শুক্রবার | ১লা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:০৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
মীনাক্ষী সেন-এর বড়োগল্প ‘একটি ভূতের বাড়ির আজগুবি গল্প’ অজ্ঞানতার আঁধার পেরিয়ে আলোর উৎসব : সন্দীপন বিশ্বাস রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (শেষ পর্ব) : কৌশিক মজুমদার ভূত চতুর্দশী — নেত্যকালীর মিরর ইমেজ ও প্রেতলোকের চোদ্দকাহন : প্রলয় চক্রবর্তী কালীপূজার আগের দিনটি চোদ্দবাতি জ্বালানো ও চোদ্দশাক খাওয়ার জন্যে নির্দিষ্ট : অসিত দাস পেঁয়াজের ঝাঁজে গৃহস্থের চোখে জল, সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়বে রাজ্য : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ধনং দেহী ধনতেরাস অ্যান্ড পুরুষালী গয়না : রিঙ্কি সামন্ত এ উৎসবের লগনে : নন্দিনী অধিকারী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (দ্বিতীয় পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (শেষ পর্ব) : শংকর ধনতেরাস এখন বাঙালিরও : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ডাক্তারদের আন্দোলন উপনির্বাচনে ইস্যু নয়, জয় নিয়ে শাসকদল নিশ্চিত : তপন মল্লিক চৌধুরী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (প্রথম পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (তৃতীয় পর্ব) : শংকর সেকালের প্রেতচর্চা — শিক্ষিত জনের কাছে থিওসফি : প্রলয় চক্রবর্তী মা কালী যখন মহালক্ষ্মী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (দ্বিতীয় পর্ব) : শংকর মহাকাব্যে ভেড়ার উল্লেখ : অসিত দাস কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (প্রথম পর্ব) : শংকর রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও একাদশী পালনের নিয়মাবলী : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবী-র ছোটগল্প ‘চাবি’ একে দানা-য় রক্ষা নেই তারওপর ডিভিসি-র ৪২ হাজার কিউসেক জল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (নবম পর্ব) : বিজয়া দেব চেতনার সমস্যা, সামাজিক অবকাঠামো এবং বলপ্রয়োগ : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক বারবার ভিলেন সেই বঙ্গোপসাগর : তপন মল্লিক চৌধুরী নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রাখাইন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ‘দানা’ থেকে ভয় পাবেন না, সতর্ক থাকুন, মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সই বা বন্ধুত্ব স্থাপনের উৎসব সয়লা : রিঙ্কি সামন্ত প্রথম পাঠ — “নিশিপালনের প্রহরে” নিয়ে, দুয়েকটি কথা : সোনালি চন্দ বৃহন্নলার অন্তরসত্তা : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

আজকের দিনেই মুক্তি পেয়েছিলো সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৬২৮ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

১৯৭৪ সালের ২৭শে ডিসেম্বর অর্থাৎ আজকের দিনেই মুক্তি পেয়েছিলো সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা গোয়েন্দা চলচ্চিত্র ‘সোনার কেল্লা’। ফিল্ম তৈরির কাজটাকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম হল চিত্রনাট্য লেখা, দ্বিতীয় ছবি তোলা, আর তৃতীয় হলো শুটিং হয়ে গেলে, টুকরো টুকরো ভাবে তোলা দৃশ্যগুলো চিত্রনাট্য যেমন আছে তেমন করে পর পর সাজিয়ে জোড়া। সোনার কেল্লা ছবির শুটিং-এর জন্য ভারতবর্ষের নানান জায়গায় যেতে হয়েছিলো সত্যজিৎ রায়ের পুরো ইউনিটকে। কলকাতা, দিল্লির অলিগলি, সুদূর পশ্চিম রাজস্থানের মরু অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় শুটিং করতে গিয়ে যে সব অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিলো, তারই কয়েকটার কিছু কথা বলবো আজকের লেখায়।

চলচ্চিত্রের মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ দত্ত, কুশল চক্রবর্তী, শৈলেন মুখার্জী, কামু মুখার্জী ছাড়াও পার্শ্ব চরিত্র সমূহে রয়েছেন শৈলেন মুখার্জী, অজয় ব্যানার্জী, হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। ছবিটিতে মুকুল নামের এক জাতিস্মর ছোট ছেলের কাহিনী চিত্রায়িত হয়েছে।

সোনার কেল্লা শুটিং করতে জয়পুরে প্রথমবার সত্যজিৎ রায় এসেছিলেন ১৯৭৪ সালের মার্চ কিংবা এপ্রিলে পুরো ইউনিট নিয়ে। সত্যজিৎ রায়, স্ত্রী বিজয়া রায়, শৈলেন মুখোপাধ্যায় (হেমাঙ্গ হাজরা) এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (ফেলুদা) উঠেছিলেন জয়পুরের অভিজাত খাসাকোঠি প্যালেস হোটেলে। খাসাকোঠি প্যালেস একসময় জয়পুর রাজাদের বসতবাড়ি ছিল পরবর্তীকালে এটি বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেল হয়ে যায়। ইউনিটের বাকিরা সকলে জহুরী বাজারে ‘লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডার’ নামে একটি অন্য হোটেলে।

সিনেমার জগৎ মানেই কল্পনার দুনিয়া। আপাত দৃষ্টিতে সে জগৎ বাস্তব থেকে যতই দূরে হোক না কেন, তার সৃষ্টির আকর কিন্তু সংগৃহীত হয় চিরপরিচিত বাস্তব থেকেই। সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ ছবিতেও জাতিস্মর মুকুলের আড়ালে লুকিয়ে ছিল ‘প্রভু’ নামের রাজস্থানের এক ছেলে, আর প্যারাসাইকোলজিস্ট ড. হেমাঙ্গ হাজরার মধ্যে ধরা পড়েছিল জয়পুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারাসাইকোলজি বিভাগের অধ্যক্ষ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরামনো বিজ্ঞানী ডঃ হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিচ্ছবি।

চিত্রনাট্যে ছিলো, ছয় বছরের ছোট ছেলে মুকুল সোনার কেল্লা নামে এক আশ্চর্য কেল্লা খুঁজে বেড়াচ্ছে। বেশ কয়েকটা দেখা হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সোনার কেল্লা সে খুঁজে পাচ্ছিল না। মুকুলের এই খুঁজে বেড়ানো বোঝাবার জন্য ছবিতে বেশ কয়েকটি কেল্লা দেখানোর দরকার ছিল। অনেক ঘোরাঘুরি করবার পর পাঁচটা বিভিন্ন রঙের কেল্লাকে বেছে নেওয়া হয় সিনেমায় দেখানোর জন্য। তার মধ্যে দিল্লির লালকেল্লার রং লাল, জয়পুরের নাহারগড় কেল্লার রং শেওলা ধরা মাটি মাটি ভাব, যোধপুরের কেল্লার রং লালচে, বিকানিরের দুর্গের রংটা সাদা আর জয়সলমীরের কেল্লা কাঁচা সোনার মতো হলুদ। তাইতো মুকুল সেটার নাম দিয়েছিল সোনার কেল্লা। রঙের তফাৎ থাকার ফলে একটি কেল্লা অন্য কেল্লা থেকে গুলিয়ে যায়নি। ছবিতে যে একের পর এক নতুন কেল্লা আছে দর্শকের বুঝতে কোন অসুবিধাই হয়নি। এত দূরে এত বেশি করে বেড়ানোর ছবি সত্যজিৎ রায় ‘হীরক রাজার দেশে’ ছাড়া কোন সিনেমাতেই করেননি বললেই চলে। বেশি দূরে দূরে যাওয়ার ফলে নানা রকম মজার ঘটনা ঘটতো ‘সোনার কেল্লা’ ছবির শুটিংয়ে। একটা ছোট্ট ঘটনার কথা বলি।

জয়পুর থেকে সবাই মিলে ট্রেনে করে চলেছে দূরে কোন মরু শহরে। পুরো ফিল্মের এ শহর থেকে ও শহরে যাওয়ার সময় সাধারণত ট্রেনের একটা আস্ত কামড়া ভাড়া করে নেওয়া হতো। তাতেই পরিচালক থেকে নানা ধরনের চরিত্রের অভিনেতা একসঙ্গে যাতায়াত করতেন। মরুভূমির মধ্যে দিয়ে যাবার সময় কোনকারণে সমস্ত খাবার ফুরিয়ে গেল। কিছুই করার নেই গন্তব্য স্থানে পৌঁছতে তখনো অনেক দেরি।

অথচ একটা জিনিস ভাবলে সবাইকার দুঃখ হচ্ছিল কামরার ঠিক পাশেই একটা আস্ত কামড়া ভাড়া করে চলেছে এক বিয়ে বাড়ির দল। সঙ্গে প্রচুর খাওয়া দাওয়া। কোন স্টেশনে ট্রেন থামলে পাশের কামড়াতে কি হচ্ছে সবই টের পাওয়া যাচ্ছিল কিন্তু কিছুই করার নেই।

ইউনিটে ছিলেন কামু মুখোপাধ্যায়, যিনি চলচ্চিত্রে ছিলেন দুর্ধর্ষ ভিলেন মন্দার ঘোষের ভূমিকায়। অত সহজে দমে যাবার পাত্র তিনি নন। একটা ছোট স্টেশনে ট্রেন থামতেই হৈচৈ বাঁধিয়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে এলো বরযাত্রীর দল, ওমনি কামুবাবুও কামরা ছেড়ে সোজা গিয়ে হাজির হলেন পাশের কামড়ায়। নেমনতন্ন ছাড়া বরযাত্রীর দলে ঢুকে গিয়ে কি করেছিলেন কেউ জানেনা কিন্তু একটু পরে তিনি হাজির হলেন হাত ভর্তি সেউ ভাজা নিয়ে যেগুলো সবার মধ্যে তিনি বিলি করে দিলেন। সকলের জলখাবার তো জুটে গেলই, সঙ্গে কিছু মজার খোরাকও।

জয়সালমীরের দুর্গের একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। ছবির শেষ দৃশ্যে মুকুল এই কেল্লার সরু গলি গুলোর মধ্যে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে বেড়াচ্ছে আর তাকে ধরার জন্য হন্তদন্ত হয়ে তাড়া করছেন ছবির দুর্দান্ত ভিলেন নকল ডাক্তার হাজরা। দৃশ্যটা ছিল বেশ জটিল গোটা দৃশ্য টাকে পঞ্চান্নটা টুকরো টুকরো ছবিতে ভাঙ্গা হয়েছিল।

সমস্যা ছিল যেদিন সকালে এই দৃশ্যের শুটিং হবে সেদিন বিকালেই ট্রেন ধরে কলকাতার দিকে রওনা হতে হবে। স্টেশন থেকে দুর্গটা ছিল অনেক দূরে, মানে সকালের মধ্যে পুরো দৃশ্য ছবি তুলে রওনা হতে হবে স্টেশনের দিকে না হলে ট্রেনের টিকিট ক্যানসেল করতে হবে গোটা ইউনিটের। এবার ইউনিটের লোক তো কম ছিল না, একটা পুরো বরযাত্রী দলের মতো।

খুব সাহস করে শুটিং করা শুরু হল। দেখতে দেখতে মাত্র ঘন্টা চারেকের মধ্যেই ওই পঞ্চান্নটা শর্ট নিখুঁতভাবে ক্যামেরায় তোলা হয়ে গেল। কাজটা খুবই কঠিন ছিল সন্দেহ নেই কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের মত পরিচালক, চিত্রগ্রাহক সৌমেন্দু রায় এবং দক্ষ কলাকুশলীগণ যে ইউনিটে থাকেন, সেখানে কঠিন কাজও সহজ ভাবে হয়ে যায়।

ছবির শুটিংয়ে যতদূর সম্ভব আসল আলো ব্যবহার করা হয়েছিল। একটি দৃশ্যে মুকুলকে সম্মোহন করার সময় নকল ডাক্তার হাজরা একটি পেন্সিল টর্চ মুকুলের চোখের সামনে দোলাচ্ছিল। ফলে এক টুকরো ছোট্ট আলো মুকুলের এ চোখ থেকে ও চোখে আসা যাওয়া  করছিল। সে যুগে এমন দৃশ্য তুলতে গেলে টর্চার বদলে অন্য বড় আলো ব্যবহার করার রেওয়াজ ছিল। সেকালের রঙিন ফ্লিম আজকের মত এমন সংবেদনশীল ছিল না। বেশ ঝুঁকি নিয়েই গোটা সম্মোহনে দৃশ্যটা তোলা হয়েছিল সিনেমায় আমরা সবাই দেখেছি ওই আলোতেই মুকুলের দুটি চোখ কেমন ঝকঝকে স্পষ্ট করে দেখা গিয়েছিল, এতটাই নিখুত ছিল সত্যজিৎ রায়ের চিত্রগ্রাহক।

উনপঞ্চাশ বছর আগে সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। ছোট মুকুলকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছিল ফেলুদার এই দুর্ধর্ষ অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ। প্যারাসাইকোলজি নিয়ে গল্পটি তৈরি। সত্যজিৎ রায় বারবার করে যেন দর্শকদের মনে করিয়ে দিতে চাইছিলেন গল্পের পিছনে চমকপ্রদ বাস্তব ঘটনাগুলি! তাই আজও এটি বাঙালির খুব কাছের ছবি।


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “আজকের দিনেই মুক্তি পেয়েছিলো সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Nandini Adhikari says:

    ছোটবেলায় দেখা অন্যতম প্রিয় সিনেমা। তোমার লেখায় যেন ফিরে দেখলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন