শুক্রবার | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৩৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

স্কুল পালিয়ে কী রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায়? : সাইফুর রহমান

সাইফুর রহমান / ১৮৪ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪

১৮৭০ সালের ভাদ্র মাসে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা তাদের শুভার্থী দাতাদের একটি নামের তালিকা প্রকাশ করে। সেই ছাপা নামের তালিকায় দেখা যায়, জনৈক দাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। দাতা এই ব্যক্তিটি দান করেছেন দুই টাকা ১২ আনা তিন পয়সা। প্রসঙ্গক্রমে এখানে বলতে হয়, এই দাতাটি কোনো পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি নন। তিনি সাড়ে ১২ বছর বয়সের একটি বালক মাত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার তাঁকে নিয়ে ডালহাউসি পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন, কিছুদিন পর তিনি রবীন্দ্রনাথকে ফেরত পাঠিয়ে নিজে রয়ে গেলেন সেখানে। হাত খরচ বাবদ ছেলের হাতে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে তিনি দান করেছিলেন তত্ত্ববোধিনী ফান্ডে।

ঘটনাটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে সেই প্রথম ছাপার অক্ষরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম দেখা যায়। তিনি তাঁর নিজের নামটি ছাপার অক্ষরে দেখার জন্যই যে এ কাজটি করেছিলেন সেটি বোঝা যায় এ কারণে যে ব্রাহ্ম সমাজে ছাপাখানায় টাইপ খুঁজে খুঁজে নিজের নাম সাজিয়ে তাতে কালি মেখে কাগজের ওপর ছাপ দিয়ে দেখতে তাঁর ভালো লাগত। এ ঘটনার উল্লেখ আছে তাঁর জীবন স্মৃতিতে। রবীন্দ্রনাথের প্রথম কবিতা যখন ছাপা হয় তখন তার নিচে অবশ্য কবির নাম ছিল না।

সে সময় নামহীন রচনা প্রকাশেরই রীতি ছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে? যে মানুষটি ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখতে এতটা উতলা হয়ে উঠেছিলেন সেই কাঁচা বয়সেই। সচেতন বা অচেতন মনে হতে চেয়েছিলেন বিখ্যাত। সেই বালকটি কেন মন বসাতে পারলেন না স্কুলে। সম্ভবত এর একটি চমৎকার উত্তর আমরা খুঁজে পাই বিশিষ্ট ইংরেজ লেখক গ্রাহাম গ্রিনের উক্তিতে।

তিনি বলেছেন, অবসেশন বা আচ্ছন্নমগ্নতা না থাকলে সৃষ্টিশীল মানুষ হওয়া যায় না। ছোটবেলা থেকেই যেসব মানুষ পড়াশোনা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ব্যাপারেই বড় বেশি সজাগ সাবধানী ও গোছালো তাদের জীবনে বড়জোর পর্যাপ্ত অর্থপ্রাপ্তি ঘটে। কিংবা তথাকথিত সাকসেসফুলও হন। কিন্তু তাঁদের হাতে সহসা কালজয়ী সাহিত্যকর্ম কিংবা মহৎ কোনো শিল্পকর্ম সৃষ্টি হয় না। তাঁদের মধ্যে কিছু জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে—আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, হারমান হেসে, কাফকা, পাবলো পিকাসো, সালভাদর দালি কিংবা ভ্যান গঘ প্রমুখ। রবীন্দ্রনাথ শুধু তাঁর পরিবারের একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন না, যিনি স্কুল পালিয়েছিলেন। ওই ঠাকুরবাড়িতেই স্কুল পালানো ছেলে পাওয়া যায় আরো দুজন। তাঁদের মধ্যে একজন রবিঠাকুরের আপন বড় ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর অন্যজন রবিঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অবনীন্দ্রনাথ বড় হয়ে যিনি গোটা ভারতবর্ষের চিত্রকলার জগতে বইয়ে দেন বড় রকমের পরিবর্তনের ঝড়। সেই অবনীন্দ্রনাথও কিন্তু আসলে এক স্কুল পালানো ছেলে। কাকা আর ভাইপোর মধ্যে দারুণ মিল এই এক জায়গায়। অন্যদিকে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের বড় ছেলে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি চিরকালই কোলাহল এড়িয়ে একলা থাকার মানুষ এবং মানুষটি গুণেও অদ্বিতীয়, অথচ তাঁরও মন ছিল না স্কুলে পড়া।

বাংলা সাহিত্যে নিদেনপক্ষে এ রকম প্রায় আধাডজনের মতো বিখ্যাত ব্যক্তির নাম এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে। তাদের মধ্যে একজন বাংলা ভাষার প্রথম লিরিক্যাল অর্থাৎ ছন্দের কবি, কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি জসীমউদ্দীন। বিহারী লাল জন্মেছিলেন ১৮৩৫ সালে। রবীন্দ্রনাথ থেকে ২৬ বছর আগে। আর বিহারী লালের জন্মের ২৪ বছর আগে জন্মেছিলেন আরেক কবি, যিনি ব্যঙ্গ কবিতা রচনায় আমাদের সাহিত্যে একাই তৈরি করে দিয়ে গেছেন একটি নতুন যুগ। তার ওপর তিনি ছিলেন সেকালের এক নামজাদা পত্রিকার সম্পাদক, নাম সংবাদ প্রভাকর, বললেই আমরা বুঝি এমন এক পত্রিকা, যার জুড়ি মিলবে না কোথাও। এ পত্রিকায়ই বাংলা সাহিত্যের দুই স্মরণীয় লেখকের কবিতা লেখায় হাতেখড়ি। পরে একজন হয়ে যান ঔপন্যাসিক, তিনি বঙ্কিমচন্দ্র , অন্যজন নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র, কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের হাতে তৈরি হয়েছিল আরো অনেক কবি-সাহিত্যিক। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জন্ম নদীয়া জেলার কাঁচরাপাড়ার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা ডাক্তার। ঈশ্বরচন্দ্র ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড ডানপিটে ধরনের। তিন বছর বয়সে মামার বাড়িতে এসেছেন কলকাতায়। এসেই অসুখ। কলকাতায় তখন মশা-মাছির প্রবল উপদ্রব। এসব দেখে বালক ঈশ্বর তখনই লিখে ফেললেন এই ছড়া। যা আজও সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে ফেরে—রাতে মশা, দিনে মাছি/এই নিয়ে কলকাতায় আছি। মাত্র তিন বছর বয়সেই এই ছড়া? অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়েছে অনেকের কাছে। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রের কাছে হয়নি। ঈশ্বরচন্দ্র  গুপ্তের জীবনীকার হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র  খোলাখুলিভাবেই বলেছেন, ‘তাই নাকি? অনেকেই কথাটা না বিশ্বাস করিতে পারেন। আমরাও বিশ্বাস করিব কি না জানি না। তবে যখন ইংরেজ দার্শনিক স্যার জন স্টুয়ার্ড মিলের তিন বছর বয়সে গ্রিক শেখার কথাটা সাহিত্যজগতে চলিয়া গিয়াছে তখন এ কথাটাও না হয় চলুক। অসুবিধা কী?’ ছেলেবেলা থেকেই পাঠশালার দিকে অমনোযোগ। রইল পড়ে স্কুলের লেখাপড়া। ব্যস্ত কেবল হো-হো টোটো খেলায়। বাড়িতে গঞ্জনার শেষ নেই। মূর্খ ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের মনে কালো মেঘের মতো দুশ্চিন্তা। সন্দেহ নেই, এ ছেলের দিন কাটবে অন্যের গলগ্রহ হয়ে। কিন্তু কালক্রমে তিনি হয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের জগতের এক অনন্য কবি।

এবার বিহারী লালের কথা কিছু বলি—বাংলা কবিতা তখন ছিল সেজবাতি পর্যায়ে, কিন্তু বাংলা সাহিত্যে কবি বিহারী লালের আবির্ভাবে সেই সেজবাতি রাতারাতি পরিণত হলো ঝাড়লণ্ঠনে। বাংলা সাহিত্যের প্রথম লিরিক অর্থাৎ ছন্দ কিন্তু তার কলমেই। প্রথমে ঠাকুরবাড়ির প্রিয় কবি, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজো বউ ঠাকরুন জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী কাদম্বরী দেবীর প্রিয় কবি। জনশ্রুতি আছে, রবীন্দ্রনাথের আগে কাদম্বরী দেবীর সঙ্গেই বিহারী লাল চক্রবর্তীর হৃদয়ঘটিত একটি ব্যাপারস্যাপার ছিল। কাদম্বরী দেবী বিহারী লালের জন্য নিজ হাতে একটি আসনও তৈরি করে উপহার দিয়েছিলেন এবং সে আসনটি উপলক্ষ করে বিহারী লাল একটি কবিতাও রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বিহারী লালের কবিতা দ্বারা দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। প্রথমে ঠাকুরবাড়ির প্রিয় কবি হলেও তারপর তিনি পাকা আসন পেয়ে গেলেন সারা দেশের মানুষের মনে। আজ পর্যন্ত সেই আসনে কিন্তু এতটুকুও ফাটল ধরেনি। বিহারী লালও স্কুল পালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো। ‘বিহারী লালের লেখাপড়া সম্পর্কে বলতে হয় যে দিন কতক সে সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হয়ে ব্যাকরণ, মেঘদূত প্রভৃতি পড়েছিলেন। কিন্তু স্কুল-কলেজের বাঁধাধরা নিয়মের বশবর্তী হয়ে থাকা তাঁর স্বভাবের সঙ্গে মিলত না। অল্পকালের মধ্যেই সংস্কৃত কলেজ ত্যাগ করে বাড়িতে পণ্ডিতের কাছে ব্যাকরণ ও অন্যান্য বিষয়ে পড়তে শুরু করলেন। আমরা ছোটবেলায় স্কুল কামাই করলে শিক্ষকদের মুখে এই কথাটি প্রায়ই শুনতে হতো যে স্কুল পালিয়ে কখনো রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না। কিন্তু আমার প্রশ্ন? প্রতিনিয়ত স্কুলে উপস্থিত থেকেই কি রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায়? প্রতিদিন শত-সহস্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লাখো কোটি ছাত্র-ছাত্রী আসা-যাওয়া করছে তাঁদের মধ্যে কজন রবীন্দ্রনাথ হতে পারছেন?

এই যে আমরা যখন কোনো লেখকের জীবনী পড়ি, যেমন—জে এইচ ওয়েলস, জ্যাক লন্ডন, হারপার লি, উইলিয়াম ফকনার, ম্যাক্সিম গোর্কি, মার্ক টোয়েন প্রমুখ ব্যক্তি স্কুল পালিয়ে বিখ্যাত সব লেখক হয়েছেন। মার্ক টোয়েনের সাদামাটা জীবনী পড়লে দেখা যাবে যে ছোটবেলায় এমন কোনো কুকর্ম নেই যে তিনি করেননি। ছিনতাই, চুরি ইত্যাদি। কিন্তু এর গভীরে যে জীবনটি জানতে হবে যে তাঁরা স্কুলের আঙিনা না মাড়ালেও নিজে উদ্যোগী হয়ে প্রচুর পড়াশোনা করতেন। একটি উদাহরণ দিই—শরত্চন্দ্র একবার তাঁর এক আত্মীয় লীলা রানী গঙ্গোপাধ্যায়কে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘১৪ বছর ১৪ ঘণ্টা ধরে পড়ি। সেই যে কলেজজীবনে পরীক্ষা দিতে পারিনি কেবল সেই রাগে।’ উইনস্টন চার্চিল ছোটবেলায় একেবারে গোমূর্খ ছাত্র ছিলেন বলে তাঁর বাবা তাঁকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। চার্চিল ছোটবেলায় ভালো করে লেখাপড়া করতে পারেননি বলে সেই রাগে পরবর্তী জীবনে এতটাই পড়াশোনা করেছিলেন যে সাহিত্যে তিনি একেবারে নোবেল অর্জন করে ছেড়েছিলেন। অনেকে আবার আর্থিক কারণে পড়তে পারেন না। যেমন কাজী নজরুল ইসলাম ও চার্লস ডিকেন্স। নজরুল যেমন রুটির দোকানে কাজ করতেন, ডিকেন্স তেমনি বোতলে লেবেল আঁটানোর কাজ করতেন। কিন্তু এসবের মধ্যেও পাঠ্যাভ্যাস কিন্তু থেমে থাকেনি। কবি জসীমউদ্দীন নবম শ্রেণিতে উঠে স্কুল পালিয়ে চলে গিয়েছিলেন কলকাতায়। জীবনে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন সে আশায়। কিন্তু কিছুকাল ভবঘুরের মতো ঘোরাঘুরি করে আবার ফরিদপুরে এসে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। অনেকটা ইংরেজ কবি বায়রনের মতো। বায়রনের স্কুল ভালো লাগে না বলে পালিয়ে চলে এলেন বাড়িতে। বছর পাঁচেক পরে আবার গিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কেমব্রিজে। আমাদের বর্তমানে এই সময়ে যেমন রবীন্দ্রনাথের স্কুল পালানো বেশ একটি প্রচলিত বিষয়। বায়রন-পরবর্তী ছাত্রদের কাছেও বায়রনের স্কুল পালানোটাই একটা বিশেষ প্রচলিত বিষয় ছিল। আর সেই প্রচলিত গল্পে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্কুল পালিয়েছিলেন আরেক নোবেলজয়ী আইরিশ লেখক জর্জ বার্নার্ড শ। আমি যতটুকু তাঁর সম্পর্কে পড়েছি তাতে বলতে পারি, স্কুল পালানো সব বিখ্যাত মানুষের মধ্যে বোধ করি তিনি ছিলেন সবচেয়ে অগ্রগণ্য ও স্কুল সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ। স্কুল সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল ভয়াবহ। জীবনজুড়েই তিনি স্কুল ও শিক্ষকদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করে গেছেন। তিনি এক জায়গায় লিখেছেন, ‘বর্তমানে আমাদের স্কুল ও স্কুলের শিক্ষক উভয়ই শিক্ষার জন্য উপযুক্ত কোনো স্থান নয়। বরং এগুলো গারদখানা কিংবা ট্রাংক অর্থাৎ লোহার বাক্স বলাই শ্রেয়। কারণ মা-বাবারা সাধারণত তাঁদের ছেলেমেয়েদের ওখানে পাঠান, যাতে শিশুগুলো তাঁদের সহসাই বিরক্ত না করে।’ সত্যি খুবই মর্মভেদী উক্তি।

পেজফোর-এর শারদোৎসব বিশেষ সংখ্যা ২০২৩-এ প্রকাশিত


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন