শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:২১
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ : তপন মল্লিক চৌধুরী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (পঞ্চম পর্ব) : জমিল সৈয়দ যশোধরা — এক উপেক্ষিতা নারীর বিবর্তন আখ্যান : সসীমকুমার বাড়ৈ কলকাতার কাঁচাভেড়া-খেকো ফকির ও গড়ের মাঠ : অসিত দাস ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ রামনবমী পালন এবং হুগলী চুঁচুড়ার শ্রীরামমন্দির : রিঙ্কি সামন্ত ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (তৃতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ মিয়ানমারে ভূমিকম্প — প্রতিবেশী দেশের জনগণের পাশে বাংলাদেশ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ২৭৮ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিটি বিজয়া একাদশী নামে পরিচিত। অর্থাৎ যে একাদশী দেবী তার সমাগত ভক্তের অসহনীয় ব্যাকুলভাবকে শান্ত করে সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকে উদ্ধার করে সর্বত্র বিজয়ী করে অবশেষে যাবতীয় ভববন্ধন মুক্ত করেন, তিনি শ্রীশ্রীবিজয়া একাদশী দেবী।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই একাদশী দেবী প্রসঙ্গে বলেছেন, এই পুণ্যব্রত পালন করলে সাধক বা দেবীর ভক্তজনেরা ইহলোক ও পরলোকে বিজয় লাভ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, মোক্ষ লাভ হয় অন্তিমে। এটাই বিজয়া একাদশী ব্রতের বিশেষ তাৎপর্য।

পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টা ৫৬ মিনিট থেকে একাদশী তিথি শুরু হবে এবং সমাপ্ত হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি ১টা ৪৫ মিনিটে। উদয়া তিথি অনুযায়ী ২৪ তারিখ একাদশী পালিত হবে।

বিজয়া একাদশীর ব্রতভঙ্গ : ২৪ ফেব্রুয়ারি বিজয়া একাদশীর উপবাস করার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্রতভঙ্গ করা যাবে। এ দিন সকাল ৬টা ৫২ মিনিট থেকে ৯টা ৮ মিনিট পারণের সময়। তবে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে পারণ সম্পন্ন করা যাবে। কারণ ততক্ষণ দ্বাদশী তিথি থাকবে।

বিজয়া একাদশীর শুভক্ষণ :

ব্রহ্ম মুহূর্ত : ভোর ৫টা ১১ মিনিট থেকে ৬টা ১ মিনিট পর্যন্ত

বিজয় মুহূর্ত : দুপুর ২টো ২৯ মিনিট থেকে ৩টে ১৫ মিনিট পর্যন্ত

গোধূলি মুহূর্ত : সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট থেকে ৬টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত

নিশিত মুহূর্ত : রাত ১২টা ০৯ মিনিট থেকে ১২টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত

অভিজীত মুহূর্ত : দুপুর ১২টা ১১ মিনিট থেকে ১২টা ৫৭ মিনিট পর্যন্ত

অমৃতকাল : দুপুর ২টো ৭ মিনিট থেকে ৩টে ৪৪ মিনিট পর্যন্ত

বিজয়া একাদশীর ব্রতকথা :

স্কন্দপুরাণ অনুযায়ী বিজয়া একাদশীর ব্রত পালন করলে সেই ব্যক্তির জয় নিশ্চিত। পুরাণের কথা। দেবর্ষি নারদের সঙ্গে পিতামহ ব্রহ্মার একসময় কথোপকথনে নারদের জিজ্ঞাসার উত্তরে পিতামহ এই বিজয়া একাদশীর কথা উল্লেখ করেছিলেন। মর্যাদা পুরুষোত্তমরাম স্বয়ং এই একাদশী পালন করেছিলেন।

পুরাকালে শ্রীরামচন্দ্র সীতার লক্ষণ সহ ১৪ বছরের জন্য পঞ্চবটি বনে বাস করতেন। ভগবান রাম আপাতদৃষ্টিতে একজন সাধারণ মানুষের মতো দুঃখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তাঁর প্রিয় স্ত্রীর সন্ধান করতে গিয়ে রামের মৃতপ্রায় জটায়ুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। মহান ভক্ত-শকুন জটায়ু রামকে তাঁর প্রিয় সীতাকে রাবণ কীভাবে অপহরণ করেছিল তা বলার পর দেহত্যাগ করে বৈকুণ্ঠে ফিরে যান।

সীতা উদ্ধারের জন্য এরপর রাম এবং বানরদের রাজা সুগ্রীব বন্ধু হয়ে ওঠেন। তারা একসাথে বানর এবং ভালুকের একটি বিশাল সেনাবাহিনী সংগ্রহ করে এবং তার মন্ত্রী হনুমানজিকে লঙ্কায় পাঠান, যেখানে তিনি অশোক বাগানে মাতা জানকীকে (সীতা দেবী) দেখতে পান। তিনি ভগবান রামের বার্তা পৌঁছে দেন এবং আংটিটি দেখিয়ে পরমেশ্বর ভগবান শ্রী রামের প্রতি মহান সেবা করার জন্য তার সত্যতা প্রমাণ করেন।

সুগ্রীবের সাহায্যে, ভগবান রাম লঙ্কার দিকে অগ্রসর হলেন। রাবণের লঙ্কায় পৌঁছানোর একমাত্র উপায় ছিল সমুদ্র পার হওয়া। বানরবাহিনী নিয়ে সমুদ্রের তীরে পৌঁছে তিনি বুঝতে পারলেন, সমুদ্রের জল অস্বাভাবিকভাবে গভীর এবং প্রতিকূল। তাই, তিনি লক্ষ্মণকে বললেন, “হে সুমিত্রা নন্দন,আমরা কীভাবে এত পুণ্য অর্জন করতে পারি যেএই বিশাল সমুদ্র, বরুণ দেবতার অগভীর আবাসস্থল, অতিক্রম করতে পারব? আমি এটি অতিক্রম করার কোন সহজ উপায় দেখতে পাচ্ছি না, কারণ এটি হাঙ্গর এবং অন্যান্য হিংস্র জলজ প্রাণীতে পরিপূর্ণ।”

লক্ষ্মণ উত্তর দিলেন, “হে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব, হে আদি পুরুষ, মহান ঋষি  দালভ্য এখান থেকে মাত্র চারক্রোশ দূরে একটি দ্বীপে বাস করেন। হে রাঘব, তিনি অতি বৃদ্ধ এবং জ্ঞানী। আসুন আমরা তাঁর কাছে যাই, তাঁর দর্শন  করি এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করি কিভাবে আমরা নিরাপদে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি।”

রাম ও লক্ষণ জ্ঞানীদালভ্য মুনির আশ্রমে গেলেন। তাঁর কাছে এসে দুই ভগবান তাঁকে শ্রদ্ধাভরে প্রণাম করলেন।দালভ্য তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলেন যে, শ্রীরাম আসলে পরমেশ্বর ভগবান, যিনি তাঁর নিজের কারণেই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং একজন মানুষের মতো আচরণ করছেন।

দালভ্য বললেন, “হে মনুষ্য সেরা, তুমি আমার আশ্রমে কেন এসেছ?”

রাম বললেন, “হে মহান দ্বিজাত ব্রাহ্মণ, আমি আমার কপিল যোদ্ধাদের দল নিয়ে সমুদ্র তীরে এসেছি, যাতে তারা সমুদ্র পার হয়ে লঙ্কা এবং রাবণের নেতৃত্বে তার রাক্ষসদলকে জয় করতে পারে। হে শ্রেষ্ঠ ঋষি, দয়া করে আমার প্রতি করুণা করুন এবং বলুন কিভাবে আমি এই বিশাল সমুদ্র পার হতে পারি। সেইজন্যই আমি আজ আপনার আশ্রমে এসেছি।”

ঋষি বললেন, “হে প্রভু শ্রী রাম, আমি আপনাকে সর্বশ্রেষ্ঠ উপবাসের কথা বলব, যা পালন করে আপনি অবশ্যই রাবণকে জয় করবেন এবং চিরকাল মহিমান্বিত হবেন। দয়া করে এখন পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

একাদশীর আগের দিন সোনা, রূপা বা তামার তৈরি একটি জলপাত্র তৈরি করুন। যদি এই ধাতুগুলি পাওয়া না যায় তবে মাটিও কাজ করবে। পাত্রটি বিশুদ্ধ জল দিয়ে পূর্ণ করুন এবং তারপর আমরো আম্রপল্লব দিয়ে সুন্দরভাবে সাজান। এটিকে একটি পবিত্র বেদীর উপর রাখুন।  সকালে স্নান করুন, ফুলের মালা এবং চন্দনের লেপ দিয়ে জলপাত্রটি সাজান এবং পাত্রের উপরে অবতল ঢাকনায় যব, ডালিম এবং নারকেল রাখুন। এখন পরম ভালোবাসা এবং ভক্তির সাথে জলপাত্রের দেবতা রূপে পূজা করুন এবং তাঁকে ধূপ, চন্দন, ফুল, একটি ঘি প্রদীপ এবং নৈবেদ্য অর্পণ করুন। যব ইত্যাদিতে ভরা ঢাকনার উপরে, ভগবান শ্রী নারায়ণের একটি মূর্তি রাখুন।

একাদশীর দিন সকালে স্নান করে জলপাত্রটিকে চন্দন কাঠের পেস্ট এবং মালা দিয়ে সাজিয়ে তুলুন।

ঘটের ওপর সপ্তধান্য ও যব রাখার পরামর্শ দেন ঋষি। সুগন্ধ, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য দিয়ে পুজো করার কথা বলেন মুনি। তারপর সেই ঘটের সামনে বসে উত্তম কথাবার্তা, শুদ্ধ কার্য করে দিন কাটানোর পরামর্শ দেন এবং রাত্রি জাগরণের প্রস্তাব দেন।  অখণ্ড ব্রতর সিদ্ধির জন্য ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করতে বলেন।

“দ্বাদশীর প্রভাত হলে, জলপাত্রটি পবিত্র নদীর তীরে, এমনকি একটি ছোট পুকুরের তীরে নিয়ে যান। সঠিকভাবে পূজা করার পর, উপরে উল্লিখিত সমস্ত উপকরণ সহ এটি একজন শুদ্ধহৃদয় ব্রাহ্মণকে, বৈদিক জ্ঞানে বিশেষজ্ঞকে উৎসর্গ করুন। যদি আপনি এবং আপনার সামরিক সেনাপতিরা এইভাবে বিজয়া একাদশী পালন করেন, তাহলে আপনি অবশ্যই সর্বত্র বিজয়ী হবেন।”

পরমেশ্বর ভগবান শ্রী রামচন্দ্র, দালভ্য মুনির নির্দেশ অনুসারেই কাজ করেছিলেন এবং এইভাবে তিনি সমস্ত আসুরিক শক্তিকে জয় করেছিলেন। একইভাবে, যে কেউ এইভাবে বিজয়া একাদশী পালন করবে সে এই নশ্বর জগতে সর্বদা বিজয়ী হবে এবং এই পৃথিবী ত্যাগ করার পর সে চিরকাল বৈকুণ্ঠ নামে পরিচিত ঈশ্বরের রাজ্যের উদ্বেগমুক্ত রাজ্যে বাস করবে।’

‘হে নারদ, আমার পুত্র, এই ইতিহাস থেকে তুমি বুঝতে পারছো কেন এই একাদশীর উপবাস যথাযথভাবে পালন করা উচিত, নিয়মকানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করে। এই উপবাস মানুষের সমস্ত পাপ, এমনকি অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পুণ্য অর্জন করা সম্ভব এইব্রত করে।

এভাবেই স্কন্দ পুরাণ থেকে ফাল্গুন-কৃষ্ণ একাদশী বা বিজয়া একাদশীর মহিমার বর্ণনা শেষ হয়।

বিজয়া একাদশীর পুজোর নিয়ম :

এই একাদশীর দিনে ভোরবেলা স্নান করে স্বচ্ছ বস্ত্র ধারণ করুন।

এবার একটি চৌকীতে আসন বিছিয়ে তাতে নারায়ণের মূর্তি বা ছবি রাখুন।

বিষ্ণুকে বস্ত্র নিবেদন করুন।

এর পর তাঁকে হলুদ ফুলের মালা, চন্দন, ধূপ, প্রদীপ নিবেদন করুন।

মিষ্টি ও ফলের নৈবেদ্য অর্পণ করতে ভুলবেন না।

নারায়ণের সামনে দেশী ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালান ও মন্ত্র জপ করুন।

এ দিন বিষ্ণু সহস্ত্রনাম পাঠ করতে পারেন।

পাশাপাশি বিজয়া একাদশীর ব্রতকথা পাঠ করুন।

অবশেষে লক্ষ্মী নারায়ণের আরতী করুন।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন