আলাপচারিতার সুযোগ বিশেষ না হওয়ায়, পড়তে পড়তেই জেনেছি তাঁকে। আর জানতে জানতেই নিমজ্জিত হওয়া— কাশীকান্তময় হয়ে ওঠা। শুধু একজন জননেতা বা মানুষের কল্যাণার্থে নিয়োজিতপ্রাণ ব্যক্তি হিসেবেই নয়, তাঁর সামগ্রিক ব্যক্তিত্ব, লেখার বিষয়, বাগ্মিতা, জীবনচর্যা সম্পর্কে যত জেনেছি ততই তিনি আকৃষ্ট করেছেন আমাকে। ‘বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ’-টির কাজ তাই আমার জীবনের অন্যতম শিক্ষণীয় পর্যায় হয়ে রইল। অনেকটা ঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার প্রাক্-মুহূর্তে সংগঠিত ‘কোর্স ওয়ার্ক’-এর মতো। তাই বলতে পারি ‘মানুষ কাশীকান্ত’ বেশ প্রভাবশালী। তাঁর সঙ্গে বাস করে, তাঁকে চর্চা করে যে নৈতিকতা, মূল্যবোধের আদর্শ লাভ করলাম, তা নিশ্চয় জীবনভর কাজে লাগবে। আর সেই কারণে এই মহান কর্মযজ্ঞ, উদ্যোগে শামিল হওয়ার পরিসর তৈরি করে দিলেন যাঁরা, অর্থাৎ কৃষ্ণনগর তথা নদিয়া জেলার অন্যতম জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান ‘পণ্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র স্মৃতি সমাজ কল্যাণ কেন্দ্র’-এর পরিচালন সমিতির সদস্যবৃন্দের প্রতি রইল আমার কৃতজ্ঞচিত্তে প্রণাম।
‘কাশীকান্ত মৈত্র জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটি’-র সদস্যদের সহযোগিতা এই গ্রন্থটি নির্মাণের প্রতিপদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কমিটির সভাপতি শংকরেশ্বর দত্ত আমাদের অভিভাবক হিসেবে সর্বদা পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন, তাঁর বলিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞে শামিল হতে পেরেছি। বিশেষ করে বলতে হয় এই কমিটির কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ চৌধুরীর কথা। তাঁর সংগ্রহে থাকা কাশীকান্ত মৈত্র সম্পর্কিত বিপুল রসদ ছাড়া ‘বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ’-এর পাণ্ডুলিপি তৈরির কাজটি সম্পূর্ণই হতো না। এই গ্রন্থ সংকলনে তাঁর অপরিহার্যতা স্বীকার করতেই হয়। প্রসঙ্গত বলে রাখা উচিত যে, ২০১৫ সালে প্রকাশিত শিবনাথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘কালের মহাপথিক’ (প্রকাশক: কালীনগর কো-অপারেটিভ কলোনি এন্ড ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড) গ্রন্থটি আমাদের এই নির্মাণে বিশেষ সহায়ক হয়েছে।
Oplus_131072
রসদ সংগ্রহের এই কাজ এক দিনে সম্পন্ন হয়নি, যেমন নতুন লেখাগুলি বিভিন্নসময় বিভিন্নভাবে এসেছে, ফলে শৃঙ্খলাবদ্ধ অক্ষর-বিন্যাস, সমগ্র গ্রন্থে একই বানানবিধি মেনে চলা ইত্যাদি বিষয়গুলি পরখ করে নেওয়া আবশ্যিক ছিল। এদিকে সময় ছিল অত্যন্ত কম। কাশীকান্ত মৈত্র জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটির প্রস্তুতি সভা হয়েছিল ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই। সেদিনের সভাতেই একজন আহ্বায়ক-সহ পাঁচজন সদস্যের স্মরণিকা উপসমিতি তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। ২০২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কাশীকান্ত মৈত্রের জন্মশতবর্ষ পূর্তির মূল অনুষ্ঠানে এটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মোতাবেক অনতিবিলম্বে আমাদের কাজ শুরু হয়। কিন্তু এত বড়ো মাপের একজন মানুষের জীবনকে দুই মলাটের ভিতর ধরতে গিয়ে স্মরণিকার কলেবর ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একটি পর্যায়ে এসে যা আমাদের সীমায়িত করতে হয় এবং এটি একটি স্মারকগ্রন্থের রূপ নেয়।
গ্রন্থের পরিশিষ্ট অংশটি তৈরির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, পাণ্ডুলিপি, নথিপত্র প্রভৃতির অনুসন্ধান করে প্রয়োজনানুসারে সেগুলিকে ব্যবহার অথবা মুদ্রিতাকারে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। পাঠকদের সুবিধার্থে পরিশিষ্ট অংশটির কলেবর ও গুরুত্ব বুঝে এটিকে সংখ্যায়নের ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে। কাশীকান্ত মৈত্র রচিত অত্যন্ত মূল্যবান চারটি দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের ভূমিকা এখানে সন্নিবেশিত করা সম্ভব হয়েছে, যার মধ্যে একটি গ্রন্থের ভূমিকা তিনি ‘ন্যায়শাস্ত্রী’ ছদ্মনামে লিখেছিলেন। কাশীকান্ত মৈত্রের জীবন সম্পর্কিত আরো বহু কিছু মুদ্রিত রইল এখানে। চিঠিপত্র, চিত্রাবলি সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়। এরপরেও বহু কাজ বাকি ছিল। কাশীকান্ত মৈত্র সম্পর্কিত বিক্ষিপ্ত টুকরো টুকরো উপাদান-সূত্র, তথ্যরাজি, সংবাদ-প্রতিবেদন, বিভিন্ন লেখকের প্রেরিত স্মৃতিচারণগুলি একত্রিত করা ছিল যথেষ্ট সময়-সাপেক্ষ ও পরিশ্রম-সাপেক্ষ ব্যাপার। গ্রন্থ নির্মাণের প্রথম পর্যায় থেকেই প্রেসের সঙ্গে তাই যোগাযোগ রেখে চলতে হয়েছিল। সুনিপুণ মুদ্রণের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য গেটওয়ে পাবলিশিং হাউসের তরুণ প্রকাশক তন্ময় ধরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। তিনি ও তাঁর দল বইটির নির্মাণে অকৃপণভাবে সহযোগিতা করেছেন। আবেদনের ভিত্তিতে গ্রন্থের ISBN নম্বরও (ISBN: 978-93-92251-64-1) পাওয়া গেছে। গ্রন্থসজ্জার বিভিন্ন পর্যায়ে সুহৃদ সৌরভ ধর জয়ের সাহায্য না পেলে কাজটি সুচারুরূপে উপস্থাপন করা সম্ভব হতো না।
oppo_1024
কাশীকান্ত মৈত্রের পরিবার, অনুরাগীবৃন্দের সহযোগিতা, বিশেষ করে পণ্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র স্মৃতি সমাজ কল্যাণ কেন্দ্র এবং কাশীকান্ত মৈত্র জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটির সম্পাদক সত্যেন ব্যানার্জির সরবরাহকৃত উপাদানগুলি না পেলে গ্রন্থের এই মানবর্ধন সম্ভব হতো না। গ্রন্থের প্রকাশক হিসেবেও সত্যেন ব্যানার্জির দায়িত্ব ও নিষ্ঠার কথা সশ্রদ্ধায় স্মরণ করি এবং পণ্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র স্মৃতি সমাজ কল্যাণ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কাশীকান্ত মৈত্র জন্মশতবর্ষের উৎসব-অনুষ্ঠান আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার জন্য তাঁর প্রতি প্রণত হই। ‘কাশীকান্ত মৈত্র জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটি’-র সহ-সভাপতি এবং ‘পণ্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র স্মৃতি সমাজ কল্যাণ কেন্দ্র’-র বর্তমান সভাপতি সত্যরঞ্জন চৌধুরীর কর্মতৎপরতাও আমাদের সর্বদা উৎসাহ যুগিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে সর্বদা পাশে ছিলেন বিশিষ্ট কৃষ্ণনাগরিক লেখক সম্পদনারায়ণ ধর ও কবি রামকৃষ্ণ দে। তাঁদের সুচিন্তিত পরামর্শে গ্রন্থের চূড়ান্ত কপিটির পরিমার্জন সম্ভব হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় স্মরণিকা উপসমিতির দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেবাশিষ মণ্ডল ও অলোক সান্যালের কথা, প্রয়োজনে তাঁদের সর্বদা পাশে পেয়েছি।
আমাদের পাশে থাকার জন্য ‘কাশীকান্ত মৈত্র জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটি’-র পক্ষ থেকে আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ ‘নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক’-এর কার্যকরী সমিতি, ‘শুভেন্দু মেমোরিয়াল সেবা প্রতিষ্ঠান’ (গোবরাপোতা, নদিয়া)-এর প্রতিষ্ঠাতা শংকরেশ্বর দত্ত ও গীতা দত্ত এবং ‘অধর চন্দ্র দাস এন্ড সন্স’-এর কর্ণধার গৌতম দাসের প্রতি। এছাড়া কাশীকান্ত মৈত্রের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে আমাদের সাহায্য করার জন্য আমরা যে সকল ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ, তারা হলেন— কৃষ্ণনগর পৌরসভার মাননীয় চেয়ারপার্সন রীতা দাস, কৃষ্ণনগরের সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, প্রতিভা জুয়েলার্স, কৃষ্ণনগর হিরো হন্ডার কর্ণধার সমীর পাল, বিশিষ্ট কাষ্ঠ-ব্যবসায়ী শান্তনু মিত্র এবং কোতোয়ালি থানা (কৃষ্ণনগর)। এই স্মারকগ্রন্থ তৈরির বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান ‘পণ্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র স্মৃতি সমাজ কল্যাণ কেন্দ্র’-এর বর্তমান পরিচালন সমিতি ও সাধারণ সভ্যগণ বিভিন্নভাবে উৎসাহ জুগিয়েছেন, তাঁদের আগ্রহও আমাদের প্রাণিত করেছে। সবশেষে ধন্যবাদ জানাই সেই সকল লেখক-কবি-প্রতিবেদকদের যাঁদের স্মৃতিচারণ এই গ্রন্থকে সমৃদ্ধ করল।
প্রকৃত জননেতা, মানবদরদী এই মানুষটির জন্মশতবর্ষের আয়োজনে শামিল হতে পেরে এবং তাঁর নামাঙ্কিত এই স্মারকগ্রন্থ নির্মাণের মধ্যে দিয়ে ইতিহাসে তাঁর অবদানের ফলক আরো কিছুটা মজবুত করে গাঁথতে পেরে, আমরা যেন নিজেদেরই গর্বিত করলাম।
বঙ্গবিভূষণ ‘মানুষ-কাশীকান্ত’-এর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও প্রণাম।
লেখক : সম্পাদক, ‘বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ’।
সত্যি খুব ভালো লাগলো।