্যাডাম খুব সুন্দরভাবে আপন দক্ষতায় নিপুণতার সঙ্গে সকলকে ভেষজ আবীর তৈরি ধাপে ধাপে শেখালেন।
কর্মশালাটি শুরু হল — প্রাথমিকভাবে এই ভেষজ আবীর তৈরী কী কী ভাবে করতে হবে তার একটি লিখিত রূপ কোয়েলি ম্যাডাম সকলকে সরবরাহ করলেন। পরিবেশ বান্ধব ভেষজ আবীর তৈরীর প্রাকৃতিক উপকরণগুলি ছিল — পালং শাক, বিট, কাঁচা হলুদ, কমলা গাঁদা ফুল প্রভৃতি।
তারপর সকলে হাতে-কলমে ভেষজ আবীর তৈরীর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করেন।
সম্পূর্ণ কর্মশালাটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ‘শ্যামল রঞ্জন সরকার স্মৃতি বিজ্ঞান কেন্দ্র’-এর সম্পাদক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক দীপক রায় মহাশয়। বিশেষভাবে উৎসাহ দিলেন চকদিগনগর স্পোর্টস ভিলেজের সভাপতি সম্মানীয় অমিতাভ চক্রবর্তী মহাশয় ও সম্মানীয়া কাকুলি রায়।
যাঁরা এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করলেন তারা সকলেই ভবিষ্যতে এক একজন সফল পরিবেশ বান্ধব ভেষজ আবীর কারিগর তথা ব্যবসায়ী হয়ে স্বনির্ভরতার পথের পথিক হয়ে একজন উদ্যোগপতি হয়ে উঠবেন এমন প্রত্যাশা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সকলেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ম্যাডামকে জিজ্ঞাসা করেছেন যাতে পরবর্তীতে তারা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারেন সেই লক্ষ্যে।
আজকের কর্মশালার সাফল্য আসলে পরিবেশের তথা স্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে হয়ে চলা ক্রমাগত ধূর্ত ব্যবসায়ীদের কেমিক্যালের অবর্ণনীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত প্রতিবাদ। ভবিষ্যতেও ‘শ্যামল রঞ্জন সরকার স্মৃতিবিজ্ঞান কেন্দ্র’ এইরকম বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। রাখী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রায়ত শ্যামল রঞ্জন সরকার প্রায় ৯০% শারীরিকভাবে অক্ষম হয়েও হুইলচেয়ারে করে সকলকে নিয়ে সমাজ কল্যাণ হেতু এগিয়ে যাওয়ার জন্য আজও অমর হয়ে নদীয়া জেলা তথা পশ্চিমবঙ্গের সকল বিজ্ঞান আন্দোলনকারীদের স্মৃতিতে চিরভাস্বর হয়ে রয়েছেন। রাখী পত্রিকার বর্তমান সভাপতি সম্মাননীয় শ্রীযুক্ত বিমল সরকার মহাশয় সহ অন্যরা প্রয়াত শ্যামল রঞ্জন সরকার মহাশয়ের এই ভাবনাতেই প্রভাবিত হয়ে বছরের প্রতিটি মাসেই এরকম বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক, সামাজিক তথা স্বনির্ভরতামূলক অনুষ্ঠান ‘শ্যামল রঞ্জন সরকার স্মৃতিবিজ্ঞান কেন্দ্র’ প্রাঙ্গণে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতার সাথে উদ্যোগ নিয়ে করে থাকেন।
আসলে এই ‘শ্যামল রঞ্জন সরকার স্মৃতিবিজ্ঞান কেন্দ্র’ বিজ্ঞান তথা পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কুসংস্কার বিরোধী মুক্তমনা সকল প্রগতিশীল যুক্তিবাদী বিজ্ঞান সংগঠনগুলির একটি যৌথ প্ল্যাটফর্ম।
যেকোনো বিজ্ঞান সংগঠন নিজের মনে করে ‘শ্যামল রঞ্জন সরকার স্মৃতি বিজ্ঞান কেন্দ্র’ -এ এসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে জনমানসে বিজ্ঞান চেতনা বৃদ্ধি করতে পারেন।
আসুন আমরা সকলে একসাথে মিলেমিশে কুসংস্কারমুক্ত যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ে তুলি।