শনিবার | ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৩৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (শেষ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর অনন্য লেখক মানিক : ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (একাদশ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভেটকি থেকে ইলিশ, চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল, হুগলির মাছের মেলায় শুধুই মাছ : রিঙ্কি সামন্ত দিল্লি বিধানসভায় কি বিজেপির হারের পুনরাবৃত্তি ঘটবে : তপন মল্লিক চৌধুরী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন — বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দশম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুর ও তৎকালীন বঙ্গসংস্কৃতি : অসিত দাস দধি সংক্রান্তি ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (নবম পর্ব) : আবদুশ শাকুর সপ্তাহে একদিন উপবাস করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো : অনুপম পাল অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত’র ভাষা : ড. হান্স্ হার্ডার সবগুলো গল্পেই বিজয়ার নিজস্ব সিগনেচার স্টাইলের ছাপ রয়েছে : ড. শ্যামলী কর ভাওয়াল কচুর কচকচানি : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (অষ্টম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুরের উইল ও দ্বারকানাথের ধনপ্রাপ্তি : অসিত দাস বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (সপ্তম পর্ব) : আবদুশ শাকুর যে শিক্ষকের অভাবে ‘বিবেক’ জাগ্রত হয় না : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (ষষ্ঠ পর্ব) : আবদুশ শাকুর দিল্লি বিধানসভা ভোটেই নিশ্চিত হচ্ছে বিজেপি বিরোধি জোটের ভাঙন : তপন মল্লিক চৌধুরী দ্বারকানাথ ঠাকুরের গানের চর্চা : অসিত দাস মমতা বললেন, এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দুষ্টচক্র হু জানাল চিন্তা নেই : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (পঞ্চম পর্ব) : আবদুশ শাকুর পৌষ পুত্রদা একাদশী : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (চতুর্থ পর্ব) : আবদুশ শাকুর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপূজায় কবিগান ও যাত্রার আসর : অসিত দাস সসীমকুমার বাড়ৈ-এর ছোটগল্প ‘ঋতুমতী হওয়ার প্রার্থনা’ সামাজিক মনস্তত্ত্বের প্রতিফলনে সিনেমা : সায়র ব্যানার্জী নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সুও দুও ভাসে’
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বাংলা বানান সম্পর্কে কিছু কথা : প্রসেনজিৎ দাস

প্রসেনজিৎ দাস / ৪৩০ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বাংলা বানান নিয়ে প্রচুর বই লেখা হয়েছে, বর্তমানেও হচ্ছে। কিন্তু বানান সম্পর্কে কিছু মানুষ আজও সচেতন নয় তার প্রমাণ ভুরি ভুরি। কিছু কিছু লোক মনে করে যে কোন একটা বানান লিখলেই হল। এ নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। কিন্তু মাথাব্যথা যে আমাদের, আমরা যারা একটু মোটামুটি বুঝমান। রাস্তায় চলতে গেলে অনেক সময় যখন দেওয়ালে দেখি ‘বিজ্ঞাপন মারিবেন না’-র স্থলে লেখা ‘বিঞ্জাপন মারিবেন না’, তখন লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়। এরকম একটা দুঃখ থেকেই বোধ হয় এই প্রবন্ধ লিখতে বসা।

আমরা শিক্ষকরা বানান শিক্ষার জন্য স্কুলে অনেকসময় ছেলেমেয়েদের বা বাড়ির ছোট ছোট ভাই বোনেদের ‘ণত্ববিধান’ বা ‘ষত্ববিধান’ এর মুখস্থ বুলি আওড়াই। কিন্তু আমরা কজন সেই নিয়মগুলি মনে রেখে বানান শিখি বলুন তো?

শিখি না তো? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। আমরা ওভাবে বানান শিখি না। কিছু পুঁথিগত বুলি মুখস্থ করে বাংলা বানান লিখতে যাওয়ার পাগলামিটা না করাই ভালো। তাহলে তা হাস্যকর হবে ও বানান লেখার সময় দ্বন্দ্বে ভুগতে হবে।এই বিষয়গুলি আত্মস্থ করতে হবে এমনভাবে, যাতে তা স্বতস্ফূর্তভাবেই চলে আসে। তার অভ্যাসটা ছোটবেলা থেকেই করতে হবে। তবে কি ‘ণত্ববিধান’ বা ‘ষত্ববিধান’-এর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই? অবশ্যই আছে। বাংলা বানানে তিনটি ‘শ’ বা দুটি ‘ন’-এর ব্যবহার সঠিক ভাবে জানতে অবশ্যই আমাকে ‘ষত্ববিধান’ বা ‘ ণত্ববিধান’-এর দ্বারস্থ হতে হবে। এর নিয়মগুলি তো জানতে হবেই, কিন্তু প্রয়োগটাও যেন স্বতস্ফূর্ত ভাবেই হয় সে দিকে নজর দিতে হবে। এটাই মোদ্দা কথা। তবে আমি কিন্তু প্রথাগত কোন নিয়মে বাংলা বানান শিখিনি। ‘ণত্ববিধান’ বা ‘ষত্ববিধান’-এর সূত্রগুলি বের করে কোনদিন পড়েছি বলেও মনে হয় না। শুধুমাত্র আমি নই। অনেক পাঠকই হয়তো আমার সঙ্গে সহমত পোষণ করবেন। তবুও কি আমরা বানান শিখতে পারিনি? পেরেছি বইকি। আমাদের পড়তে হবে অনেক বেশি। যত বেশি বইয়ের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলা সম্ভব হবে, ততই বাংলা বানান সম্পর্কে সচেতন হওয়া যাবে। তবে হাতের কাছে একটা ‘চলন্তিকা’ বা ‘আকাদেমির বাংলা বানান অভিধান’ বই রাখা বাঞ্ছনীয়। যদি কোন বানান সম্পর্কে সন্দেহ দেখা যায়, তৎক্ষণাৎ তা দেখে নিতে হবে।

বি এ প্রথম বর্ষের বাংলা অনার্সের প্রথম ক্লাসের কথা আমার আজও মনে আছে। ক্লাসে ঢুকেই অধ্যাপক অমলবাবু আমাদের দুটো বানান লিখতে দিয়েছিলেন। কিন্তু একশজন ছেলের মধ্যে হাতে গোণা কয়েকজন বানান দুটি লিখতে পেরেছিল। শব্দদুটি হল ‘ন্যূনতম’ ও ‘ভর্ৎসনা’। ন্যূনতম এই জ্ঞানটুকুও না থাকার জন্য তাঁর কাছে সেদিন আমাদের ভর্ৎসিত হতে হয়েছিল। এরকম বাংলা বানান ভুল নিয়ে আজ অনেকেই বেশ চিন্তিত। বেশ কয়েকবছর ধরে শিক্ষকতা করার সুবাদে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ছাত্রছাত্রীদের তো বটেই এমনকি শিক্ষক শিক্ষিকা থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর মানুষের বানান ভুলের প্রবণতা কিন্তু আজ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

এই বানান ভুলের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। প্রথমত বলব-উচ্চারণের জড়তা। উচ্চারণ যদি স্পষ্ট না হয়, তাহলে লেখার সময় বানান ভুলের প্রবণতা বাড়ে। তাই স্পষ্ট উচ্চারণ করা প্রয়োজন। তাতে বক্তা ও শ্রোতা উভয়েই লাভবান হবেন। আচ্ছা ‘অমাবস্যা’-কে কজন অমাবস্যা বলেন, সে নিয়ে সন্দেহ আছে। বেশিরভাগ জন বলেন ‘আমাবস্যা’। অনেকে এই বানানটিই লিখে ভুলের পথে পা বাড়ান। ‘বান’ এবং ‘বাণ’ শব্দ দুটি আমরা সাধারণত একই ভাবে উচ্চারণ করি। কিন্তু শব্দদুটির বানান ও অর্থ দুইই আলাদা। তাহলে আমাদের সঠিক ভাবে উচ্চারণ করতে হবে। এখানে দু-রকম ‘ন’ রয়েছে। একটি দন্ত স্পর্শ করে আর এতটা মূর্ধা স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়। তাই শব্দদুটির উচ্চারণের সময় আমাদের সেই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে; তাহলে যে লিখছে (লেখক) তারও মঙ্গল আর যে শ্রোতা (পাঠক) তারও মঙ্গল। এর জন্য সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ গুলি সম্পর্কে নিবিড় অনুশীলন প্রয়োজন। তবে যখন আজকের খুদে ছাত্রছাত্রীরা আগামী দিনের সচেতন ও আত্মনির্ভর লেখক বা পাঠকে পরিণত হবে তখন তারা ভাষা শুনেই বলে দিতে পারবে কোন বানান সেখানে ব্যবহার করতে হবে। সেটার জার্নিটা খুবই সময় সাপেক্ষ। এরকম বেশ কিছু উচ্চারণ নিয়ে কথা বলব। যেমন — ‘পারা’ ও ‘পাড়া’ শব্দদুটির উচ্চারণ ও অর্থ দুইই আলাদা। ‘পারা’-সক্ষমতা অর্থে আর ‘পাড়া’-উৎপাটন অর্থে ব্যবহৃত হয়। ‘পড়া’ এর ইংরেজি অর্থ ‘Read’ (পড়াশোনা করা) কিন্তু ‘পরা’-এর অর্থ ‘Wear’ (পরিধান করা)। কিন্তু ছাত্রছাত্রী তো বটেই, এমনকি বড়োদের লেখাতেও দেখেছি ড়/র এর গোলমাল। এই গোলমালের প্রধান কারণ আমাদের উচ্চারণের দুর্বলতা। তাহলে সঠিক উচ্চারণের দায়িত্বটা আমাদের সকলকেই নিতে হবে। মনে রাখতে হবে ‘ড়’-এর উচ্চারণ হবে গম্ভীরভাবে আর ‘র’-এর উচ্চারণ হবে তরল ভাবে। তবে এতটা তরল নয় যাতে গড়িয়ে পড়ে। যাইহোক এভাবে সচেতন ভাবে উচ্চারণ করলে বানান ভুলের পরিমাণ অনেকটাই কমবে। নতুবা ‘নীর’ হয়ে যাবে ‘নীড়’ এবং ‘বাড়ি’ পরিণত হবে ‘বারি’-তে।

দ্বিতীয়ত — কুঁড়েমি বা আলসেমি করে লিখতে লিখতে চোখের সামনে বানান ভুল করল দেখেও অনেকে সেই ভুলটাকে প্রশ্রয় দেয় ও কাটাকুটি না করে লেখা চালিয়ে দেয়। এটাও এক ধরণের বদ অভ্যাস।

তৃতীয়ত — বই পড়ার যথেষ্ট ঘাটতি। প্রথমেই বলেছি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বইয়ের সঙ্গে সংযোগ যত বাড়বে, ততই বানান ভুলের প্রবণতা কমবে। সেই সঙ্গে বেশি করে লিখতে হবে। এই লেখা দু-রকম ভাবে হতে পারে। একটা শ্রুতিলিখন আর অন্যটা অনুলিখন। শ্রুতিলিখন হল শুনে শুনে লেখা, আর অনুলিখন বই দেখে লেখা। বারবার লিখলে বানান ভুল অনেকটাই কমানো যায়। আমার মনে হয় ‘শোনা-বলা-পড়া-লেখা’ এই চারটি স্টেপ বানান ভুল এড়ানোর বড়ো উপকারী পন্থা। প্রথমে ভালো করে উচ্চারণটি শোনো, তারপর বলার চেষ্টা করো। তারপর মন দিয়ে দেখে পড়ো, সবশেষে দেখে ও না দেখে লেখো। এভাবে বানান ভুল কমানো যেতে পারে বলে আমার মনে হয়।

চতুর্থত — আঞ্চলিকতা দোষও বানান ভুলের আরেকটি বড়ো কারণ। যেমন ‘তেল’ শব্দটিকে আঞ্চলিক ভাষায় অনেকে ‘ত্যাল’ উচ্চারণ করে বা উচ্চারণের ঝোঁকে লিখেও ফেলছে ভুল বানানটি। মৌখিক উচ্চারণে আঞ্চলিকতাকে প্রাধাণ্য দিলেও লেখার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু চলিত ভাষা বা সাধু ভাষা যাই হোক না কেন, সেটা নির্ভুল ভাবে ব্যবহার করতে হবে।

পঞ্চমত — আরেকটি জিনিস বিশেষ উল্লেখযোগ্য তা হল — বাংলা বানানের নিয়ম নীতি জানার ক্ষেত্রে আগ্রহ ও নিষ্ঠার অভাব। যেমন — দুটি শব্দ সন্ধিবদ্ধ হলে সন্ধিজাত শব্দগুলির বানানের যে পরিবর্তন গুলি হয়, আমাদের লক্ষ্য করা উচিৎ। অনুমতি+অনুসারে = অনুমত্যনুসারে। কিন্তু অনেকের লেখায় দেখা যায় অনুমত্যানুসারে। অর্থাৎ তিনি ওই নিয়মটি সম্পর্কে অবহিত নন বা জানতে আগ্রহী নন। তেমনি — অপরাহ্ণ, চিহ্ন বানানদুটির প্রসঙ্গে একটা কথা বলি। অপরাহ্ণের ‘হ্ণ’= হ্+ণ্ আর চিহ্নের ‘হ্ন’=হ্+ন্।

তাহলে ছাত্রদের এটা পরিষ্কার করে বলা উচিত যে ‘হ’ এর সঙ্গে যুক্ত ‘ণ’ ‘হ’ এর নীচে বসে, আর ‘হ’ এর সঙ্গে যুক্ত ‘ন’ ‘হ’ এর পাশে যুক্ত হয়ে বসে। তাহলে তারা যখনই ওই রকম বানান দেখবে তাদের মধ্যে শব্দের বানান সম্পর্কে ধারণাটা জন্মাবে।

আমরা জানি মূর্ধন্য (ণ্) বাংলা ভাষায় এসে তার উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। মূর্ধন্য (ণ্) এখন দন্ত্য ‘ন’ এর মত উচ্চারিত হয়। অনুরূপ ভাবে বাংলায় তিনটি ‘শ’ এর উচ্চারণই তালব্য ‘শ’-এর মত হয়ে গেছে। কিন্তু বলা বা পড়ার সময় আমাদের অসুবিধা না হলেও লেখার সময় আমরা মুশকিলে পড়ি। কোন ‘ন’ লিখব, কিম্বা কোন ‘স’ হবে ইত্যাদি।দন্ত্য স্পর্শ করে উচারিত হয় ‘ন’, আর ‘ণ’ উচ্চারিত হয় মূর্ধা স্পর্শ করে। ঠিক তেমনি ‘স’ উচ্চারিত হয় দন্ত্য স্পর্শ করে, ‘শ’ তালু স্পর্শ করে, আর ‘ষ’ মূর্ধা স্পর্শ করে। আর এই বিষয় গুলির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য অবশ্যই আমাদের ‘ণত্ববিধান’ কিম্বা ‘ষত্ববিধান’-এর দ্বারস্থ হতে হবে। জানতে হবে নিয়মগুলি। রপ্ত করতে হবে এমন ভাবে যাতে মনে না হয় যে নিয়ম মুখস্থ করে বানান লিখছি।

বাংলা বানানের বহু নিয়ম আছে। এর মধ্যে যেগুলি আমরা প্রায়ই ভুল করি এরকম কিছু উদাহরণ এখানে দেব।

‘অ’-কার বা ‘আ’-কার ভিন্ন স্বরবর্ণের পর এবং ‘ক’ বা ‘র’ এর পরে প্রত্যয় বা বিভক্তির দন্ত্য-‘স’ মূর্ধন্য ‘ষ’ হয়। যেমন — ভবিষ্যৎ, পরিষ্কার, পুষ্করিণী, আবিষ্কার, শ্রীচরণেষু (অ’-কার বা ‘আ’-কার ভিন্ন স্বর আগে আছে বলে)। কিন্তু পুরস্কার, তিরস্কার, ভস্ম, পুজনীয়াসু, কল্যানীয়াসু (অ’-কার বা ‘আ’-কার আগে আছে বলে)।

এবার আসি ‘ই’ বা ‘ঈ’ কার সংক্রান্ত আলোচনায়। এটা নিয়েও বেশ গোলমাল দেখা যায়। এরও উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। হ্রস্ব-‘ই’ এর উচ্চারণ হ্রস্ব বা কম আর দীর্ঘ-‘ঈ’-এর উচ্চারণ দীর্ঘ বা বেশী হবে। যেমন — দিন/ দীন এদের উচ্চারণ আলাদা এবং অর্থও আলাদা।

আর একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়। সেটা হল ‘কি’ এবং ‘কী’-এর দ্বন্দ্ব। এদের পার্থক্য কী? আসুন আমরা জেনে নিই এদের আসল রহস্য।

‘কি’ প্রশ্নবোধক অব্যয় আর ‘কী’ প্রশ্নবোধক সর্বনাম। হ্যাঁ বাচক বা না বাচক প্রশ্নের ক্ষেত্রে ‘কি’ ব্যবহার করা হয়। আর বিবৃতিমূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে ‘কী’ ব্যবহৃত হয়। আসুন উদাহরণ-সহ আমরা ব্যাপারটা বুঝে নিই —

তুমি খাবে কি? ( উত্তর হবে হ্যাঁ/না)।

তুমি কী খাবে? (উত্তরটা বিবৃতিমূলক হবে। অর্থাৎ কী খাবে তার নাম।)

আবার ‘ইন’ প্রত্যয় যুক্ত শব্দের সঙ্গে ‘ত্ব’ বা ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত হলে সর্বদা ‘ই’ কার হবে। যেমন — কৃতি-কৃতিত্ব, দায়ী-দায়িত্ব, প্রতিযোগী-প্রতিযোগিতা, সহযোগী-সহযোগিতা।

খুঁটিনাটি এই বিষয়গুলির প্রতি যদি যত্নবান হওয়া যায় তাহলে বানান ভুল এড়ানো যাবে। সবশেষে বলব বানান ভুলের যে সকল কারণের কথা বললাম তা হয়তো পরিপূর্ণ নয়। বাংলা বানান জানতে হলে প্রচুর পড়ুন। বইয়ের সঙ্গে সংযোগ বাড়ান। যুগ বদলাচ্ছে, সেই সঙ্গে বদলাচ্ছে মানুষের রুচিও। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলা বানানেরও বিবর্তন ঘটেছে। সেগুলিকে অনুসরণ করা আশু কর্তব্য। তাহলে বাংলা বানানের হাল হকিকত সম্পর্কে কিছুটা অবহিত হওয়া যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন