সোমবার | ১৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:০২
Logo
এই মুহূর্তে ::
শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘তোমার নাম’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (অষ্টম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘হাওয়া-বদল’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার প্রবোধিনী একাদশী ও হলদিয়ায় ইসকন মন্দির : রিঙ্কি সামন্ত সেনিয়া-মাইহার ঘরানার শুদ্ধতম প্রতিনিধি অন্নপূর্ণা খাঁ : আবদুশ শাকুর নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘শুভ লাভ’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ভোটের আগে মহারাষ্ট্রের রাজনীতি নানাদিকে মোড় ঘুরছে : তপন মল্লিক চৌধুরী সরকারি নিষেধাজ্ঞা, জমির চরম ক্ষতি ও জরিমানা জেনেও নাড়া পোড়ানো বন্ধে সচেতন নন চাষিরা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার আবুল বাশার-এর ছোটগল্প ‘কাফননামা’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ব্লকবাস্টার ‘আরাধনা’-র ৫৫ বছর — রাজেশ-শর্মিলা হিট-এর নেপথ্যে… : রিঙ্কি সামন্ত কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র

অমর মিত্র / ২৯ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

অগ্রজ মনোজ মিত্র ৮৫ পেরিয়ে ৮৬ হলেন না। শ্রীচরণেষু চলে গেলেন। আমার আপনার সেই বাঞ্ছারাম। সাজানো বাগান নাটকের বাঞ্ছা কাপালি। সেই ১৯৫৯-এর মৃত্যুর চোখে জল নাটকের বৃদ্ধ বঙ্কিম (তখন তিনি ২১ বছর) এত বছর ধরে একটু একটু করে প্রকৃত বয়সে পৌঁছেছে। জীবনের সত্য আর মঞ্চের মায়াজাল মিলে মিশে গেছে। বাঞ্ছারাম বৃদ্ধ হয়েছেন কিনা জানি না, দশ বছর আগে ২০১৪-র ষোলই আগস্ট, তখন তিনি ৭৫ পার, একাডেমি মঞ্চে সাজানো বাগান নাটক হলো, বাঞ্ছারাম আবার মঞ্চে এল, বুড়ো বাঞ্ছা ধীরে ধীরে সিধে হয়ে উঠেও দাঁড়াল। তখন নাটকটির বয়স ৩৭। ১৯৭৭-এ যে নাটকের শুরু, সেই বাঞ্ছারাম আবার মঞ্চে স্বমহিমায়। তারপরও জীবনের মঞ্চে একই মহিমায়।

২১-বছর বয়সে বঙ্কিম, ৩৭-এ গজমাধব (পরবাস) ৩৯ এ বাঞ্ছারাম (সাজানো বাগান) এই তিন বৃদ্ধ আমাদের মঞ্চে মিথ হয়ে গেছে অনেকটা। এখানে তিনিই অভিনেতা। তিনিই নাটককার। আবার ১৯৭২-র নাটক ‘চাকভাঙা মধু’ (প্রযোজনা : থিয়েটার ওয়ার্কশপ)-র জটা, মাতলা বা আরো পরের নাটক রাজদর্শন (প্রযোজনা : বহুরূপী) বা অন্য অনেক নাটকে বৃদ্ধ এক চরিত্র নিয়েই নাটক হয়ে ওঠে জীবনের ও বেঁচে থাকার এক অনুপম ভাষ্য। মনোজ মিত্রর নাটকে বৃদ্ধ হলেন বহুদর্শী। জীবনকে দেখেছেন তিনি বহুবছর ধরে। সেই দেখাই যেন তাঁর নাটকের দর্শন। এক জীবনে মানুষের যত বয়স বেড়েছে, বার্ধক্যের দিকে মানুষ যত এগিয়েছে, ত্রিকালদর্শী সেই চরিত্র হয়ে উঠেছে বার্ধক্যের কারণেই অনেকটা নিরূপায়। এই নিরূপায়তার গল্পই বলেছেন তিনি তাঁর নাটকে। মৃত্যুর চোখে জল-এর বঙ্কিম বা ‘পরবাস’ নাটকের গজমাধবকে মনে তো পড়বে। গজমাধব আমাদের নাট্য সাহিত্যে এক অদৃষ্ট-পূর্ব চরিত্র। কিন্তু যে বঙ্কিম একান্ত নিরূপায়, নিজের ওষুধের শিশি বোতল নিয়ে কোনোক্রমে বেঁচে থাকতে চায় যে, সেই বৃদ্ধই চাকভাঙা মধুতে এসে (জটা) বেঁচে থাকাকে একটু সহনীয় করে তুলতে নানা কৃতকৌশল অবলম্বন করে। শোধ নিতে চায় অঘোর ঘোষের মৃত্যু ঘটিয়ে দিয়ে। জোতদার অঘোর ঘোষ এসেছিল সাপের কামড় খেয়ে সেই তল্লাটের বড় সাপের ওঝা মাতলার কুটিরে। নিয়ে এসেছিল তার পুত্র। মাতলার বুড়ো কাকা জটা শোধ নিতে চায়। অঘোর তাদের সব নিয়েছে। এবার যেন ফেরত নেবে। আসলে শ্রেণী চরিত্রের তফাতে জটা আর বঙ্কিম আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু বেঁচে থাকার অদম্য বাসনা তাদের একই রকম। চাকভাঙা মধু এখন ইতিহাস। বাংলা মঞ্চ অমন প্রযোজনা আগে দ্যাখে নি। অমন নাটকও নয়। আমাদের নাটকের ছকটাই ভেঙে গিয়েছিল চাকভাঙা মধুতে। জটা মাতলা আর মাতলার গর্ভবতী মেয়ে বাদামী, এই তিনজনের শেষ দুজন চায় অঘোর বাঁচুক। জটা তার দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছিল আহত বিষধর কে বাঁচিয়ে রাখা মানে নিজেদের মরণ ডেকে আনা। এই দ্বন্দ্ব, বাঁচাব না মারব, নিয়েই নাটক। থিয়েটার ওয়ার্কশপের সেই প্রযোজনা (নির্দেশনা : বিভাস চক্রবর্তী), আর বিভাস চক্রবর্তী, অশোক মুখোপাধ্যায়, মানিক রায় চৌধুরী ও মায়া ঘোষের অভিনয় এখনো আমার স্মৃতিতে অমলিন। বৃদ্ধ বঙ্কিম বাঁচত শিশি বোতল নিয়ে, জটার বাঁচা আর মরা যখন একাকার তখন সে শোধ নিয়ে বাঁচতে চায়। সে হল সুন্দরবনের হতভাগ্য ভূমিহীন, না খেতে পেয়ে চারপেয়ে হয়ে যাওয়া মানুষ। ফলে সে আর বঙ্কিম তো আলাদা হবেই। এরপর ১৯৭৫-এর নাটক পরবাস, সেখানে উচ্ছেদ হওয়া ভাড়াটে গজমাধব নানা কৃত-কৌশলে থেকে যেতে চায় তার বহুকালের পুরোন আশ্রয়ে। এ নাটক তাই হয়ে ওঠে অসামান্য ব্যঞ্জনাময়। মনোজ মিত্রর অভিনয় ভোলা যায় না। এরপর গজমাধবই যেন বাঞ্ছারাম হয়ে ওঠে সাজানো বাগান নাটকে। তার আগে বা পিছে লেখা কেনারাম বেচারাম হয়ে সাজানো বাগান। সাজানো বাগানের পর রাজদর্শন, কিনু কাহারের থেটার…কত নাটক। বেঁচে থাকার কৌশল আর অদম্য স্পৃহাই হয়ে ওঠে তাঁর সমস্ত নাটকের মূলমন্ত্র। বেঁচে থাকার কথাই নানা ভাবে ঘুরে আসে। আর সেই বেঁচে থাকা এক ত্রিকালজ্ঞ বৃদ্ধের। তার বেঁচে থাকা শেষ অবধি যেন মানব সভ্যতার বেঁচে থাকা হয়ে ওঠে। সাজানো বাগান যেন সেই কথাই বলেছে শেষ পযর্ন্ত। বৃদ্ধের বেঁচে থাকা আর একটি শিশুর জন্ম সমার্থক হয়ে ওঠে। মনোজ মিত্রর নাটকে মানুষের আশ্রয়হীন হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক ঘুরে ঘুরে এসেছে। রূপক হয়ে এসেছে। আজ সমস্ত পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুন, ভিটে মাটি ছেড়ে দেশান্তর যাত্রাই যেন মানুষের ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশান্তর যাত্রার ভয়ে মানুষ আত্মহত্যাও করছে। এই কথাই তিনি সারাজীবন বলতে চেয়েছেন গজমাধব, কেনারাম, বাঞ্ছারামের চরিত্রের ভিতর দিয়ে।

১৯৭৭-এর নাটক ২০২৪ এও হচ্ছে, প্রায় পঞ্চাশ বছর হয়ে গেল এর বয়স। হতে আর কতদিন ২০২৪-শেষ হয়ে গেল। পঞ্চাশ বছর একটি নাটকের বেঁচে থাকা কম কথা নয়। একই জনপ্রিয়তা তার। আমার বিশ্বাস সাজানো বাগান নাটক এবং তার প্রধান চরিত্র বাঞ্ছা কাপালি বহু পঞ্চাশ বছর বেঁচে থাকবে। এই নাটকের ভিতরে চিরায়ত হয়ে যাওয়ার গুণটি নিহিত আছে। একা মানুষ ব্যক্তি মানুষ কীভাবে লড়তে পারে অসীম শক্তিধরের সঙ্গে তা নিয়েই যেন এই নাটক। মনে করুন এক অসীম শক্তিধরের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে দুর্বল মানুষ। সে কীভাবে বেঁচে থেকে হারিয়ে দেবে মস্ত মানুষটিকে, তাইই যেন নাটকের দর্শন।

মনোজ মিত্রের নাটক সাহিত্য পাঠের স্বাদ দেয়। তাঁর সংলাপে যেমন, বহুমাত্রিকতা, যেমন নাট্যগুণ তেমনি সাহিত্যের গুণ। রসবোধ অসামান্য। কাহিনির গভীরতা, নাট্য কাহিনীতে জীবনের অতল তল ছুঁয়ে যাওয়া, এসব আমাদের নাট্য সাহিত্যকে দিয়েছে এক বিরল মাত্রা। মঞ্চ ব্যতীত নাটক পাঠ তো উঠে গিয়েছিল। তা ফিরিয়ে এনেছিলেন তিনি। সহজ কথা সহজ ভাবে বলা সহজ নয়। তিনি সেই সহজ কথাই সহজ ভাবে বলেছেন।

বঙ্কিম, জটা, গজমাধব সকলেই নিজেকে বাঁচাতে নানা উপায় অবলম্বন করেছিল। সাজানো বাগান নাটকে এসে সেই বৃদ্ধ যেন শিখে গেছে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হবে, নিজের জমি বাঁচাতে হবে ভূমধ্যাকারীর আগ্রাসন থেকে। সাজানো বাগান নাটক দেখে মেদিনীপুরের কাঁথি অঞ্চল থেকে এক বৃদ্ধা এসেছিলেন মিষ্টান্ন নিয়ে। বুড়োকে তাঁর নিজের ঠাকুরদা বলে মনে হয়েছিল। একজন আমাকে বলেছিলেন, আসলে অমন এক বুড়ো বাঞ্ছা ক্যানিঙের দিকে এক গ্রামে থাকে। সে সত্যিকারের বাঞ্ছাকে দেখেছে। বাঞ্ছারাম যেন কিংবদন্তীর এক মানুষ। আর শাসনের সেই গ্রামটির নাম বাঞ্চহা রামের বাগানই হয়ে গেছে। সে কিছুতেই মরবে না। এমন বেঁচে থাকার স্পৃহা আগে দেখিনি যেন। বেঁচে থাকায় কত আনন্দ। কত সুখ। কিন্তু তার জন্য কৌশল করতে হয়। বিপক্ষ যেন কামান বন্দুক বোমা নিয়ে হাজির। এই যুদ্ধদীর্ণ পৃথিবীতে বাঞ্ছারামই টিকে থাকবে। থাকতে পারবে। তারপর পৃথিবীকে ফুলে ফলে সাজানো বাগান করে তুলবে। তিনি আছেন। তিনি থাকবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন