আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়ে দিয়েছে এবারে বাড়বে গরম। ইতিমধ্যে তার প্রভাবও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তীব্র দাবদাহে নাজেহাল অবস্থা গ্ৰাম থেকে শহরবাসীর। সকাল ৮টা বাজতে না বাজতেই চড়া রোদে চোখ ঝলসে যাওয়ার উপক্রম। গোটা রাজ্য জূড়ে প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। এই গরমে শরীরের পাশাপাশি যত্ন নিতে হবে চোখেরও। চোখের যত্ন না নিলে অন্ধত্ব, ক্যান্সারের ঝুঁকি ও রেটিনার ক্ষতি হতে পারে। তাই চোখের নানান ধরনের সমস্যা থেকে সাবধান! চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত তাপ চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে। দীর্ঘ ক্ষণ কড়া রোদে থাকলে চোখের ছানি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, এমনকি রেটিনার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাছাড়াও দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকার পর অনেকের চোখ জ্বালা করে, চোখ লাল হয়ে যায়, চোখের পাতা ফুলে যায়। চড়া রোদের কারণে অনেকেই ভাইরাল ও ব্যাক্টেরিয়াল কনজাংটিভাইটিসেও আক্রান্ত হন। এই সমস্যা ছাড়াও চোখের পাতার মূলে কিছু তৈল গ্রন্থি থাকে। এই গ্রন্থিতে সংক্রমণের ফলে আঞ্জনি সংক্রান্ত সমস্যাও দেখা যায়। গরমের দিনে চোখের যত্ন না নিলে অন্ধত্ব এবং ক্যানসারের ঝুঁকিও থাকে।
প্রচন্ড গরমে চোখের নানান সমস্যার লক্ষণগুলো কী কী?
গরমে চিকিৎসকেদের মতে, অতিরিক্ত তাপ চোখের ক্ষতি করে। দীর্ঘ ক্ষণ রোদে থাকলে রেটিনার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। দীর্ঘ ক্ষণ রোদে থাকার পর অনেকের চোখ জ্বালা করে, চোখ লাল হয়ে যায়, চোখের পাতা ফুলে যায়। চড়া রোদের কারণে ভাইরাল ও ব্যাক্টিরিয়াল কনজাংটিভাইটিসের ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া কড়া রোদে থাকলে চোখে ছানি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, এমনকী রেটিনার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি কেবল ত্বকের ক্ষতি করে না, চড়া রোদ ও আর্দ্রতার কারণে সমস্যা আরও বাড়ে।
৭টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ যা গ্রীষ্মকালে আপনার চোখকে প্রভাবিত করতে পারে। গ্রীষ্মের তাপের কারণে সবচেয়ে লক্ষণীয় লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল চোখ লাল হওয়া। এছাড়াও শুষ্কতা এবং জ্বালা চুলকানি হতে পারে। এসময় সূর্যের তাপে চোখের বড়সড় রোগের আশঙ্কা থাকে।
তীব্র তাপ দহনে বাড়ছে চোখে অ্যালার্জির সমস্যা।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই গরমে যারা চোখের যত্ন না নেন তাহলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এবং ক্যানসারের ঝুঁকিও কোনোভাবেই এড়ানো যায় না। গরম পড়তেই চোখের নানা রোগের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। রোজকার রুটিনে কিছু ভালো অভ্যাসই পারে চোখের নানা রোগ দূরে রাখতে। চড়া রোদ ও আর্দ্রতার মধ্যে নানা সংক্রমণ এড়াতে সাহায্য করে এই অভ্যাস। সানগ্লাস ব্যবহার: রোদের হাত থেকে চোখকে বাঁচাতে নিয়মিত সানগ্লাস পরা জরুরি। সূর্যের আলোয় থাকা ইউভি রশ্মি চোখের ক্ষতির আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। এর থেকে বাঁচতেই জরুরি সানগ্লাস। প্রচুর পরিমাণে জল ও স্বাস্থকর খাবার খেতে হবে।এছাড়া ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারও রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়। এসির হাওয়া এড়িয়ে চলুন। এসির হাওয়া ছাড়া গরমে অনেকেই অসুস্থ বোধ করেন। কিন্তু এই হাওয়া চোখের জন্য মোটেই ভালো নয়। এসির ঠান্ডা হাওয়া শুষ্ক চোখের জন্য দায়ী। তাই সরাসার এসির হাওয়া চোখে না লাগানোই ভালো।কনট্যাক্ট লেন্স পরে সাঁতার না কাটা, গরমে অনেকেই শরীরচর্চা করতে সাঁতার কাটেন। এতে চোখে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায় অনেকটাই। বড় টুপি পরে রোদে বেরনো জরুরি।
কেন গ্রীষ্মের তাপ আমাদের চোখের জন্য কঠিন হতে পারে?
চোখের সুরক্ষায় গ্রীষ্মকালে সম্ভাব্য বিপদ থেকে আমাদের চোখকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিতে হবে।
সবচেয়ে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি হল সানগ্লাস পরা। যা UV সুরক্ষা প্রদান করে। মানসম্পন্ন সানগ্লাস ক্ষতিকারক UV রশ্মিকে আটকাতে পারে এবং UV-সম্পর্কিত চোখের অবস্থার বিকাশের ঝুঁকি কমাতে পারে। তদুপরি, চওড়া ব্রিম সহ টুপি বা ক্যাপ ব্যবহার করা আপনার চোখকে অতিরিক্ত ছায়া দিতে পারে, সরাসরি সূর্যালোকের এক্সপোজার কমিয়ে দেয়। সূর্যের রশ্মি সবচেয়ে শক্তিশালী হলে (সাধারণত সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে) পিক আওয়ারে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, গ্রীষ্মের তাপের কারণে চোখ লাল হওয়া। এটি জ্বালা বা শুষ্কতার প্রতিক্রিয়া হিসাবে চোখের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে হতে পারে। শুষ্কতা এবং জ্বালা উচ্চ তাপমাত্রা এবং কম আর্দ্রতার কারণে গ্রীষ্মকালে শুষ্ক চোখের লক্ষণগুলি আরও খারাপ হতে পারে। এর ফলে চোখে খিঁচুনি, জ্বালাপোড়া হতে পারে।
এছাড়া গ্রীষ্মকালে বাতাসে পরাগের মতো অ্যালার্জেন বেশি থাকে, যা চোখে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এটি তীব্র চুলকানির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে চোখের পাতার চারপাশে এবং চোখের কোণে। আবার চোখে জল অস্বাভাবিকভাবে আসতে পারে। প্রসঙ্গত, কীভাবে গ্রীষ্মের তাপকে পরাজিত করবেন এবং আপনার চোখকে অস্বস্তি এবং জ্বালা থেকে রক্ষা করবেন তা নিয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
গরমের রোদে চোখের কি কি ক্ষতি হতে পারে? হলে তা কি হতে পারে?
আমরা জানি সূর্যালোকের অনেক উপকারিতা আছে, কিন্তু এই সূর্যালোকে অতিরিক্ত সময় থাকার ফলে এর অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের চোখের উপর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
সূর্যের আলো থেকে কর্নিয়াল বার্ন বা ফটো কেরাটাইটিস, টেরিজিয়াম, পিঙ্গিকিউলা, ছানি, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং এমনকি চোখের ক্যান্সার হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।
প্রচন্ড গরম থেকে চোখকে রক্ষা করার উপায় কি? শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের চোখ কি আলাদা আলাদা ভাবে রক্ষা করতে হবে?
প্রচন্ড গরমে চোখ ভালো রাখতে চোখে রোদ লাগানো কমাতে হবে, ফলে যতটা সম্ভব রোদে বেরোনো কম করতে হবে। যদি রোদে বেরোতেও হয় তাহলে অতি অবশ্যই সানগ্লাস পড়ে বেরোতে হবে। সানগ্লাস কেনার সময় দেখে নিতে হবে তা UV Protected কিনা। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করতে হবে যাতে কোনভাবেই শরীরে ডিহাইড্রেশন না হয় অতিরিক্ত ডিহাইড্রেশনে আমাদের চোখ জল তৈরি করতে অক্ষম হয় এবং চোখের ড্রাই আই উপসর্গ দেখা দেয়।
অতিরিক্ত সময় ধরে সূর্যালোকে থাকার ফলে স্কিন ক্যান্সার হতে পারে। স্কিন ক্যান্সার শরীরের যেকোনো জায়গায় এমনকি চোখের পাতায় বা চোখের আশেপাশে স্কিনেও হতে পারে। তাই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে অতি অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
প্রশস্ত কিনারা দেওয়া টুপি পরেও অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক ঝুঁকি কিছুটা কম করা যেতে পারে।
শিশু কিশোর ও বয়স্ক সকলকেই একই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
বাইরে রোদ থেকে এসে চোখের যত্ন কিভাবে নেওয়া উচিত?
১) বাইরে থেকে আসার পর প্রথমে হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে এবং চোখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিতে হবে।
২) পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করতে হবে এবং শরীরকে হাইড্রেটেট রাখতে হবে। ডিহাইড্রেশনের ফলে চোখে জ্বালা ভাব,খচখচ করা এইসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
৩) লুব্রিকেটিং আই ড্রপ ব্যবহার করলে চোখের আর্দ্রতা বজায় থাকে। নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা ও চিকিৎসকের লেখা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এই ড্রপ ব্যবহার করা উচিত।
গরমের সময় চোখের কি কি রোগ হতে পারে? এর প্রতিকার কি?
গ্রীষ্মকালে অত্যাধিক তাপের ফলে ড্রাই আই, কনজাংটিভাইটিস, স্টাই, এলার্জির মতো রোগ হতে পারে।
ড্রাই আই এবং কনজাংটিভাইটিসের ক্ষেত্রে চোখের লাল ভাব, জল পড়া, চুলকানি এইসব উপসর্গ দেখা দেয়।
স্টাই মূলত এক প্রকারের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন এর ফলে চোখের পাতা ফুলে যায় এবং সেই সাথে লাল ভাব ও ব্যথা অনুভব হয়।
অতিরিক্ত তাপ দূষণ ধুলোবালি সবই গ্রীষ্মকালে চোখের এলার্জির কারণ হতে পারে। চোখ চুলকানো, লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, খচখচ করা এই সবই অ্যালার্জির উপসর্গ হতে পারে।
কিছু নির্দিষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করে গ্রীষ্মকালীন চোখের রোগের প্রতিকার সম্ভব।
১) নিজস্ব স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা।
২) চোখে বারে বারে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
৩) গামছা, তোয়ালে বা কসমেটিক প্রোডাক্টস অন্যের সাথে শেয়ার না করা।
৪) সাঁতার কাটার সময় অতি অবশ্যই চশমা পরা।
উপরোক্ত নির্দেশিকার দ্বারা চোখের রোগ কিছুটা প্রতিকার করা গেলেও চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলাটাই বাঞ্ছনীয়। শেষে সকলের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলব স্ব-চিকিৎসা এবং স্ব-ঔষধ থেকে বিরত থাকুন।
ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, দৃষ্টিদীপ আই ইনস্টিটিউট, ডানকুনি, হুগলি, মোবাইল-৮০১৭৩০৯০৫৮
অনুলিখন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়