একটা বছরের যবনিকা পড়ে গেলো, রেখে গেলো কিছু আশা-কিছু নিরাশা, কিছু আনন্দ-কিছু দুঃখ। জীবন গতিময় তাই এগিয়ে যেতেই হবে। হতাশা, দুঃখের আবিলতা নিয়ে এগিয়ে চলা যাবে না। মেজাজ চাঙ্গা রাখা খুবই জরুরি। ফুরফুরে মেজাজের জন্য চাই কিছু সহজলভ্য উপকরণ। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, নিয়মিত ব্যায়াম, মেডিটেসান ও স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে আপনি যা খান তা আপনার অনুভূতিকেও প্রভাবিত করতে পারে?
আমরা সবাই এই আপ্ত বাক্যাংশটি শুনেছি : “You are what you eat.” অর্থাৎ ‘আমরা তাই, যা আমরা খাই”।
আজ ১০টি অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, যৌগ দ্বারা ভরপুর স্বাস্থ্যকর, সহজলভ্য খাবারের কথা বলবো যাদের আপনি প্রতিদিনের খাবারে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন বা মুড অফ হলে খেতে পারেন।
মেজাজ বৃদ্ধিকারী খাবার খাওয়া শুধুমাত্র সম্ভাব্য মানসিক স্বাস্থ্যের সুবিধাই দেয় না — তারা আমাদের সামগ্রিক শারীরিক সুস্থতার উন্নতি করতে পারে।
ডার্ক চকলেট : মন ভালো রাখতে চকলেটের জুড়ি মেলা ভার তাই মন খারাপ হলেই ফ্রিজে রাখা ডার্ক চকলেটে কামড় বসান। অল্প একটু খেলেই আপনার মুড ভালো হয়ে যাবে কারন একমাত্র ডার্ক চকলেটই মুড বুস্ট করার ক্ষমতা রাখে। ডার্ক চকলেট শরীরে সেরোটিনিন এবং ডোপামিনের স্তর বাড়িয়ে তোলে। এই নিউরোট্রান্সমিটারগুলি সুখানুভূতি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। খুব চাপের মুহূর্তেও
ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন। তবে মিল্ক বা অন্য কোন চকলেট খাবেন না যেন। যদি ড্রাই ফ্রুটস দেওয়া ডার্ক চকলেট হয় তাহলে তো কথাই নেই।
আপনার সকালের ওটমিলে একটুকরো ডার্ক চকলেট যোগ করুন বা কফিতে গলিয়ে নিন কিম্বা রাতের খাবারের পরে একটি ছোট টুকরো উপভোগ করুন।
কলা : এটি একটি সুপার ফুড। সমীক্ষা করে দেখা গেছে যে অবসাদে ভোগা মানুষজন কলা খেলে ভালো বোধ করেন। শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হয়ে গেলে হঠাৎ করে ‘মুড অফ’ হয়ে যায়। শরীরে সেরাটোনিন ক্ষরণের জন্য ম্যাগনেসিয়াম খুবই প্রয়োজনীয়। এই উপাদানের ঘাটতি দেখা গেলে হ্যাপি হরমোন উৎপন্ন হবে না সেটাই তো স্বাভাবিক। কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন-বি৬ শরীরে গ্লুকোজের সামঞ্জস্য বজায় রেখে মুড বুস্ট করতে সাহায্য করে। সকালের ব্রেকফাস্টে বা স্মুদিতে বা মাফিনে বেক করে কলা খাওয়া যেতে পারে। তাই মুড সুইংস এবং পরিশ্রান্ত ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে খেতে পারেন কলা। যেটি বেশ সহজেই পাওয়া যায়, দামও কম।
বেরি : স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি ও ব্লুবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যা স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। বেরিতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি কেমিক্যাল যা স্ট্রেস ডিসঅর্ডার কমাতে সাহায্য করে। বেরী দইতে দিয়ে খেতে পারেন বা স্যালাডে মিষ্টির ফ্লেভার আনতে মেশাতে পারেন।
ব্রাজিল নাট : ব্রাজিল নাট পরিচিত তার পুষ্টিগুণের জন্য। মূলত ব্রাজিলে এর উৎপত্তি বলে এটি ব্রাজিল বাদাম নামেই পরিচিত। এ বাদামে রয়েছে ভিটামিন-এ, ই, এবং প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
এতে আছে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম যা মেজাজ ভালো করতে বেশ সাহায্য করে। সিলেনিয়ামের স্তর কমে গেলে হতাশা কিংবা অবসাদ আসতে পারে সেই জন্য দুঃখের সময় এক মুঠো ব্রাজিল নাট খাওয়া বেশ উপকারী, মেজাজ চাঙ্গা করতে এটি আপনাকে সাহায্য করবে।
ওটস : ব্রেকফাস্ট থেকে লাঞ্চ, চটজলদি পেট ভরানোর জন্য প্রয়োজন ওটস।এখন ওটস খাওয়ার চল বেড়েছে। এতে উপস্থিত সলিউবল ফাইবার আপনার পেটের খেয়াল রাখে। এটি প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস। সমীক্ষায় দেখা গেছে ওটস নিয়মিত খেলে মুড ভালো থাকে। রেডিমেড ওটস খেতে পারেন বা ডালের সঙ্গে মিশিয়ে বা দুধে নানা ধরনের ফল আর ওটস মিশিয়ে খেতে বেশ সুস্বাদু।
গ্রিন টি : এক কাপ গ্রিন টি আপনার মুড যে একবারে চাঙ্গা করে তুলতে পারে তা এই বিজ্ঞাপনের যুগে মোটামুটি সবাই জানেন। গ্রিন টি-তে থাকা অ্যামাইনো এসিড আপনার শরীরে ডোপামিনের স্তর বাড়িয়ে দেয় এবং ‘হ্যাপি হরমোন’কে পুনরায় হাসিখুশি করে তোলে। এছাড়াও অনেক গুণ রয়েছে এতে যে কারণে মেজাজ খারাপ হলে কফি কাপে চুমুক না দিয়ে বেছে নিন এক কাপ গ্রিন টি।
নানা ধরনের বাদাম ও সিড : উদ্ভিজ আমিষ, ফ্যাট, ফাইবার, ওমেগা থ্রি র দুর্দান্ত উৎস। আমন্ড কাজু পিনাট আখরোট, কুমড়োর বিচি বা সিড, সূর্যমুখের সিড এবং তিল … এগুলো মুড চাঙ্গা করতে, বিষন্নতা কাটাতে দারুন সাহায্য করে।
নিয়মিত এগুলি দু-চারটি করে খেতে পারেন অথবা কোন খাবারের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। তবে মাথায় রাখবেন অতিরিক্ত কোন জিনিস খাওয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী নয়।
আপেল : আপেলের রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। যা আপনাকে ফেরতাজা করার জন্য যথেষ্ট। রয়েছে আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিনসি, কার্বোহাইড্রেট। এতে রয়েছে ফাইবার এবং ফ্ল্যাভোনয়েড পলিমার। ওজন কমানোর জন্য খেতে পারেন খোসা সমেত আপেল। এছাড়াও আপেলে থাকে পলিফেনাল জাতীয় উপাদান। যা অ্যান্টিডিপ্রেশন হিসেবে কাজ করে। দুঃখের সময় মেজাজ ভালো করতে এক কামড় বসিয়ে দিন আপেলে।
মিষ্টি আলু : শীতকাল মানেই পিঠে পুলির সময়। ভাজা পিঠা খেতে হলে মিষ্টি আলুর কথাই মনে পড়বে প্রথমে। ভাবছেন এমনি আলু ডায়েট চার্ট থেকে বাদ থাকে তার উপর আবার মিষ্টি আলু! কিন্তু জানেন কি মিষ্টি আলু খুবই স্বাস্থ্যকর। এতে ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেট পরিমাণ যথেষ্ট কম। ভিটামিন এ তে ভরপুর, যা শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে এমনকি দৈনিক প্রোটিন চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ করে মিষ্টিআলু। মেজাজ স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে মিষ্টি আলু। এই শীতে মটরশুঁটি, শাকসবজি দিয়ে অথবা খোলা সমেত মিষ্টি আলুর স্যুপ বানিয়ে খেতে পারেন।
দই : টক দইয়ে রয়েছে প্রোবায়োটিক উপাদান, ভালো ব্যাকটেরিয়া। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ বি সিক্স ক্যালসিয়াম ফসফরাসহ নানান পুষ্টিকর উপাদান। টক দই শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলিকে চাঙ্গা রাখে ফলে আপনার মুড ভালো থাকবে। মনকে চাঙ্গা করতে টক দইয়ের জুড়ি মেলা ভার।
উপরে যে কটি খাবারের কথা বলা হলো সেগুলি মন খারাপ হলে অনেক ক্ষেত্রেই মন চাঙ্গা করতে সাহায্য করে। তবে দীর্ঘদিন স্টেসে ভুগলে, মানসিক অবসাদ এলে অতি অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
অত্যন্ত তথ্যবহুল প্রতিবেদন।
থ্যাঙ্ক ইউ দাদাভাই।
মিষ্টি আলু বাদে বাকী সব খাবারই আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকে, তবে কাল থেকে মিষ্টি আলুও তালিকায় রাখবো।