শনিবার | ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:১৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
গানের ভিতর দিয়ে দেখা পুজোর ভুবনখানি : সন্দীপন বিশ্বাস নবদুর্গা নবরাত্রি : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সাদা কালোয় কুমোরটুলি : বিজয় চৌধুরী জেল খাটাদের পুজো, মাইক আসছে মাইক, ছুটছে গ্রাম : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কাশ্মীর নির্বাচনে বিপুল সাড়ার নেপথ্যে কি ৩৭০ বিলোপের জবাব : তপন মল্লিক চৌধুরী তর্পণের তাৎপর্য : সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় মহালয়ার চন্ডীপাঠ মন্ত্র, মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্র : বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র পেজফোর-এর শারদোৎসব বিশেষ সংখ্যা ২০২৪ সুকুমার রায় মানেই শৈশব ও কৈশোর : রিঙ্কি সামন্ত অমৃতা প্রীতম-এর অনুবাদ গল্প ‘বুনোফুল’ মিল অমিলের মানিক ও মার্কেজ : রাজু আলাউদ্দিন কলকাতা ছিল একসময় ভেড়াদের শহর : অসিত দাস নিরাপদর পদযাত্রা ও শিমূলগাছ : বিজয়া দেব তোলা বন্দ্যো মা : নন্দিনী অধিকারী বাংলার নবজাগরণ ও মুসলমান সমাজ : দেবাশিস শেঠ সৌরভ হোসেন-এর ছোটগল্প ‘সালাম’ বঙ্গের শক্তি-পূজা : সুখেন্দু হীরা পুজোর পরিবর্তন, পরিবর্তনের পুজো : সন্দীপন বিশ্বাস পিতৃপক্ষের মধ্যে পালিত একাদশী — ইন্দিরা একাদশী : রিঙ্কি সামন্ত অরণ্যের অন্তরালে তাম্বদি সূরলা : নন্দিনী অধিকারী ভারতীয় চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ হীরালাল সেন : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্যাসাগরের অন্তরালে ঈশ্বরচন্দ্র, পূর্ব পুরুষের ভিটে আজও অবহেলিত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব সুধীর চক্রবর্তী স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার : দীপাঞ্জন দে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েকে দুর্গা রূপে আরাধনা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাঙালির নিজস্ব দুর্গা : শৌনক দত্ত সে নারী বিচিত্র বেশে মৃদু হেসে খুলিয়াছে দ্বার : দিলীপ মজুমদার শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-এর ছোটগল্প ‘প্রাতঃভ্রমণ’ বন্যায় পুনর্জীবন বেহুলার : রিঙ্কি সামন্ত গরানহাটা কি ছিল ভেড়ার হাট : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পিতৃপক্ষের সমাপ্তি মাতৃপক্ষের শুভ সূচনা-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কাশ্মীর নির্বাচনে বিপুল সাড়ার নেপথ্যে কি ৩৭০ বিলোপের জবাব : তপন মল্লিক চৌধুরী

তপন মল্লিক চৌধুরী / ৬১ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪

চার মাস আগে কাশ্মীরের লোকসভা নির্বাচনে যখন প্রায় ৫৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল তখনই বিশেষঙ্গেরা বলেছিলেন যে সেখানে একটা পরিবর্তন অবশ্যই ঘটছে। কারণ, কাশ্মীরের ভোট মানেই জানা ছিল ‘ভোট বয়কট’ আর ‘সেনা জওয়ানদের জবরদস্তি’। কিন্তু লক্ষ্যনীয়; মে মাসে সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে ৫৯ শতাংশ ভোট পড়ে এবং ঠিক চার মাসের মাথায় সেপ্টেম্বরে যখন প্রথম ও দ্বিতীয় দফার বিধানসভা নির্বাচনে ভোটারদের বিপুল সাড়া মেলে তখন বিশেষজ্ঞদের কাশ্মীরে একটা কিছু পরিবর্তন ঘটার বক্তব্য আরও যুক্তিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে। দেখা যাচ্ছে কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোট পড়ার হার প্রায় ৬২ শতাংশ এবং ২৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫৬ শতাংশর বেশি। এই হিসাব জানায় যে বিগত চার দশকে কখনো এমনটা ঘটেনি, বরং এই অঙ্ক কাশ্মীরের লোকসভা আর বিধানসভা নির্বাচন মিলিয়ে গত সাতটা ভোটের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। হিসাবের আর একটি অংশ হল জম্মুর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা কিশতওয়ারে ভোটদানের হার ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। জম্মুর রামবান জেলায় ৭০ শতাংশ এবং কাশ্মীরের কুলগামেও ৬৫ শতাংশ ভোটার পোলিং বুথে হাজির হয়ে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন।

জম্মু–কাশ্মীরে তৃতীয় ও শেষ দফার ভোট ছিল জম্মু ডিভিশনের ২৪ ও কাশ্মীর উপত্যকার ১৬ আসনে, ভোট পড়ে ৬৫ শতাংশেরও বেশি। দুই দফার ভোট শতাংশের হিসাব দেখে অনুমান করা হয় তৃতীয় দফাতেই সবচেয়ে বেশি ভোট পড়বে। কারণ, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে চলে আসা উদ্বাস্তুরা এই প্রথম ভোটদানের অধিকার পেয়েছেন। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ হওয়ার পর এই উদ্বাস্তুদের ভোটদানের অধিকার দেওয়া হয়। শেষ দফায় মোট ভোটার ছিল প্রায় ৪০ লাখ। স্বাভাবিক প্রশ্ন, কাশ্মীরের ভোটে এই নাটকীয় পটপরিবর্তনের কারণ কী। দেশের শাসক দলের দাবি, পাঁচ বছর আগে ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করে তারা কাশ্মীরকে দেশের মূল ধারায় ফিরিয়ে এনেছে এবং ব্যালট বাক্সে সেই আস্থারই প্রতিফলন ঘটেছে। বিশেষঙ্গদের কথায় যেটুকু জানা গিয়েছে যে উপত্যকার মানুষ বিজেপির কথা মানতে নারাজ, বরং তাদের কথা, বছরের পর বছর ধরে টানা অস্থিরতা আর সহিংসতায় ক্লান্ত হয়ে আমজনতাই এবার মনস্থ করেন, অনেক হয়েছে এবার তাঁরা ভোট দেবেন আর শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করবেন।

কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্স বা পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বিশ্বাস, ৩৭০ ধারা এখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব, বিজেপির ভয়াবহ বিতর্কিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই উপত্যকার বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন। নিষিদ্ধ জামায়াত-ই-ইসলামীর নেতাদের বক্তব্য, মানুষের হাতে আর কোনো প্রতিবাদের পথ নেই বলেই তারা বাধ্য হয়ে ভোট দিয়েছেন, যাতে কাশ্মীরিদের আওয়াজ দিল্লির কানে পৌঁছায়। যদি এগুলি কারণ না হয় তাহলে আসল কারণ কী। হয়ত এতগুলি বক্তব্যের কোনো একটি অথবা সবগুলি। দেখা যেতে পারে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্ট কাশ্মীরের বিশেষ স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়ার পরের মুহুর্ত থেকে। মাসের পর মাস গোটা উপত্যকায় মোবাইল ইন্টারনেট তো বটেই, সেলফোন বা ল্যান্ডলাইন পরিষেবা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। কেবল তাই নয় তখন থেকে উপত্যকায় হিংসা বাড়লেই প্রশাসন প্রথমেই মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দিত। এরপর দেখা গেল, কাশ্মীরের তরুণরাই ওয়াই-ফাই হ্যাক করার এক্সপার্ট। এরও পাঁচ বছর পর দেখা গেল কাশ্মীরের ফাইভ-জি ডেটার স্পিড রাজধানী দিল্লির চেয়েও বেশি।

৩৭০ ধারা বিলোপ কেবল জুম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ স্বীকৃতিই কেড়ে নেয়নি, একটি পূর্ণ অঙ্গরাজ্যের বদলে ‘কেন্দ্রশাসিত’ অঞ্চলের মর্যাদায় নামিয়ে এনেছিল। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রশাসক কেন্দ্রীয় সরকার নিযুক্ত একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর যাকে কাশ্মীরিরা মনে করেন, ব্রিটিশ আমলে লন্ডন থেকে নিয়োগ করা ‘ভাইসরয়’ বা বড়লাট। এটা কাশ্মীরিদের কাছে বড়ই অপমানের। যে কারণে এই নির্বাচনে প্রায় সব দলের ইশতেহারেই ছিল কাশ্মীরের পূর্ণ অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি। গত ৫ বছরে ৩৭০ ধারা লোপ ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বীকৃতির আড়ালে মোদী সরকারের অপশাসনে কারফিউ, রাস্তায় অবিরত ফৌজি টহলের মধ্যে কাশ্মীরিরা ভয়ঙ্কর কঠিন দিনাতিপাত করেছে। রুদ্ধ বাক্ স্বাধীনতা, বন্ধ অবাধ চলাচল, সন্ত্রাসে মদতের অভিযোগে প্রমাণ ছাড়াই যে কোনও তরুণতরুণীকে গ্রেফতার, কঠোর মামলায় ফাঁসানো- কেবল ভারতে নয়, বিশ্ব জুড়ে নিন্দিত হয়েছে। কিন্তু এই নির্বাচন দেখালো যে নাগরিক স্বাধীনতার উপর সব ধরনের আক্রমণ-সন্ত্রাস চালানোর পরও বিধ্বস্ত, সন্ত্রস্ত ও পর্যুদস্ত মানুষ সামান্য অবকাশেও কেমন সাড়া দিতে পারে।

এবারের নির্বাচনে দেখা গিয়েছে কাশ্মীরের প্রধান দু’টি আঞ্চলিক ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-র জনসমর্থন কমেছে, নিষিদ্ধ দল জামায়াত-ই-ইসলামি’র বহু নেতা অন্য পরিচয়ে ইঞ্জিনিয়ার রশিদের দলের সাথে আঁতাত করে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। দিল্লির হাত থেকে কর্তৃত্ব ছিনিয়ে কাশ্মীরিদের হাতেই নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে ইঞ্জিনিয়ার রশিদের আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টি, গুলাম নবি আজাদের ডিপিএপি, আলতাফ বুখারির আপনি পার্টি বা সাজ্জাদ গনি লোনের পিপলস কনফারেন্সের মতো অনেকগুলি ছোটখাটো দল এবারে ভোটের ময়দানে নেমেছিল। পিডিপি বা ন্যাশনাল কনফারেন্সের মতো পুরনো দলগুলো অবশ্য বারবার বলে যাচ্ছে, এই দলগুলির সঙ্গে বিজেপির গোপন সমঝোতা হয়েছে- এমনকি তাদের প্রচারের খরচও নাকি বহন করছে দিল্লি। গুলাম নবি আজাদের ডানহাত বলে পরিচিত, ডিপিএপির প্রধান মুখপাত্র সালমান নিজামী অবশ্য এই সব অভিযোগ নস্যাৎ করে বললেন, তারা কখনোই বিজেপির প্রক্সি নন।

বাস্তব হল ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হওয়ার পর সাধারণ মানুষের দুর্দশা বেড়েছে, গরিব মানুষের ঘরে ঘরে এক-দেড় লাখ টাকার বিদ্যুতের বিল বাকি বা তারা বাড়তি ট্যাক্স-জলের বিল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।কথায় কথায় পাথর ছুঁড়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রবণতা থামলেও বান্দিপোরা বা অনন্তনাগের দুর্গম ও প্রত্যন্ত প্রান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর এনকাউন্টার বন্ধ হয়নি পুরোপুরি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলেন, কাশ্মীর উপত্যকা তুলনায় শান্ত হলেও হিংসা বা এনকাউন্টার সরে গিয়েছে জম্মুর ডোডা, কিশতওয়ার বা রাজৌরির মতো নানা এলাকায়। তবে পর্যটকরা আসছেন এটা স্বীকার করতে হবে। আবার এটাও ঠিক যে এসবই বাইরের পরিবর্তন অথবা আপাতশান্তিকল্যাণ। ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কেন্দ্র কাশ্মীরে উন্নয়ন ও নিরাপত্তার নামে প্রচুর সেনা মোতায়েন করতে প্রচুর খরচ করেছে। অনেকেই বলেছেন, বিশেষ স্বীকৃতি বাতিলের সিদ্ধান্ত উপত্যকার মানুষ মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তাই প্রশ্ন, এই নির্বাচনের ফলাফলে কি তার জবাব মিলবে?


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন