শনিবার | ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:৪২
Logo
এই মুহূর্তে ::
মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়, মিথ এবং ডিকনস্ট্রাকশন : অসিত দাস মহাকুম্ভ ও কয়েকটি প্রশ্ন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব কাশীকান্ত মৈত্রের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন : ড. দীপাঞ্জন দে অমৃতের সন্ধানে মাঘী পূর্ণিমায় শাহীস্নান : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ : অসিত দাস ‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ‘রাঙা শুক্রবার অথবা কহরকন্ঠ কথা’ উপন্যাস বিষয়ে শতদল মিত্র যা বললেন রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ কেজরিওয়াল হারলো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সাহেব লেখক দেড়শো বছর আগেই বলেছিলেন পঞ্চানন কুশারীর কবিয়াল হওয়ার সম্ভাবনার কথা : অসিত দাস বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী শঙ্খ ঘোষ-এর ‘এখন সব অলীক’ নস্টালজিক অনুভূতি দিয়ে ঘেরা মায়াময় এক জগৎ : অমৃতাভ দে বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (প্রথম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কালো গোঁসাইয়ের চিঠি — চিঠিকেন্দ্রীক স্মৃতির পুনর্জীবন : মোঃ তুষার উদ্দিন নব নব রূপে : নন্দিনী অধিকারী সরস্বতীর বীণা কচ্ছপী ও গজকচ্ছপ বাঙালি বুদ্ধিজীবী : অসিত দাস মহাকুম্ভ উপলক্ষে এবার যে জনপ্লাবন দেখা যাচ্ছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘আখের রস’ নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সরস্বতী দিদিমণি’ মহাকুম্ভ থেকে মহাদুর্ঘটনা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা খুঁজছে মাটির নিরাপত্তা : রিঙ্কি সামন্ত জিবিএস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, মত চিকিৎসকদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়, মিথ এবং ডিকনস্ট্রাকশন : অসিত দাস

অসিত দাস / ৮২ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

গোপাল ভাঁড়ের আসল পরিচয় কী? তাঁকে কি ঐতিহাসিক চরিত্র হিসেবে ধরা হয়? নাকি কাল্পনিক এক বিদূষকের জায়গাতেই রাখা হয় তাঁকে?

কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার বিদূষক হিসাবে মুক্তারাম মুখোপাধ্যায়, হাস্যার্ণব, রামকেল, শংকর তরঙ্গ প্রমুখের নাম পাওয়া গেলেও গোপাল ভাঁড় চরিত্রটির ঐতিহাসিকভাবে কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না। লোককল্পনা থেকে উঠে আসা চরিত্রটি কাল্পনিক বলে ধরে নিয়েছেন কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ। উনিশ শতকের বটতলা সাহিত্যের হাত ধরে এই গোপাল ভাঁড়ের মিথটি নাকি গড়ে ওঠে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে যদি দেখা যায়, এই বিদূষক নির্মাণের সঙ্গে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় আর কৃষ্ণনগরের জড়িয়ে থাকাটি গভীরভাবে বিশ্লেষণের বিষয়। কৃষ্ণনগর তৎকালীন বঙ্গসংস্কৃতির অঘোষিত ভরকেন্দ্র না হলে বাংলায় আঠারো শতকের আরও অনেক সমৃদ্ধ নগর থাকতে এর ভিত্তিভূমি হয়ে উঠল এই শহর। এত নৃপতি থাকতে কৃষ্ণচন্দ্রকেই বা কেন দেখানো হল তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজা হিসাবে? অনেকের মতে, গোপাল আসলে কৃষ্ণনগর রাজসভাকেন্দ্রিক সন্নিহিত অঞ্চলের মানুষের একধরনের স্বতঃস্ফূর্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত রসবোধেরই মূর্ত-প্রতীক। অবশ্য শুধু কৃষ্ণচন্দ্রের আমল বলেই তো না, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে তাঁর উত্তরপুরুষ মহারাজা গিরিশচন্দ্রের আমলেও কৃষ্ণনগর রাজসভায় রস রসিকতার চর্চার ধারা বজায় ছিল। গিরিশচন্দ্রের সভা অলঙ্কৃত করেছেন কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী।

কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ীর রসবোধও ছিল গোপাল ভাঁড়ের মতো প্রখর। তিনি একবার লেখেন, —

‘আয়ান ঘোষ বিয়ে করলেন রাজকন্যা রাধা।

নন্দর বেটা কৃষ্ণ তাতে ভাগ বসালেন আধা।

আর শুনেছ দুখের কথা আর শুনেছ সই,

যার ধন তার ধন নয় নেপোয় মারে দই।’

নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় ও গোপাল ভাঁড়কে জড়িয়ে অসংখ্য কৌতুকী শোনা যায়৷

কৃষ্ণনগর তথা নদীয়াবাসীদের গোপাল ভাঁড়ের ঐতিহাসিক অস্তিত্বের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় আছে৷ পেশায় ক্ষৌরকার ঘূর্ণিনিবাসী গোপাল যে রাজার ব্যক্তিগত সহচর ও অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলেন, তা গোপাল ভাঁড়ের গল্পগুলি পড়লেই বোঝা যায়৷ কোথাও গেলে গোপালকে নিয়ে বেরোতেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র। গোপালও কৃষ্ণচন্দ্র সমভিব্যাহারে ঘুরতে বেশ পছন্দ করতেন।

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর ছাড়াও মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় বিরাজ করতেন শ্রীকান্ত, কমলাকান্ত, বলরাম, শঙ্কর, দেবল, মধুসূদন, রামপ্রসাদ সেন, কবি ভূমেশ্বর বিদ্যালঙ্কার, নৈয়ায়িক শরণ তর্কালঙ্কার ও জ্যোতির্বিদ অনুকূল বাচস্পতি৷ হুগলির সুগন্ধ্যার গোবিন্দরাম রায় কৃষ্ণচন্দ্রের রাজচিকিৎসক ছিলেন৷ নৈয়ায়িক কালীদাস তর্কসিদ্ধান্ত কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদদের মধ্যে সর্বপ্রধান ছিলেন৷ ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গল (কালিকামঙ্গল) কাব্যে কৃষ্ণচন্দ্রের সভার মন্ত্রী-অমাত্য থেকে শুরু করে পেয়াদা বাজনদারদেরও নাম পাওয়া যায়৷ যায় না শুধু গোপাল ভাঁড়ের নাম৷ গোপাল ভাঁড় তাহলে কি কিংবদন্তি মাত্র, যেমনটি ভেবেছেন গবেষক সুকুমার সেন মহাশয়? তবে বিখ্যাত রসসাহিত্যিক পরিমল গোস্বামী যে গোপাল ভাঁড়কে ‘গেবল্‌ ভ্যান্ড’-এর বঙ্গীয় সংস্করণ ভেবেছেন, তা ভাবিয়ে তোলার পক্ষে যথেষ্ট৷

অধম গবেষক হিসেবে আমার মনে হয় ‘গোপাল ভাঁড়’ নাম ভাঁড়িয়ে আমাদের সামনে যিনি এসেছেন, তিনি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের ব্যক্তিগত চিকিৎসক গোবিন্দরাম রায়৷ একজন চিকিৎসকের পক্ষেই যে-কোনও অভিযানে, যে-কোনো যাত্রায় কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গী হওয়া সম্ভব৷ অনেক চিকিৎসকই সুরসিক ও উপস্থিত বুদ্ধির অধিকারী৷ গোপালের পেশাগত পরিচয় নাপিত তথা পরামানিক, ক্ষুর ও নরুন নিয়েই ছিল তাঁর কারবার৷ আগেকার দিনে নাপিতরাই শল্যচিকিৎসকের কাজ অর্ধেক করে দিতেন৷ তা ফোড়া কাটা থেকে শুরু করে গ্যাঁজ ও পায়ের কড়া কেটে দেওয়া, নখের সুব্যবস্থা করা, -যাই হোক না কেন৷ রাজচিকিৎসক গোবিন্দরাম রায়ের কোনও কীর্তিকলাপের কথা বিশদভাবে কোথাও পাওয়া যায় না৷ তবে তিনি যে চরক ও সুশ্রুত গুলে খেয়েছিলেন, সে কথা ইতিহাসে লেখা আছে৷

দুজনের নামই ‘গো’ দিয়ে শুরু হচ্ছে৷ গোপাল ভাঁড়ের আসল নাম নাকি ‘গোপালচন্দ্র নাই’৷ মনে হয়, গোবিন্দরাম রায় তাঁর রাজচিকিৎসক পরিচয় গোপন করে হাটেবাজারে পথেঘাটে আমজনতার ভিড়ে ‘গোপাল ভাঁড়’ সেজে থাকতেন৷ গোবিন্দরামের কৌতুকক্ষমতা হয়তো অসাধারণ ছিল৷ গোপাল ভাঁড়ের গল্পে সাধারণ মানুষের সাধারণ কথা থাকে, অনেকসময় তা ইতরতাদোষে দুষ্ট৷ সেকালে এটাই ছিল আদত৷

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের একবার একজন রাজবদ্যির দরকার পড়ে৷ বহু পরীক্ষার্থীর মধ্যে থেকে ঠিকজনকে বেছে নেওয়ার জন্য গোপাল ভাঁড়কে পরীক্ষক নিযুক্ত করেন তিনি৷ বদ্যিচুড়ামণি না হলে এ গুরুদায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হতে না৷ গোপাল ভাঁড়ের গল্পে দেখা যায়, প্রায়ই নিজের মৃত্যুসংবাদ তিনি নিজেই রটাচ্ছেন৷ ডাক্তাররাই মৃত্যুকে ন্যাচারাল ফেনোমেনন বলে ভাবেন৷ তাই কোনও সংস্কার থাকে না মনে। একজন ডাক্তারের পক্ষেই সাধারণ মানুষের প্রাতঃকৃত্য অভ্যাস সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া সম্ভব৷ মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল গোপালের৷ তিনটি ভাষা সমানে বলা পণ্ডিতপ্রবরকে অজান্তে ধাক্কা মেরে গোপাল তাঁর আসল ভাষাটি জেনে নিয়েছিলেন — ‘ষঁড়া অন্ধা অছি!’

সাধারণ মানুষের সঙ্গে এক চিকিৎসক হিসেবে প্রভূত মেলামেশার সুবাদে গোবিন্দরাম রায় তাঁদের দৈনন্দিন অভাব-অভিযোগ সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন৷ তাদের যন্ত্রণামিশ্রিত জীবন-কৌতুকের পাঁচালি তাঁর জানা ছিল৷ তাই রাজচিকিৎসক হওয়ার পর সেই অভিজ্ঞতার দৌলতেই তিনি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে হাস্যরসে আপ্লুত করতেন৷ অর্থাৎ ডা. জেকিল ও মিস্টার হাইডের আগেই ডা. গোবিন্দরাম ও মি. গোপাল ভাঁড় চরিত লেখা হয়ে গিয়েছিল৷ কৃষ্ণচন্দ্র সবই জানতেন, জানতেন হয়তো আরও অনেকে৷ কিন্তু আমজনতা গোপাল ভাঁড়ের এই ধন্বন্তরিরূপ ধরতে পারেনি৷ গোপাল ভাঁড় অবশ্যই ঐতিহাসিক চরিত্র৷ রাজবৈদ্য গোবিন্দরাম রায়ই বকলমে গোপাল ভাঁড়।

এই বিষয়ে আলোকপাত করার জন্যে যে গভীর নিষ্ঠা ও মননের দরকার, তা অধিকাংশ গবেষকেরই নেই। প্রচলিত মতের গড্ডলিকাপ্রবাহেই সকলে গা ভাসিয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন