শনিবার | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৫৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সাব-অল্টার্ন তত্ত্বের সাম্প্রতিক প্রবণতা : এস. এম. তানভীর আহমদ

এস. এম. তানভীর আহমদ / ৬১৪ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

গবেষণা সবময়ই অত্যন্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ কাজ। যে কাজটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ‘শতবর্ষে রণজিৎ গুহ ও সাব-অল্টার্ন তত্ত্ব’ শীর্ষক গবেষণায় তুলে ধরেছেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, কবি।‘জীবনানন্দ দাশ ও বুদ্ধদেব বসুর কাব্যচিন্তা’ শীর্ষক থিসিসের জন্য এমফিল এবং ‘তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে নিম্নবর্গের মানুষ’ রচনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনার পর এখন ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান এবং দেশের অন্যতম লেখক। তিনি বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এবং ‘শ্যালোম ফাউন্ডেশন’ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের চেয়ারম্যান ও বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য।

ড. মিল্টন বিশ্বাস তাঁর গবেষণার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেন যে, তাঁর গবেষণার মৌলিক উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষায় নিম্নবর্গীয় চৈতন্যের চিন্তাধারাগুলোকে একত্র করে তা পাঠকের নিকট তুলে ধরা। কারণ বাংলা ভাষায় এই তত্ত্বের সামগ্রিক তাত্ত্বিক দিকগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। অতপর ১৯৮২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত গষেণামূলক গ্রন্থ, প্রবন্ধ ও নিবন্ধসমূহের সাহিত্যিক নিরীক্ষণ করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি এ কথাও উল্লেখ করেন যে, সাব-অল্টার্ন গোষ্ঠীর চিন্তাধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সাহিত্যকেও তিনি তাঁর গবেষণার সাথে সংযুক্ত করেছেন।

গবেষণার তাত্ত্বিক কাঠামো তৈরি করার জন্য আন্তঃবিষয়মূলক গবেষণা পদ্ধতিকে তিনি গ্রহণ করেছেন। কারণ নিম্নবর্গীয় চৈতন্যের গবেষণার দিকে দেখলে অনুধাবন করা যায় যে, তারা জ্ঞানকাণ্ডের নানা শাখার সমন্বয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাঁদের গবেষণা কর্মকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এর ফলে সেখানে ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন-সহ নানা বিষয়ের চিন্তাধারার প্রবাহ লক্ষ করা যায়। এ প্রসঙ্গে গবেষক রণজিৎ গুহের উদাহরণকে সামনে তুলে ধরেছেন। ‘শতবর্ষে রণজিৎ গুহ ও সাব-অল্টার্ন তত্ত্ব’ গ্রন্থের গুরুত্ববহ দিক হলো জন্মশতবর্ষে রণজিৎ গুহর জীবন ও কর্মের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। এই শিরোনামে কোনো গ্রন্থ বাংলা ভাষায় এটিই প্রথম।

এক্ষেত্রে গবেষণার উৎস হিসেবে গবেষক প্রকাশিত ও অ-প্রকাশিত উভয় ধরনের উৎসকেই ব্যবহার করেছেন। গবেষক একদিকে যেমন তার লেখায় সাব-অল্টার্ন লেখকদের প্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে শুরু করে গবেষণামূলক গ্রন্থ ব্যবহার করেছেন; অন্যদিকে, অপ্রকাশিত লেখাসমূহ, সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করেছেন। পুরো গবেষণাকে গবেষক অধ্যাপক বিশ্বাস মোট ১১টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করে আলোচনা করেছেন।

প্রথম অধ্যায়ে তিনি গবেষণার একটি সামগ্রিক দিক তুলে ধরেছেন। যার মধ্য দিয়ে তিনি গবেষণার একটি কাঠামো দাঁড় করান। সেখানে তিনি তাঁর গবেষণার উদ্দেশ্য, সাহিত্যিক পর্যালোচনা, গবেষণার কালপর্ব, গবেষণা পদ্ধতি, উৎস ও অধ্যায়সমূহের সাযুজ্য ও সমন্বয় করে একটি সামগ্রিক দিক উপস্থাপন করেছেন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে তিনি রণজিৎ গুহের জীবন, কর্ম ও দর্শন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবতারণা করেছেন।

তৃতীয় অধ্যায়ে সাব-অল্টার্ন বা নিম্নবর্গীয় ধারণার সংজ্ঞায়ন করতে গিয়ে এর উৎসকে অনুসন্ধান করতে চেয়েছেন। চতুর্থ অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন-গ্রামশির দৃষ্টিতে নিম্নবর্গ ও নিম্নবর্গ চিহ্নিতকরণ সূত্র। যার আলোকে তিনি ইতালীয় দার্শনিক আন্তোনিও গ্রামশির দৃষ্টিতে উক্ত শ্রেণিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। পঞ্চম অধ্যায়ে নিম্নবর্গীয় ইতিহাস চর্চার পটভূমি ও এই তত্ত্বকে নিয়ে গড়ে ওঠা নানা ধরনের তর্ক-বিতর্ককে সামনে নিয়ে এসেছেন। ষষ্ঠ অধ্যায়ে নিম্নবর্গীয় চৈতন্য কীভাবে সমাজ-রাষ্ট্র-পরিবেশ ও প্রতিবেশ প্রভাবিত করেছে সে সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। সপ্তম অধ্যায়ে নিম্নবর্গীয় চৈতন্যে ধর্ম বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অষ্টম অধ্যায়ে জাতি-ভেদের নিরিখে নিম্নবর্গীয় চৈতন্যকে ব্যাখ্যা করেছেন। এই অধ্যায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ আমরা যদি সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো যে, এই সমাজ কাঠামোর মধ্যে নানা ধরনের শ্রেণিবিন্যাস ছিলো। ফলে সমাজের প্রান্তে বসবাসরত মানুষের অনুভূতি পণ্ডিতদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়নি; বরং এখানকার সাহিত্য সমাজের উচ্চ শ্রেণির কথাই অধিক ফুটে উঠেছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এই অধ্যায় পাঠককে সমাজের সামনে একটি নির্মোহ চিত্র লেখক তুলে ধরেছেন। নবম অধ্যায়ে সাব-অল্টার্ন তত্ত্বের সাম্প্রতিক প্রবণতাকে সামনে তুলে ধরেছেন তিনি। যদিও এটি ভারতবর্ষীয় সমাজকে বুঝতে বিশেষ অবদান রেখেছিলো। কালের বিবর্তনে তা সমগ্র বিশ্বের জ্ঞানকাণ্ডে এক অনবদ্য সংযোজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। দশম ও একাদশ অধ্যায়ে তত্ত্বের প্রায়োগিক দিক উপস্থাপিত। উপসংহারে গবেষক পুরো গবেষণার একটি সামগ্রিক দিক তুলে ধরেছেন।

পরিশেষে বলা যেতে পারে, অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের লেখা গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘শতবর্ষে রণজিৎ গুহ ও সাব-অল্টার্ন তত্ত্ব’ বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে এক নতুন সংযোজন। কারণ এর ফলে গবেষক থেকে শুরু করে সাধারণ পাঠক সকলেই সদর্থক অনুভূতি পাবেন। আমি মনে করি যে, এই গ্রন্থ উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে একটি রেফারেন্স বই হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে; লেখাবাহুল্য, বাংলা ভাষায় জ্ঞানকাণ্ডের ক্ষেত্রে একটি নতুন পালক যুক্ত হয়েছে।

শতবর্ষে রণজিৎ গুহ ও সাব-অল্টার্ন তত্ত্ব, লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস, প্রকাশক : কলাবতী মুদ্রা, কলকাতা, জানুয়ারি, ২০২৩, মূল্য : ৬৫০ টাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন