শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৩৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ : তপন মল্লিক চৌধুরী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (পঞ্চম পর্ব) : জমিল সৈয়দ যশোধরা — এক উপেক্ষিতা নারীর বিবর্তন আখ্যান : সসীমকুমার বাড়ৈ কলকাতার কাঁচাভেড়া-খেকো ফকির ও গড়ের মাঠ : অসিত দাস ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ রামনবমী পালন এবং হুগলী চুঁচুড়ার শ্রীরামমন্দির : রিঙ্কি সামন্ত ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (তৃতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ মিয়ানমারে ভূমিকম্প — প্রতিবেশী দেশের জনগণের পাশে বাংলাদেশ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শাড়িদিবসে এক শাড়িবিলাসিনীর ভালোবাসা : নন্দিনী অধিকারী

নন্দিনী অধিকারী / ৫৪১ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

আমি সুন্দর না অসুন্দর, তন্বী না পৃথুলা, দীর্ঘাঙ্গী না খর্বকায়া, গৌরী না শ্যামা… কোনো সমালোচনাতেই তুমি আমাকে বিদ্ধ করো না। নিবিড় আশ্লেষে আমাকে জড়িয়ে আমার শরীরের ত্রুটিবিচ্যুতিকে ঢেকে রাখো তুমি।

তুমি আমার লজ্জা নিবারণ। নারী হয়ে ওঠার অন্যতম সোপান। আমার অহংকার। শীতের উষ্ণতা। গ্রীষ্মের শীতলতা। বারো হাতের মোহিনী মায়ায় তুমি বনশৃঙ্গারম্, মাহেশ্বরী, বালুচরী, জামদানি, পাশাপল্লী, ধর্মাবরম্ আরো আরো কত কি!

আজ তোমার দিন। যদিও দিন প্রতিদিন তোমার জন্যে অলক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন কত শিল্পী, কারিগর! সময়ের পথ ধরে বিবর্তন এসেছে তোমার শরীরে। পরিবর্তনের স্রোতে ভেসেছি আমরাও।

তোমাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। খুলেছে পর্যটন শিল্প। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় শাড়ি পর্যটনের দুটি গল্প তোমার জন্মদিনে এক শাড়িবিলাসিনীর উপহার…

সে এক রূপকথার দেশ। তামিলনাড়ুর পুডুকোট্টায়াই গ্রাম। সে গ্রামের অলিগলিতে চেট্টিয়ারদের রাজপ্রাসাদ। বসন্তের এক সকালে নাচতে নাচতে সেখানে পৌঁছল একঝাঁক রঙিন প্রজাপতিনারী। তাদের নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান।

তবে তারা হুল্লোড়ে হৈ-হৈ-সংঘ, ভোজনে আঙুলচাটা আর শাড়ির বাগানে? মত্ত-বেহিসেবী !

সে শাড়ি মালঞ্চে রঙবেরঙের চেট্টিনাড শাড়ি। ইতিহাস বলে সে শাড়ির জন্ম আড়াইশ বছর আগে। চেট্টিয়ার রাজকন্যা আর রাণীদের অঙ্গের শোভা বাড়াত রেশম শাটিকা। সে শাড়ি ছিল চওড়ায় একটু ছোট, তবেই তো সোনার নুপূর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে!

সাধারণ খেটেখাওয়া মেয়েরা কি আর সেসব ছুঁতে পারে, তাই তাদের জন্যে তৈরি হল সূতির শাড়ি। ঘাস, ফুল, মাটি, পাতা, আকাশ, পাখি, কীটপতঙ্গ থেকে ধার করা রঙের শাড়িতে পাড়ের দেখনদারি। শক্তপোক্ত সে শাড়ি সহজে ছেঁড়ে না। তাই নরম পুরনো শাড়ি মায়ের মমতায় দোলনায় হয়ে ওঠে। সে দোলনায় দুলতে দুলতে কাজলপরা কচিমুখ খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।

শাড়ির খোঁজে তামিলনাড়ু থেকে আরো একটু উত্তরপশ্চিমে এগিয়ে কর্ণাটকে যাই।

ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে/মেয়েরা বেড়াতে গিয়েও শাড়ি কেনে। তবে সত্যি বলছি, কর্ণাটকের বাদামিতে গিয়ে ইল্কল শাড়ি কেনার তেমন প্রবল ইচ্ছে ছিল না। ঐ যে লোভ দেখালেন গেস্ট হাউসে পরিচয় হওয়া দুই বঙ্গতনয়া! বাদামি এসেছেন, ইল্কল শাড়ি কিনবেন না! সঙ্গে দোকানের নাম ধাম সব দিয়ে দিলেন।

চালুক্যরাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় অষ্টম শতাব্দীতে কর্ণাটকের বাগালকোট জেলার ইল্কলে গড়ে উঠেছিল বয়ন শিল্প। ইল্কলের গ্রানাইট পাথরের মতই সে শাড়ি রঙিন, শক্তপোক্ত, মজবুত।

চালুক্যদের কুলদেবী বনশঙ্করীর অঙ্গের ভূষণ হল উজ্জ্বল ঢালা একরঙের ইল্কল শাড়ি। উজ্জ্বলতর তার পাড়।

চালুক্যদের অন্তঃপুর কমলা, সবুজ, নীল, গেরুয়া, হলুদ রঙের ইল্কল শাড়িতে ঝলমল করে উঠল। রাণী আর রাজকন্যারা পরলেন জরি পাড় রেশম ইল্কল। পাড়ের নাম পারস। সে শাড়িতে রেশম সুতোয় ফুটে উঠল ফুল। নেচে উঠল ময়ূর। পাখিরা ডানা মেলে উড়ল। রাজার হাতিরা চলল হাওদা পিঠে। ঘোড়া দৌড়ল টগবগিয়ে। ইল্কল শাড়িতে হাতে কাজ করা সে সূচীশিল্পের নাম কসৌটি। নববধূর জন্যে তৈরি হল মহার্ঘ গিরিচন্দন ইল্কল।

আখ আর জোয়ারের খেতে কাজ করে আঙ্কাম্মা, সীতাম্মা, মীনাক্ষী, কমলা। রাস্তায় মাটি কাটে কুট্টিআম্মা। সকালে স্নান সেরে তারা কপালে বিভূতির তিন আঙুলের ত্রিপুন্ড তিলক আর কুঙ্কুমের টিপ আঁকে। দরজায় দেয় রঙ্গোলী। ঘনরঙের, মোটা সূতীর ইল্কল, সঙ্গে উজ্জ্বল পাড় দেওয়া খন বা খানা ব্লাউজে তাদের লজ্জা নিবারণ।

ইল্কল শাড়ি, খন কাপড় কর্ণাটকের প্রান্ত ছাড়িয়ে পোঁছে যায় মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশে। তারাও আপন করে নেয় এই রঙিন আচ্ছাদন। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে আধুনিকাদের ওয়ার্ডরোবেও ইল্কল শাড়ি। ক্যাট ওয়াকে মডেলরা হাততালি কুড়োচ্ছেন বাগালকোটের কোনো অনাম্নী তাঁতির শাড়ি পরে।

কর্ণাটকের ইল্কল শাড়ির বৈশিষ্ট্য তার আঁচলে। সব শাড়িতেই দুটি করে লাল বর্ডার। সে পদ্ধতির নাম টপ টেনি। মারাঠি আর তেলেগু ইল্কল শাড়িতে সে অঞ্চলের নিজস্ব চিহ্ন জুড়েছে।

মোবাইলে বাদামির ছবির সঙ্গে আমাদের ব্যাগে ঢোকানো হল তার নিদর্শন। মেয়ের পছন্দ হল একটি টিয়া রঙের সূতীর ইল্কল শাড়ি। আমি তুলে নিলাম দুটি খন ব্লাউজ পীস্। আমাদের বাদামি বেড়ানো ষোলোকলায় পূর্ণ হল। সেই মুহূর্তে মনে হল, আমাদের থেকে সুখি আর কে আছে!

সে কোন সময়ে কম্পিত হৃদয়ে কবি লিখেছিলেন, —

“গৌরবরন তোমার চরণমূলে

ফল্‌সাবরন শাড়িটি ঘেরিবে ভালো

বসনপ্রান্ত সীমন্তে রেখো তুলে কপোলপ্রান্তে সরু পাড় ঘন কালো।”

আহা, এমন কবিতা পেয়ে শাড়ি পরা যেন সার্থক হল আমাদের! লেখায়, রেখায়, গানে এ অঙ্গভূষণ আরো মহিমাময় হয়ে উঠল!


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “শাড়িদিবসে এক শাড়িবিলাসিনীর ভালোবাসা : নন্দিনী অধিকারী”

  1. Maitrayee Banerjee says:

    এত লোভ দেখাও কি বলবো! কার কি রকম মূল্য সেটা দিলে আরও একটু জ্ঞান লাভ হত। তোমার লেখা যেমন সুন্দর তেমন লোভনীয়। 😊

  2. Nandini Adhikari says:

    এইরে, দাম টাম মনে রাখার ব্যাপারে আমি একটু কাঁচা। তবে যতদূর জানাতে পারি,সূতির ইল্কল বা চেট্টিনাড হাজার দুয়েক। খুব বেশি হলে তিন হাজার। সিল্কের শাড়ির দিকে আজকাল আমি আর তাকাই না। বড্ড দাম বেড়েছে।

  3. Chandrani Kundu says:

    শাড়ি ভালোবাসলেও নাম বেশি মনে থাকেনা, তোমার লেখা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারি,কি সুন্দর করে লিখেছ, অসাধারণ লাগলো

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন