ছাত্রের খাতা দেখছিলাম, যমক-অলংকারের উদাহরণে লিখেছে—‘অনাদরে পাওয়া যায় কত আনারস’—আসল কথা হবে—‘আনাদরে পাওয়া যায় কত আনারস’—‘আনা’-দরে আনারস পাওয়ায় ‘আনা’ যমক-এর উদাহরণ হলেও বাঙালির কোনও যমজ বা যকম নেই, বাঙালির কোনও ‘জেরক্স’ হয় না। ছাত্রের ভুল লেখা আমাকে জীবন শুধরে নিতে শেখালো। এককালে বাঙালিয়ানা আনা-দরে পাওয়া যেত, আজ বাঙালিয়ানা-র সত্যিই অনাদর। লন্ডন থেকে নিরোদ সি চৌধুরী অনেক আগেই হুঙ্কার ছেড়েছিলেন—‘বাঙালি কি বাঙালি থাকিবে? নাকি মানুষ হইবে?’ রাগে-ক্ষোভে-চুল ছিঁড়ে বাঙালির বাপবাপান্ত করে তিনি লিখেছিলেন বাঙালির গায়ে জ্বালা ধরানো সেই বই ‘আত্মঘাতী বাঙালি’।
বাঙালি আত্মঘাতী কি না, বাঙালি বিশ্বায়ন থেকে সরে এসে নিজেকে নববর্ষের চাঁদমালায় আবদ্ধ রাখবে কি না, নবপত্রিকা, কচি ডাব, এক হাতি নতুন গামছা, জলপূর্ণ নবঘটের উপর রেখে, সিঁদুরের স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে, দড়ি বাঁধা খেরোখাতা একই ঝুড়িতে চাপিয়ে একলা (!) বৈশাখে কি বাঙালি দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দিরে সর্পিল লাইন আজও তৈরি করবে? জানি না, দূর থেকে হাওড়া ব্রিজ-কে দেখি, রবীন্দ্র সেতু, কলকাতা-হাওড়ার যোগাযোগ এই হাওড়া ব্রিজ—কত ছবিতেই যে প্রতীকী প্রয়োজনে ব্যবহার হয়েছে, তা হিসেবের বাইরে। আজ সেই রবীন্দ্র সেতুকে আধুনিকতায় তুচ্ছ করে দিয়েছে হালফিলের সেতার-এর তারে বাঁধা দ্বিতীয় হুগলি সেতু—বিদ্যাসাগর ব্রিজ। বাঙালির বিবর্তনের দুই প্রতিস্পর্ধী চরিত্র একটি হাওড়া ব্রিজ-রবীন্দ্র সেতু সেকালের বাঙালির উত্তম-সুচিত্রা। অন্যটি স্লিম-ট্রিম-জিম সাধিকা করেন ফিগার বিদ্যাসাগর সেতু আজকের নতুন বাঙালি—দেব-শুভশ্রী-অঙ্কুশদের জগৎ।
বাঙালি এখন সাদা-কালো থেকে কালার ‘ফ্লিম’! জীবজগতে বিবর্তন অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার যদি হয়, তবে বাঙালি কী দোষ ঘটালো? বাঙালির তো বিবর্তন ঘটবেই! বাঙালি তার বং-কানেকশন বাড়ালো, বাঙালিয়ানার মোম-পুত্তলিকাকে জাদুঘরে না রেখেই?
আমার কৈশোরে বাঙালি বিয়েবাড়িতে দেখেছি গিলে করা পাঞ্জাবির আবেদন। উত্তমকুমারও পরেছেন গিলে-পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবি বাঙালিকে ছাড়েনি, বরং পাঞ্জাবির হাট বাঙালি জীবনে ‘কিম্বদন্তী’ হয়ে গেলেও, সে হাট-বাজারে শেরোয়ানি, কুর্তা, কাবুলি স্যুট, জোব্বা, লং-কুর্তা, পাঠানি-স্যুট হরেকরকম মান্যবর রাজপোশাকের ভিড়ে বাঙালির গিলে করা পাঞ্জাবি কোথায় যে হারিয়ে গেল! পাঞ্জাবির দুটি হাতে গিলে করে কুঁচি কুঁচি ভাঁজ ফেলা হত। গিলে করাও ছিল বেশ দক্ষতার আর পরিশ্রমের কাজ। কুঞ্চিত হাতার পাঞ্জাবি ধুতি পায়ে নাগরা বা পাম শু উত্তর কলকাতা থেকে পবনবাহিত হয়ে আসা হিং-য়ের কচুরি, ফুলকপি-বাদামের গরম সিঙারার গন্ধ বা টাটকা রস ঝরা তাজা জিলিপি বাঙালিয়ানার নিখুঁত আবহ চিত্র। গিলে-র সেই যন্ত্রগুলোই বা গেল কোথায়?
হিংয়ের কচুরি সতীত্ব হারিয়েছে অনেক দিন। সতীত্ব হারিয়ে সে কিন্তু সুস্বাদু হতে পারেনি। বরং বাঙালিত্ব হারিয়ে আজ সে ডালপুরি। মাথায় ঝুড়ির মধ্যে হরেক রঙিন মিষ্টির পশরা নিয়ে তালপাতার টোকায় চাপা দিয়ে উত্তর কলকাতার গলিতে যে মিষ্টি বিক্রেতারা সত্তরের দশকে সকালবেলায় জলখাবার বিক্রি করতো—তাঁরা কি জানতেন একদিন তাঁরা চিরতরে হারিয়ে যাবেন, তাঁদের জায়গা নেবে বাটার-ব্রেড, চাউমিন, পিৎজা, বার্গার বা স্বাস্থ্যকর ওটস-ফ্রুটস পিপারেশন। পরাধীনতার কত যে রকমফের! বাঙালি গতিতে ফাস্ট না হলেও ফাস্ট ফুডে আসক্ত।
‘আমসত্ত্ব দুধে ফেলি তাহাতে কদলী দলি সন্দেশ মাখিয়া দিই তাতে’—বাঙালির সেই রাজকীয় খাদ্যপদ আজ কোন বাঙালির কোন সন্তান পছন্দ করবে? কোন বাঙালি দেবীর কাছে প্রসাদ মাঙবে—‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে পাতে!’ ‘লাইজল-ডেটলে নিশ্চিহ্ন ‘পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।’
বিরিয়ানি, চিলি চিকেন, মাটন চাপ শব্দগুলো হাঁটু-ফাটা জিন্সের মধ্যে দিয়ে কখনও যে বাঙালি সমাজে ঢুকে গেল। হারিয়ে গেল সেই প্রবাদ—‘এক ঝুড়ি তারকেশ্বরের কুমড়োর চেয়ে একটা ভীম নাগের সন্দেশ অনেক উপাদেয়’। কোয়ানটিটি নয় কোয়ালিটি। বাঙালির জীবনে শেষ পাতে দই, কই(?) হয়ে গেল! সিন্থেটিক শাড়ি পরে সে জায়গা নিল আইসক্রিম। ভীম নাগ বাঙালিয়ানা হারালেন ভিআইপি হয়ে।
শ্রাবন্তী মজুমদারের মায়াবী গলায় ত্বক যদি কেটে-ফেটে যায়, খসখসে যদি হয়, রোদ্দুরে ঝলসায়—সুরভিত সুরেলা কণ্ঠের অ্যান্টিসেপটিক বেরোলীনের জায়গায় বাঙালি আজ লীন—সেখানে দেড়ো বাবা রামদেব নাকি কণ্ঠে বলে চলেছেন, পতোন্জলি লায়া হ্যায় অ্যালোভেরা ফেস ওয়াস—শুদ্ধ, প্রাক্রিতিক। বাঙালির হারিয়ে যাওয়া, নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার নিখাদ বৃত্তান্ত আমার মগজের স্মৃতি-স্ক্রিনে। হয়তো বাঙালির হারিয়ে যাওয়া নয়, বাঙালিয়ানার হারিয়ে যাওয়া।
কুমোর পাড়ার গোরুর গাড়ি, বোঝাই করা কলসী হাঁড়ি! নলেন গুড় এখন দাঁতের মাজনের টিউব প্যাকে। নবতিপর বাবার এটাই হয়তো বাঙালিয়ানা, তিনি নাগরির গুড় না হলে খাবেন না। কথামৃত-য় ঠাকুর বলে দিয়েছিলেন, গুড়ের নাগরির পায়ু ছিদ্রের কার্যকলাপের গুরুত্ব। খেজুর গাছে এখনও কলসী বাঁধা হয়, ঝুপঝাপ অন্ধকারের মতো কোথাও কোথাও শ্যাওলার মতো ঐতিহ্য হয়তো নাছোড়বান্দা। বাঙালিয়ানাকেও তো বিশ্ব-র দরবারে ধরা যেতে পারে তার সমস্ত পুরাঘটিত বিশেষত্ব নিয়ে। সেটা কি শুধু নস্টালিজকই হবে? মোটেই যে তা নয়, আমাদের বিশ্ব-বাংলা তা প্রমাণ করেছে।
খাটা পায়খানা আর ফিরে আসবে না কখনওই। বিংশ শতাব্দীর নব্বই দশকেও বাংলার প্রাচীন শহরে দেখা গেছে ঠেলাগাড়িতে মল যাচ্ছে রাজপথ ধরে। সমাজের শত্রুদের আজ চোখে পড়ে বেশি, সমাজের বন্ধুদের চেয়ে। সমাজবিজ্ঞান পাঠ্য বিষয় জানার অনেক আগেই প্রাইমারি স্কুল পাঠ্যে আমরা পড়ে ফেলেছিলাম, মেথর আমাদের সামাজিক বন্ধু। ‘মেথর’ শব্দটির অর্থ খুঁজতে হতো না, চোখের সামনেই দেখা যেত জ্যান্ত দেবতাদের।
ভুনি খেচুরি, ইলিশ ভাপা, মোরলার টক, চিংড়ি চচ্চড়ি, পোস্ত বড়া, কাঁচাকলার গুলি কাবাব, মুসুরির ডালের বড়ার ঘণ্ট, কচু ঘণ্ট, কাসুন্দি, আমতেল—এরা কি সকলেই একসময়ের বাঙালি? বাংলা নববর্ষ এলেই মনে পড়ে বাঙালির কথা। কাঙালির সঙ্গে বাঙালির এমন আনুপ্রাসিক মিল যে দুজনের অর্থগত মিল থাকাটাও খুব অসম্মানের নয়। কাঙালি বাঙালির মাসতুতো ভাই, বাঙালির কাঙালিপনা প্রবাদপ্রতিম—শুধু একবার ঘোষণার প্রয়োজন, অমনি কাতারে কাতারে বাঙালি দাঁড়িয়ে যাবে মোচ্ছব পঙ্ক্তিতে—সে অষ্টমীতে বেলুড় মঠে খিচুড়ির লাইন থেকে শুরু করে—কল্পতরুতে কাশীপুর উদ্যানবাটি, গোটা কলকাতায় সারারাত লাইন দিয়ে পুজোমণ্ডপ ঘোরা, সিনেমার টিকিট, খেলার টিকিট এমনকী জুতো কেনার জন্য বাঙালির লাইনের হিড়িক প্রমাণ করেছে হ্যাঙালি-ভ্যাঙালি-কাঙালি বাঙালির—‘মন্বন্তরে মরিনি আমরা,/মারি নিয়ে ঘর করি/আমরা হেলায় নাগের খেলায়/নাগের মাথায় চড়ি।’ এ নাগ পদ্ম-নাগ হলেও তার মাথায় চড়তে বাঙালি ভয় পায় না। ফুলকো লুচির মতো বাঙালির ফুসফুস নির্ভীক তাজা বাতাসে ভরপুর, আলুর দমের মতোই বাঙালির উদ্যম উপাদেয়।
বাঙালির বাঙালিত্বকে বাঙালির অনুভব করতে কতদিন লেগে গেল। আমাদের অতি প্রিয় আদরের দিদি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বঙ্গবিভূষণ, বঙ্গভূষণ পুরস্কারগুলো চালু হলো। বাঙালি বাইরে পুরস্কৃত হলেও নিজ ঘরে ছিল ব্রাত্য। সেই খরা কাটালেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী দিদি।
বাংলার লক্ষ গ্রাম একদিন পটলচেরা চোখের সুহাস্যা রমণী ছিল বলে জীবনানন্দ আক্ষেপ করেছিলেন—তাঁর ১৯৪৬-৪৭ কবিতাতে। ফেলে আসা গ্রাম্য-সুখ স্মৃতি রোমন্থনে তিনি লিখেছিলেন, ‘ডাক শাখে উড়ে এসে সুধা খেয়ে যেত’—এই কাক-শালিখের যে দৃশ্য আপাত হারিয়েছিল বাংলার গ্রাম, সে গ্রাম আবার পুনর্জীবন পেয়েছে আমাদের দিদি মুখ্যমন্ত্রীর অন্নপূর্ণা- নেতৃত্বে—‘ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো/দীপালিকায় জ্বালাও আলো/আপন আলো/সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে…’
বাংলার লক্ষ গ্রাম আজ আলোকিত, বৈদ্যুতিক পবনবাহিত সেখানের প্রাইমারি স্কুল, পানীয় জলের পরিস্রুত অমৃতধারা বইছে প্রত্যন্ত গ্রামের শিশুদের স্কুলগুলিতে। স্নেহের পরশ সিলিং ফ্যানের হাওয়া নেমে আসছে ছাত্র-শিক্ষকের মাথায়। গরমে আর স্কুল যেতে অনিচ্ছুক হবে না ছোট্ট শিশুরা। এমনিতেই গ্রামগুলিতে গ্রীষ্মের ছুটি না হয়ে বর্ষার ছুটিরই রেওয়াজ ছিল, বর্ষার সময় চাষের কাজের কারণে, পুরো পরিবারকেই মাঠের কাজে নিযুক্ত থাকতে হতো, সে সময় গ্রীষ্মে ইস্কুলের চরিত্র বদলে যেত, দুপুরবেলার ইস্কুল সকালবেলায় চালানো হতো গ্রীষ্মের দিনগুলিতে—এখন আর তার প্রয়োজন নেই। গ্রামের মানুষ সময়ের সবটুকুই ব্যবহার করতে পারবেন। রাতের বেলায় তাঁরা যে দুটি করে এলইডি বাতি পাচ্ছে, আলোকিত হচ্ছে তাঁদের রাতের অন্ধকার এবং ভবিষ্যতের আঁধারও। মানুষের নিত্য প্রয়োজন যে তিনটি জিনিস—জল, বায়ু, আলো তা পৌঁছে যাচ্ছে গ্রামে গ্রামে—গ্রামবাংলায় বাঙালির সবচেয়ে বড়ো অংশ বসবাস করেন। আমরা এখনও বাংলা বলতে বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল-ই বুঝি। বাংলার সে-ই জল-মাটি-ফুল-ফল আজ সত্যিই পুণ্য এবং পূর্ণ হতে চলেছে।
যতটুকু বাঙালিয়ানা আজও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সুবর্ণরেখা নদীর মতো, তা গ্রামবাংলায়। ভাদু-টুসু-রায়বেশে থেকে নাচনি-র নাচ সে-ও তো গ্রাম বাংলায়। ছৌ-নৃত্য হাজার বার বিদেশ ঘুরে এলেও বাঙালিত্ব হারায় না। জীবনানন্দ বাংলার মুখ দেখেছিলেন বলেই পৃথিবীর মুখ খুঁজতে আর বের হননি। গণপতির মতো বাংলা মায়ের চারপাশে বৃত্তাকারে প্রদক্ষিণ করেই কবি গোটা ধরিত্রীকে প্রদক্ষিণ করেছিলেন বলে অনুভব করেছেন। কবি নিবিড় স্নেহে লিখেছেন—‘আবার আসিব ফিরে/ধানসিড়িটির তীরে/এই বাংলায়।’
নববর্ষে আমরাও ফিরে আসি নস্টালজিক বাংলায়। আমরা মানে যারা টিভি বাংলায় আসার দশ-বারো বছর আগে জন্মেছি। অনেক পরে মোবাইল, আইপট, ল্যাপটপ, ফেসবুক, হোয়াটস্ অ্যাপ-এর জগতে এসেও ‘বাংলা’ সফ্টওয়ার খুঁজেছি। বাংলায় ফেসবুকে পোস্ট করেছি নিজস্ব মতামত, স্বাধীন চিন্তা, বিবেচনা। আমাদের শৈশব কেটেছে নববর্ষে সোনার দোকান থেকে পাওয়া গণেশ মার্কা কার্ডের ঘূর্ণি বানিয়ে ছুটে বেড়ানোয়। তরমুজ, লাড্ডু আর শরবতের সে বঙ্গ নববর্ষ যেন বাবা-মায়ের বিয়ের অ্যালবাম।
রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের টপ্পা-ঠুংরি, পঙ্কজ সাহার নদীবক্ষে বোটে চড়ে দূরদর্শন থেকে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান প্রচার অন্য এক মহালয়ার সকালবেলা মনে হতো এই কিছুদিন আগেও যেন! মহালয়া যেমন দেবী-র আগমনী বার্তা, পয়লা বৈশাখও তেমনই নতুন একটা বাঙালি বছরের শুভারম্ভ।
এ লেখার প্রথমেই পয়লা বৈশাখ কে ‘একলা’ (১লা) বৈশাখ বলেছিলাম, আমার মায়ের ঠাকুমা একবার আমাদের সামনে ১লা-কে ‘একলা’ বলেছিলেন ‘পয়লা’ শব্দটি বোধহয় ওঁর জানা ছিল না। তখন আমরা সবে বড়ো হচ্ছি, অন্যের ভুল পেলেই হইহই হাসাহাসি—না, ভালো ঠাকুমা না, ওটা মোটেই একলা বৈশাখ নয়, ওটা হবে পয়লা বৈশাখ। আজ মনে হয়, ভালো ঠাকুমা ঠিকই বলেছিলেন—‘একলা বৈশাখ’। বৈশাখ এমনিতেই বড়ো একলা, খরতাপের দাবদাহে, বৈশাখ হে মৌনী তাপস—তিনি তো একলা হবেনই। কাঠফাটা রোদ্দুরে শুধু শুধু মধুচন্দ্রিমার গালিচা পেতে লাভ কী? তবে, পয়লা বৈশাখের স্মৃতি আমাকে আজ বড়ো একলা করে দেয়। আমি আর আমার বাঙালিয়ানা ওতপ্রোত। বাঙালিয়ানা থেকে কখনও আমায় একলা করা যায় না। আজ যখন দেখি নবীন প্রজন্মে বাঙালিয়ানা চাপা পড়ে যায় হিন্দুয়ানা, হিন্দুস্থানিয়ানার কাছে, কোথাও-বা সাহেবিয়ানার কাছেও, তখন বাংলার পালাপার্বণে বাঙালিয়ানার সামিয়ানা ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়। আমার প্রজন্মের বাঙালিরা বেঁচে আছেন, এই ভরসা, আমরা স্মৃতির জাবর কেটে তাঁদের বোঝাতে চেষ্টা করি বাঙালি ঠিক কী! ওঁরা হিন্দি সিরিয়ালের মেহেন্দি পরে রিমোটের বোতাম টিপে দেয় জাতীয় চ্যানেলে, যেখানে আমার মতো মানুষ আজ বিজাতীয়।