বৃহস্পতিবার | ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:৪৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ : অসিত দাস ‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ‘রাঙা শুক্রবার অথবা কহরকন্ঠ কথা’ উপন্যাস বিষয়ে শতদল মিত্র যা বললেন রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ কেজরিওয়াল হারলো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সাহেব লেখক দেড়শো বছর আগেই বলেছিলেন পঞ্চানন কুশারীর কবিয়াল হওয়ার সম্ভাবনার কথা : অসিত দাস বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী শঙ্খ ঘোষ-এর ‘এখন সব অলীক’ নস্টালজিক অনুভূতি দিয়ে ঘেরা মায়াময় এক জগৎ : অমৃতাভ দে বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (প্রথম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কালো গোঁসাইয়ের চিঠি — চিঠিকেন্দ্রীক স্মৃতির পুনর্জীবন : মোঃ তুষার উদ্দিন নব নব রূপে : নন্দিনী অধিকারী সরস্বতীর বীণা কচ্ছপী ও গজকচ্ছপ বাঙালি বুদ্ধিজীবী : অসিত দাস মহাকুম্ভ উপলক্ষে এবার যে জনপ্লাবন দেখা যাচ্ছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘আখের রস’ নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সরস্বতী দিদিমণি’ মহাকুম্ভ থেকে মহাদুর্ঘটনা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা খুঁজছে মাটির নিরাপত্তা : রিঙ্কি সামন্ত জিবিএস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, মত চিকিৎসকদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী : পুরুষোত্তম সিংহ বিমল কর-এর ছোটগল্প ‘খিল’ মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বঙ্গভঙ্গের সেদিন – ২০ জুন ১৯৪৭ : প্রলয় চক্রবর্তী

প্রলয় চক্রবর্তী / ৩৮৫ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩

সময়টা ছিল লড়কে লেঙ্গের। কালানুক্রমিক বিচারে ১৯৪৬-৪৭। একদিকে পাক পাকিস্তান, অন্যদিকে তৈয়ার হ্যাঁয় হাম-রাখেঙ্গে হিন্দুস্থান। এই অভূতপূর্ব উন্মত্ততায় বাংলাও পিছিয়ে ছিলনা। লড়কে লেঙ্গে—যুযুধান বাঙ্গালিকে আড়াআড়ি বিভক্ত করেছিল। ১৯০৫-এর বাংলা ভাগ ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস ও ভেদনীতির ফল, আর ১৯৪৭-এর বাংলা ভাগের পেছনে ছিল বাঙালির অন্তরমহলের বিবাদ, ভ্রান্তি ও পারস্পরিক সন্দেহের বাতাবরণ। মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদের হেরাফেরিতে বাঙালি ভাগ হল কাঁটাতারের স্থায়ী বিড়ম্বনায়!

সেই লড়কে লেঙ্গের সময়কালে কয়েক কোটি বাঙালির ভাগ্য নির্ধারণ করল সীমিত ভোটাধিকারের (১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইন অনুযায়ী) বলে জয়ী ভাগ্যবিধাতারা, বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির (আজকের বিধানসভা) নির্বাচিত সদস্যরা। ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্ট নয়, ২০ জুন মাত্র ১২৬-৯০ ভোটে বাংলা প্রদেশ দু’ভাগে বিভক্ত হয়। ভারতের মধ্যে আজকের পশ্চিমবঙ্গ, আর পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ব বাংলা (আজকের বাংলাদেশ)।

স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফ এক পেনসিলের আঁচড়ে ভারতকে দু-ভাগে ভাগ করলেন, সঙ্গে সঙ্গে বাংলাকেও। বাঙালির ইতিহাস ও ভূগোলও বদলে গেল আমূল। যুযুধান বাঙালি ভারতের বাঙালি ও পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিতে বিভক্ত হয়ে গেলেন। সমসংস্কৃতির একটি জাতির জীবনে এমন বিপর্যয় অমিল। ভারতের স্বাধীনতা আইনের ৩(১)(এ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল ‘as from the appointed day, the province of Bengal as constituted under the government of India Act 1935, shall seized to exists’. ১৫ আগস্ট ছিল সেই নির্ধারিত দিন। সে অর্থে এই দিনটি ছিল অবিভক্ত বাংলার মৃত্যুদিন আর পশ্চিম বঙ্গের জন্মদিন! — বঙ্গ আমার জননী আমার’ — কোন বঙ্গ সেই গোলক ধাঁধায় স্বাধীনতার সত্তর বছর পরও বাঙালি মন ধ্বস্ত। সেদিনের পূর্ববঙ্গ, আজকের বাংলাদেশ আজ অপর! সে অর্থে ১৫ আগস্ট নয়, অবিভক্ত বাংলা ভাগ হয় ২০ জুন ১৯৪৭ সালে।

ব্রিটিশ সরকারের ৩ জুনের ঘোষণায় দেশভাগের সেই সঙ্গে বাংলা ভাগের কথা বলা হয়। ঠিক হয় বিধানসভার সদস্যরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ—এই দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে বাংলার ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। নির্দেশিকায় বলা হয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাগুলি চিহ্নিত হবে ১৯৪১ সালের জনগণনা অনুযায়ি। ১৯৪১ সালের জনগণনা অনুযায়ি অবিভক্ত বাংলার ১৬টি জেলাকে চিহ্নিত করা হয় মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা হিসেবে। এগুলি হল — রংপুর, দিনাজপুর, মালদা, বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, বাখরগঞ্জ, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ। বাংলার অবশিষ্ট অংশ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়।

বাংলা ভাগ সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসার জন্য বিধানসভার ঐতিহাসিক অধিবেশন বসে ২০ জুন, ১৯৪৭। ওই সভায় দলগত অবস্থান ছিল এরকম : মুসলিম লিগ-১১৪, কংগ্রেস–৮৬, ফজলুল হকের কৃষক প্রজাপার্টি-৩, নির্দল মুসলমান-৩, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান-৪, ভারতীয় খ্রিষ্টান-৩, নির্দল তপসিলি–২, কমিউনিস্ট পার্টি-৩, এবং ইউরোপীয়—২৩ জন। ইউরোপীয়দের ভোটাধিকার দেওয়া হয়নি। এই সংখ্যার সামান্য হেরফের নানা পরিসংখ্যানে দেখতে পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, তখনকার বিধানসভায় মুসলমান, তপসিলি হিন্দু ছাড়াও অন্যান্য কিছু সংরক্ষিত আসন ছিল। এগুলি হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র, শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র, মহিলা কেন্দ্র, শ্রমিক কেন্দ্র ইত্যাদি। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রতিনিধি ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের অমরকৃষ্ণ ঘোষ ও বিমলকুমার ঘোষ, ইন্ডিয়ান চেম্বারের দেবিপ্রসাদ খৈতান, এম এ এইচ ইস্পাহানি প্রমুখ। শ্রমিক কেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য সদস্য ছিলেন জ্যোতি বসু।

সেদিন বিধানসভায় একটি নয়, কার্যত তিনটি অধিবেশন বসেছিল। প্রথমটি অবিভক্ত বিধানসভার অধিবেশন। দ্বিতীয়টি হিন্দুপ্রধান অঞ্চলের প্রতিনিধিদের অধিবেশন এবং তৃতীয়টি মুসলমান প্রধান অঞ্চলের প্রতিনিধিদের অধিবেশন। সেদিনের তিনটি অধিবেশনের কোনটিতে কোন বক্তৃতা হয়নি! কেবল প্রস্তাবগুলি তোলা হয় ও প্রস্তাবের পক্ষে বিপক্ষে ভোট নেওয়া হয়।

বড়লাটের ৩ জুনের ঘোষণা অনুযায়ি যৌথ অধিবেশনের, অবিভক্ত বিধানসভার শুরুতেই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সমগ্র বাংলা ভারতের সংবিধান সভায় যোগ দেবে বলে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। কিন্তু ওই প্রস্তাব ১২৬-৯০ ভোটে বাতিল হয়ে যায়। এরপর হিন্দু সদস্যরা স্বতন্ত্র কক্ষে মিলিত হয়ে ৫৮-২১ ভোটে বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত নেন। হিন্দু সদস্যদের ভোটে এভাবেই পশ্চিমবঙ্গের জন্ম হল। এই নতুন প্রদেশ ভারতে যোগ দেওয়ার পক্ষে রায় দেওয়ায় মুসলিম সদস্যদের অপর কক্ষের মতামতের আর কোন যৌক্তিকতা থাকল না। একই দিনে মুসলমান সদস্যরা স্বতন্ত্র কক্ষে মিলিত হয়ে ১০৬-৩৫ ভোটে বাংলা ভাগের বিপক্ষে রায় দেন। তারা বলেন বাংলা ভাগ অনিবার্য হলে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের নতুন সংবিধান সভায় যোগ দেবে।

ভোট দেওয়ার সময় বিশিষ্ট বাঙালিরা কে কেমন ভূমিকা নিয়েছিলেন! হিন্দু কক্ষের সভাপতিত্ব করেছিলেন বর্ধমানের মহারাজা স্যার উদয়চাঁদ মহতাব। বিপক্ষের ২১ জন সদস্যের সকলেই ছিলেন মুসলিম লিগের সদস্য। হিন্দু সদস্যদের মধ্যে অকংগ্রেসি ছিলেন ৫ জন। এঁরা হলেন শ্যামাপ্রসাদ, উদয়চাঁদ মহতাব (নির্দল), মুকুন্দবিহারি মল্লিক (তপশিল নির্দল), রতন লাল ব্রাহ্মণ ও জ্যোতি বসু (কমিউনিস্ট)। মুসলমান সদস্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এইচ এস সুরাবর্দি (বাংলার প্রধানমন্ত্রী, তখন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে ওই নামেই ডাকা হত), লিগের সর্বভারতীয় নেতা ইস্পাহানি, বাংলা মুসলিম লিগের সম্পাদক আবুল হাসেম প্রমুখ। অন্যদিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কক্ষের সভাপতি ছিলেন নুরুল আমিন। এই সভায় হিন্দু সদস্যদের অন্যতম ছিলেন কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেতা কিরনশঙ্কর রায়, বীরেন্দ্রনাথ দত্ত (সহনেতা), নেলি সেনগুপ্ত, প্রমথ রঞ্জন ঠাকুর (তপশিলি নেতা), অকংগ্রেস সদস্যদের অন্যতম ছিলেন দ্বারকা নাথ বারুরি ও নগেন্দ্র নারায়ণ রায় (মন্ত্রী), মহারাজা গিরিশচন্দ্র নন্দী এবং একমাত্র কমিউনিস্ট সদস্য রূপনারায়ণ রায়। যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল কেন্দ্রের আইনমন্ত্রী থাকার কারণে ভোট দিতে পারেননি।

মাত্র সতের দিনের ব্যবধানে (৩-২০ জুন) বাঙালি জাতি দ্বিখণ্ডিত হল। ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসার’ করতে গিয়ে কাটা বাংলাকে মেনে নিতে হল ইতিহাসের বাস্তব বিড়ম্বনা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন