আপনি কি জানেন যে বিশ্বের কোথাও একটি শিশুর প্রতি মিনিটে দু-চোখ-ই অন্ধ হয়ে যায়? বিশ্বের ১.৫ মিলিয়ন অন্ধ শিশুর মধ্যে ২০ হাজার ভারতীয়। আসলে সচেতনতার অভাবে আমাদের অগোচরেই হারিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি শক্তি। কী কী কারণে হারাচ্ছে আমাদের দৃষ্টিশক্তি তা একটু আলোচনা করলেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে।
মনে রাখবেন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের যে সব সমস্যা বেড়ে যায় সেগুলো হল — ছানি, গ্লুকোমা ও এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ( এ আর এম ডি) ইত্যাদি। সেই সঙ্গে থাকে রেটিনার সমস্যা। সচেতন না থাকলে অগোচরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দেরি না করে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করাতে পারলে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। যেটা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের তার হল গ্লুকোমা।
প্রসঙ্গত, গ্লুকোমা হল চোখের একপ্রকার রোগ যাতে অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলস্বরূপ দৃষ্টির পরিধি কমতে থাকে এবং রোগী ক্রমশ অন্ধত্বের দিকে এগিয়ে যায়। অনেক সময় অগোচরেই অনেকেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন।
গ্লুকোমার প্রকারভেদ—
প্রথমত ওপেন এঙ্গেল গ্লুকোমা। এই ধরনের গ্লুকোমায় উপসর্গ অনেক দেরিতে দেখা দেয়। ফলস্বরূপ অপটিক নার্ভের স্থায়ী ক্ষতি হয় এবং রোগীর টানেল ভিসান দেখা যায়।
দ্বিতীয়ত ক্লোজড এঙ্গেল গ্লুকোমা। ‘কোণ’ হল চোখের সেই বন্ধ কোণ অংশ যেখানে আইরিশ, কর্ণিয়া এবং স্কেলরার সাথে মিলিত হয়। চোখের নিষ্কৃতি ব্যবস্থা এই অঞ্চলে অবস্থিত, যাকে ট্র্যাবেকুলার মেশওর্য়াক বলে। এই কোণের অংশ পেরিফেরাল আইরিশ দ্বারা বন্ধ থাকার ফলে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বা IOP বৃদ্ধি পায় এবং অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি হয়।
তৃতীয়ত নরমাল টেনশন গ্লুকোমা।- এই ক্ষেত্রে দেখা যায় চোখের প্রেশার নরমাল থাকা সত্ত্বেও তা ক্রমাগত অপটিক নার্ভের ক্ষতি করে। মনে করা হয় যে অপটিক নার্ভ অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় তা চোখের নরমাল প্রেশারেও তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চতুর্থত জন্মগত গ্লুকোমা বা CONGENITAL GLAUCOMA, এই ধরনের গ্লুকোমা শিশু ও ছোট বাচ্চাদের (> 3 বছর বয়সী) মধ্যে দেখা যায়। এটি একটি বিরল অবস্থা কিন্তু এর ফলে দৃষ্টিশক্তির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
গ্লুকোমা প্রতিরোধ কীভাবে করবেন?
গ্লুকোমা কখনোই পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না। তবে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এটি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। প্রথম দিকে গ্লুকোমা সনাক্ত করার কিছু নিশ্চিত উপায় হল —
* প্রায়ই চোখের পরীক্ষা করানো।
* পরিবারের চিকিৎসা ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন থাকা
* যাদের গ্লুকোমার পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে তাদের ঘনঘন চক্ষু পরীক্ষা করা উচিত।
গ্লুকোমার ঝুঁকির কারণ —
আপনার গ্লুকোমার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী যদি
* আপনার বয়স ৬০ বছরের বেশী
* IOP বা অভ্যন্তরীণ চাপ বেশী থাকা
* পরিবারের একজন সদস্যের গ্লুকোমা ধরা পড়েছে
* ডায়াবেটিস, হার্টের অবস্থা, সিকেল সেল অ্যানিমিয়া এবং উচ্চ রক্তচাপের মত কিছু রোগ থাকলে
* পাতলা কর্ণিয়া হলে
* হাই মায়োপিয়া বা হাই হাইপারোপিয়া
* চোখে আঘাত বা অস্ত্রোপচার হয়েছে
* দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহার ইত্যাদি। এক্ষেত্রে চিকিৎসা না করালে দৃষ্টিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্লুকোমার লক্ষণ—
* বমি ভাব
* অবিরাম মাথাব্যথা
* চোখে ব্যথা
* চোখে লাল হয়ে যাওয়া
* ঝাপসা দৃষ্টি
* রামধনুর মত বলয় দেখা
* চোখে ক্রমাগত জ্বালা ও চুলকানি।
গ্লুকোমা নির্ণয় ও চিকিৎসা—
কিছু পরীক্ষার দ্বারা চিকিৎসক গ্লুকোমা রোগ নির্ণয় করতে পারেন। যেমন –
১. চোখের অভ্যন্তরীণ প্রেশার নির্ণয় করা, যাকে টোনোমেট্রি (Tonometry) বলে।
২. চোখের অপটিক নার্ভ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা দেখার জন্য Dilating Drop দিয়ে চোখের মণি প্রসারিত করা ও নার্ভ পরীক্ষা করা।
৩. দৃষ্টির পরিধি পরিমাপ করার জন্য ‘FIELD TEST’ বা ‘PERIMETRY TEST’
৪. চোখের কর্ণিয়া বা কালো মণির পরীক্ষা ‘PATCHYMETRY’ দ্বারা নির্ণয় করা
৫. নিষ্কাশন কোণের স্থিতি পরীক্ষার জন্য GONIOSCOPY করা
চিকিৎসা—
গ্লুকোমায় চোখের যা ক্ষতি হয় তা ফিরে পাওয়া সম্ভব না। কিন্তু নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার মাধ্যমে দৃষ্টি সংরক্ষণ সম্ভব, যদি তা প্রথম স্তরে ধরা পরে।
চোখের অভ্যন্তরীণ প্রেশার কমানোর মাধ্যমে গ্লুকোমার চিকিৎসা করা যায়। চোখের ড্রপ, ওরাল মেডিসিন, লেসার চিকিৎসা, অপারেশন অথবা যুগ্ম উপায়ে এর চিকিৎসা করা হয়।
প্রসঙ্গত, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরুষ বা মহিলা চোখের পাওয়ার বৃদ্ধির জন্য চিকিৎসকের কাছে এসে গ্লুকোমায় আক্রান্ত বলে জনতে পারেন। এই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় কোনো উপসর্গ বা অসুবিধে থাকে না। তাই রোগী চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করে ফেলেন। এর ফলে চোখের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। গ্লুকোমা রোগটির যে কষ্ট তা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানেন। চোখের দৃষ্টি নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ গ্লুকোমা হলেও সময়মতো যদি ধরা পড়ে এবং যথাযথ চিকিৎসা যদি হয় তাহলে রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। উল্লেখ্য, চোখের অপটিক নার্ভের অসুখ হল গ্লকোমা। চোখের সিলিয়ারি বডি থেকে অ্যাকোয়াস হিউমাস নামে এক ধরনের স্বচ্ছ তরল পদার্থ তৈরি হয় যা চোখের সামনের অংশকে ভরাট করে রাখে। ওই তরল পদার্থ আবার ট্রাবেকুলার মেসওয়ার্ক নামক ছাঁকনির মতো অংশ দিয়ে রক্তের সাথে মিশে যায়। অ্যাকোয়াস হিউমাস সবসময় চোখের মধ্যে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। এর ফলে চোখের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট চাপ তৈরি হয়। চোখের এই অভ্যন্তরীণ চাপ সাধারণত ১৫ থেকে ১৯ এম.এম বাই এইচ.জি থাকে, কোনো কারণে যদি অ্যাকোয়াস হিউমাস বেশি পরিমাণে তৈরি হয় অথবা এর নির্গমনের পথে কোনো বাধা সৃষ্টি হয় তাহলে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে যায়। এই বাড়তি চাপ চোখের পিছনের অপটিক নার্ভ ও রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ক্ষতি আংশিক বা সামগ্রিকভাবে মানুষকে অন্ধ করে দিতে পারে।অনেক সময় অগোচরেই চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তাই দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে চোখের অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকের ধারণা, চোখের প্রেসার বেড়ে যাওয়া মানেই গ্লকোমা। কিন্তু তা ঠিক নয়। প্রেসার বৃদ্ধির সাথে অপটিক নার্ভ নষ্ট হয়ে যদি দৃষ্টিশক্তি কমে যায় তবে তাকে নিশ্চিতভাবে গ্লুকোমা বলে।
উপসর্গ —
* প্রাথমিক অবস্থায় গ্লকোমার কোনো উপসর্গই থাকে না। যতক্ষণ না এক চোখের হয়। দৃষ্টি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় ততক্ষণ রোগীর বিশেষ কোনো অসুবিধে হয় না। সাধারণত ঘুমের পর মাথা ও কপালে সামান্য ব্যথা হতে পারে। আলোর চারপাশে রামধনুর মতো রঙ দেখতে পায় রোগী।পড়াশোনা, লেখালেখির কাজ করা
অসুবিধেজনক হয়, চশমার পাওয়ারের ঘন ঘন পরিবর্তন হয়।এছাড়া বেশি আলো সহ্য করতে পারা যায়না। ঘন ঘন চোখ পিট পিট করা ছাড়াও চোখ চুলকানি আর চোখের শুকনো ভাব কাজের অসুবিধে ঘটায়। এরপর চোখের ভিসুয়াল ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়।
প্রসঙ্গত, যারা বেশ কিছুদিন ধরে কম দেখছে, কাছের দৃষ্টির পাওয়ার ঘন ঘন বাড়ছে, চোখে ব্যথা বা ভারি বোধ হচ্ছে, ডায়াবেটিস এবং সঙ্গে যদি হাই মায়োপিয়া অর্থাৎ মাইনাস পাওয়ার বেশি থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এসব ক্ষেত্রে গ্লুকোমা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গ্লুকোমার হাত থেকে দৃষ্টিশক্তিকে বাঁচানোর
একটাই উপায় শুরুতেই রোগ নির্ণয় এবং যথাযথ চিকিৎসা।
একথা মনে রাখা দরকার রোগ নির্ণয়ের আগে অতিরিক্ত চাপের ফলে অপটিক নার্ভের যেটুকু ক্ষতি হয়েছে চিকিৎসার পর, তা পূরণ হয়।
যারা গ্লকোমা রোগের চিকিৎসাধীন তারা কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। যেমন মাথা ও চোখে চাপ পড়ে এমন ব্যায়াম করা উচিত নয়। একসাথে এক গ্লাসের বেশি জল না খাওয়া উচিত। ফিল্ড অফ ভিশন ঠিক না থাকলে সাইকেল, স্কুটার না চালানোই ভালো। চিকিৎসাহীন অবস্থায় ওষুধ খাওয়ার অনিয়ম করলে নিজেরই ক্ষতি। গ্লুকোমার চিকিৎসা সারাজীবন করে যেতে হয়, এ বিষয়ে কোনো অবহেলা করা চলবে না।
সাবধানতা—
মা, বাবা অথবা রক্তের সম্পর্কযুক্ত কারোর যদি গ্লকোমা থাকে তবে চল্লিশের কাছাকাছি এসে চোখের সাধারণ অসুবিধে না থাকলেও, নিয়ম করে বছরে দু’বার চোখের ডাক্তারের কাছে চোখ দেখান। সেখানে তিনভাবে পরীক্ষা করা হয়। প্রথমত, টোনোমিটার নামক যন্ত্রের দ্বারা টোনোমেট্রি করে চোখের চাপ নির্ণয় করা হয়।
প্রথমে ৪ পার্সেন্ট জাইলোকেন আইড্রপ দিয়ে চোখকে অবশ করা হয়, যন্ত্রটি কর্নিয়ার ওপর। আলতোভাবে স্পর্শ করলেই চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ জানতে পারা যায়। গ্লুকোমা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয়ত, যখন কোনো বস্তুর দিকে তাকাই তখন শুধু নির্দিষ্ট দৃশ্যবস্তুকেই দেখি না, তার চারপাশে অনেকটা অংশকেই দেখা যায়। গ্লুকোমা হলে এই ফিল্ড অফ ভিশন ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হতে থাকে। মনে হয় দৃশ্য বস্তুকে কোনো চোঙ বা টানেলের মধ্য দিয়ে দেখা হচ্ছে। ফিল্ড অফ ভিশনকে চারটে পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়, যেমন স্কেটোমেট্রি, অটোমেটেড, পেরিমেট্রি, গোনিওস্কোপি অপথ্যালমোস্কোপি। চোখের কোথায় কতখানি ক্ষতি হয়েছে এইসব পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়।
তৃতীয়ত, অপথ্যালমোস্কোপের মাধ্যমে অপটিক নার্ভ টেস্ট করা হয়। চোখের স্নায়ুতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তাও ধরা পড়ে। গ্লুকোমা থেকে দূরে থাকতে কতগুলো উপায় অবলম্বন করতে হবে আপনাকে। বয়স যদি ৪৫ বছর বা বেশি হয় তাহলে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। ডায়াবেটিস, মায়োপিয়া, ব্লাডসুগারের রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে থাকুন।
চোখের আঘাত খুব ক্ষতিকর। সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কনজেনিটাল গ্লকোমা বা জন্মগত গ্লূকোমা শিশুর চোখের ভেতরকার গঠনগত ত্রুটি থেকে হয়। দু-তিন মাসের মধ্যেই এই অসুখ ধরা পড়ে। বাচ্চার চোখ ষাঁড়ের মতো ড্যাবডেবে হয়ে থাকে। যাকে বাফ থালোমাস বলে। এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা অপারেশন।
পরিশেষে বলা যায় গ্লুকোমা ছাড়াও ছানি, এ আর এম ডি, রেটিনার সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বর্তমানে মোবালাইজেশনের যুগে সারা বিশ্ব এখন আমাদের হাতের নাগালে। স্মাটফোন কিংবা আইফোনের দৌলতে এক ছোঁয়াতেই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের খবর আমাদের চোখের পর্দার সামনে তৎক্ষণাৎ ভেসে ওঠে। কিন্তু সেই চোখের পর্দা যদি কোনো মারাত্মক রোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে নিমেষের মধ্যে চোখে নেমে আসতে পারে ঘন অন্ধকার। এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের অগোচরেই ঘটে যায়। এছাড়া উল্লেখ করতেই হয় চোখের নানা সমস্যার মধ্যে অন্যতম হল রেটিনার সমস্যা। অনেক সময় অগোচরেই চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে যায়। তা সচেতন না থাকার ফলে।
রেটিনা কী —
আমাদের চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল বা সেনসিটিভ অংশ হল রেটিনা। রেটিনা হল চোখের আলোক প্রতিক্রিয়াশীল স্তর, যা চোখের পিছনের অংশটিকে ভেতর থেকে ঢেকে রাখে। রেটিনায় আলো পড়লে তা বৈদ্যুতিক সংকেতে পরিবর্তিত হয় এবং এই সংকেত অপটিক নার্ভের মাধ্যমে মস্তিস্কে পৌঁছয়। রেটিনার কেন্দ্রীয় পাঁচ শতাংশ স্থান সঠিক দৃষ্টির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গাটিকে ম্যাকুলা বলে। এ.আর.এম.ডি হল এই ম্যাকুলারই একটি রোগ। রেটিনার মূল কাজ হল প্রতিফলিত ছবিকে গ্রহণ করা এবং যথাযথভাবে অপটিক নার্ভের মাধ্যমে ব্রেনে পৌঁছে দেওয়া। এই কাজটি সে ঠিকমতো করে যায় যতক্ষণ না সেন্ট্রাল এরিয়া নষ্ট হয়ে দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন হয়।
রেটিনার মূলত দুটি অংশ।
সেন্ট্রাল বা ম্যাকুলার এরিয়া। এই সেন্ট্রাল এরিয়া দিয়ে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। ফলে এই এরিয়া যদি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।
আর পেরিফেরাল এরিয়া হল রেটিনার মধ্যে সেন্ট্রাল এরিয়ার চারপাশের অংশকে পেরিফেরাল বলে। সাধারণত পেরিফেরাল কোনোরকম সমস্যা দেখা দিলে এবং তার চিকিৎসা হলে দৃষ্টিশক্তির তেমন ক্ষতি হয় না। রেটিনার মধ্যে সাধারণত যে সব অসুখ হয় তা এই দু’ধরনের এরিয়ার ওপরেই প্রভাব পড়ে। কিছু অসুখ আছে যা শুধুমাত্র সেন্ট্রাল এরিয়া অর্থাৎ ম্যাকুলার এরিয়াতে হয়। আবার কিছু অসুখ ম্যাকুলার এরিয়া ও পেরিফেরাল এরিয়া দুটোতেই হয়ে থাকে। তবে অসুখটি যতক্ষণ পর্যন্ত ম্যাকুলার এরিয়াতে ছড়িয়ে না পড়ে ততক্ষণ সেটা ততটা ক্ষতিকর নয়। আমাদের চোখে ম্যাকুলার দরকার পড়ে তীক্ষ্ণ এবং কেন্দ্রীয় দৃশ্যের জন্য। ম্যাকুলার আমাদের চোখের রেটিনার একদম কেন্দ্রে একটা আট বিন্দুর মতো থাকে। ম্যাকুলা আমাদের ঠিক সামনে সোজাসুজি কোনো বস্তুকে দেখতে সাহায্য করে। যেটা উল্লেখ করা যেতে পারে এজ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন। এই অসুখটি সাধারণত বয়স্কদের মধে দেখা যায়। এটা প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করালে আমাদের অগোচরেই হারিয়ে যায় চোখ। রেটিনার ম্যাকুলার এরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। কোনো কোনো লোকের এর কারণে চোখের দৃষ্টি চলে যায়। উন্নত দেশের মানুষদের মধ্যে দৃষ্টি হারানোর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের যে সব সমস্যা বেড়ে যায় সেগুলো হল ছানি, গ্লুকোমা এবং এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন। ছানি বাড়াবাড়ি অবস্থাতেও অপারেশন করে সারানো সম্ভব কিন্তু গ্লুকোমার এবং এ. আর.এম.ডি প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করালে চোখের দৃষ্টি হারানোর সম্ভাবনা থেকে যায়।
উন্নত দেশের মানুষের মধ্যে রোগটি বেশি হলেও ভারতবর্ষে পঞ্চাশোর্ধ মানুষদের শতকরা একভাগের এই রোগ হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই হারও বাড়তে থাকে।
ম্যাকুলার ডিজেনারেশন কী কী কারণে হয় —
কিছুটা বংশগত। পরিবেশ প্রভাব। আবার বয়স একটা ফ্যাক্টর। জিনগত কারণেও হতে পারে। এছাড়া যারা ধূমপানবেশি করেন। গবেষকরা ধূমপানকে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ও চোখের নানা সমস্যার জন্য দায়ী করে থাকেন। তার মধ্যে ছানি, ম্যাকুলার অবক্ষয়। তবে নিত্য নতুন আবিষ্কার মানুষের অন্ধত্ব থেকে অনেকটাই নিষ্কৃতি দিয়েছে। নতুন যে সব ওষুধ এসেছে তা শুধু দৃষ্টিহীনতা প্রতিরোধ করে তা নয়, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।
ডাঃ তনুশ্রী চক্রবর্তী, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, দৃষ্টিদীপ আই ইনস্টিটিউট, ডানকুনি, হুগলি, মোঃ — 8017309058