মঙ্গলবার | ১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১:০৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (চতুর্থ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস কন্নড় মেল্ল থেকেই সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম মেলুহা : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (তৃতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস লোকভুবন থেকে রাজনীতিভুবন : পুরুষোত্তম সিংহ চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (দ্বিতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত রবীন্দ্রনাথের ইরান যাত্রা : অভিজিৎ ব্যানার্জি ঠাকুরকে ঠাকুর না বানিয়ে আসুন একটু চেনার চেষ্টা করি : দিলীপ মজুমদার যুদ্ধ দারিদ্র কিংবা বেকারত্বের বিরুদ্ধে নয় তাই অশ্লীল উন্মত্ত উল্লাস : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ, পঁচিশে বৈশাখ ও জয়ঢাক : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজী ও শান্তিনিকেতন : প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বাঙালী রবীন্দ্রনাথ : সৈয়দ মুজতবা আলী অনেক দূর পর্যন্ত ভেবেছিলেন আমাদের ঠাকুর : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথের প্রথম ইংরেজি জীবনী : সুব্রত কুমার দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (প্রথম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস শুক্লাম্বর দিঘী, বিশ্বাস করে দিঘীর কাছে কিছু চাইলে পাওয়া যায় : মুন দাশ মোহিনী একাদশীর ব্রতকথা ও মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত নিজের আংশিক বর্ণান্ধতা নিয়ে কবিগুরুর স্বীকারোক্তি : অসিত দাস ঝকঝকে ও মজবুত দাঁতের জন্য ভিটামিন : ডাঃ পিয়ালী চ্যাটার্জী (ব্যানার্জী) সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা : লুৎফর রহমান রিটন সংস্কৃতি জগতের এক নক্ষত্রের নাম বসন্ত চৌধুরী : রিঙ্কি সামন্ত আংশিক বর্ণান্ধতাজনিত হীনম্মন্যতাই রবীন্দ্রনাথের স্কুল ছাড়ার কারণ : অসিত দাস পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ কি অবশ্যম্ভাবী : তপন মল্লিক চৌধুরী সাত্যকি হালদার-এর ছোটগল্প ‘ডেলিভারি বয়’ নব নব রূপে এস প্রাণে : মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য ভারতের সংবিধান লেখার সেই ঝর্না কলমটা… : দিলীপ মজুমদার গীতা রাজনৈতিক অস্ত্র নয়, ভারতাত্মার মর্মকথা : সন্দীপন বিশ্বাস সিন্ধুসভ্যতা ও সুমেরীয় সভ্যতায় কস্তুরীর ভূমিকা : অসিত দাস রবি ঠাকুর ও তাঁর জ্যোতিদাদা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

চলা যাতা হুঁ…..কিসি কি ধুন মে : যীশু নন্দী

যীশু নন্দী / ৮৬৯ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪

২০২১ সালের কথা। ব্রিসবেনে ভারতের জিততে ৩২৯ রান চাই, তাও চতুর্থ ইনিংসে। জনৈক মন্তব্য করে বসলেন —”সেহবাগের রোলটা কে প্লে করবেন?”। মন্তব্যটা বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ করে রাখলো। সেহবাগ!!! তিনি তো “চলা যাতা হুঁ কিসি কি ধুন মে” গাইতে গাইতে চলে গেছেন নয় বছর আগে। তাও তিনি কি এতটাই প্রাসঙ্গিক?

আমাদের ছোটোবেলাটা বেশ মনে আছে। ন্যাশানাল টিভির ‘ফোর্থ আম্পায়ার’ শো শেষ হবার পর সেহবাগ নামতেন ব্যাট ঘোরাতে ঘোরাতে, হাতে শত প্রলয়ের বার্তাবাহক সেই বিধ্বংসী ব্রিটানিয়া, ঠিক যেন পরশুরামের কুঠার। উলটোদিক থেকে ছুটে আসতেন সামি-শোয়েব-লি-ব্র‍্যাকেন-ভাস প্রমুখ প্রমুখ প্রমুখ আর ফলো থ্রু করতে করতে তাঁরা দেখতেন বল কিভাবে ছুটে যাচ্ছে গ্যালারির কোলে। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের আগে অবধি অর্থাৎ তাঁর কেরিয়ারের প্রথম সাত বছরে ব্রেট লির বিরুদ্ধে তিনি করেছিলেন মোট ১৯০ রান, আউট হয়েছিলেন মাত্র দুবার, গিলেসপির বিরুদ্ধে ৭০ রান একবার আউট হবার বিনিময়ে, ফ্লিনটফ তো সেই অবধি তাঁকে একবারও আউট করতে পারেননি। আমরা যেমন পাড়া ক্রিকেটে বল মারার আগে থেকেই ব্যাটটাকে তুলে রাখতাম বলটা পড়বার সাথে সাথেই তাকে মেরে বাউন্ডারিতে পাঠাবার জন্য, মনে হতো সহবাগও যেন অমনটাই করেন। তবে তিনি ব্যাটটাকে তুলে রাখতেন না, বোলারের রান-আপ শুরুর সাথে সাথেই ব্যাটটাকে মাটিতে ঠুকতে থাকতেন বারবার, ঠিক যেন মহাপ্রলয় ঘটাবার জন্যে অপেক্ষা করে আছেন এক জটাধারী, প্রস্তুত হচ্ছেন বিস্ফোরণের জন্য। গুডলেংথে বোলারের বল ঠিকরে বের হতো আর ব্যাটটাকে মাটি থেকে একটু বেশী উঁচুতে তুলে সহবাগের স্ট্রোক প্লে, ঠিক যেন স্ট্যান্ড অ্যান্ড ডেলিভার, ব্যাট আর বলের নিঃশব্দ বিস্ফোরণে বল চলে যাচ্ছে বাউন্ডারির ধার ঘেঁষে, কখনও বা অনন্তে আর প্রতীকির মতো রোদের প্রতিফলনে শাণ দেওয়া তলোয়ার লাগছে তাঁর কাঠের ব্যাট, মূর্ত হয়ে তাতে ঝলসে উঠছে ব্রিটানিয়ার লাল লোগো।

মনে আছে সেহবাগ একবার স্লগ স্যুইপ খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে স্লগ স্যুইপ অন্য কেউ খেললে আমার মনে এক অজানা ভয় কাজ করতো। হয়তো বলের সর্বোচ্চ সংহারকের ব্যর্থ প্রয়াসকে অন্য কারোর মধ্যে দেখতে চাইতামনা বলে। কোচির জহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামের আকৃতিটা মনে আছে? মনে হতো ফ্লাডলাইটগুলো একটু বেশীই উঁচুতে আর যেন একটু বাঁক খেয়ে অবস্থান করছে স্টেডিয়ামের ধার ঘেঁষে। এই নেহেরু স্টেডিয়ামে রানা নাভেদকে সেহবাগ যখন ছক্কা হাঁকাচ্ছিলেন বলগুলো ঠিক যেন ফ্লাডলাইটগুলোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। সেহবাগ তখন মাথায় লালচে একটা কাপড় জড়িয়ে তার উপর হেলমেট চাপাতেন। সেঞ্চুরি করবার পর হেলমেট খুলে ব্যাটটাকে উঁচিয়ে ধরতেন আকাশের দিকে, চোখ বুঝতেন, মধ্যাহ্নের রোদেও ঠিক যেন শিশুসুলভ প্রশান্তি তাঁর চোখেমুখে।

ভারতের সর্বকালের সেরা টেস্ট দলে গাভাস্কারের সঙ্গী কে হবেন? অনেকেই বলেন ইংল্যান্ডের মাটিতে হলে বিজয় মার্চেন্ট, নইলে নিঃসন্দেহে সেহবাগ। ইংল্যান্ডে সহবাগের এভারেজ ২৭.৮০। কিন্তু তাঁর কেরিয়ারের প্রথম অর্ধ যদি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যায় তিনি ২০০৮ অবধি ইংল্যান্ডের মাটিতে মোটো ৮ টি ইনিংস খেলেছেন যার মধ্যে দুটি ইনিংসে তিনি ব্যাট করার সুযোগ পাননি, বাকী ছটি ইনিংসে তাঁর মোট রান ২৩৭ রান, যার মধ্যে রয়ে গেছে নটিংহ্যামের হার্মিসন-হোগার্ড-ফ্লিনটফ-ক্যাডিকদের বিরুদ্ধে দুরন্ত ১০৬ কিংবা লর্ডসের ৮৪, এভারেজ চল্লিশের কাছাকাছি। আসলে ২০১১-এর সেই দুঃস্বপ্নের সিরিজটাই যে ইংল্যান্ডের মাটিতে সহবাগের বদনামে বড়োসড়ো অবদান রেখে গেছে সে কথা অস্বীকার করি কি করে। ডেভিড গাওয়ারের “ফিফটি গ্রেটেস্ট ক্রিকেটারস অফ অলটাইম” বইয়ে সেহবাগ পেয়েছিলেন ৪৬ নং স্থানটি। তিনি সেখানে বলে গেছেন, এশিয়ান ব্যাটসম্যানেরা সাধারণত পেস এবং বাউন্সি পিচে তাদের অসম্পূর্ণতা প্রদর্শন করেন, কিন্তু সহবাগের ক্ষেত্রে তা কখনোই বলা যাবে না তাঁর জীবনের অন্তিম ইংল্যান্ড এবং সাউথ আফ্রিকা সিরিজ দুটি ছাড়া। একজন বিখ্যাত ক্রীড়াসাংবাদিকের লেখা একটি বই আবছা আবছা মনে পড়ছে। মহেন্দ্র সিং ধোনিকে তাঁর তরফ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো-বিপক্ষ অধিনায়ক হলে তিনি সেহবাগকে আটকাতেন কিভাবে?….অমসৃণ স্মৃতি হাতড়ে মনে পড়লো মহেন্দ্রজি নাকি উত্তর দিয়েছিলেন-বড়োজোর লেগ স্টাম্প বরাবর শর্ট বল করে চেষ্টা করা যেতে পারে, তাছাড়া কোনোভাবেই নয়। ২০০৮ এর গল টেস্টটা এখনও মনে পড়ে। অজন্তা মেন্ডিসের ক্যারম বলে তছনছ হয়ে যাচ্ছে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ, তার উপর গলের মাঠ মুরলীর আঁতুরঘর। মুরলী বল করতে আসছেন। অফসাইডে মাত্র একজন ফিল্ডার, অনসাইডে বাকীরা। তথাপি মুরলীর কিছুটা শর্ট লেংথে ফেলা বলগুলো সুন্দর ব্যাকফুটে খেলে অনায়াসে অফসাইড বাউন্ডারির ঠিকানা দেখালেন বেশ কয়েকবার। মুরলীর মাঠে টার্নের বিরুদ্ধে মুরলীকে প্রহার — মুরলী নিজেও ভেবেছিলেন কি? কেনো জানিনা ঠিক তার পরের ওভারগুলো থেকেই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস সরিয়ে অফে ফিল্ডার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো। ২০০৫-এর পাকিস্তান ম্যাচগুলোও বেশ মনে পড়ে। সহবাগ তখন টপ ফর্মে। ইনজামামের পাকিস্তান আর সৌরভের ভারতের লড়াইগুলো ছিলো বেশ উত্তেজক। একটা ম্যাচে মনে আছে তখন বল করছেন দানিশ কানেরিয়া। ইনজামাম লং অন আর লং অফ আগলে রেখেছেন ফিল্ডার দিয়ে। কি জানি কি হলো, কানেরিয়ার ওভারে ইনজি লং অনের ফিল্ডারকে এগিয়ে আনলেন, আর সেহবাগ ঠিক পরের বলটাতেই লং অন দিয়ে ছয় হাঁকিয়েছিলেন। পরে শুনেছিলাম সেহবাগ ইনজিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন যে লং অন থেকে ফিল্ডার সরালে তিনি ঠিক পরের বলটাতেই ছয় হাঁকাবেন। এহেন জীবন্ত প্রাণময় মানুষটা অবসর ডেকে বসলেন জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনটাতেই… জন্মদিনে। অনীশ বাবু একবার এ প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, “…তবে রক্তপাতটা কি বুকের ভিতরেই চলছিলো?”। হয়তো তাই। তিনি যেদিন অবসর নিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি ট্যুইট করেছিলেন-তিনি ভিভকে দেখেননি, সহবাগকে দেখেছেন। সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছিলেন-সুনীল গাভাস্কারের পর শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ওপেনার বা ওরকমই কিছু একটা। মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং সৌরভ গাঙ্গুলী — ইতিহাসের দুই অবিসংবাদিত নায়ক, অথচ দুই নায়কের বিজয়গাথার কতশত ভূমিকা, মুখবন্ধ লিখে গেছেন বীরেন্দ্র সেহবাগ, কতশত বিজয়রথের পাথেয় হয়ে রয়ে গিয়েছেন বীরেন্দ্র সেহবাগ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “রাজপথের কথা”-র একটি বাক্য খুব মনে পড়ছিলো —” আমি কাহারও লক্ষ্য নহি, আমি সকলের উপায়মাত্র”।

বীরেন্দ্র সেহবাগ, তিনি অবসর নিয়েছেন প্রায় নয় বছর হলো। তবু টেস্টে ত্রিশতাধিক চেজ এলে কতো কিশোর-তরুণ-প্রৌঢ়ের মন তাদের গোপন স্কোরবোর্ডে ওপেনার হিসাবে দেখতে চান একজনকেই — তিনি বীরেন্দ্র সেহবাগ। “চলা যাতা হুঁ কিসি কি ধুন মে”…. বীরেন্দ্র সেহবাগের কতশত ব্যাটিং তাণ্ডবের সাক্ষী এই “কিশোরী” সঙ্গীত, তিনি নিজের মুখেই গাইতেন লি-আখতার-ভাসদের সংহারের সময়, অবসরের ছয় বছর পরেও মানুষ মনে রেখে দিয়েছে এতো কিছু। মানুষ মনে রাখবে, মানুষ এই সুরগুলো নিশ্চয়ই মনে রাখবে, কারণ “The melody lingers on”। মুলতানের ত্রিশতরানের ম্যাচটির ইংরেজি কমেন্ট্রেটরটির মতো বারবার বলতে ইচ্ছে হচ্ছে — “থ্যাংক ইউ স্যার… থ্যাংক ফর ইওর এন্টারটেইনমেন্ট”।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন