সোমবার | ২৭শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:০১
Logo
এই মুহূর্তে ::
‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত “কপোতাক্ষ নদ”-এর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত : আসমা অন্বেষা কৃষ্ণনগরে সর্বধর্ম ভ্রাতৃত্ব সমাবেশ : ড. দীপাঞ্জন দে চোখের ক্যানসার থেকে সাবধান! দিন দিন বাড়ছে, আগাম সতর্কতা জরুরি : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী রাখাইন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বিদ্বজ্জনসমাজ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কবিয়ালের প্রেত : অসিত দাস ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত একদা বিরুদ্ধরাই আজ নেতাজির স্তুতিগানে সরব : সন্দীপন বিশ্বাস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পদবি ঠাকুর থেকে Tagore হওয়ার নেপথ্যকাহিনী : অসিত দাস সুভাষের সুবাসে এখনও ম ম করছে ডালহৌসি শহরের বাতাস — এ এক তীর্থক্ষেত্র : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তারাভরা তারানাথ (১৮১২-১৮৮৫) : নন্দিনী অধিকারী ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জোটে ব্রাত্য কংগ্রেস কি দিল্লি ভোটের পর আরও গুরুত্ব হারাবে : তপন মল্লিক চৌধুরী খালাসিটোলা, রবীন্দ্রনাথ ও পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস পীযূষ পাঠ প্রস্তাব : ড. পুরুষোত্তম সিংহ চর্যাপদে সমাজচিত্র : নুরুল আমিন রোকন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (শেষ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর অনন্য লেখক মানিক : ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (একাদশ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভেটকি থেকে ইলিশ, চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল, হুগলির মাছের মেলায় শুধুই মাছ : রিঙ্কি সামন্ত দিল্লি বিধানসভায় কি বিজেপির হারের পুনরাবৃত্তি ঘটবে : তপন মল্লিক চৌধুরী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন — বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দশম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুর ও তৎকালীন বঙ্গসংস্কৃতি : অসিত দাস দধি সংক্রান্তি ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (নবম পর্ব) : আবদুশ শাকুর সপ্তাহে একদিন উপবাস করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো : অনুপম পাল অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত’র ভাষা : ড. হান্স্ হার্ডার সবগুলো গল্পেই বিজয়ার নিজস্ব সিগনেচার স্টাইলের ছাপ রয়েছে : ড. শ্যামলী কর ভাওয়াল কচুর কচকচানি : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

“কপোতাক্ষ নদ”-এর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত : আসমা অন্বেষা

আসমা অন্বেষা / ৩০ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫

আজ ২৫শে জানুয়ারি, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের আবির্ভাব দিবস।

কবি যখন ধর্মান্তরিত হয়ে ফিরে আসেন গ্রামে তাঁর বাবা তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি। কবি সপরিবারে বাদাম গাছের নিচে যেখানে তাঁবু খাটিয়ে ১৪ দিন ছিলেন সে জায়গাটি দেখলাম। কবি আমৃত্যু আক্ষেপ করে গেছেন নিজের মাতৃভূমিতে ফিরতে পারেননি বলে, কপোতাক্ষ নদের সাথে দেখা হয় নাই বলে। সাগরদাঁড়িতে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িতে গিয়েছিলাম প্রায় এক যুগ আগে। পাশে বহমান কপোতাক্ষ নদ যদিও ম্রিয়মাণ এখন। বাড়ির রক্ষণাবেক্ষন যারা করেন তাদের মধ্যেই একজন আমাদের গাইড হিসেবে সাহায্য করছিলেন। ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন প্রতিটি কক্ষ।

বিখ্যাত ইন্ডিয়ান টেনিস তারকা লিন্ডর পেজ (Leander Paes) কে পাওয়া গেল কবির বাড়িতে সংরক্ষিত ফ্যামিলি ট্রীতে ছবি সহকারে। কবির বংশধরদের ফ্যামিলি ট্রী করা হয়েছে একটি বোর্ডে। সেখানে কবির পূর্বের এবং পরবর্তী বংশধরদের নামসহ তালিকা দেয়া হয়েছে। কবির নাতি বা নাতনীর নাতনী জেনিফার পেজের পুত্র লিন্ডর পেজ। মা জেনিফার পেজ ইন্ডিয়ার একজন নামকরা বাস্কেটবল খেলোয়ার ছিলেন। ভাবতে অবাক লাগে, যে মানুষটিকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি একদিন তাঁর কিছু ভুলের কারণে…সেই মানুষটিই আজ পুরো বাড়িতে বিরাজমান। কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে বংশ পরিচয়… অহমিকা…অভিমান…সংষ্কার। এখন একটিই চিরন্তন সত্য আমাদের সামনে জাজ্বল্যমান …তা হলো তিনি একজন মহাকবি। আর সবকিছু ছাপিয়ে সেটাই তাঁর সবচাইতে বড় পরিচয়। আজকের দিনে তাঁর ভক্তরা শুধু জানে তিনি একজন বড় মাপের কবি। তাঁর আর কোন পরিচয় তাদের কাছে বড় নয়।

কবি মধুসূদন দত্তের ছবি লোয়ার সার্কুলার রোড সিমেট্রি (পার্কস্ট্রীট)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িটি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে অবস্থিত। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি এক জমিদার বংশে তাঁর জন্ম। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এখানেই তার শৈশব কাটান। তাঁর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকারী উদ্যোগে বাড়ি সংস্কার করা হয়েছে, সংরক্ষণ করা হয়েছে, নাম দেয়া হয়েছে মধুপল্লী। যশোর শহর থেকে কবি বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। নানান প্রাচীন স্থাপনা আর কবির স্মৃতিতে সমৃদ্ধ মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি। প্রধান ফটক পেরিয়ে প্রবেশ করতে হয় মধুপল্লীতে। সামনেই কবির আবক্ষ মূর্তি। ভেতরে কবির বসতবাড়ি এখন জাদুঘর। মধুসূদনের পরিবারের কয়েকটি ভবন, পুকুরঘাটসহ এখানে কবির স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে জাদুঘরটি। মধুসূদনের পরিবারের ব্যবহার্য কিছু আসবাবপত্র আর নানান স্মৃতিচিহৃও রয়েছে। চারপাশ প্রাচীরে ঘেরা, ভেতরে বাড়ির পশ্চিম পাশে আছে শান বাঁধানো দীঘি। যে দীঘির ঘাটে কবি স্নান করতেন, তা সংরক্ষণ করা হয়েছে।

কবি মধুসূদন দত্তের আবক্ষ মূর্তিসহ বাড়ির একাংশ।

বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতা সদর দেওয়ানী আদালতের একজন নামকরা আইন ব্যবসায়ী। মাতা জাহ্নবী দেবীও ছিলেন জমিদার কন্যা। মায়ের তত্ত্বাবধানেই মধুসূদনের শিক্ষা আরম্ভ হয়। কবি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। সাগরদাঁড়ি গ্রামের উত্তর পাশে শেখপুরা গ্রামের জামে মসজিদে ততকালীন ইমাম সাহেবের কাছে ফারসি ভাষা শিখতেন বালক কবি। তিনি সাগরদাঁড়ির পাঠশালায় পড়াশোনা করেন। পরে কলকাতা যান এবং খিদিরপুর স্কুলে পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা, সংস্কৃত, ফারসি ভাষা শেখেন এবং পরবর্তীতে ইংরেজি ভাষাও শেখেন।

মধুপল্লীর প্রবেশ পথ।

কবির মন পড়ে থাকতো সাগড়দাঁড়িতে, যখন কলকাতায় ছিলেন। ১৮৬২ সালে মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে একবার কবি স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে নিয়ে নদী পথে বজরায় করে আসেন সাগরদাঁড়িতে। তখন ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে জ্ঞাতিরা তাঁকে বাড়িতে উঠতে দেয়নি। তিনি কপোতাক্ষ নদের তীরে একটি কাঠবাদাম গাছের তলায় তাঁবু খাটিয়ে ১৪ দিন অবস্থান করেন। বিফল মনে কপোতাক্ষের তীর ধরে হেঁটে কলকাতার উদ্দেশে বজরায় উঠেছিলেন। এর পর তিনি আর দেশে ফেরেননি। সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও মধুসূদন যৌবনে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করেন। কবি পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। মধুসূদন রেবেকা নামে এক ইংরেজ যুবতীকে বিয়ে করেন। উভয়ের দাম্পত্য জীবন সাত বছর স্থায়ী হয়েছিল। মাদ্রাজ জীবনের শেষ পর্বে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এবং হওয়ার অল্প কিছুদিন পরে মধুসূদন হেনরিয়েটা নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিবাহ করেন।

কবির বাড়ির একাংশ যেখানে কবি অবস্থান করতেন।

জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি। উনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার ছিলেন তিনি। বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি ছিলেন একাধারে মহাকবি, নাট্যকার, বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক এবং অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান নিয়ে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য, যাকে মহাকাব্য বলা হয়। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী (নাটক), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, ইত্যাদি আরও অনেক রচনা।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের আবক্ষ মূর্তিসহ স্মৃতিস্তম্ভ।

কবির ব্যক্তিগত জীবন ছিল অনেকটা নাটকীয় এবং বেদনাঘন। তাঁর শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায়ে তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেন নি। তাছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। জানা যায় পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এই সময় কবিকে আর্থিক সাহায্য করতেন। কবির স্ত্রী হেনরিয়েটার মৃত্যুর তিনদিন পরে ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জুন কলকাতা জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কপর্দকহীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই মহাকবি। কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোড ক্রিশ্চিয়ান সেমেটারিতে সমাহিত করা হয় তাঁকে। তাঁর সমাধিতে লেখা বিখ্যাত সমাধি-লিপি তিনি নিজেই লিখে রেখে গিয়েছিলেন। কবি জীবনের অন্তিম পর্যায়ে জন্মভূমির প্রতি তাঁর সুগভীর ভালোবাসার চিহ্ন রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় পংক্তিমালায়। ফেলে আসা জন্মভূমির প্রতি তার গভীর এই আকুতি চিরকাল বহন করে গেছেন কবি যার কিছুটা আভাষ পাওয়া যায় তাঁর কপোতাক্ষ নদ কবিতায়।

সমাধি লিপি

‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব

বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধি স্থলে

(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি

বিরাম)মহীর পদে মহা নিদ্রাবৃত

দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!

যশোরে সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ-তীরে

জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি

রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী’

কপোতাক্ষ নদ

সতত,হে নদ, তুমি পড় মোর মনে

সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;

সতত (যেমতি লোক নিশার স্বপনে

শোনে মায়া-যন্ত্রধ্বনি) তব কলকলে

জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!

বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,

কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?

কথাগুলো কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের “কপোতাক্ষ নদ” কবিতার অংশ।

ছবি সূত্রঃ ছবি নেয়া হয়েছে নেট থেকে।

বর্ণনা : আংশিক নিজস্ব, আংশিক সংগৃহীত ও সংকলিত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন