সোমবার | ১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:২০
Logo
এই মুহূর্তে ::
রাখাইন পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের উপর প্রভাব : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন অসুখী রাজকন্যাদের লড়াইয়ের গল্প : রিঙ্কি সামন্ত বিশ্ব থেকে ক্যানসারকে নির্মূল করতে গবেষণায় একের পর এক সাফল্য রূপায়ণের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কল্পনার ডানায় বাস্তবের রূপকথা : পুরুষোত্তম সিংহ হাইকোর্টের রায়ে ভাবাদিঘীতে তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরুর নির্দেশ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমছে, সঙ্কটে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল : তপন মল্লিক চৌধুরী ফল্গু নদীর তীরে একটি ছোট শহর এই বুদ্ধগয়া : বিজয় চৌধুরী শাহিস্নান নয়, আদতে কথাটি ছিল সহিস্নান : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ভূতের গল্পো ‘হোমস্টে’ রহস্য ঘেরা বলিউডের নক্ষত্রপতন : রিঙ্কি সামন্ত বাঁকুড়ার দু-দিন ব্যাপী দেশীয় বীজ মেলায় দেশজ বীজের অভূতপূর্ব সম্ভার পেজফোর-এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ২০২৫ এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সরস্বতীর উৎস সন্ধানে : অসিত দাস ‘সব মরণ নয় সমান’ সৃজনশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে যথোচিত মর্যাদায় স্মরণ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সিপিএম-এর রাজ্য সম্মেলন, তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে খামতি রয়েছে দলে : তপন মল্লিক চৌধুরী প্রথম পাঠ — মার্কসবাদের বিশ্বভ্রমণ : সন্দীপন চক্রবর্তী বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে ‘খানাকুল বাঁচাও’ দাবিতে সরব খানাকুল-সহ গোটা আরামবাগের মানুষ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত ত্র্যম্বকেশ্বর দর্শনে মোক্ষলাভ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কুম্ভমেলায় ধর্মীয় অভিজ্ঞতার থেকে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেশি : তপন মল্লিক চৌধুরী রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন ৭ লক্ষ টন ছাড়াবে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘হিড়িক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি অধরা, আমার আলোকপাত : অসিত দাস বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’ বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কল্পনার ডানায় বাস্তবের রূপকথা : পুরুষোত্তম সিংহ

ড. পুরুষোত্তম সিংহ / ৬৮ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০২৫

উপন্যাস আসলে ব্যক্তি লেখকের কল্পনার নির্মাণ। তবে তা অলীক নয়, বাস্তবের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবে। এমন আছে বা এমন ছিল নয়, এমন হতে পারে ভাবনায় পাঠকককে ডুবিয়ে দেওয়াই লেখকের বড় কাজ। লেখক বাস্তবকে আড়ালে রেখে আরেক বাস্তব নির্মাণ করে পাঠকের বিশ্বাস উৎপাদন করতে পারলেই যাথার্থ নির্মাণে পৌঁছে যান। ভূগোলের সীমারেখায় বন্দি থেকেও মানসজগতে নিজস্ব পৃথিবী আবিষ্কার করা কম কথা নয়। সাহিত্যিক ছাড়া আর কে তা পারেন। আবার সব সাহিত্যকও সেখানে সফল নন। ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ একটিই লেখা হয়। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের ধারা কেউ পরবর্তীকালে আয়ত্ত করতে পারল না কেন তার কোনো উত্তর নেই। স্পষ্টই বোঝা যায় কল্পনার ডানা মেলে ঘুরে ফিরে বাস্তবকে হাতের মুঠোয় বন্দি করে ভিন্ন বাস্তব আবিষ্কার করা সহজ কাজ নয়। অমর মিত্রের ভাবনায় কল্পনাই সাহিত্যের মূলসূত্র (যদিও প্রখর বাস্তব বারবার মেলে)। শ্রীমিত্রের ‘ও আমার পছন্দপুর’ ফ্যান্টাসির পাখায় ডানা মেলে নব ইতিহাস সন্ধানের এক গভীর আত্মপ্রত্যয়ী নির্মাণ। উপন্যাসের পরিসর এক বৃত্তে আটকে থাকে না, ক্রমাগত ছুটে চলে। পরিসর রচনা করে নির্দিষ্ট গতিতে বৃত্ত গঠন না করে পরিসর-পরিমণ্ডল অতিক্রম করে নতুন পরিসর থেকে নব পথে এগিয়ে চলে। রোমান্টিকতা নির্দিষ্ট ফ্রেমে বাঁধা থাকে না। কিন্তু বৃত্ত গড়া হলেও একই পরিসরে অবিরাম কথাজাল রচিত হতে থাকে। সেই কথামালায় ব্যক্তির অভিপ্রায়, ক্ষত, ক্রোধ, লোভ, সমাজ-সংসার সম্পর্কে ভাবনা, প্রতিবেশী সম্পর্কে মনোগত ইচ্ছা, সাংস্কৃতিক বয়ান সব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আখ্যানের চরিত্রধর্ম সম্পর্কে লেখক দ্বিতীয় পর্বের প্রথম পরিচ্ছেদেই বয়ান দিয়েছেন—

“ইহা একটি কল্প-কাহিনি। এই কাহিনির সঙ্গে সত্যিকারের পছন্দপুরের কোনো মিল থাকিবে, তাহা নহে। আবার ইহার সঙ্গে সমস্তটাই অমিল হইবে তাহাও নহে। মিল অমিল নিয়েই এই জগৎ, এই সংসার। এই পৃথিবী, এই ন’পাহাড়ি। ন’পাহাড়ি নয়টি পাহাড় দিয়ে ঘেরা, এমনই ছিল কেন আছেও এই কিংবদন্তী। কিন্তু নটি পাহাড় কোথায় স্যার? মিথ্যে।” (আমার পছন্দপুর, অমর মিত্র, দে পাবলিশিং, কলকাতা৭৩, প্রথম প্রকাশ, এপ্রিল ২০২১, পৃ. ১৭৩)

আখ্যান শুরু হয় ভোগবিলাসময় জীবন দিয়ে। যে জীবন চাওয়া-পাওয়ার। যে জীবনের যাপনে জড়িয়ে আছে ভোগবাদের ঐশ্বর্য। নানারঙের বিলাসবহুল স্বপ্নচিন্তা মানুষকে নিয়ে যায় পতনে। দ্বিতীয় পৃষ্ঠা থেকেই পছন্দপুরের আভাস আসে। হয়ত এই পছন্দপুরের কোনো মূল্য নেই। একেবারেই কি নেই? বাঁচাটাই তো রহস্যময়। জীবন রহস্যময়। সেই রহস্যময় জীবনের একটুকরো আশ্চর্যময় ক্যানভাস আখ্যানভূমিতে উঁকি দেয়। সমস্ত মানুষ নিজের মতো বাঁচতে চায়। নিজের মতো আনন্দ পেতে চায়। পছন্দপুরে যেতে চায়। ব্যক্তির পছন্দপুর ভিন্নজনের কাছে রহস্য, মূল্যহীন। তবে তারও একটি পছন্দপুর আছে। এ আখ্যান আসলে পছন্দপুরের ভিতরে আমাদের হারিয়ে যাওয়া সময়ের ক্ষত। শহর থেকে বস্তি, ফুটপাত উঠে গেছে। নিজেদের প্রয়োজনে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষগুলির বেদনা শোনা হয়নি। শোনার সময় নেই। অলীক উদ্ভটের ভিতর প্রখর বাস্তবের বয়ান ঢুকিয়ে দিয়ে আখ্যানকে কালের কণ্ঠ করে তোলা শ্রীমিত্রের স্বভাবধর্ম। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া চলে ভিন্ন কৌশলে। বাস্তবের আড়ালে চলে আরেক বাস্তব নির্মাণ। যে আধা বাস্তব সবর্দাই বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

ভেসে ওঠে শীত ও কুয়াশা। জেগে ওঠে চাপা পড়া কাহিনি। শীত হয়ে ওঠে সময় সহ জীবন পরিসরের একক। শীত রাতের কবিতার মধ্য দিয়ে কবি ভেসে যেতে চান নগর কলকাতার অলিগলিতে। কলকাতার ভিতর অচেনা অজানা স্থানিক বিন্দুগুলি আখ্যান অবয়বে ভেসে আসে। সামাজিক ইতিহাসের বহুবিধ উপাদান যা ফেলে আসা সময়ের বিশেষ সত্য তাই স্মৃতিরোমন্থনে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক মাধ্যম হয়ে ওঠে। আখ্যানের গদ্যসজ্জা ভারি মসৃণ। ছোট ছোট বাক্যে স্থানিক পরিসরের বহুবিধ সত্য গদ্যের দুলকি চালে এগিয়ে যায়। যা মোটেই ক্লান্তিকর নয়। স্থানিক ইতিহাস স্মৃতি লহমায় এমনভাবে ভেসে আসে যা থেকে সামাজিক জীবনের গন্ধ ভেসে আসে। আবিষ্কারের দায়িত্ব পাঠকের। শান্তনু দাস, অতনুকে সামনে রেখে কথকের ভূমিকায় পারিবারিক চিত্র সহ যে বয়ান তুলে ধরেন তা পুরাতন কলকাতার বাস্তব চিত্র। অস্থির বিশ্বে, বিবর্তনের বদলনামায় স্থায়ী সত্য বলে কিছু নেই। বয়ান, বাক্য, মানুষ ক্রমে বদলে যাচ্ছে। লেখককে তাই প্রায়ই সংশয়পূর্ণ, হ্যাঁ-না বোধক বাক্য লিখতে হয়। এই সংশয়ের মধ্যে ঘটা-না ঘটার মধ্য দেখা যায় সময় কেমন চলছে।

আসলে এই আখ্যান যেন গল্পবন বা গল্পবীথি। এখানে গল্প বোনা হয়। গল্পের জন্ম হয়। লেখক অমর মিত্র আগাগোড়াই গল্পনির্মাণে দক্ষ। সে নিপুণ তুলিতে তিনি গল্পের জন্ম দেন। যা রোমান্টিক কাব্যস্রোত সৃষ্টি করে। অতনুকে সামনে রেখে শম্ভু-শান্তনুর মনস্তাত্ত্বিক দ্বিরালাপ আখ্যানের প্রথম পর্বের গতি নিয়ন্ত্রক। আত্মগত অভিপ্রায়, মনস্তাত্ত্বিক মনোবাণী, পরস্পরের প্রতি সন্দেহ-সংশয়-ক্ষোভ যা সময়েরই বড় অভিশাপ তা চিহ্নিত করে চলেন সূক্ষ্মভাবে। এ এক রহস্যময় জগৎ। এ জগতটাই রহস্যময়। এখানে গল্প আকাশে উড়ে বেড়ায়। গল্প ধরে নামাতে হয়। নামাতে জানলেই দক্ষ শিল্পী। অমর মিত্র সে বিষয়ে দক্ষ জহুরি। শম্ভু-শান্তনু ক্রমিক বদলে বদলে আখ্যানকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। দুজন দুজন সম্পর্কে যেমন অভিযোগ-অনুযোগ করেছে তেমনি নিজের জীবন বৃত্তান্তের মধ্য দিয়ে অলীক জালে ভাসতে ভাসতে ফ্যান্টাসির জগৎ যেমন নির্মাণ করে তেমনি গদ্যতরণীতে এমন এক দোলা নিয়ে আসে যা আশ্চর্য নিকেতনে পাঠককে পৌঁছে দেয়।

কখনও বৈঠকীরীতিতে হরদম কথার (আবল-তাবল, যুক্তিহীন) কথামালায় ছয়লাপ হয়ে যায় আখ্যানভুবন। চালাকবাজ, অতি চালাক, ধান্দাবাজি মানুষের কথালহরীতে আখ্যানে একটা তীব্র গতি সৃষ্টি হয়। আখ্যানের ভাষা কাব্যগন্ধী। আখ্যানের ভিতর থেকে কাব্যস্রোত উঁকি দেয়। অনুভূতির বিন্যাসে, মিস্টিসিজমের মায়ামোহে আখ্যানে সুরেলা ভাব সৃষ্টি হয়। ‘শীত’ প্রতীক হয়ে ওঠে। অন্ধকার, ভয়ের ইঙ্গিত নিয়ে উপস্থিত হয়। শান্তনু রোমান্টিসিজমের বাগানে প্রবেশ করে ফুল তুলতে চায় কিন্তু শম্ভুর উত্তেজনা, ভয়াল রূপ মাঝে মাঝে এসে বয়ান ভেঙে দেয়। বয়ান রোমান্টিসিজমের মোহে ডুবে যেতে যেতেও যায় না। লেখক ডুবে যেতে দেন না। বিপরীত বয়ান এসে তছনছ করে দেয়। শম্ভুর প্রতিরোধ, কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ খুব তলিয়ে দেখলে শান্তনুর চাঁদ সদাগরের ভাবনার সঙ্গে এক। অথচ কেউ একে অপরকে বুঝতে পারে না। বিপরীত মনস্ক ভেবে এড়িয়ে যায়। কিন্তু নিবিড় পাঠে সে বয়ানের বিরোধাভাস আর থাকে না।

শান্তনু অধ্যাপক। শম্ভু লেবার। জীবনকে চেনা, জীবনবোধের বিস্তর ফাঁরাক হলেও লেখক অদ্ভুত কৌশলে মিলিয়ে চলেন। আখ্যান যত এগিয়ে যায় শম্ভু তত বেপয়োরা, মারাত্মক হয়ে ওঠে। লেবার হবার দরুণ চরিত্র-কর্ম উপযোগী ভাষা, ক্রোধ, সমাজ-সংস্কৃতিকে ডু-নট সুলভ মনোবৃত্তি সহ গায়ে গতরের যৌনগন্ধি খিস্তির ভাষা নিয়ে আখ্যান বলয়কে ভিন্ন খাতে নিয়ে যায়। ‘রতনলাল ১৩৫০’ এর রতনলালের উত্তরসূরী হয়ে যেন শম্ভু ধরা দেয়। যদিও সময় অনেক এগিয়ে এসেছে। প্রবাহমান সময়স্রোতে সিনেমা হলগুলি কিভাবে কালের গর্ভে তলিয়ে গেল সেই রহস্য যেন হাস্য-কোলাহলে আখ্যানের তলদেশ থেকে উঁকি দেয়। সংলাপের ঢঙ আত্মচেতনাময়। অথচ উদ্দিষ্ট মানুষ আছে। উদ্দেশ্য করে সংলাপ রচনা করা হলেও বিপরীত ব্যক্তিকে সরসারি বলা নয়। আত্মচেতনায় সংলাপ ধাবিত হয়।

জগৎ শম্ভুময়। একই নামে কত মানুষ আছে। কত চরিত্র কত রহস্য কত চেনা-অচেনা পরিসর। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভেদ-প্রভেদ। একজন সবাইকে চেনে না, জানে না, জানার প্রয়োজন নেই। এইভাবে চলে চরাচর। সেই চরাচর কিছু কিছু রহস্য ব্যক্তির আত্মসমীক্ষায় ধরা দেয়। রহস্যময় বাক্য নির্মিত হয়ে চলে। তবে থ্রিলার নয়। এ বাস্তবের রহস্য। বাস্তবকেই নতুনভাবে দেখা বাস্তবকে ভেঙে ভেঙে অনু-পরমাণু বের করে নব নির্মাণের প্রচেষ্টা—

এই শম্ভু জানেও না, তার আর একটি ভবিষ্যৎ ছিল কিংবা আছে বর্তমান হয়ে, যা ভোগ করছে সে নিজের অজান্তে এক শম্ভু, অন্য শম্ভুর ভবিষ্যৎ জানে না এক অতীত নিয়ে ভবিষ্যৎ নির্মাণ করেছে দুরকমের হয়েছে, এবং হলেও হতে পারত এমনি জগতে এমনিই ঘটে থাকে যে লোকের থাকা উচিত জেলখানায়, সে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বাগানে বাগানে তার বদলে অন্য লোক ঢুকে পড়ে জেলখানায় অন্য কারণে জেলখানা তৈরি হয়েছেই ওইসব করতে” (তদেব, পৃ. ৫৭)

মৃত অতনুর সঙ্গে শান্তনুর জাদুবাস্তবতার মধ্য দিয়ে সংলাপ চলে। যার মধ্য দিয়ে সময়ের বিশেষ রহস্য উঁকি দেয়। এ আখ্যান সাইকোলজিক্যাল ফ্রেমে এগিয়ে যায়। চরিত্র চরিত্রের ভিতর হারিয়ে যায়। চরিত্র বেঁচে থাকে ভিন্ন চরিত্রের আশ্রয়ে। ব্যক্তি মানুষের অস্তিত্ব যেন অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকে। একক জীবন যেন পানসে। চরিত্র ক্রমাগত ভিন্ন চরিত্রের ভালো-মন্দ, অন্যকে আক্রমণ করে, অভিযোগ এনে বেঁচে থাকে। খুব সুক্ষ্মভাবে সময়ের বিভীষিকা নাচতে থাকে। আরাম কেদারায় মজাদার গল্পসজ্জার ভিতর আগুনের ফুলকির মতো সময়সার উঁকি দেয়। খেলার মাঠ সব রসাতলে গেছে। অদৃশ্য ছায়া যেন জীবন্ত মানুষের পিছনে ঘুরে বেড়ায়। মৃত মানুষের সঙ্গে সংলাপের ঢঙ শ্রীমিত্রের আখ্যানে নতুন নয়। ‘নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান’, ‘নিসর্গের শোকগাথা’, ‘অশ্বচরিত’, ‘শূন্যের ঘর শূন্যের বাড়ি’ সহ একাধিক আখ্যানে জাদুবাস্তবতায় এইভাবে মৃতমানুষ জীবিত মানুষের সঙ্গী হয়ে আখ্যানের চালিকা শক্তি হয়ে ওঠে।

এই আখ্যানে ফ্যান্টাসির প্রাধান্য। মিস্টিসিজমের প্রাধান্য। একটা লিরিক বিন্যাস বাক্য সজ্জায় লুকিয়ে থাকে। অধিবাস্তব, সুরিয়ালিজম সব মিলেমিশে থাকে। কাব্যময় বিন্যাসে কবি-কবিতার সত্য বেরিয়ে আসে। এ যেন কবিতার চালচিত্র। কবিতার দৈন্দদিন ভুবন। কাব্য কথামালায় কথাগাড়ি। যার ইঞ্জিনে কবিতা ভরা থাকে। চালচিত্র, শব্দচিত্র, বঙ্গ, দক্ষতা, জেদ দ্বারা কবিতা-কবি জিতে যাবার প্রান্থশালা। ভাব, আবেগ, কল্পনা সব মিলিয়ে রোমান্টিক মায়াময় অনুভূতি চরিত্রগুলি বহন করে চলে। কী ঘটেছে তা নয় কী ঘটতে পারতো, ঘটলে জীবন কেমন হত তা ভাবতে ভাবতে বাক্য-চরিত্র এগিয়ে যায়। চরিত্রের মুখ থেকে অবিরাম কথামালা তৈরি হয়। কথাই যেন কথাকে চালিত করে আখ্যানকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বাক্য গঠন ও সংলাপের কৌতূক, প্রশ্ন, কোলাহল আখ্যানের গতি নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। শান্তনু জাগতিক পরিসরে সচল। সাংসারিক সত্য-অর্থ-কাম-প্রমোশন নিয়ে চিন্তামগ্ন। কবিতা তাঁর কাছে পাগলের প্রলাপ। জগতে বিবিধ মানুষের মধ্যে পরিসরের ভিন্নতা কত রকম তা লেখক স্পষ্ট করেন। মানুষকে বিন্দুমাত্র মূল্য না দেওয়া তাঁর নৈতিক মূল্যবোধ। পছন্দপুর যেন জগতের স্বর্গ। যেন সব পেয়েছির দেশ। এখানে মনোজগতের সব মেলে—

স্যার পছন্দপুরের সব ভালো, যে পাখিরা এখানে নেই, সেই পাখিরা ওখানে আছে, যে গাছ এখানে মরে গেছে, জ্বলে গেছে, সেই গাছ পছন্দপুরে গিয়ে জন্মেছে, যে পৃথিবী হারিয়ে গেছে, সেই পৃথিবী ওখানে আছে, পছন্দপুরে কত ছায়া, কত রোদ, কত আলোরানি বলেছে, সে বুঝতে পারছে পছন্দপুরের সব তার নিজের, যেতে পারলেই হবে” (তদেব, পৃ. ১২৮)

আখ্যানে ক্রমেই কথাজাল তৈরি হয়। একই কথার পুনরাবৃত্তির মধ্য দিয়ে কথারহস্যকে বের করে আনতে চান। তেমনি জীবনের গভীর সত্য, যা ঘটমান বাস্তবতার থেকেও গভীর, যা ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে নিয়ে যাবে তা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতেই যেন কথামন্থনে একই রহস্য ঘুরেফিরে আসে। চারিদিকে অমাবস্যা, লুম্ফেনরাজ। শিক্ষিত সচেতন মানুষ নানাভাবে তাতে জড়িয়ে আছে। সাধারণ মানুষকে ঠকানো হচ্ছে নানাভাবে। কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে ওঠে, উঠছে। তবে শোষিত, পরাজিত, বিচ্যুত অভাবী মানুষের একটা রাগ আছে। কখনও খিস্তিতে সে ক্রোধ বেরিয়ে আসে। আখ্যানে আছে সংস্কৃতি-বিদ্যাচর্চার ভিন্ন ভিন্ন পরিসর। প্রাতিষ্ঠানিক, অ-প্রাতিষ্ঠানিক দুজনেই দুজনকে বক্র চোখে দেখে। দুইই ভিন্নকে না তকমা দিতে প্রস্তুত। নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবা, অন্যকে মূল্যহীন ভাবায় সাংস্কৃতিক পরিসরই নষ্ট হতে থাকে। প্রত্যেকে ভিন্নমতকে নিজের দলে টানতে চাইছে। বিশেষ করে অধ্যাপক নিজের চর্চা পরিসরে ছাত্রকে আনতে সচেষ্ট স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে। শান্তনু হয়ে ওঠে শ্রেণিচরিত্রের প্রতিনিধি। সে উদ্ধত, প্রতিবাদী মানুষকে সহ্য করতে পারে না। নিজেকে ক্ষমতাবাণ প্রমাণের চেষ্টায় থাকে বারবার। আত্মগ্লানিতে ভোগে। আত্মতুষ্টির প্রসাদ পেতে চায়। না পেলে ক্ষুণ্ণ হয়।

কবির জগৎ, অধ্যাপকের জগৎ আলাদা। চাওয়া-পাওয়া আলাদা। সাধ-আকাঙ্ক্ষা-আহ্লাদ আলাদা। জীবনের পরিসর ভিন্ন। জীবনের অ্যাম্বিশন পৃথক। সুখ-আনন্দের পরিসর পৃথক। সেই দুই বিপরীত (শান্তনু-নীলাভ) চিত্রমালাকে সামনে রেখে কখনও পরাবাস্তবতা, কখনও মিস্টিসিজম, সাইকোলজি, রহস্যকে উন্মোচন করতে করতে জীবনের ধারাপাত আপাত সাংস্কৃতিবাণ মানুষের অভিপ্রায় উঠে আসে। প্রত্যেকেই নিজস্ব ছন্দে বাঁচতে চায়, বাঁচে, এই বাঁচাটা অন্যের কাছে নঞর্থক। কটাক্ষ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক শ্রেণিকে (রক্তকরবী) ব্যঙ্গ করেছিলেন। সেই শ্রেণিকেও এখানে আচ্ছা করে তুলধনা করা হল। সমাজের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে এল। বহু প্রকার দুর্নীতিতে এই অধ্যাপক শ্রেণি জড়িত। আখ্যানের অন্তরালে সেইসব আভাস ইঙ্গিত রেখে আখ্যানকে সময় সরণি ধরে এগিয়ে নিয়ে চলেন। তেমনি উপন্যাসের থিয়োরি নিয়ে তিনি ভাবুক। কিভাবে আখ্যান শেষ হবে। পাঠকের দায়িত্ব কতটা। পাঠক লেখককের ভাবনায় আখ্যান শেষ করবে না নিজেই নতুন চিন্তায় এগিয়ে যাবে। আগ্রহী পাঠক উপন্যাসের ১৬৩ নং পৃষ্ঠায় সেসব উত্তর পেয়ে যেতে পারেন। তেমনি লেখক কিছুকাল পরে ‘নতমুখ চরাচর’ নামে যে আখ্যান লিখেছেন তার বীজভূমি এখানে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, যাবে।

দ্বিতীয় পর্বে জীমূতবাহন, নিলয়, অনিমেষের কথা। পছন্দপুরের ঘোর দ্বিতীয় পর্বেই অধিকমাত্রায় এসেছে। পছন্দপুরকে নিয়ে মিথ, কল্পনা, বানানো গল্প, ব্যক্তির চেতনায় পছন্দপুরের রহস্য সমস্ত একাকার হয়ে গিয়েছে। উঠে আসে স্থান নামের স্থানিক ইতিহাস। যা কিংবদন্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ন’পাহাড়ি লেখকের আখ্যানভুবনে আগেও এসেছে। ‘একটি গ্রাম একটি নদী’এর মতো নগরের মানুষ বহুকাল গ্রাম দেখেনি। আসলে কথকের নিজেরই গ্রাম নেই। এইভাবে কেউ কেউ রহস্য গড়ে তোলে, রহস্য গড়ে তুলে বাঁচতে ভালোবাসে। সেই রহস্য, কল্পনা, নতুন নগর পরিকল্পনা, নতুন ভূখণ্ড নির্মাণ অমর মিত্রের আখ্যানভুবনের এক বিশেষ দিক। যা লেখকের আখ্যানের স্বরূপকে নতুন পরিমণ্ডলে নিয়ে যায়। প্রথম পর্বের শান্তনু-শম্ভুর স্থান দখল করে দ্বিতীয় পর্বের জীমূতবাহন-নিলয়। তবে আখ্যানের চোরাস্রোতে দুর্নীতি বেআইনি, ধান্দাবাজি সমস্ত একই পরিমণ্ডলে ঘুরতে থাকে। আখ্যানের দ্বিতীয় পর্বে পুরোটাই ফ্যান্টাসির ডানায় পাখা মেলে চলে। অবাস্তব অগভীর মহাজগতের রহস্যময় বস্তু, বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে আখ্যান যেন অনন্ত আকাশের খোঁজ দেয়। সেই ফ্যান্টাসির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে পাহাড় ধ্বংসের ইতিবৃত্ত। জীমূতের চেতনায় পছন্দপুর, নিলয়ের চেতনায় ন’পাহাড়ি। দুজনেই নিজের বিশ্বাস ধারণায় জোর দিতে চায়। যা অপরের কাছে ভেঙে যায়। অথচ প্রবল বিশ্বাসে নিজের ধারণাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়।

পছন্দপুর এক আশ্চর্য জগৎ। অতিলৌকিক, অলৌকিক, বানানো গল্পের মধ্য দিয়ে আখ্যানের চরিত্র বিবর্তিত হয়। চরিত্র নিজের সত্তা জানান দেয়। কখনও নিজের মত নিজেই খণ্ডন করে পাঠককে বাস্তবের অবকাশ দেয় বটে কিন্তু ক্ষণিকেই সে পরিমণ্ডল ভেঙে যায়। হেডস্যার জীমূতবাহন সম্পর্কে যা বলেছে তাই যেন শেষ কথা—‘জীমূতবাহনের কথার শেষ নেই’। অনর্গল কথা বলা ও গল্প তৈরি করা কাজ। এই চরাচরের সর্বত্র গল্প, কাহিনি। ইচ্ছা মতো শুরু করলেই হয়। কাহিনির পাশে উপকাহিনি এসে দাঁড়ায়। পছন্দপুর মানুষকে জাগায়, ভাসায়, স্বপ্ন দেখায়, অনুপ্রেরণা দেয়, তাগিদ দেয়, ভালোবাসা দেয়, প্রেম দেয়। আসলে ব্যক্তির ইমেজ বড় হয়ে ওঠে। যা আপাত অর্থে অলীক। সেই অলীক বৃত্তকে সামনে রেখেই ব্যক্তি বাঁচে, জনজীবনের আয়ু বাড়ে। অবস্থান, ভূগোল, দীর্ঘদিন বসবাস শ্রেণি চরিত্রকে বদলে দেয়। বাঙালি হয়ে পড়ে অবাঙালি, অবাঙালি বাঙালি সংস্কৃতি আয়ত্ত করে। কলকাতা এক বহুমুখী শহর, যেখানে নিত্য পরিবর্তন ঘটে চলেছে। লেখক সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে তা দেখেন, দেখান।

থ্রিলার থেকে আখ্যানের স্বভাবধর্মে কোথায় প্রভেদ; কল্পনা, ভূত-প্রেত, অলৌকিকতা থাকলেই তা থ্রিলার নয় তার দৃষ্টান্ত সহ বিশ্লেষণ থাকে ২০৭ নং পৃষ্ঠায়। বহু সাহিত্যের উদাহরণ সহ বিশ্বসাহিত্যের প্রসঙ্গ এনে টেক্সটকে নান্দনিক ভুবনে উত্তীর্ণ করেন। নিলয়-অনিমেষ ইতিহাসের ভিন্ন ভিন্ন সূত্র খোঁজে। ভিন্ন অস্তিত্বে, সামাজিক বিবর্তনমূলক পরিসরে বিশ্বাস রাখে। মিথ-পুরাণ-ইতিহাস, পক্ষে-বিপক্ষে দুজন স্বভূমির আবহমান সত্যকেই যেন ভিন্ন আঙ্গিকে, মাধ্যমে খুঁজতে চায়। আসলে এই নির্মাণ পরিকল্পনা, খোঁজা সব তো লেখকেরই পরিকল্পিত। ফলে নিবিড় পর্যবেক্ষণে লেখকের নৃতাত্ত্বিক বোধ, ইতিহাসের ভুল-সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি আশ্রয় আবিষ্কার খুব বেশি কঠিন নয়। তেমনি শেষপ্রান্তে এসে আখ্যানসজ্জা বারবার বদলে যায়। এক পরিসর থেকে ভিন্ন পরিসরে ডুবে যায়। কালভৈরব হাজরা হয়ে ওঠে অন্ধকারের প্রতীক। সমস্ত দোষের ভাগিদার। জীমূতের চোখে শয়তান। এও এক চরিত্রের অন্তঃসত্ত্বা। মানুষের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজে আনন্দে মত্ত থাকা। কখনও চরিত্র হারিয়ে যায় লেখকে। লেখকের ভিতর আশ্রয় নেয়—

“নিলয়ের এই সিদ্ধান্ত নিলয়ের নয়। লেখকের। লেখকের নয়, জীমূতবাহনের। জীমূতবাহনই যেন লেখক। এই উপাখ্যান জীমূতবাহন মণ্ডলের রচনা। জীমূতবাহন তা নিলয় ঘোষ স্যারকে শোনাচ্ছে ক’মাস ধরে। যখন আরম্ভ করেছিল কাহিনি কথন, তখন একদিন আকাশে মেঘ হল। কালবৈশাখী। জীমূতবাহন যেন আকাশ থেকেই নেমেছিল নিলয়ের কাছে মেঘের ঘোর অন্ধকারে।” (তদেব, পৃ. ২৩১)

পছন্দপুর এক আবেগের নাম, আবহের নাম, নস্টালজিয়া, চিরন্তন সৌন্দর্যের প্রতীক। এখানে সব মেলে ধরতে পারলে। এখানে সব প্রথমে আসে (ফুল, ফল, শস্য)। এখানে প্রকৃতি স্নিগ্ধ। নিসর্গ মায়ামায়, চরাচর সৌন্দর্যময়। রামচন্দ্রের বয়ানে ন’পাহাড়ি টু পছন্দপুর। জীমূতবাহনের বয়ানে ন’পাহাড়ি বাদ দিয়ে পছন্দপুর। এও কি ইতিহাসের রহস্য নয়? ব্যক্তি একটি বিষয়কে ফুটিয়ে তুলতে, হাইলাইট করতে, পার্শ্ববর্তী বিষয়কে বক্র দৃষ্টিতে দেখে। লঘু করে দেখতেই যেন আনন্দ। এইভাবে ইতিহাস হারিয়ে যায়। লেখক থাকেন কথক ঠাকুরের ভূমিকায়। গালগল্প, ফ্যান্টাসির মধ্য দিয়েই জনপদের (ন’পাহাড়ি, পছন্দপুর) ইতিহাস উঠে আসে। তেমনি ইতিহাস, ঐতিহ্য কিভাবে মুছে দেওয়া হল, মুছে যায় মাফিয়ারাজ ও কালের চক্রে আখ্যানে সেই সত্য বেজে ওঠে। পছন্দপুর-ন’পাহাড়ি পাশাপাশি রয়েছে। বাস্তব-অবাস্তবের লীলা চলতে থাকে। একদিকে ভেঙে ফেলা, ইতিহাস মুছে ফেলা ও অন্যদিকে অলীক রহস্য। আখ্যানে ফ্যান্টাসির প্রাধান্য থাকলেও শেষে চরম বাস্তবকেই প্রতিপন্ন করে। যা সময়ের সত্য প্রহরী হিসেবে কালের খাতায় বর্ধিত সত্যকে দেখিয়ে দেয়। পুরাকালের স্থান নাম হারিয়ে যায়। পরিসর হারিয়ে পরিসরে মিশে যায়। মানুষ নিজের প্রয়োজনে তা করে। ন’পাহাড়ি ধ্বংস হয়ে পছন্দপুরের রহস্যে মিশে আছে। টেল রীতিতে, কথকতা, সংলাপ, আজগবি গল্প, সংশয়-সন্দেহের মধ্য দিয়ে জনপদের ভিতর-বাইরের রহস্য কিভাবে উন্মোচন করা সম্ভব তা আখ্যানে ভেসে বেড়ায়। পছন্দপুর হয়ে ওঠে শুভ বোধের আত্মদর্শন। বানানো মিথকে সামনে রেখে, লোকায়ত দর্শনের ক্যানভাসে লোকশ্রুতির কানাকানিতে তা হয়ত পৌঁছে যাবে দূর দেশে। পছন্দপুর তাই ব্যক্তির আত্মসমীক্ষায় হয়ে ওঠে মঙ্গলবোধের প্রতীক। এই মঙ্গল-অমঙ্গলচেতনা, শুভ-অশুভ বোধ দাঁড়িয়ে থাকে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায়। এই দুই চেতনা নিয়েই জগৎ। আর সে চেতনা ব্যক্তির মনে যে ইন্ধন জোগায়, প্রেরণা দেয়, বোধের জন্ম দেয় তার আখ্যান পছন্দপুর।

লেখক : অধ্যাপক, রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ মহাবিদ্যালয়, সুভাষগঞ্জ, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন