আপনি কি জানেন? সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্বের কোথাও না কোথাও প্রতি মিনিটে একটি শিশুর দু-চোখই অন্ধ হয়ে যায়। আবার এও দেখা গেছে বিশ্বের ১.৫ মিলিয়ন অন্ধ শিশুর মধ্যে ২০ হাজার ভারতীয় বলে অনুমান করা হচ্ছে। যেটা সকলের কাছে উদ্বেগের। বিশেষজ্ঞদের মতে আপনার সন্তানের দৃষ্টি শক্তির উপর নজর রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পড়াশোনা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বাচ্ছাদের চোখের যত্ন নিতে হবে। সমস্যা দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তা নাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
স্কুল বাচ্চারা কি চোখের সমস্যায় পড়তে পারে? পড়লে তা কী ধরনের?
হ্যাঁ, স্কুলের বাচ্চারা চোখের সমস্যায় পড়তে পারে। এসময় চোখে এদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন — রিফ্রাকটিভ এরর (Nearsightedness, Farsightedness, Astigmatisam etc), এছাড়াও ওরা স্কুল মাঠে খেলাধুলো করার সময় চোখে ধুলোবালি পড়তে পারে। তার ফলে অনেক সময় অ্যালার্জিক রিয়েকশন হতে পারে (Conjunctivitis, ptosischemosis, stye)। তাছাড়া আঘাতজনিত কারণে চোখে heamorrage, epithalial defect, edema-সহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
বাবা-মা বুঝবেন কীভাবে বাচ্চা চোখের সমস্যায় ভুগছে?
যদি কোনো বাচ্চা সঠিকভাবে ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখতে না পায় তাহলে সে নোটস লিখতে পারবে না।এছাড়াও তাকে বাড়িতে কোনো বই পড়তে বললে সে খুব কাছে নিয়ে গিয়ে সেই বইয়ের লেখাটি পড়তে চাইবে, তার মাথার যন্ত্রণা দেখা দেবে, সে তখন পড়তে চাইবে না। সে বাইরে গেলে সূর্যের আলোতে তাকাতেও পারবে না, চোখ বন্ধ করে দেবে। এসব কারণ দেখেই সাধারণত বাবা-মায়ের বোঝা উচিত যে তার বাচ্চাটি নিশ্চই চোখের সমস্যায় ভুগছে।
বাচ্চার চোখ সুস্থ রাখতে আগাম সতর্কতা অবলম্বন কী করা উচিত?
হ্যাঁ, অবশ্যই বাচ্চাদের চোখ সুস্থ রাখতে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বাচ্চারা কিছু না বললেও তাদের বছরে অন্তত ২ বার করে চোখের নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে।
পড়াশোনার সময় দিনে ও রাতে বাচ্চাদের কীভাবে পড়া উচিত?
পড়াশুনার সময় দিনে ও রাতে বাচ্চারা যখনই পড়তে বসবে তাদেরকে পর্যাপ্ত আলোর লাইট দিতে হবে। খুব কম আলোতে পড়া যেমন ভালো নয়, সেরকমই খুব বেশি আলোও চোখ সহ্য করতে পারবে না। অবশ্যই যেন চেয়ার — টেবিলে বসে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে সে পড়াশুনা করে। সেই সঙ্গে মাঝে মধ্যে ব্রেক নিয়ে চোখকে বিশ্রাম দিয়ে আবার পড়তে হবে।
বাচ্চাদের চোখের সমস্যা হলে প্রথমেই কী করা দরকার?
বাচ্চাদের চোখের সমস্যা হলে প্রথমেই ঘাবড়ে না গিয়ে তাকে নিকটবর্তী চক্ষু হাসপাতালে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ে যেতে হবে।
বাচ্চাদের চোখ সুস্থ রাখার অন্ততপক্ষে ১০টি টিপস কী কী হতে পারে?
বাচ্চাদের চোখ সুস্থ রাখার জন্য বিভিন্ন টিপস অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন —
এক. স্কুল বাচ্ছাদের চোখ সব সময় ভালোভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে। সেজন্য চোখে পরিষ্কার জলের ঝাপটা দেওয়ার পাশাপাশি চোখে পিছুটি বা ময়লা যেন না জমতে পারে সেজন্যে buds দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়াও উষ্ণ গরম জলের সেক নিতে হবে।
দুই. দেখা যাচ্ছে স্কুল বাচ্ছারা দিনের অনেকটা সময় বইখাতা বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সংস্পর্শে থাকায় তাকে বারবার ব্লিংক করতে হবে।
তিন. Dry Eyes না হবার জন্য তাকে ভালো মানের lubricating Eye drop ব্যবহার করতে হবে।
চার. একনাগাড়ে পড়াশোনা না করে চোখকে রেষ্ট দিয়ে পড়তে হবে এবং পড়াশোনার ফাঁকে সবুজ গাছপালা বা ন্যাচারাল কিছু দেখতে হবে।
পাঁচ. পর্যাপ্ত পরিমাণে জল, সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
ছয়. নিয়মিত চোখের কিছু ব্যায়াম করতে হবে। বাচ্চাকে চোখ রগরাতে (rub) নিষেধ এবং বার বার চোখে ময়লা হাত দিতে বারণ করতে হবে।
সাত. খেলতে যাবার সময় বাচ্ছাদের protective sunglass পড়াতে হবে।
আট. ডাস্ট অ্যালার্জি থাকলে তাকে ধুলোবালি এড়িয়ে চলতে হবে।
নয়. আউটডোর এক্টিভিটিস বাড়াতে হবে।
দশ. বাচ্ছাদের নিয়মিত চোখের চেকআপ করাতে হবে ইত্যাদি। এখনও গ্ৰামেগঞ্জে বাচ্ছা স্কুল ছেলেমেয়েদের চোখে কাজল পরানো হয়। এটা ঠিক নয়।
পরিশেষে এটাই বলতে হয় সকল বাচ্চাদের স্কুলে দেওয়ার আগে প্রত্যেকের চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। শিশুর চোখ লাল হলে, চোখ দিয়ে জল পড়লে, চুলকালে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সেই সঙ্গে শিশুদের হাতে সারাদিন মোবাইল বা ট্যাব দিয়ে রাখা যাবে না। স্কুল বাচ্চাদের চোখের যত্ন নিতে এভাবেই সতর্ক অবলম্বন করুন।
দৃষ্টিদীপ আই ইনস্টিটিউট, ডানকুনি, হুগলি, মোবাইল-৮০১৭৩০৯০৫৮
অনুলিখন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়