ইক্যুমেনিক্যাল খ্রিষ্টান ট্রাস্ট (ইসিটি)-এর আয়োজনে ১৪ এপ্রিল (২০২৫) পহেলা বৈশাখে রাজধানীর মিরপুরে অনুষ্ঠিত হলো এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা। ‘‘পবিত্র বাইবেল ও আইনের দৃষ্টিতে নির্যাতিতদের করণীয়’’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অধিকার, সামাজিক অবস্থা এবং ধর্মীয় জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট গবেষক ফাদার তপন ডি রোজারিও। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে খ্রিষ্টান পরিচয়ের কারণে যেসব বৈষম্য ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন, তা অকপটে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে আমার পরিচয় যেন অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে বিশ্বাস আর অধ্যবসায়ের শক্তিতে আমি সবকিছুর মোকাবিলা করেছি।” তিনি ধর্মীয় সংহতি ও ন্যায়ের পথে চলার আহ্বান জানান।
মূল বক্তব্য প্রদান করেন অ্যাডভোকেট উত্তম হালদার। তিনি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে, ডিভোর্স এবং উত্তরাধিকার আইন সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘‘যথাযথ আইনগত সচেতনতা ও সম্প্রদায়ভিত্তিক শক্তিশালী অবস্থান ছাড়া এসব বিষয়ে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন।”
আলোচনার পর তিনি এক প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন, যেখানে বিভিন্ন চার্চ ও মণ্ডলীর পালকরা খ্রিষ্টান পারিবারিক আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন করেন। অ্যাডভোকেট হালদার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং প্রাসঙ্গিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ইসিটির চেয়ারম্যান রেভারেন্ড ইম্মানুয়েল মল্লিক বলেন, ‘‘ইসিটিকে ঘিরে নানা ধরনের চক্রান্ত হচ্ছে, কিন্তু আমরা ভয় পাই না। আমরা ঈশ্বরের ওপর ভরসা করি। তিনি যেন আমাদের শক্তি দেন সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার।”উল্লেখ্য, ইসিটি দখলের জন্য মিরপুরস্থ খ্রিষ্টানদের একটি অংশ হামলা-মামলার অনবরত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
সভাপতি শেষে সকলের জন্য প্রার্থনা পরিচালনা করেন এবং খ্রিষ্টান সমাজের জন্য ঐক্য, সাহস ও কল্যাণ কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পাস্টর ইম্মানূয়েল রত্ন, মেজর নেলসল বিশ্বাস, ডালিয়া সরকার, স্বপন চৌধুরী, পাস্টর মুফাজ্জেল হোসেন এবং রঞ্জন রোজারিও (ডিরেক্টর এডমিন, ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল)।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস, সেক্রেটারি, ইসিটি। তিনি ইসিটি’র নিয়মিত কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন এবং ইসিটি পরিচালিত একটি সামাজিক গবেষণার অগ্রগতি আলোচনা করে উপস্থিত সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। উপরন্তু নির্যাতিতদের পক্ষে এবং পাস্টরদের দাবিসমূহ তুলে ধরার জন্য একটি জাতীয় প্লাটফর্ম গড়ে তোলার কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ইসিটি থেকে স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন চার্চ ও মণ্ডলীর শতাধিক বিশিষ্ট পালক, পুরোহিত ও খ্রিষ্টান নেতৃবৃন্দ এবং ইসিটি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সকালে শুরু হওয়া আলোচনা সভা শেষে অংশগ্রহণকারীদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়। আলোচনাসভাটি অনুষ্ঠিত হয় ইসিটি কনফারেন্স রুম, সেকশন ১০, মিরপুর, ঢাকায়।