‘বেদাহমিতি’ কি? কেন এরকম শিরোনাম? অনেকেই জানেন। যারা জানেন না, তাঁদের সামান্য ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করবো। এর আগে কিছু প্রাককথনের প্রয়োজন রয়েছে। আর একটা কথা পাঠকের দৃষ্টিগোচরে আনতে চাই। এই ‘বেদাহমিতি’ কথাটার সাথে আজকের ১৯ জুন তারিখটার তাৎপর্য রয়েছে। পাঠকদের সেই বিষয়টাও অনুধাবন করতে অনুরোধ করবো।
ভূমিকা
গুরুর খোঁজে সুভাষ চন্দ্র বসুর উত্তর ভারতে ভ্রমণ প্রসঙ্গে ১০৯ বছর আগে বন্ধু হেমন্তকুমার সরকারকে লেখা তাঁর ২২শে মে ১৯১৪ তারিখের একটা গুরুত্বপূর্ণ চিঠি এই বছরের ২২শে মে তারিখে একটা লেখায় আলোচনা করা হয়েছিল।
সেই প্রবন্ধে আমরা জেনেছিলেম যে সুভাষচন্দ্র বসু ১৯১৪ সালের গরমের ছুটির সময় আরেক বন্ধু হরিপদ চট্টোপাধ্যায়কে সাথে নিয়ে ২২শে মে ১৯১৪ তারিখ রাতে বা তার পরপরই কোন একদিন উত্তর ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। সেসময়কার তাঁর প্রায় সমবয়সী ঘনিষ্ঠ বন্ধু শ্রীহেমন্তকুমার সরকার (জন্ম ১৭ই নভেম্বর ১৮৯৬) আগেই হরিদ্বার পৌঁছে গিয়েছিলেন।
আজকের প্রবন্ধে আমরা জানতে চেষ্টা করবো যে কবে তাঁরা উত্তর-ভারত পরিভ্রমণ শেষে বাড়ী ফিরে এসেছিলেন।
সুভাষচন্দ্র কবে কলকাতায় ফিরেছিলেন?
সুভাষচন্দ্র গুরুর সন্ধানে বিফল মনোরথ হয়ে ১৮ই জুন এলগিন রোডের বাড়ীতে ফিরেছিলেন। আমার এই তারিখটার সম্পর্কে নিশ্চিত হবার কারণের একটা ব্যাখ্যা দেওয়া আবশ্যক। সুভাষচন্দ্র বসু আজ থেকে ঠিক ১০৯ বছর আগে, ১৮ই জুন ১৯১৪, বৃহস্পতিবার, বিকেলে, পরদিন পোস্ট করবেন বলে নীচে ১৯ জুন তারিখ লিখে (সেবছর এই ১৯শে জুন ছিল শুক্রবার), প্রিয় বন্ধু হেমন্তকুমার সরকারকে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ চিঠি লিখেছিলেন। তিনি যে সকালে (রেলস্টেশন থেকে) ট্রামে চেপে ফিরে এসেছিলেন তা সেই চিঠি থেকে জানা যায়। আত্মজীবনীতে পরে তিনি লিখেছেন, “After an exciting experience I turned up one fine morning quite unexpectedly.” অর্থাৎ, এক উত্তেজনাকর অভিজ্ঞতার পর অপ্রত্যাশিতভাবে আমি এক সকালে এসে উপস্থিত হলাম (বাড়ী ফিরলাম)। ১৯শে জুনে পোস্ট করা চিঠিটা ১৮ই জুন, বৃহস্পতিবার বিকেলে, লেখা হয়েছিল। আর তখন বন্ধু হেমন্তকে সমস্ত কিছু না জানিয়ে থাকতে পারতেন না সুভাষচন্দ্র। প্রায় রোজই তাকে চিঠি লিখতেন। সেই চিঠির পুনশ্চতে (Post Script-এ) মাস্টারমশাই শ্রী বেণীমাধব দাশের কথা আছে। প্রথমে আমার মনে হয়েছিল যে তিনি ফিরে এসে নিজে মাস্টারমশাইর সাথে দেখা করার পর চিঠিটা লিখেছিলেন। কিন্তু পরে বোঝা গেল যে শ্রী বেণীমাধব দাশের কাছে খোঁজ নেওয়া হলে সুভাষ চন্দ্রের বাড়ীর লোকেদের মাস্টারমশাই সেসব কথা বলেছিলেন, তাই পুনশ্চতে লেখা হয়েছে। সেসময় অনেক চিঠিতেই আমরা দেখতে পাই যে আগের দিন লেখা হলেও চিঠিটার উপরে, যে তারিখে চিঠিটা পোস্ট করা হবে, সেই তারিখটা লিখতেন সুভাষচন্দ্র। খুব সম্ভব দুই বন্ধুর মধ্যে এরকম একটা বোঝাপড়া ছিল। এই চিঠিটার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
সেই বিখ্যাত চিঠি
১৯ জুনে পোস্ট করা সেই চিঠিটা অনেক বইতেই ছাপা হয়েছে। যেমন, শ্রীহেমন্তকুমার সরকারের লেখা “সুভাষের সঙ্গে বারো বছর (১৯১২ – ২৪)”, আনন্দ পাবলিশার্সের “শ্রী সুভাষচন্দ্র বসু সমগ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড”, “পত্রাবলী” – সুভাষচন্দ্র বসু, ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে বানান-ইত্যাদির দিক থেকে আমার “পত্রাবলী”-তে দেওয়া চিঠিটা বেশী প্রামাণিক মনে হয়েছে। এটা পত্রাবলীর ১৪নং পত্র। পত্রাবলীতে বন্ধু হেমন্তকুমার সরকারকে লেখা সুভাষচন্দ্র বসুর মোট একচল্লিশটি চিঠি আছে, ১৪ নং থেকে ৫৪ নং অবধি। এটা তার মধ্যে প্রথম অর্থাৎ ১৪নং চিঠি। এখানে উল্লেখনীয় যে হেমন্তকুমার সরকার তখন তাঁর নিজের শহরেই (কৃষ্ণনগর কলেজে) পড়তেন। আমি নীচে “পত্রাবলী” থেকে সেই চিঠির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উদ্ধৃত করছি। চিঠিটার পুরানো বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে: —
(উদ্ধৃতি শুরু)
“বৃহস্পতিবার, বৈকাল,
19-6-14
“ট্রাম হইতে নামিয়া বুকটান করিয়া বাড়ীতে ঢুকিলাম। …
“দুপুরে ফের বাবার সঙ্গে অনেক কথা হয়। নানা মত লইয়া – সন্ন্যাসী দর্শন সম্বন্ধে এবং ভ্রমণের সম্বন্ধে। বলিলাম কাহাকেও পছন্দ হইল না। তার সঙ্গে ২ আমার ideal-টা বলিলাম। সমস্ত discussion-এ what he wanted to drive at was- (১) সংসারে থেকে ধর্ম্ম হয় কিনা, (২) ত্যাগের জন্য preparation দরকার — (৩) কর্ত্তব্য ত্যাগটা কি ঠিক — আমি বলিলাম — (১) সকলের পক্ষে এক ঔষধ নয় কারণ সকলের এক রোগ, এক সামর্থ্য নয় — (২) সংস্কারের উপর ত্যাগটা অনেক নির্ভর করে — সকলের জন্য বেশী ঘসা মাজা প্রয়োজন না হইতে পারে। (৩) কর্ত্তব্যটা relative — higher call এলে lower calls ভেসে যায় — জ্ঞান এলে কর্ম্মনাশ হয়।
“জিজ্ঞাসা করিলেন — অদ্বৈতজ্ঞান “ব্রহ্ম সত্য জগম্মিথ্যা” একটি theory কিনা- বলিলাম যতক্ষণ মুখে বলছি ততক্ষণ theory কিন্তু realise করিলে সত্য এবং realise করা যায়। যাহারা একথা বলে গেছেন তাঁহারা realise করেছিলেন এবং বলে গেছেন আমরা realise করতে পারি। জিজ্ঞাসা করিলেন “কারা করেছিলেন এবং প্রমাণ কি?” বলিলাম- “ঋষিরা” প্রমাণ “বেদাহমিতি” এই বলিয়া শ্লোকটা quote করিলাম। তারপর বলিলেন “এক সময়ে কলিকাতায় মহর্ষি দেবেন্দ্র, কেশবচন্দ্র ও পরমহংসদেব ছিলেন — যে যে রকম পেরেছিলেন সেই রকম হয়েছিলেন।” আমি বলিলাম বিবেকানন্দের ideal হচ্ছে আমার ideal।
“ শেষে বলিলেন আচ্ছা যখন তোমার higher call আসিবে তখন আমারা দেখিব।
“বেশ ভাল আছি। তুমি কেমন আছ লিখিবে।
তোমার —
[পুনশ্চ: —] “বেণীবাবুর বিষয় সকলের ভাল ধারণা- এবং তাহাকে শ্রদ্ধা করেন। বেণীবাবু বেশী কিছু বলেন নাই – সন্ন্যাসীর কথা বলিয়াছেন এবং আমার কৃচ্ছ্রসাধনে তোমাকে মোটেই জড়িত করেন নাই। এখানে আবার মানুষটাকে জানা যায়।” (উদ্ধৃতি শেষ)
বেদাহমিতি
সুভাষচন্দ্র যে শ্লোকটার কথা উল্লেখ করেছেন সেটা খুব সম্ভব ঋকবেদের পুরুষসূক্ত-এর ১৬নং বা ২০নং শ্লোক বা মন্ত্র। দু’টোরই অর্থ প্রায় কাছাকাছি। আমরা জানি যে সুভাষচন্দ্র স্কুল এবং কলেজে (তখন তিনি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র; অর্থাৎ আই-এ দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন) সংস্কৃত পড়েছেন। সংস্কৃত তিনি জানেন। কিন্তু আমরা এও জানি যে বেদের ভাষা ‘বৈদিক ভাষা’, সংস্কৃত নয়। তাছাড়া বৈদিক ভাষার অনেক শব্দের সংস্কৃতে অর্থ অন্যরকম। যাইহোক আমাদের মনে রাখতে হবে সুভাষচন্দ্রের বয়স তখন ১৭ বছর ৫ মাস মাত্র। হয়ত এই শ্লোকটা তিনি স্কুলে থাকতেই জানতেন।
শ্লোক অন্বেষণ এবং এ ব্যাপারে সংশয়
সুভাষচন্দ্র বসু যেই শ্লোকটার কথা উল্লেখ করেছেন সেটা শুরুতে আমি সঠিক সনাক্ত করতে পেরেছি বলে নিশ্চিত হতে পারি নি। বেদের সুপরিচিত পুরুষ-সূক্তের কথা জানতাম। তাছাড়া কবি মোহিতলাল মজুমদারের ‘জয়তু নেতাজী’ প্রথম অধ্যায় এই পুরুষ-সূক্তের নামেই নামাঙ্কিত হয়েছিল। তাও জানা ছিল। আমি এই শ্লোকটা বেশ কয়েকমাস ধরে হন্যে হয়ে খুঁজেছি।
এরপর, Netaji Collected Works Volume I (ভারত সরকারের অর্থ-সাহায্যে Netaji Research Bureau দ্বারা প্রকাশিত) বইতে দেখলাম যে এই চিঠিটার ইংরেজি অনুবাদে লেখা রয়েছে, “I answered that the Rishis achieved it and then quoted the Sloka beginning with ‘Vedahamiti.’ ” তারপর থেকে আবার বেশ কিছুদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ‘বেদাহমিতি’ শব্দটা দিয়ে শুরু হওয়া কোন শ্লোকের সন্ধান পাই নি। এভাবে খুঁজতে খুঁজতে আকস্মিকভাবে হেমন্তকুমার সরকার লিখিত ‘সুভাষচন্দ্র’ বইটার [ডি. এম. লাইব্রেরী, নতুন সংস্করণ, ১৯৯১] পত্রাবলী অধ্যায়ে দেখলাম যে প্রথমেই এই চিঠিটা রয়েছে।
সেখানে চিঠিটা পড়তে গিয়ে দেখলাম যে হেমন্তকুমার সরকার এই চিঠিটার থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, “জিজ্ঞাসা করিলেন — ‘কা’রা করেছিলেন এবং প্রমাণ কি?’ বলিলাম – ‘ঋষিরা করেছিলেন, প্রমাণ — ‘বেদাহমেতাম্ পুরুষং মহান্তং’ ইত্যাদি।” বুঝলাম যে চিঠিটা অন্যান্য বইতে সম্পূর্ণ ছাপা হয় নি এবং এটাই সেই অংশের সম্পূর্ণ রূপ। এতদিনে নিশ্চিত হলাম যে শ্লোকটা সম্ভবত সঠিক শনাক্ত করা গেছে।
শ্লোকটা সম্বন্ধে আরও কিছু কথা
এই শ্লোক বা মন্ত্রটা যারা বেদের গান গেয়ে প্রত্যহ স্তব করেন, তাঁদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় এবং প্রচলিত। পুরুষসূক্ত ঋকবেদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই শ্লোক বা মন্ত্রটি পুরুষসূক্তে সামান্য পরিবর্তিত রূপে দু’জায়গায় আছে। প্রথমটার বাংলা অনুবাদ: “আমি জানি মহান পুরুষকে, যিনি দীপ্যমান-ভাস্বর, সূর্যের মতো এবং অন্ধকারের আওতার বাইরে। কেবল তাঁকে জানার মাধ্যমেই মানুষ মৃত্যুঞ্জয়ী হতে পারে; সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছানোর আর কোনও বিকল্প নেই।”
অন্য শ্লোকটার বাংলা অনুবাদ নিম্নরূপ: “আমি সেই মহান পুরুষকে (পরম সত্তাকে) জানি যিনি সূর্যের মতো উজ্জ্বল এবং যিনি সমস্ত অন্ধকারের প্রভাবের বাইরে। যিনি তাঁকে এভাবে চেনেন তিনি এখানে অবিনশ্বর হয়ে বিরাজমান হন।”
বিশেষ দ্রষ্টব্য
এই লেখাটা ২০২০ সালের ১৯শে জুন তারিখে কিছুটা সংক্ষিপ্ত আকারে প্রথম লিখেছিলাম। সে লেখায় বেশ কিছু ভুল ছিল। তাই আজ আবার বিস্তারিতভাবে লিখলাম।
ENGLISH VERSION
VEDAHMITI AND SUBHAS CHANDRA BOSE
Utpal Aich, June 19, 2023
What is ‘Vedahamiti’? Why such a title? Many people know. Those who don’t, I request them to have a little patience. Before exploring this further, some introduction is however necessary. I want to bring one more thing to the attention of the readers. Today’s date of 19th June has some significance to this word ‘Vedahamiti’. I would request the readers to try to appreciate that too.
INTRODUCTION
An important letter dated May 22, 1914, written by Subhas Chandra Bose to his the then closest friend – Hemantakumar Sarkar — exactly 109 years ago, concerning their journey to North India, in search of a Guru, was discussed in a write-up on May 22nd, this year.
In that article we had learnt that Subhas Chandra Bose left for North India during the summer vacation of 1914 along with another friend — Haripada Chattopadhyay — on the night of 22nd May 1914 or soon thereafter. Sri Hemantakumar Sarkar (born 17 November 1896), then his closest friend of almost the same age, had already reached Hardwar ahead of them.
In the present article, we will also try to find out when they returned home from North India.
WHEN DID SUBHAS CHANDRA BOSE RETURN TO CALCUTTA?
Subhas Chandra returned to his Elgin Road home on June 18, 1914, after their unsuccessful search for a Guru. An explanation as to why I am so certain of this date of return is probably essential. Exactly 109 years ago, on the day of 18th June (in 1914), Subhas Chandra Bose wrote another important letter to his dear friend Hemantakumar Sarkar. He datelined it as ‘Thursday Afternoon’ but also inserted the date of 19th June below that (19th June that year was a Friday) indicating that the letter would be posted the very next day, i.e. Friday, morning. (This was probably because the last clearance of the post box on Thursday, 18th June, had already taken place.) The letter starts with the statement that he came back by tram that morning (from the railway station). Later in his autobiography, he wrote, “After an exciting experience I turned up one fine morning quite unexpectedly.” I reiterate that the letter posted on June 19 was written on June 18, Thursday, afternoon. At that time, he used to convey almost every important thing to his friend Hemanta. He wrote to him almost every day. In the postscript of that letter, there are a few words regarding Mastermoshai — Sri Benimadhav Das. At first I thought that Subhas Chandra had written the letter after he had met and returned from Mastermoshai’s place. But later I realized that when Sri Benimadhav Das was inquired about by Subhas Chandra’s family members, he had conveyed those what have been written in the Post Script of this letter. In many letters at that time, we see that even though they were written the previous day, Subhas Chandra used to write on top the date on which the letter would be posted. It is possible that there was such an understanding between the two friends. The same happened with this letter too.
THE FAMOUS LETTER
That letter superscribed June 19, written in Bengali, has been published in many books. For example, “Subhaser Sange Baro Bachhor” or ‘Twelve years with Subhas (1912 – 24)’ written by Sri Hemantakumar Sarkar, “Sri Subhas Chandra Bose Samagra Rachnavali, First Volume” by Ananda Publishers, “Patravali” by Subhas Chandra Bose, etc. Among these, the letter given in ‘Patravali’ (compendium of letters) appeared to me more authentic in terms of spelling, etc. It is letter No. 14 of that book. There are a total of forty-one letters written by Subhas Chandra to Hemanta Sarkar which have been included in that book — Serial No. 14 to No. 54. This one is the very first of those, i.e. letter No. 14. I am quoting below approximately one-third of that letter from “Patravali”. The old Bengali spelling has been kept unchanged in the Bengali Edition. The English translation of the letter has been attempted by me:-
(QUOTE BEGINS)
“Thursday, Afternoon,
19-6-14
“I got off the tram and entered the house with my chest pulled up. …
“In the afternoon, I again had a long chat with my father. Concerning different views — about monastic philosophy, and travelogue. I informed him that I could not find anyone suitable of my choice. I also told him about my ideal. In all the discussion what he wanted to drive at was — (1) whether Dharma could be pursued while leading one’s family or worldly life, (2) preparation was required for renunciation- (3) is it correct to renounce one’s duty? I replied, — (1) there was no single uniform medicine for all the individuals because each person’s ailment and ability were not the same; (2) renunciation depended a lot on one’s ‘Sanskar’ (upbringing, perception, etc.) — not all might require a lot of reformation & scrubbing; (3) duty was relative — when higher calls come, lower calls are washed away — when knowledge comes, karma is destroyed.
“He asked: whether the Advaitajnana that‘Brahma Satya Jagamithya’ was a theory. I said that as long as we say it orally, it was a theory; but if realised, it is true and it could be realised. Those who had pronounced this had realised it. And they had said that we too could realise it. He asked, “who did (realise) it and what is the evidence?” I said — “Sages”, the evidence was “Vedahmiti” and I quoted (recited) the Sloka. He then said, “Once upon a time there were Maharshi Devendra (Nath Tagore), Keshavchandra (Sen) and Paramahansadev (Ramakrishna) in Calcutta — each one of whom became what they could.” I said, Vivekananda’s ideal was my ideal.
“Finally, he said: ‘Well, we will see when your higher call comes.’
“I am quite well. Let me know how you are.
yours —
“Everyone has a good notion about Benibabu [Mastermoshai Beni Madhav Das] and everyone respects him. Benibabu didn’t say much — he talked about the Sannyasi and he didn’t involve you at all in my austerities. Here again the greatness of the gentleman is revealed.”
(QUOTE ENDS)
VEDAHAMITI
The Sloka quoted by Subhas Chandra is very likely the 16th or the 20th Sloka or Mantra of the Purushukta of the Rigveda. The meanings of both of these Slokas are similar. We know that Subhas Chandra studied Sanskrit in school and college (he was then a second year student; i.e. second year in IA student). He knew Sanskrit. But we also know that the language of the Vedas is ‘Vedic language’, not exactly Sanskrit. Moreover, many Vedic words have different meanings in Sanskrit. However, we have to remember that Subhas Chandra was merely 17 years and 5 months old at that time. Maybe he knew this Sloka since his school days.
HUNTING FOR THE SLOKA AND UNCERTAINTY
At first I was not sure that I could correctly identify the Sanskrit Sloka that Subhas Chandra Bose had referred to in this letter. I knew a little about the well-known Purusha-Sukta of the Vedas. Moreover, that the first chapter of poet Mohitlal Majumdar’s book ‘Jayatu Netaji’ was named after this ‘Purus-Sukta’was also known to me. I had been searching for this verse for several months.
Then, in the book ‘Netaji Collected Works Volume I’ (published by the Netaji Research Bureau with the help of the Government of India), I saw that the English translation of this letter read: “I answered that the Rishis achieved it and then quoted the Sloka beginning with ‘Vedahamiti.’” After searching for a long time, I could not find out any Sloka beginning with the word ‘Vedahamiti’. Then, fortunately, I could procure the book ‘Subhaschandra’ written by Hemantakumar Sarkar [D. M. Library, New Edition, 1991] and therein I found the existence of this letter.
While reading the letter there, I noticed that Hemantakumar Sarkar had quoted from this letter and wrote, “He asked – ‘Who did it and what is the proof?’ I said – ‘Sages did it, proof – ‘Vedahametam Purushang Mahantang’ etc.” It dawned on me that the letter had not been published in full in the other books and this was the complete form of that part of the letter. By now I am convinced that the Sloka has probably been identified correctly.
A LITTLE MORE ABOUT THE SLOKA
This Sloka or Mantra is very well admired and popular among those who chant the Vedic hymns on a daily basis. ‘Purusha Shuktam’ is an important part of the Rigveda. ‘Purusha Shuktam’ also figures in other Vedic texts as well. This Sloka or Mantra occurs in two places in the Rig Veda in a slightly modified form in the ‘Purusa Shuktam’. English translation of the first Sloka is: “I know the Great Being, Who is radiant, like the sun and beyond the reach of darkness. Only by knowing Him can man become immortal; there is no other option to achieve the highest goal.”
The other Sloka might be translated as: “I know the Great Purusha (Supreme Being) Who is as bright as the sun and Who is beyond the influence of all darkness. He who knows Him and thus resides here as imperishable.”
SPECIAL NOTE
This article was first written in a slightly shorter form on 19th June 2020. Several mistakes had crept in in that write-up. So I decided to rewrite it today in more details.
An excellent piece of excerpt from a hitherto unknown facet of Indian history. This article shows the dedication and commitment of the writer in producing a painstakingly, well-researched work from the Times of Netaji. Marvellous!!!