শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:২৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ : তপন মল্লিক চৌধুরী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (পঞ্চম পর্ব) : জমিল সৈয়দ যশোধরা — এক উপেক্ষিতা নারীর বিবর্তন আখ্যান : সসীমকুমার বাড়ৈ কলকাতার কাঁচাভেড়া-খেকো ফকির ও গড়ের মাঠ : অসিত দাস ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ রামনবমী পালন এবং হুগলী চুঁচুড়ার শ্রীরামমন্দির : রিঙ্কি সামন্ত ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (তৃতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ মিয়ানমারে ভূমিকম্প — প্রতিবেশী দেশের জনগণের পাশে বাংলাদেশ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ট্রেড এন্ড কমার্সিয়াল অর্গানিজেশন ইন বেঙ্গল : সুশীল চৌধুরী (৭১ নং কিস্তি), অনুবাদ : বিশ্বেন্দু নন্দ

বিশ্বেন্দু নন্দ / ৮৩৯ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩

ট্রেড এন্ড কমার্সিয়াল অর্গানিজেশন ইন বেঙ্গল ১৬৫০-১৭২০, উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু দ্য ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি

অষ্টম অধ্যায়

একটি জীবনবৃত্তান্ত (রিজিউমে)

বাংলায় শাসন করতে আসা সুবাদারদের ভাগ্য ফেরানোর কাহিনী থেকে আমরা আন্দাজ করতে পারি যে কী ধরণের লুঠ চলেছে এই অঞ্চলে। বাঙলার প্রত্যেকজন নবাব বাংলা থেকে বিপুল পরিমান অর্থ লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। স্যর জে এন সরকার জানিয়েছেন, শায়েস্তা খান দশ বছরে ৯ কোটি টাকা, খান জাহান বাহাদুর খান এক বছরে দু-কোটি টাকা, আজিমুশ্বান ৯ বছরে ৮ কোটি টাকা বাংলা থেকে লুটে নিয়ে গিয়েছেন তাদের শাসনামলে (জে এন সরকার, প্রাগুক্ত, খণ্ড ২, ৪১৩)। এর থেকে বোঝা যায় বাংলা থেকে কি পরিমান লুঠ হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলও বাংলা থেকে বিপুল পরিমান অর্থ লুঠ করেছে। ফলে বাংলা থেকে বিপুল রপ্তানি এবং বাংলায় বিপুল পরিমান রূপো আসা সত্ত্বেও সাধারণ দামস্তরে তার কোনও প্রভাব পড়ে নি এবং খাদ্যপণ্যের দামও খুব একটা বাড়ে নি এবং অন্য উপকূল এলাকার থেকেও দাম অনেক কম ছিল। কিন্তু খাদ্যের দাম কম থাকলেও একদিকে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে পণ্য কেনার তীব্র প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও সাধারণ কারিগর বা তাঁতির জাগতিক অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন ঘটে নি এবং এই বিষয় নিয়ে আমরা কয়েক স্তবক আগেই আলোচনা করেছি। ইওরোপিয় কোম্পানি যে পরিমান রূপো আনত তা যথাসম্ভব তৃণমূলস্তরের কারিগরদের হাতে পৌঁছত না, উদ্বৃত্ত যেটি তৈরি হত তা মূলত সীমাবদ্ধ থাকত ওপরতলার এক শ্রেণীর মানুষ, দালাল-মধ্যশ্রেণী-ব্যবসায়ীদের কাছে।

শেষ অবদি বলা যায়, বাংলায় যে কৃষি নির্ভর অর্থনীতি ছিল, তার বিপুল বাণিজ্যিকরণ ঘটেছিল। কিছু কৃষিপণ্যের ইওরোপিয় চাহিদা এবং বিদেশি কোম্পানিগুলির দ্বারা সেগুলি সংগ্রহ করার উদ্যমে কৃষির বাজারী করণ এবং বাণিজ্যিকরণ উভয়ই বিপুলভাবে বৃদ্ধি পায়। তিনটি মূল রপ্তানিপণ্য, সুতি, রেশম এবং সোরার উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটে মূলত ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির চাহিদার কারণেই। এখন এই পণ্যগুলির চাহিদা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে এটা আমরা আন্দাজ করতেই পারি, যদিও সংখ্যা দিয়ে এটির পরিমান বিচার করা যাবে না, ইওরোপিয় বাণিজ্য বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীকরণের উদ্যম সৃষ্টি হয় এবং দক্ষ নজরদারিতে বাণিজ্যিক শস্যের চাষের এলাকার এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে রপ্তানির পরিমান বাড়ে সে পদ্ধতি পরের সময়ে আরও বেশি করে উজ্জ্বল হয়ে প্রতিভাত হবে। তবুও বলব, ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির ব্যবসা বৃদ্ধির যে প্রভাব বাংলার অর্থনীতিতে পড়েছিল, তাকে উন্নয়ণের প্রবণতা বলা ঠিক হবে না, বরং এটি বাঙলার পরম্পরার প্রান্তিক এলাকায় একটুখানি আঁচড় কাটতে পেরেছিল মাত্র।

সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাঙলার খাদ্যদ্রব্যের বাজার দর — মুরল্যান্ডের তত্ত্ব খণ্ডন

মুরল্যান্ডের তত্ত্ব (ডবলিউ এইচ মুরল্যান্ড, ফ্রম আকবর টু আওরঙ্গজেব, ১৭৮-৮২) সপ্তদশ শতকের হুগলীর বাজার দর ভারতীয় উপকূল এবং অন্যান্য এলাকার বাজার দরের সঙ্গে তুলনীয়, সেটি খণ্ডনের সময় এসেছে ডাচ এবং ব্রিটিশ মহাফেজখানাগুলিতে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিপুল নথিপত্র থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল তথ্যভাণ্ডারের আলোকে। এই যে বিশাল তথ্যভাণ্ডার আমাদের হাতে আছে, সেখান থেকে নিঃসন্দেহে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, সে সময়ের বাঙলার খাদ্যদ্রব্যের বাজার দর বেশ কম ছিল — এবং ভারতীয় অন্যান্য উপকূল এলাকার তুলনায় তো যথেষ্টই কম ছিল।

মুরল্যান্ডের বক্তব্য ছিল ১৬৫০ অবদি বাঙলার বাজার দর অন্যান্য উপকূল এলাকার তুলনায় অচিন্ত্যনীয়ভাবে কম ছিল। এই অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের কারণ তিনি বর্ননা করতে গিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, এর আগের সময়ে অন্যান্য উপকূল অঞ্চলে যত পরিমান রূপো আসত, তখন বাংলায় রূপোর আমদানি প্রায় হতই না বলা চলে, তাই রূপোর কম দামের সঙ্গে বাজার দরও কম ছিল। তার পরেই, সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইওরোপিয়রা বাংলায় ব্যবসা করতে এসে বাঙলার ব্যবসার ক্ষেত্র বাড়ালে বাঙলার বাজার দর অন্যান্য এলাকার বাজার দর অনুযায়ী উন্নীত হয়।

এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কারণ হল ১৬৫০ সালে বাঙলার জনৈক কুঠিয়ালের মন্তব্য। তিনি লিখেছিলেন, বাঙলার পণ্য ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় অর্ধেকের কম দামে মেলে। কিন্তু এই ব্যক্তিই আবার ১৬৫৮তে লেখেন খাদ্যদ্রব্যের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। কুঠিয়ালের অভিযোগ মেনে নিয়ে মুরল্যাণ্ড লিখলেন, এই সময়ে ইওরোপিয়রা বিপুল পরিমানে দামি ধাতু বাংলায় এনে ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি ঘটাচ্ছিল; তার মতে এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে বাজার দর বৃদ্ধিতে। বাংলায় কেন রূপোর অপ্রাপ্যতা ছিল, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলছেন, এর আগের সময় বাঙলার রাজস্ব রূপোয় নেওয়া হত, এবং এই রূপো দিল্লির মুঘল দরবারে সিক্কা রূপি হিসেবে রাজস্ব মেটাতে প্রায় সবই চলে যেত। তাই এই সময়ে বাঙলার বাণিজ্য দরুণ যে পরিমান রূপো বাংলায় আসত এবং থাকত তার পরিমান বাঙলার বাজার দরকে বাড়াবার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র যথেষ্ট ছিল না কারণ রূপো বাংলায় স্বাভাবিকভাবে খুবই দামি ছিল, অন্যভাষায় বাজার দর খুবই শস্তা ছিল।

ইওরোপিয় রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ার জন্যে হঠাতই বাংলায় বিপুল পরিমান রূপো প্রবেশ করতে থাকে, এবং এটির পরিমান এতই বেশি ছিল যে, এই ধাতু বাংলায় বিপুল মুদ্রা অবস্থায় পরিবর্তন ঘটায়। তিনি বলছেন এই যে বিপুল রূপোর কম বাজারদরওয়ালা বাংলায় প্রবেশ ঘটল, ঠিক তার জন্যে এতদিন যে রূপোর অপ্রাপ্যতার জন্যে যে বাজার দর মুখ লুকিয়েছিল, সেটি হঠাৎ উচ্ছল হয়ে বাংলার বাজার দরকে উপকূলীয় বাজার দরের সমান করে দিল। এই উপপাদ্যকে প্রমান করার জন্যে লিখছেন এই সময়ের (অর্থাৎ ১৬৫০-এর আগে) বাংলা দশটি দেশে চাল পাঠাত, যারা এই পরিমান করমণ্ডল থেকে আনিয়ে নিতে পারত (কিন্তু তারা শস্তার দেশ বাংলা থেকে আনায় — অনুবাদক)।

কিন্তু আমাদের হাতে যথেষ্ট প্রমান আছে, যা দিয়ে আমরা প্রমান করিয়ে দেখাতে পারি, বাংলার খাদ্যদ্রব্যের বাজার দর কোনও দিনই সর্বভারতীয় উপকূল এলাকার বাজার দরের সঙ্গে এক হয় নি। মূরল্যান্ডের তত্ত্বটি দাঁড়িয়ে আছে মাত্র একজন কুঠিয়ালের লেখা মন্তব্যের ভিত্তিতে, আমাদের হাতে আছে ভারতের বিভিন্ন এলাকার বাজার দরের সমীক্ষা, যা দিয়ে নির্ভুলভাবে প্রমান করা যায় বিভিন্ন উপকূল এলাকার বাজার দরের তুলনায় বাংলার বাজার দর যথেষ্ট কম ছিল। ১৬৯৮তে বম্বের কুঠিয়াল লিখছেন, বাংলার শ্রমের মূল্য খুবই কম, তার কারণ আমাদের সঙ্গে বাংলায় খাদ্যদ্রব্যের বাজার দরের বিপুল পার্থক্য (ওসি, ২২ মে, ১৬৯৮, ৬৫৬৬ সংখ্যা, ৫৪)। ১৭০২-তে কোর্ট অব ডিরেক্টর লিখছে, বাংলার সঙ্গে মাদ্রাজের বিনিয়োগের পার্থক্যের অন্যতম প্রধান কারন হল, পণ্যগুলির বাজার দরের পার্থক্য (ডিবি, ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৭০৯, ৯৬ খণ্ড, ৪৩৪)। ১৭১১তে সেই একই কর্তারা লিখলেন, ফোর্ট (মাদ্রাজ)-এর তুলনায় বে(বাংলা) অঞ্চলের পণ্যের বাজার দর অনেক কম। বে-তে যেটা একটাকা ফোর্টে সেটা এক প্যাগোডা (১ প্যাগোডা সমান ৩.৫টাকা মোটামুটি, সূত্র ডিবি, ২৮ ডিসে, ১৭১১, ৯৭ খণ্ড, ৪৬১)। (চলবে)


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন