প্রপিতামহ বৃক্ষের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। আরও ভালো করে বললে বোঝায় শ্রদ্ধানুষ্ঠান। এক মনোরম পরিবেশে ২২ ডিসেম্বর খানাকুলের মাঝপুর গ্ৰামে আচার্য পরিবারে এই বিরল মুহূর্তের সাক্ষী থাকল গুণীজন ও এলাকার মানুষ। এতদিন মানুষ জানত গাছ ছায়া দিয়ে ক্লান্ত শরীরকে শ্রান্ত করে এবং অক্সিজেন দিয়ে প্রাণের স্পন্দনকে জাগিয়ে রাখে। এবার মানুষ দেখল একটি বৃক্ষ অবলীলাক্রমে সংসারও চালায়। সেই বৃক্ষকেই ফুল ও মালায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে প্রকৃতির প্রতি মর্যাদা বজায় রাখল।
প্রসঙ্গত, আচার্য পরিবারের প্রায় দু’শো বছরের চালতা গাছ তিল তিল করে কেবল ছায়া ও অক্সিজেন দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, দিয়েছে আর্থিক সহায়তা প্রদান। সেই কথাই তুলে ধরলেন আচার্য পরিবারের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও প্রকৃতিপ্রেমিক শৈলধর আচার্য ও হীরালাল আচার্য। স্মৃতি রোমন্থন করে এঁরা জানান, প্রপিতামহের বয়সকেও ছাপিয়ে গেছে এই চালতাবৃক্ষ।
সম্প্রতি মারা যাবার পর মনে হয় যেন আমাদের মাথার উপর থেকে অভিভাবক সরে গেছেন। এই কারণে বলছি, যখন সংসারে অনটন। চাল কেনার পয়সা নেই, তখন গাছের চালতা বাজারে বিক্রি করে চাল কিনে ভাত জুটেছে। এমনও হয়েছে পাড়া প্রতিবেশীদের চালতা দিয়ে সংসারের অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে। কেবল তাই নয় এই গাছের চালতা এলাকার অসংখ্য মানুষের স্বাদ মিটিয়েছে। সেই গাছ আর নেই। তাই ওই গাছের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়।
উল্লেখ্য, এদিন বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে প্রকৃতিপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রকৃতি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুকে সাক্ষী রেখে পালিত হল এক শ্রদ্ধার্ঘ্য অনুষ্ঠান। প্রকৃতির গান দিয়ে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক দেবাশিস শেঠ জানান, প্রকৃতির প্রতি মর্যাদা দিতেই আজকের এই অনুষ্ঠান। এটাকে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান না বলে শ্রদ্ধানুষ্ঠান বলতেই হয়। এই অনুষ্ঠান সকলকে মুগ্ধ করেছে। প্রধান শিক্ষক ও পরিবেশপ্রেমিক দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, এলাকায় এই ধরনের অনুষ্ঠান প্রথম। প্রকৃতির প্রতি মর্যাদা বজায় রাখতে শৈলধরবাবুদের কুর্নিশ জানাতেই হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বাচিকশিল্পী সঞ্জয় ঘোষাল ও অন্যান্য বিশিষ্টজনরা।
প্রসঙ্গত, এদিন সকলের উপস্থিতিতে বৃক্ষরোপণ ও গাছের চারা উপহার দেওয়া হয়। সমগ্ৰ অনুষ্ঠান এক মনোরম পরিবেশে আলাদা মাত্রা পায়।