মঙ্গলবার | ৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:০৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (পঞ্চম পর্ব) : জমিল সৈয়দ যশোধরা — এক উপেক্ষিতা নারীর বিবর্তন আখ্যান : সসীমকুমার বাড়ৈ কলকাতার কাঁচাভেড়া-খেকো ফকির ও গড়ের মাঠ : অসিত দাস ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ রামনবমী পালন এবং হুগলী চুঁচুড়ার শ্রীরামমন্দির : রিঙ্কি সামন্ত ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (তৃতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ মিয়ানমারে ভূমিকম্প — প্রতিবেশী দেশের জনগণের পাশে বাংলাদেশ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (দ্বিতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ হুমায়ুন-এক স্মৃতি-এক আলাপ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সনজীদা যার সন্তান : শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ অবসর ঠেকাতেই মোদী হেডগেওয়ার ভবনে নতজানু : তপন মল্লিক চৌধুরী লিটল ম্যাগাজিনের আসরে শশাঙ্কশেখর অধিকারী : দিলীপ মজুমদার রাঁধুনীর বিস্ময় উন্মোচন — উপকারীতার জগৎ-সহ বাঙালির সম্পূর্ণ মশলা : রিঙ্কি সামন্ত রামনবমীর দোল : অসিত দাস মহারাষ্ট্রে নববর্ষের সূচনা ‘গুড়ি পড়বা’ : রিঙ্কি সামন্ত আরামবাগে ঘরের মেয়ে দুর্গাকে আরাধনার মধ্য দিয়ে দিঘীর মেলায় সম্প্রীতির মেলবন্ধন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’ পত্রিকার ২২তম বর্ষ উদযাপন : ড. দীপাঞ্জন দে হিন্দিতে টালা মানে ‘অর্ধেক’, কলকাতার টালা ছিল আধাশহর : অসিত দাস আত্মশুদ্ধির একটি বিশেষ দিন চৈত্র অমাবস্যা : রিঙ্কি সামন্ত চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয় : ড. দীপাঞ্জন দে রায়গঞ্জে অনুষ্ঠিত হল জৈব কৃষি বিপণন হাট অশোকবৃক্ষ, কালিদাসের কুমারসম্ভব থেকে অমর মিত্রর ধ্রুবপুত্র : অসিত দাস কৌতুকে হাসতে না পারলে কামড় তো লাগবেই : তপন মল্লিক চৌধুরী জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর ও রোহিঙ্গা সংকটে অগ্রগতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন এথেন্সের অ্যাগনোডাইস — ইতিহাসের প্রথম মহিলা চিকিৎসক : রিঙ্কি সামন্ত সন্‌জীদা খাতুন — আমার শিক্ষক : ড. মিল্টন বিশ্বাস হিমঘরগুলিতে রেকর্ড পরিমাণ আলু মজুত, সস্তা হতে পারে বাজার দর : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শিশুশিক্ষা : তারাপদ রায় জঙ্গলমহল জৈন ধর্মের এক লুপ্তভুমি : সসীমকুমার বাড়ৈ
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অন্নপূর্ণা পূজা ও বাসন্তী পূজার আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ

জমিল সৈয়দ / ৫৩ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫

উদয়গিরি

উদয়গিরির খননকাজের ফলে আবিষ্কৃত হয় ইটের তৈরি একটি বিশাল মঠ কমপ্লেক্সের ধ্বংসাবশেষ (দৈর্ঘ্য ৩৫.০ মি X প্রস্থ ৩৫.০ মি), ৪.৮০ মিটার উঁচু একটি মহাস্তূপ যার প্রতিটি পাশেই ধ্যানী বুদ্ধের মূর্তি রয়েছে। সবগুলোই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা খোদাই করা।

পাওয়া গেছে একটি পাথরের উঁচু প্ল্যাটফর্মের উপরে একটি চৈত্যগৃহ। এই স্থান থেকে বুদ্ধ এবং অন্যান্য বৌদ্ধ দেবদেবীদের ভাস্কর্য যেমন বজ্রপাণি, জম্ভল, তারা, মঞ্জুশ্রী, ভৃকুটি, হরিতি, চুণ্ড, বিরোচন, অবলোকিতেশ্বর, মৈত্রেয়, অপরাজিতা, বসুধারা ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। পাথর, পোড়ামাটির এবং ধাতুর তৈরি অনেক প্রাচীন নিদর্শনও উদ্ধার করা হয়েছে।

যদিও এইসব মূর্তি উদয়গিরি চত্বরে নেই। হয়তো অন্যত্র সরিয়ে রাখা হয়েছে। অন্য কোনও মিউজিয়ামে।

শুধু খোলা চত্বরে পড়ে আছে দু-একটি মূর্তি, সেগুলো নমুনা হিসেবে রাখা হয়েছে কি না, জানি না। কিন্তু রোদে-বৃষ্টিতে এই মূর্তিগুলোও ক্ষয়ের পথে এগিয়ে চলেছে।

এই বৌদ্ধবিহারের সময়কাল প্রথম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যে। অর্থাৎ তখন সম্রাট অশোক নেই। কিন্তু গুপ্ত যুগ থেকে পাল যুগ পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন রাজারা।

৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিউয়েন সাং এই এলাকায় এসেছিলেন। তখন রাজা ছিলেন শিলাদিত্য। কে এই শিলাদিত্য? অনেকের অনুমান, এই শিলাদিত্য হলেন রাজা হর্ষবর্ধন।

হিউয়েন সাং লিখে গেছেন, এই দেশটির পরিধি প্রায় ৭,০০০ ফুট (সওয়া এক মাইল), জলবায়ু উষ্ণ, মাটি উর্বর এবং প্রচুর পরিমাণে শস্য ও ফল উৎপন্ন হয়। মানুষ ছিল অসভ্য, লম্বা এবং হলুদাভ-কালো বর্ণের, তারা শিক্ষা লাভ করতে পছন্দ করত এবং বিরতিহীনভাবে শিক্ষার সঙ্গে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে রাখত। তাদের বেশিরভাগই বুদ্ধের নীতিতে বিশ্বাস করত। প্রায় শতাধিক মঠ ছিল যেখানে ১০,০০০ পুরোহিত ছিলেন, সকলেই মহাযান তত্ত্ব অধ্যয়ন করতেন এবং ৫০টি দেব মন্দিরে বিভিন্ন ধরনের সম্প্রদায়ের লোক যাতায়াত করত। এই জেলার রাজধানী জাজপুর তাম্রিলিপ্তির দক্ষিণ-পশ্চিমে ৭০০ “লি” অর্থাৎ প্রায় ২০০ মাইল দূরে অবস্থিত; দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে পুষ্পগিরি নামে একটি আশ্চর্য মঠ ছিল, যা একটি বিশাল পাহাড়ের উপর অবস্থিত; এবং দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে, সমুদ্রের সীমানায়, ‘চরিত্রপুর’ নামে একটি বিশাল প্রাচীরবেষ্টিত বন্দর ছিল। (এই চরিত্র বন্দরকে কোনও কোনও ইতিহাসবিদ বর্তমানের পুরী বলে সনাক্ত করেছেন। কেউ বলছেন, এটা চন্দ্রভাগা সৈকত। কেউ আবার বলছেন, এটা বর্তমানের চিলিকা হ্রদের কাছে মানিকপাটনা।)

সেইসব বৌদ্ধেরা কোথায় গেল?

ক্রমশ ব্রাহ্মণ্যধর্মের উত্থানের ফলে বৌদ্ধগণ রাজার আনূকুল্য থেকে বঞ্চিত হতে থাকল।

রাজা শশাঙ্কের রাজত্ব বঙ্গ থেকে কলিঙ্গ পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল এবং পূর্বদিকে কামরূপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি ভয়াবহ বৌদ্ধ-বিদ্বেষী ছিলেন। তিনি বহু বৌদ্ধ স্তূপ ধ্বংস করেছিলেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তাঁর কোনো সহানুভূতি ছিল না। বোধগয়ার মহাবোধি মন্দিরে বুদ্ধের বোধিবৃক্ষটি কেটে পুড়িয়ে দেন।

ব্রাহ্মণ্যধর্মের দ্বারা নিপীড়নের চেয়েও, বৌদ্ধরা সঙ্কটে পড়ল যখন হিন্দুধর্ম পুরো বৌদ্ধদেরকে আত্তীকরণ করতে শুরু করলো। দশম শতাব্দীতে, রামাই পণ্ডিত তাঁর “ধর্মপূজাবিধানে” জগন্নাথকে বিষ্ণুর বুদ্ধ অবতার হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। বৌদ্ধরা হিন্দু ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়তে শুরু করেছিল, যখন তারা হিন্দু ধর্মের মধ্যে বৌদ্ধ বিশ্বাসের উপাদান খুঁজে পেয়েছিল। বিষ্ণু ধর্ম তাঁদেরকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল, কারণ জগন্নাথকে বুদ্ধের সঙ্গে সমতুল্য করা হয়েছিল।

ঈশ্বর দাস, যিনি ওড়িয়া ভাষায় চৈতন্যদেবের জীবনী লিখেছেন, তিনি শ্রীচৈতন্যকে বুদ্ধের অবতার হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

বলা হয় যে কেশরী রাজাদের রাজত্বকালে বৌদ্ধদের সংখ্যা ছিল মাত্র সাতশ, তাদের মধ্যে ৬১৬ জনকে হত্যা করেছিলেন রাজারা। বেঁচে থাকা কয়েকজন প্রাণ বাঁচাতে প্রকাশ্যে বিষ্ণু ধর্মমত গ্রহণ করেছিলেন।

বৌদ্ধদের অগ্রগণ্য পণ্ডিত ছিলেন বীরসিংহ — তিনি প্রথমে বিনোদ মিশ্র নামে একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং তিনি নৃসিংহের উপাসনা করতেন। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক ছিলেন। পরে তিনি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হন এবং বীরসিংহ নামে পরিচিত হন। তিনি বৌদ্ধদের নেতা হয়ে ওঠেন, তাঁদের সংখ্যা বাংলা থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আগমনের কারণে বৃদ্ধি পায়। এই বাঙালি বৌদ্ধেরা বাংলা থেকে উড়িষ্যায় চলে এসেছিলেন। তাঁদের শাস্ত্র থেকে জানা যায় যে তাদের পূর্বপুরুষরা বর্ধমান জেলার নন্দীগ্রামে বাস করতেন। এই পূর্বপুরুষরা প্রতাপরুদ্রের রাজত্বকালে পুরীতে এসেছিলেন।

কলিঙ্গের রানি পদ্মাবতীর সঙ্গে একদিন বীরসিংহের সাক্ষাৎ ঘটে ও তিনি বৌদ্ধধর্মের কথা শুনে বৌদ্ধধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। এইকথা জেনে রাজা প্রতাপরুদ্র ক্রুদ্ধ হন। তিনি একটা মুখ-ঢাকা কলসিতে বিষধর সাপ রেখে, বৌদ্ধ পণ্ডিত বীরসিংহ ও তাঁর অনুগামীদেরকে এবং অনুরূপভাবে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদেরকে একসঙ্গে ডেকে পাঠালেন। রাজা প্রশ্ন করলেন, কে বলতে পারবে এই কলসিতে কী আছে?

বৌদ্ধরা তাঁদের অতিপ্রাকৃত জ্ঞানের কারণে পাত্রের ভেতরে সাপের অস্তিত্ব সঠিকভাবে অনুমান করতে পেরেছিলেন। ব্রাহ্মণরা পাত্রের ভেতরের জিনিসকে অভিশাপ দিলেন এবং ঘোষণা করলেন যে এতে ছাইয়ের স্তূপ ছাড়া আর কিছুই নেই। [ক্রমশ]


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন