শুক্রবার | ৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:৪০
Logo
এই মুহূর্তে ::
মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমছে, সঙ্কটে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল : তপন মল্লিক চৌধুরী ফল্গু নদীর তীরে একটি ছোট শহর এই বুদ্ধগয়া : বিজয় চৌধুরী শাহিস্নান নয়, আদতে কথাটি ছিল সহিস্নান : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ভূতের গল্পো ‘হোমস্টে’ রহস্য ঘেরা বলিউডের নক্ষত্রপতন : রিঙ্কি সামন্ত বাঁকুড়ার দু-দিন ব্যাপী দেশীয় বীজ মেলায় দেশজ বীজের অভূতপূর্ব সম্ভার পেজফোর-এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ২০২৫ এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সরস্বতীর উৎস সন্ধানে : অসিত দাস ‘সব মরণ নয় সমান’ সৃজনশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে যথোচিত মর্যাদায় স্মরণ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সিপিএম-এর রাজ্য সম্মেলন, তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে খামতি রয়েছে দলে : তপন মল্লিক চৌধুরী প্রথম পাঠ — মার্কসবাদের বিশ্বভ্রমণ : সন্দীপন চক্রবর্তী বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে ‘খানাকুল বাঁচাও’ দাবিতে সরব খানাকুল-সহ গোটা আরামবাগের মানুষ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত ত্র্যম্বকেশ্বর দর্শনে মোক্ষলাভ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কুম্ভমেলায় ধর্মীয় অভিজ্ঞতার থেকে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেশি : তপন মল্লিক চৌধুরী রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন ৭ লক্ষ টন ছাড়াবে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘হিড়িক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি অধরা, আমার আলোকপাত : অসিত দাস বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’ বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

মুর্শিদাবাদের আমকথা (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৪৯১ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

আম চাষ ভালোবাসার শ্রম। তৎকালীন নবাবরা মিষ্টি, রসালো ফলের প্রতি এতটাই অনুরাগী ছিলেন, কৃষকদের বাগান স্থাপন করতে এবং পণ্যটি আরও ভাল করার জন্য পরীক্ষা করতে উত্সাহিত করতেন। পরিণামস্বরূপ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের আম সৃষ্টি হয়

যার মধ্যে অনেকগুলি দুর্ভাগ্যবশত বিলুপ্তির পথে। এর মধ্যে রয়েছে দিলপাসন্দ, নবাবপাসন্দ, মির্জাপাসন্দ, রানিপাসন্দ, সারেঙ্গা, কালাসুর এবং আরও কয়েকটি। এই প্রজাতির উৎপত্তি নিয়ে অসংখ্য গল্প রয়েছে। যেমন —

রানীপাসান্দের কথাই ধরা যাক। এই প্রাচীন জাতটি মুর্শিদাবাদে বিকশিত হয়েছিল এবং এটি জেলার ঐতিহ্যের অংশ। মুর্শিদাবাদের কেল্লা নিজামতের দেওয়ান রাজা প্রসন্ন নারায়ন দেব নামকরণ করেন রানীপসন্দের।রানীরা বিশেষ করে কাশিমবাজারের রানীরা এই আম খুবই ভালবাসতেন।

তৎকালীন নবাবের প্রিয় স্ত্রীর পছন্দ হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে। এর বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে তাড়াতাড়ি পরিপক্ক হওয়া, মিষ্টি শাঁস এবং এটি পাকলে উজ্জ্বল হলুদ রঙের হয়।

হিমসাগর খুব জনপ্রিয় একটি আম যা মুর্শিদাবাদ থেকে সারা ভারত তথা বিদেশেও পরিচিতি লাভ করে। কলকাতা বা শহরতলী বাজারে হিমসাগর বলে যে আম বিক্রি হয় তার অধিকাংশই সাধারণ বোম্বাই আম। আসলে সাদৌলা জাতের আম।

মোলামজাম আম মুর্শিদাবাদে চাষ করা একচেটিয়া এবং মূল্যবান জাত। এটি খুব সুস্বাদু তবে খুব ছোট শেলফ লাইফ রয়েছে। শোনা যায় মোলামজাম আম যে মুহূর্তে গাছে পাকবে তখনই গাছ থেকে পেড়ে খেয়ে ফেলতে হয়, তবেই মিলবে প্রকৃত স্বাদ ও গন্ধ। নবাবী আমলে এর জন্য বিশেষ লোক এর ব্যবস্থা করে রাখা হতো। শোনা যায় ছত্রিশ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য।

কোহিতুর হল সব আমের মধ্যে সবচেয়ে উপাদেয় এবং সংবেদনশীল, এটির একটি বিস্ময়কর স্বাদ আছে কিন্তু এটি হ্যান্ডেল করা সবচেয়ে কঠিন আম। সোনালি হলুদ রঙের, কোহিতুরকে তাজা রাখতে তুলো দিয়ে মুড়ে রাখতে হয়। প্রতি ১২ ঘন্টা পর, আমটি ঘুরিয়ে দিতে হবে যাতে এটি সমানভাবে পাকে। অতীতে, একজন ব্যক্তির সম্পদ বলতে তার বাগানে কোহিতুর গাছের সংখ্যা এবং তিনি কীভাবে এই আমগুলি পরিচালনা করেছিলেন তা দিয়ে পরিমাপ করা হত। কশিমবাজারের মহারাজার বাগানে ৫০টির বেশি কোহিতুর গাছ ছিল। ১৭৭০ দশকের গোড়ার দিকে কোহিতুর একচেটিয়াভাবে নবাবদের বাগানে জন্মাতো। হাকিম আগা মহম্মদির বাগানে এই জাতের আম প্রথম তৈরি করা হয়। নবাব ওয়ালা কাদের হোসেন আলী মির্জার তৃতীয় পুত্র নবাব আলী মির্জা সাহেব এই জাতটি তৈরি করান।

২০১৮ সালে কোহিতুর আমের জন্য জিআই ট্যাগ দাবি করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এর একটি আমের দাম ১৫০০ টাকার বেশি। রাজভোগ্য এই আমটি কাটারও একটি বিশেষত্ব আছে। ছুরি অথবা বঁটি নয় বাঁশের চাঁচরিদিয়ে এই আম কাটতে হয়। শোনা যায় নবমিয়া হলে এই আম খাওয়া হত সোনার কাঠি দিয়ে। গাছগুলিকে পাহারা দেয়ার জন্য মোতায়েন থাকতো আম-পেয়াদা।

মুর্শিদাবাদের জনপ্রিয় একটি আম হলো চম্পা।

সুন্দর হলুদ রঙের আমটির গন্ধ চম্পা ফুলের মতো। এর নামের সাথে সম্পর্কিত নানা জনপ্রিয় গল্প রয়েছে। জনপ্রিয় গল্পটি হলো, মুঘল দরবারের বিখ্যাত গণিকা ছিলেন চম্পাবতী। নবাব তার প্রেমেই মশগুল হয়ে এই সুস্বাদু আমের নাম দেয় চম্পা (চম্পাবতী থেকে চম্পা) মাঝারি সাইজের গোল আমটি অত্যন্ত মিষ্টি কোমল ও সুগন্ধযুক্ত। এই আম বিদেশেও খুব জনপ্রিয় এবং বেশিরভাগই উপসাগরীয় দেশগুলিতে রপ্তানি করা হয়।

‘লস্কর সিকান’ মুর্শিদাবাদের পাটক্যাবাড়ি এলাকায় এই জাতের আমের উদ্ভব। একটু বড় আকারে হয়, পাকে জুলাই মাসে। আমের গায়ে কালো কালো দাগ দেখে চেনা যায়।

মুর্শিদাবাদের শেষ গদ্দিনশিন বেগম ‘হার হাইনেস’ নবাব ফিরদৌস মাহাল সাহেবা নামকরণ করেন ‘ফিরদৌস পসন্দে’র। একটি উৎকৃষ্ট জাতের আম।

রওগণী একটি উৎকৃষ্ট জাতের আম। রওগণী অর্থাৎ চর্বি। এ আমের ত্বক চর্বির মতোই খুব চিক্কন ও তেলতেলে। এই আমকে সৈয়দ হোসেন আলী মির্জা ভারতের সর্বত্র পরিচিত করান।

বিমলি : মীরজাফরের শাসনকালে নতুন জাতের আম চাষের জন্য বিমলী নামে এক দাসীকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তার কঠোর পরিশ্রমে খুশি হয়ে তার নামে একটি নতুন আমের নামকরণ করা হয়। এই জাতটি লালচে হলুদ রঙের এবং রসালো মিষ্টি শাঁসযুক্ত, ওজন ২০০-২৫০ গ্রাম।

এনায়েত পসন্দ : মুর্শিদাবাদের ‘পসন্দ’ সিরিজের অংশ এই জনপ্রিয় আম। এনায়েত খান, একজন জায়গিরদার বা স্থানীয় শাসক বা ওমরাহ ছিলেন যাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় এই আমের জাত তৈরি হয়। মাঝারি আকারের আম, ওজন ২০০-৩০০ গ্রাম, ইস্তিন-চর্মযুক্ত, রসালো এবং একটি স্বাদযুক্ত সজ্জা রয়েছে।

কালাপাহাড় : এটির চেহারাটি একটি বড়, কালো সবুজ রঙের চামড়ার মতো যা পাকার পরেও একই থেকে যায়। পৌরাণিক কাহিনী বলে, কালাপাহাড় ছিলেন কররানী রাজবংশের এক দুর্ধর্ষ সিপাহসালার। তারই নাম অনুসারে এই কালাপাহাড় নামকরণ হয়। কারণ কালো রংয়ের প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া গেছিল এই জাতের আমের মধ্যে।

মুর্শিদাবাদের ‘শাদুল্লা’ নাকি তৈরি করেছিলেন বিখ্যাত শাহরা। ‘বিমলি’ আমটি মুর্শিদাবাদের খুব জনপ্রিয়। রাজাওয়ালা বাগ থেকে এই আম মুর্শিদাবাদ এর সর্বত্রই দেখা যায়।

এরকম নানা গল্প লুকিয়ে রয়েছে মুর্শিদাবাদের নানান বাগানে। এছাড়াও বেশ কিছু আম যেমন — দিলসাদ, গুলাব খাস, সবজা, সাদেক পসন্দ, সবদারপসন্দ, বারোমাসিয়া দশেরি ছোট, ফজরি, নিলাম, শিরিদাহান,রাজাপুরী এনায়েত পসন্দ, তাইমুড়িয়া,দিলশাদ আলী,চৌসা, নিলম ইত্যাদি মুর্শিদাবাদ এর নবাব বা নবাব নাজিমদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি করা হয়েছিল যেগুলি বেশকিছু নষ্ট হয়ে গেলেও অনেক আমেরই নানা রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন নামে আজও নিয়মিত চাষ হচ্ছে।।

তবে বহু ভালো আম বাগান গত কয়েক বছরের কেটে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে তার সঙ্গে নষ্ট হয়েছে বিরল প্রজাতির বহু গাছ। স্বভাবতই বেশ কিছু আমের শুধু গাল ভরা নামটুকুই রয়ে গেছে, বাস্তবে তার দেখা মেলা ভার। মুর্শিদাবাদে আমের স্বাদ ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো পুরনো আমের গাছের রমরমা। একেই বয়স বেশি তার ওপর ভালো রক্ষণাবেক্ষণ, সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক প্রয়োগ, কৃষিবিজ্ঞানীদের সঠিক পরামর্শ নেওয়া হয় না।

তবে আমের সাথে আম বাঙালিদের গভীর একটি সম্পর্ক আছে এটাই সর্বোপরি সত্য। মুর্শিদাবাদের গর্ব এই আম। এটি আমাদেরই।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন