২০২৪ সালে বিশ্ব অবাক হলো বাংলাদেশে তারুণ্যের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দেখে। এর আগে পুরানো পৃথিবী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয় দেখেছিল। কিন্তু সেটি ছিল রক্তগঙ্গা মাড়িয়ে স্বাধীনতার সুফল ঘরে তোলার কাল। তখনকার প্রজন্ম তাদের যৌবনকে দান করেছিল দেশমাতৃকার জন্য। একইভাবে জেনারেশন জেড দেখিয়ে দিল ঐক্যবদ্ধ শক্তি দমন-পীড়ন রুখে দিতে পারে, পারে দেশের অপরাজনৈতিক ক্ষমতা চর্চাকে হটিয়ে দিতে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। আর এদেশের স্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টিতে তাদের আত্মদান ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে চলেছে।
৫ আগস্ট (২০২৪) শেখ হাসিনার ক্ষমতা ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় মানুষের প্রত্যাশা এখন আকাশচুম্বী। অন্যদিকে উপদেষ্টামণ্ডলীতে তরুণ সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি একটি বৈপ্লবিক ও প্রসংশিত সিদ্ধান্ত। সবমিলে বিজয়ের পরের মুহূর্তগুলো উদযাপনের মধ্যে ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস চলে গেল। তারুণ্যের বিকাশ ও উন্নয়নে ১৯৯৮ সালে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অব মিনিস্টার রেসপন্সিবল ফর ইয়ুথ’ ১২ আগস্টকে ‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব করে। পরের বছর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিনটিকে আন্তর্জাতিক যুব দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিনটি পালন করা হচ্ছে। জাতিসংঘ তরুণদের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই যুব উন্নয়নের বিষয়ে এখন অধিকতর মনোযোগী। ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জাতিসংঘের হিসাবে, পৃথিবীতে ১০-২৪ বছর বয়সী ২০০ কোটি মানুষ রয়েছে যারা তরুণ এবং মোট জনসংখ্যার চারভাগের এক ভাগ। বাংলাদেশের জাতীয় যুবনীতি অনুসারে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের ‘যুব’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ হিসেবে মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই যুব জনতা। আন্তর্জাতিক যুব দিবস ২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য হলো- ‘ক্লিক থেকে অগ্রগতির দিকে: টেকসই উন্নয়নের জন্য যুব ডিজিটাল পথ’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ভিন্ন অর্থে এবার উদযাপিত হলো দিবসটি। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের মতে, তরুণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ভারতে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ, চীনে ২৬ কোটি ৯০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬ কোটি ৭০ লাখ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬ কোটি ৫০ লাখ, পাকিস্তানে ৫ কোটি ৯০ লাখ এবং বাংলাদেশে রয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ।
দমন-পীড়ন মুক্ত দেশে যুবসমাজের জন্য নিরাপদ জায়গার খুব বেশি প্রয়োজন আজ। একক কিংবা যৌথ প্রচেষ্টায় সে যখন কাজ করছে অর্থাৎ লেখাপড়া করছে কিংবা খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছে তখন তাকে সুরক্ষা দিতে হবে। তার যা কিছু সামাজিক-সাংস্কৃতিক অধিকার তা পূরণ করতে হবে। মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার জন্য তার কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। তারা যেন নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারে, তারা যদি প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা পাহাড়ে বাস করে তাহলেও তাদের মানবাধিকার যেন বজায় থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। অবশ্য এই একবিংশ শতাব্দীতে জেনারেশন জেড-এর যুবসমাজ অনেক পাল্টে গেছে।
বর্তমান যুবসমাজকে বলা হয় ডিজিটাল তরুণসমাজ। ফেসবুক ও ইউটিউব নির্ভরশীল এই জনগোষ্ঠী লেখাপড়া কিংবা চাকরির বাইরে চব্বিশ ঘণ্টার বেশিরভাগ সময়ই ব্যয় করে থাকে মোবাইল কিংবা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে। ফলে আমরা যে ধর্মীয় উগ্রবাদিতা কিংবা মাদকাসক্তি থেকে তাদের রক্ষার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি সেখানে সাংস্কৃতিক জাগরণের গুরুত্ব এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অথচ অতীতে এদেশের তরুণরাই জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখে গেছেন। সূর্যসেন-প্রীতিলতার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু’র নেতৃত্বের জয়গান কিংবা বাহান্ন’র ভাষা আন্দোলন, বাষট্টি’র শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে এদেশের যুব সমাজের। অবশ্য একথা ঠিক ১৯৭১ সালে তরুণরা যুদ্ধ করেছিলেন দেশের বাইরের শক্তি পাকিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু বর্তমানের যুবসমাজ দেশের ভেতরে অর্থাৎ ঘরের ভেতরের শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের ভেতর এমন কতকগুলো সংগঠন রয়েছে যারা বাঙালি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে না এবং যারা ধারণ করে তাদেরকে দমন বা হত্যা করার চেষ্টা করে।
অবশ্য ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর যুবসমাজকে নিয়ে আমাদের স্বপ্ন রয়েছে বিশাল। কারণ ওই দিনগুলোতে তারা সারা দেশকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। ৫ আগস্টে বিজয়ের ঘটনার আগে দেশজুড়ে সার্বজনীন আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তরুণরাই। আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষত আরব-বসন্তের নেতৃত্ব ছিল তরুণ সমাজের হাতে। মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, তিউনিসিয়া, বাহরাইনে বেকারত্ব, অর্থনৈতিক মন্দা আর স্বৈরশাসকের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তরুণরাই মূল ভূমিকা রেখেছে। এজন্য যুবসমাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। বন্যা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের সাহসী কাজের অবদান রয়েছে। অবশ্য বেকারত্ব যুবসমাজের অন্যতম সমস্যা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্য মতে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আঞ্চলিক কর্মসংস্থান অনুযায়ী, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশে এ হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দেশে তরুণদের, বিশেষত শিক্ষিত তরুণদের এক বৃহদাংশ বেকার জীবন-যাপন করছে এবং সেটা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা তিন কোটি। প্রতিষ্ঠানটি আভাস দিয়েছে, কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ছয় কোটিতে দাঁড়াবে, যা মোট জনসংখ্যার ৩৯ দশমিক ৪০ শতাংশ হবে। আইএলওর হিসাবটিকেই পর্যবেক্ষকেরা বাংলাদেশের প্রকৃত বেকারের সংখ্যা বলে মনে করেন। ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, বাংলাদেশে ৪৭ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত হয় বেকার, নয়তো সে যে কর্মে নিযুক্ত এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন ছিল না। প্রতিবছর বাংলাদেশে ২২ লাখ কর্মক্ষম মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। এই বিশালসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষের মাত্র সাত শতাংশ কাজ পাবে। এর অর্থ হচ্ছে, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বেকারের তালিকায় নাম লেখাচ্ছে। বেকারদের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
মনে রাখা দরকার, বিগত বিংশ শতাব্দী ছিল বিশ্বব্যাপী যুবসমাজের অঢেল অর্জন আর অধিকার আদায়ের স্মরণীয় যুগ। একারণে এই একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বায়নের যুগে দাঁড়িয়ে ওই শতাব্দীর তরুণদের নিজ নিজ যোগ্যতা ও মেধার মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করার বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। কেবল রাজনীতি নয় পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সমাজ পরিবর্তনের নানা ক্ষেত্রে তারা পাঠসূচির বাইরে অবদান রেখে গেছেন। শিক্ষা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন তারা। জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং, শান্তির পক্ষে উচ্চকণ্ঠ হতে দেখা গেছে তরুণদের। আফ্রিকা জুড়ে জাতিগত দাঙ্গার প্রসঙ্গে তারা মানবতার পক্ষে কথা বলেছেন। যুদ্ধ বিরোধী নেটওয়ার্ক অনেক আগে থেকেই অনেক দেশে সচেতন জনগোষ্ঠীর চর্চিত বিষয়। জেনারেশন জেডের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী নিজেদের অধিকারের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তারা, বর্ণবাদ বিরোধী হয়ে উঠেছে, অসাম্প্রদায়িক শক্তির জয়গান গাইছে, পরিবেশ রক্ষায় ও দূষণ মুক্তে নিবেদিত হয়েছে। মেক্সিকোর যুবসমাজ নিজের দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা সকলের অধিকার বলেই তারা স্বল্প ব্যয়ের পক্ষে স্লোগান তুলেছে।
তবে সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে তরুণদের সমাজের দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। বর্তমান ক্ষমতাসীন ড. ইউনূস সরকারের চিন্তা-চেতনা হল- বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী এবং বৈষম্যমুক্ত সুন্দর সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। সরকার প্রধানের চিন্তা-চেতনা ও কর্মসূচির সঙ্গে তরুণ সমাজের চিন্তা-চেতনার একটা গভীর মিল রয়েছে।
বিভিন্ন সমস্যা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নয়ন, অগ্রগতির শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও পথ রচনার সূচনা করেছে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং দেশকে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে ড. ইউনূসকে দেশ সেবার সুযোগ দিতে হবে। তার আগেই এই সরকারকে শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে এবং বেকারত্বের অবসান ও কোটি কোটি যুবসমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো, যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনা, পরিকল্পিত নগর-জনপদ গড়ে তোলা এবং বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা-মূল কাজ হওয়া দরকার। রাজনীতি থেকে হিংসা, হানাহানি, সংঘাতের অবসান করা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের ধারা থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনা এবং একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রচলন করাও জরুরি।
বর্তমান সরকারের শুরু থেকেই উন্নয়নমূলক অনেক কাজে যুবসমাজকে অবদান রাখতে হবে। দেশ হবে শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদ। সুশাসন, জনগণের সক্ষমতা ও ক্ষমতায়ন হবে এই অগ্রযাত্রার মূলমন্ত্র। দেশমাতৃকার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে নতুন প্রজন্ম প্রাণ-প্রাচুর্যভরা সৃষ্টি সুখের উল্লাসে টগবগে বাংলাদেশের যুবসমাজ। এজন্য তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট (এসডিজি) লক্ষ অর্জনে যুবসমাজের অবদানও অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল মন্ত্র- দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। বর্তমান তরুণ সমাজকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত থাকতে হবে আর এসডিজি অর্জনে তারুণ্যের উদ্দীপনাকে কাজ লাগাতে হবে। একথা সত্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি দমন ব্যতিরেকে এসডিজি লক্ষ অর্জন সম্ভব নয়। আর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আইনের চোখে সকলেই সমান- এই বিবেচনার পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং এই সদিচ্ছার বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সব দলের অঙ্গীকার, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদে অনুস্বাক্ষর, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রভৃতি এই উদ্দেশ্যে পরিচালিত হওয়া দরকার। ড. ইউনূস সরকার ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিগণ দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারগুলো পালন করলে তরুণসমাজকে সহজেই ইতিবাচক কাজে সম্পৃক্ত করা যাবে। সরকারি, বেসরকারি সকল ক্ষেত্রে চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করে বৈষম্যবিরোধী চেতনায় বিশ্বাসী প্রকৃত মেধা ও যোগ্যতা সম্পন্নকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিয়োগ দিলে অসন্তোষ থাকবে না। যুবসমাজের মধ্যে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ও চর্চার সম্প্রসারণ করতে হবে যেন অশিক্ষা, অপশিক্ষা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় ভ্রান্ত-ধারণায় বিপথগামী হওয়া থেকে তারা রক্ষা পায়।
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময়- তার। এই যুদ্ধ এখন বৈষম্য চেতনার বিরুদ্ধে, এই যুদ্ধ এখন মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে, সকল অকল্যাণের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে আর নিজেকে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখার জন্য সংগ্রাম করে যাওয়া। এদেশের শ্রমশক্তি প্রধানত নির্ভরশীল যুব জনগোষ্ঠীর ওপর। প্রবাসী শ্রমিক এবং তৈরি পোশাক শিল্পে তরুণ সমাজের অংশগ্রহণই বেশি। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি যুবসমাজ। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য যুবসমাজকে গুরুত্ব দিয়ে প্রণীত হওয়া দরকার সকল কর্ম-পরিকল্পনা। তাদের সৃজনশীলতাকে সুরক্ষা দিতে হবে। উৎসাহী করতে হবে জ্ঞান চর্চায়। ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা বিনিয়োগে এগিয়ে এলে সরকারি তদারকি রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিত্তশীল গৃহের সন্তান অপরাধী হলে তাদের মা-বাবাকে দায়িত্ব দিয়ে সৎপথে আনতে হবে। মাদক ব্যবসা, চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত হলে কিংবা খুনের মতো ঘটনা ঘটালে পরিবার যেন সমাজের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য হয় সেই আইনিকাঠামো তৈরি করতে হবে। বেকারত্ব, চাকরিতে তদবির বাণিজ্য আর শিক্ষা জীবনের শেষে সুন্দর ভবিষ্যতের অভাব আর বিনোদনের শূন্যতা- এখনকার তরুণসমাজকে ফেসবুক কেন্দ্রিক মোবাইল বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ করেছে। এসব নেতিবাচক অনুষঙ্গ থেকে মুক্ত করে তরুণসমাজকে আলোর পথে পরিচালিত করাই হোক তারুণ্যের ঐক্যবদ্ধ শক্তির জয়গানের মূলমন্ত্র।
লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-drmiltonbiswas1971@gmail.com
Congratulations