বৃহস্পতিবার | ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:১২
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (চতুর্থ পর্ব) : আবদুশ শাকুর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপূজায় কবিগান ও যাত্রার আসর : অসিত দাস সসীমকুমার বাড়ৈ-এর ছোটগল্প ‘ঋতুমতী হওয়ার প্রার্থনা’ সামাজিক মনস্তত্ত্বের প্রতিফলনে সিনেমা : সায়র ব্যানার্জী নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সুও দুও ভাসে’ বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (তৃতীয় পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভিয়েতনামের গল্প (ষষ্ঠ পর্ব) : বিজয়া দেব নীলমণি ঠাকুরের মেছুয়া-যাত্রা, একটি ঐতিহাসিক পুনর্নির্মাণ : অসিত দাস বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দ্বিতীয় পর্ব) : আবদুশ শাকুর কাদের প্রশ্রয়ে বাংলাদেশের জঙ্গিরা বাংলার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্রসাহিত্যে কবিয়াল ও কবির লড়াই : অসিত দাস নকল দাঁতের আসল গল্প : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (প্রথম পর্ব) : আবদুশ শাকুর মুর্শিদাবাদের কৃষি ঐতিহ্য : অনুপম পাল নক্সী কাঁথায় বোনা জসীমউদ্দীনের বাল্যজীবন : মনোজিৎকুমার দাস পঞ্চানন কুশারীর জাহাজী গানই কি কবির লড়াইয়ের মূল উৎস : অসিত দাস দিব্যেন্দু পালিত-এর ছোটগল্প ‘ঝালমুড়ি’ নকশালবাড়ি আন্দোলন ও বাংলা কবিতা : কার্তিক কুমার মণ্ডল নিঃসঙ্গ ও একাকিত্বের আখ্যান : পুরুষোত্তম সিংহ ভিয়েতনামের গল্প (পঞ্চম পর্ব) : বিজয়া দেব অন্তরের আলো জ্বালাতেই কল্পতরু উৎসব : সন্দীপন বিশ্বাস কল্পতরু — এক উত্তরণের দিন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চলচ্চিত্র উৎসবে পানাজি থেকে কলকাতা (শেষ পর্ব) : সায়র ব্যানার্জী ফেলে আসা বছরে দেশের প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া না ঝড় : তপন মল্লিক চৌধুরী কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোয়ানিতা ম্যালে-র ছোটগল্প ‘নাইট জব’ অনুবাদ মনোজিৎকুমার দাস দেশজ ফসলের বীজকে কৃষির মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে নদিয়া বইমেলা মুখপত্র : দীপাঞ্জন দে চলচ্চিত্র মহোৎসবে পানাজি থেকে কলকাতা (প্রথম পর্ব) : সায়র ব্যানার্জী শৌনক দত্ত-র ছোটগল্প ‘গুডবাই মাষ্টার’
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই ২০২৫ ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দ্বিতীয় পর্ব) : আবদুশ শাকুর

আবদুশ শাকুর / ২৮ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫

দুই

ঐতিহাসিকগণ ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসকে মোটামুটি তিনটি ভাগে চিহ্নিত করেছেন। প্রাচীন যুগ — খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০-এর পূর্ব থেকে ১২০০ সাল। মধ্যযুগ — ১২০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৫৭ সাল। আর আধুনিক যুগ — ১৭৫৭ সালের পর থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত। এই হিসেবে বৈদিক যুগ হল প্রাচীন যুগের মধ্যবর্তী পর্যায়টি। সে যুগের গান বলতে মূলত সুরে পাঠ্য বৈদিক মন্ত্র বা ঋকগুলিকে বোঝাত। এই পর্বে ভাষার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে গান অর্থাৎ সুশ্রাব্য স্বরেরও বিকাশ ঘটতে থাকে। স্থান, কাল ও পাত্রভেদে এক এক রকমভাবে স্বর প্রয়োগে মন্ত্রগুলি পাঠ করা হত।

অর্থাৎ বিভিন্ন গোষ্ঠীর ও বিবিধ যজ্ঞের পুরোহিতরা একই স্বরে বা ভঙ্গিতে বৈদিক মন্ত্রগুলি পাঠ করতেন না। এটা সহজেই অনুমেয় যে সেই সময় সংগীত সাধারণ্যে চর্চিত বিষয় ছিল না। বৈদিক সংগীত প্রচলিত ছিল প্রধানত যাজ্ঞিক সম্প্রদায় তথা ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের মধ্যেই। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পুরোহিতরা ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গিতে গান গাইতেন বা মন্ত্র পাঠ করতেন। সভ্যতা তথা সাংস্কৃতিক বিকাশের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রচেষ্টার সঙ্গে মন্ত্রপাঠের পৃথক প্রকৃতি এবং ভঙ্গি বৈদিক সংগীতকে ক্রমশ উন্নত করেছিল।

বৈদিক যুগের মধ্যপর্বে গ্রামগেয়, অরণ্যগেয়, ঊহ ও ঊহ্য গানের কথা জানা যায়। এই চার প্রকার গানের বিভাগগুলিকে নিয়ে সামবেদের গাথা বা সংগীতাংশ রচিত। ‘সাম’ অর্থে বৈদিক গান বা ঋকগুলিকে বোঝানো হত। নগরের অস্তিত্ব না থাকায় গ্রামকে কেন্দ্র করে বৈদিক সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটেছিল। কিন্তু গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সর্বত্র উল্লিখিত চার প্রকার গান সকলের গেয় ছিল না। গ্রামের সাধারণ গৃহস্থ বা শ্রেয়োকামীরা বিভিন্ন গ্রামে অনুষ্ঠিত যাগযজ্ঞে গ্রামগেয় গান গাইতেন। অরণ্যগেয় গান নির্ধারিত ছিল অরণ্যবাসী ঋত্বিক ও সামগদের জন্য। এঁরা বানপ্রস্থকালে অরণ্যজীবনের যাগযজ্ঞে অরণ্যগেয় গান গাইতেন।

ঊহ গানের সুর বা স্বর-প্রকৃতি অরণ্যগেয় গানের সুর বা স্বরানুযায়ী ছিল না। অরণ্যগেয় গানের পর এই গান শেখান হত। সন্ন্যাস জীবনের ঔপনিষদিক আদর্শে অনুসরণীয় ক্রিয়াকলাপে ঊহ ও ঊহ্য গানের প্রচলন ছিল। আজ এতকাল পরেও ভাবলে অবাক হতে হয়, তখনকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের নির্দিষ্ট এবং নির্ধারিত সাংগীতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি আনুগত্য বা সম্মান প্রদর্শনের প্রকাশ দেখে। সাধারণ গ্রাম্য গৃহস্থ, অরণ্যচারী, বা সন্ন্যাসীগণ প্রত্যেকেই কি একে অপরের গেয় গান অনুকরণ করে বিভিন্ন সময়ে গান করতে পারতেন না? পারলেও করেননি, অন্তত প্রাপ্ত তথ্যমতে। না করার কারণে বিভিন্ন ধারার গান বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিযোগে স্বতন্ত্ররূপে চর্চিত, প্রচলিত এবং প্রসারিত হবার সুযোগ পেয়েছিল।

সংগীতের আবেদন মূলত বোধ, আবেগ, অনুভূতি ও উপলব্ধির কাছে। আদিম গান শৈল্পিক উৎকর্ষের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল জৈবিক আবেদনে। ক্রমাগত জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গানও উত্তরণের পথে এগিয়ে গেছে। ভাষাহীন স্তোত্রজাতীয় কথা বা তথাকথিত অবরোহীগতিক গানে সহজ দুটি অথবা তিনটি স্বরের পুনঃ পুনঃ উচ্চারণের মধ্যে তারা প্রাণের আরামের সঙ্গে উপলব্ধি করত একটা দৈবশক্তির ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য আভাসও। তাদের ধারণা ছিল এমনি উচ্চারণের মাধ্যমেই সকল প্রতিকূলতাকে নিজেদের বশে আনা সম্ভব। অন্যদিকে কল্পনাশক্তির বিকাশও সম্ভব হয়েছিল একই ধারণার অনুগামী হয়েই।

শিল্পের উন্নতির জন্য উৎসর্গিত চর্চার প্রয়োজন। কিন্তু একনিষ্ঠ সাধনার অবকাশ আদিম মানুষের ছিল না। অক্লান্ত জীবন-সংগ্রামের ফাঁকে ফাঁকে যেটুকু প্রচেষ্টা বা প্রেরণা, সেটুকুই তাদের সম্বল ছিল। ক্রমশ প্রকৃতিকে জয় করতে লাগল মানুষ। সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক পরিবর্তনও ঘটে চলল। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শ্রমবিভাজন, গোষ্ঠীভিত্তিক কর্মদক্ষতা, এক শ্রেণির ওপর আরেক শ্রেণির আধিপত্য ইত্যাদিও অনিবার্যভাবেই প্রকাশ পেতে থাকল। এই প্রক্রিয়াতেই মানবজীবন এবং তার অন্তর্গত সংগীতের অগ্রগতি একই সঙ্গে হতে থাকল।

শিক্ষাকার নারদ বলেছেন — সাত স্বর, ষড়জ-মধ্যম-গান্ধার তিন গ্রাম, একুশ মূর্ছনা, একান্ন তান প্রভৃতি স্বরমণ্ডলের ব্যবহার আমরা দেখি বৈদিকোত্তর যুগে। বিভিন্ন মনীষীদের মতানুসারে বৈদিক যুগের বিভিন্ন স্তরে নতুন নতুন শ্রেণির গানের উদ্ভব ও প্রচলন হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, একই সময়ে এক একটি গানে একাধিক পর্বও থাকত। কোনও কোনও পর্ব আবার একাধিকবার গাওয়াও হত। ভাষার উন্নতির ফলে পাঁচ রকম উচ্চারণ করার ভঙ্গিও গানে দেখা গিয়েছিল। যেমন কথা ও স্বরের ওপর জোর দেওয়া, দুটি উচ্চারণ রীতির ব্যবধান নির্ণয় করা ও তাদের পছন্দ মতো সাজানো, স্বরের উচ্চতা ও দীর্ঘতা নিয়ন্ত্রণ করা, কথা বা সুরের সৌষ্ঠব বৃদ্ধি করা, বিভিন্ন উচ্চতা বা দীর্ঘতার মাঝে মাঝে সুর বা স্বরের পারস্পরিক পরিমাপ নির্ণয় করা। এছাড়া সুরের তথা স্বরের বিরামও থাকত। বৈদিক যুগে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের কয়েকটি হল — ক্ষোণী, অঘাটি (আঘাতি), ঘটলিকা (ঘাতলিকা), কাণ্ড, বার্ণ, কাত্যায়নী, পিচ্ছোরা প্রভৃতি বেণু ও বীণা, চর্মনির্মিত বাদ্যযন্ত্র দুন্দুভি, ভূমিদুন্দুভি, একশোটি তন্ত্রীযুক্ত বাণবীণার কথাও স্মর্তব্য।

আপাতদৃষ্টিতে অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও বৈদিক সংগীতের উল্লিখিত এই অতি সংক্ষিপ্ত বর্ণনার গুরুত্ব অনুভব করি দুটি কারণে। প্রথমত, বৈদিক সংগীতের এই বিকাশ মানুষের রুচি ও সৌন্দর্যবোধের বিকাশের স্তরে স্তরেই হয়েছিল; দ্বিতীয়ত, এই উন্নয়ন যাঁদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় হয়েছিল তাঁরা হলেন ব্রাহ্মণ, পুরোহিত, সামগ প্রমুখ নির্দিষ্ট এক শ্রেণির মানুষ। যে-কোনও শিল্পের প্রসার ও বিকাশের ক্ষেত্রে শিল্পী ও শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে প্রায় সমান সমান। বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণ ও পুরোহিতকেন্দ্রিক সংগীতচর্চা তাদের জ্ঞান, দক্ষতা, বিদ্যা, বুদ্ধি অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যেই চর্চিত ও বিকশিত হয়েছিল বলে এ গানে এই শ্রেণির ব্যক্তিরুচিই প্রতিফলিত হয়েছে। অন্যকথায়, বৈদিক গান সাধারণের গান হয়ে ওঠেনি। কিন্তু সেই গানের যে জমি — তার উপরেই পরবর্তী গানের ইমারত গড়ে উঠেছিল। জমিটি মূলত কী ছিল? শুধুই হৃদয়। আর কোনও উপাদান বা উপকরণ নয়, এমনকি মস্তিষ্কও নয়। [ক্রমশ]


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন