রবিবার | ৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:১০
Logo
এই মুহূর্তে ::
তরল সোনা খ্যাত আগর-আতর অগুরু : রিঙ্কি সামন্ত নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সাদা-কালো রীল’ গঙ্গার জন্য লড়াই, স্বার্থান্বেষীদের ক্রোধের শিকার সাধুরা : দিলীপ মজুমদার সিন্ধুসভ্যতার প্রধান মহার্ঘ রপ্তানিদ্রব্য কস্তুরী : অসিত দাস রাখাইন পরিস্থিতি রোহিঙ্গা সংকট ও মানবিক করিডোর : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন রামকৃষ্ণ মিশন মানে ধর্মকর্ম নয়, কর্মই যাঁদের ধর্ম তাঁরাই যোগ্য : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে সিংহবাহিনী মন্দির, নবগ্রাম (ঘাটাল) : কমল ব্যানার্জী পরিবেশ মেলা ২০২৫ : ড. দীপাঞ্জন দে মন্দির-রাজনীতি মন্দির-অর্থনীতি : দিলীপ মজুমদার স্বাধীনতা-সংগ্রামী মোহনকালী বিশ্বাস স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে অক্ষয়তৃতীয়া, নাকি দিদিতৃতীয়া : অসিত দাস আরএসএস-বিজেপি, ধর্মের তাস ও মমতার তৃণমূল : দিলীপ মজুমদার সাবিত্রি রায় — ভুলে যাওয়া তারার খোঁজে… : স্বর্ণাভা কাঁড়ার ছ’দশক পর সিন্ধু চুক্তি স্থগিত বা সাময়িক অকার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন : তপন মল্লিক চৌধুরী বিস্মৃতপ্রায় বঙ্গের এক গণিতবিদ : রিঙ্কি সামন্ত অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলা : জগদীশ নায়ারণ সরকার (১ম কিস্তি) অনুবাদ বিশ্বেন্দু নন্দ

বিশ্বেন্দু নন্দ / ৪০৬ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২

শুরু হল জগদীশ নারায়ণ সরকারের দ্য লাইফ অব মীর জুমলা (The life of Mir Jumla) বই-এর ধারাবাহিক। অনুবাদ করেছেন বিশ্বেন্দু নন্দ

মীর জুমলার জীবন ও কৃতি নানান নথিপত্র প্রমান, ছবি আর মানচিত্র সহযোগে এর আগে কোনও গবেষক এত গভীরে গিয়ে অধ্যয়ন করেন নি এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারি। আমার ক্ষুদ্র উৎসাহে নিচে উল্লিখিত সূত্র সমূহ অবলম্বনে সাত বছরের নিরবিচ্ছিন্ন এবং ধৈর্যশীল চেষ্টায় মীর জুমলার জীবনী অধ্যয়ন করতে পেরেছি

ক) প্রকাশিত, অপ্রকাশিত, সেই সময়ের সময়ের ফারসি নথিপত্র

খ) ফার্সি ভাষায় সে সময়ের লিখিত চিঠিপত্র

গ) অহোম বুরুঞ্জিসমূহ

ঘ) ইওরোপিয় — মূলত ব্রিটিশ এবং ডাচ তথ্যাবলী

ঙ) সমসাময়িক ইওরোপিয় লেখক ও মুসাফিরদের কাজ

চ) তামিল তেলুগু এবং সংস্কৃত তথ্যভাণ্ডার

ছ) প্রত্নতাত্ত্বিক, লেখমালা এবং মুদ্রা সূত্র

বইটা মূল আটটি অধ্যায়ে, আর প্রতিটি অধ্যায়ের বেশ কয়েকটা অধিঅধ্যায়ে ভাগ করেছি। প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করেছি মীর জুমলার (Mir Jumla) প্রথম জীবন। নির্ভর করেছি মূলত নিজামুদ্দিন আহমদের (Nizamuddin Ahmed) হাদিকা-তুল-সালাতিন (Hadiqat-us-Salateen A History of the Reign of Abdullah Qutb Shah), তাবরেজির গোলকুণ্ডা লেটার্স, সে সময়ের অন্যান্য ফার্সি সাহিত্য এবং ইওরোপিয়দের কুঠির নথিপত্রের বয়ানের ওপর। তার সঙ্গে ব্যবহার করেছি নমস্য স্যর জে এন সরকারের ভাণ্ডারের বিদেশি মুসাফিরদের সাহিত্যনির্ভর তথ্য। অধ্যায়টি পুরোপুরি মৌলিক রচনা — মীর জুমলার জন্মসময়, পূর্বজদের বিষয়ে তথ্য এবং পারস্য ত্যাগ করে ভারতে এসে গোলকুণ্ডায় ক্ষমতা বৃত্তে আরোহন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁর প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে যে সব তথ্য ব্যবহার করেছি, সেগুলো এর আগে ইতিহাস রচনায় ব্যবহার করা হয় নি। একই সঙ্গে আমি সামগ্রিকভাবে তথ্যগুলো থেকে আহৃত অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে বইতে মীর জুমলার চরিত্র বিশ্লেষণ করেছি।

দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমি কর্ণাটকে মীর জুমলার কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করেছি। এটি বেশ কয়েকটা অধিঅধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। অধ্যায়গুলোর অধিকাংশ তথ্য মৌলিক। বিজাপুর রাজ্যের পশ্চিম কর্ণাটক দখলের কালক্রম এর আগে ঐতিহাসিকদের লেখাপত্রে আলোচনা করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু মীর জুমলার নেতৃত্বে গোলকুণ্ডার সেনাবাহিনীর পূর্বকর্ণাটক দখলের বিশদ আলোচনা হয় নি, সে তথ্য আমি বিভিন্ন সূত্র ধরে লিখেছি। কর্ণেল ম্যাকেঞ্জির লেখা প্রকাশিত হয়েছিল বাংলার এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকা JASBতে ১৮৪৪-এ। এই প্রবন্ধের সূত্রগুলি এখন আর ব্যবহার করা হয় না। স্যর জে এন সরকারের হিস্টোরি অব আওরঙ্গজেবএ কর্ণাটক পর্ব সংক্ষিপ্তভাবে উল্লিখিত হয়েছে। ড এস কে আয়েঙ্গারের প্রবন্ধ ইওরোপিয়দের দেওয়া সূত্র নির্ভর করে লেখা। অধ্যায়ের প্রথম পর্ব বইতে আমি সর্বপ্রথম আলোচনা করলাম সমসাময়িক ফারসি ইতিহাস, ইওরোপিয় কুঠিগুলির চিঠিপত্র, ইওরোপিয় মুসাফিরদের লেখা তথ্য অনুসরণে। কর্ণাটকে মীর জুমলার প্রশাসনিক জীবন, রাজ্যভাগ বিষয়ে দুই সুলতানের সিদ্ধান্ত এবং চুক্তি, জিঞ্জি দুর্গ দখল রাখার লড়াই, গাণ্ডিকোটা দখল ইত্যাদি বিষয়ে সব লেখা নতুন তথ্য নির্ভর এবং এই প্রথম দুই মলাটের মধ্যে আলোচিত হল। দুই সুলতানের কর্ণাটক ভাগ এবং শেষ পর্যন্ত মীর জুমলার নেতৃত্বে কুতুবশাহী সাম্রাজ্যের পতন নিয়েও প্রথম বার আলোচনা হল। বিজাপুর যে পদ্ধতিতে মীর জুমলাকে গোণ্ডিকোটা এবং কোক্কানুর হাত বদল করেছিল, সেটা মীর জুমলার পছন্দ হয় নি, এবং তার মধ্যেই লুকিয়েছিল মীর জুমলার বিদ্রোহের বীজ — এই অভিমত আমি এই পর্বে প্রকাশ করেছি। কর্ণাটকে মীর জুমলার প্রশাসন, তার বিজয়ের ফলে ভূমিদখলের বৃত্তান্ত, তার বেসামরিক প্রশাসন, তার বৈদেশিক বাণিজ্য, তার সামরিক পরিকল্পনা ইত্যাদি এর আগে আলোচিত হয় নি। ১৬৩৫-৩৬-এ মছলিপত্তনমের প্রশাসক হিসেবে এবং ১৬৫৫-তে মুঘল সাম্রাজ্যে যোগ দেওয়া পর্যন্ত সময়ে ইওরোপিয়দের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দ্বিতীয় অধ্যায়ের তৃতীয় পর্বে বিস্তৃতভাবে ধরা হয়েছে।

তৃতীয় অধ্যায়ে মুঘল শাসনপ্রক্রিয়ায় মীর জুমলার অন্তর্ভূক্তির বিষয় আলোচনা করা হয়েছে এক্কেবারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গীতে পুরোনো পাণ্ডুলিপিগুলোর তথ্য অনুসারে এবং স্যর জে এন সরকারের ভাণ্ডারে রাখা বেশ কিছু অপ্রকাশিত অব্যবহৃত ফারসি সূত্র অনুসরণ করে। সুলতান কুতুব শাহের সঙ্গে মীর জুমলার বিরোধ, আওরঙ্গজেবের গোলকুণ্ডা আক্রমণ, অন্যান্য ক্ষমতাশীলদের সঙ্গে মীর জুমলার সম্পর্ক তৈরির প্রচেষ্টা — যেমন পারস্য আর শ্রীরঙ্গ রয়ালের সঙ্গে রাজনৈতিক দৌত্য উদ্যম নতুনভাবে লেখা হয়েছে। মীর জুমলাই রয়ালকে মুঘল নিরাপত্তা নিতে এবং ধর্মত্যাগ করতে প্ররোচিত করেন। মীর জুমলার সঙ্গে শিবাজীর পুত্র সাহজী ভোঁসলার রাজনৈতিক দৌত্য নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছি – মারাঠা ইতিহাস নিয়ে উৎসাহীদের কাছে এটা আকর্ষণের বিষয় হতে পারে। মহম্মদ আমিনের গ্রেফতার তার দরবারি দুষ্কর্মের জন্যে হয়েছিল, ইতিহাস এমন একটা ধারনা তৈরি করলেও, মীর জুমলার সঙ্গে মুঘল দরবারের দরকষাকষির বার্তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার জন্যেই তাঁকে বন্দী হতে হয়েছিল, এই তথ্য বইতে প্রতিষ্ঠা দেওয়া গেল।

চতুর্থ অধ্যায়ে মুঘল উজির হিসেবে মীর জুমলার কাজকর্ম আমরা পাঁচ পর্বে আলোচোনা করেছি — এর মধ্যে প্রথম দুটি আর শেষেরটি এক্কেবারে মৌলিক। প্রথম পর্বে দেখিয়েছি প্রধান উজির, আওরঙ্গজেবের দূত এবং প্রতিনিধি হিসেবে মীর জুমলার কাজকর্ম। দ্বিতীয় পর্বে কর্ণাটকের মীর জুমলার দখলে থাকা জমিদারির ভাগ্য কী হল, এই বিষয়টি যে শুধু মুঘল দরবারী রাজনীতির ছাত্রদের অধ্যয়নের বিষয় নয় বরং যে সব গবেষক চন্দ্রগিরি রাজ্যের মৃত্যু-নাভিশ্বাস ওঠার কারণ জানতে আগ্রহী তাদেরও জন্যে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। শেষ পর্বে মুঘল উজির হিসেবে কার্যকালে আমাদের নায়কের সঙ্গে ইওরোপিয়দের সম্পর্ক আলোচনা করেছি।

এই অধ্যায়েরই তৃতীয় চতুর্থ পর্বের কিছুটা অংশ জে এন সরকারের হিস্টোরি অব আওরঙ্গজেবে উল্লিখিত হয়েছে – কিন্তু আমি তার বাইরেও বহু সুতর আলোচনা করেছি। বইতে মীর জুমলার যে সব রাজনৈতিক দৌত্যের তথ্য দিয়েছি, সেসব এখনও পর্যন্ত মৌলিক এবং বিশদে আলোচনা করেছি। আমি আলোচনায় দেখিয়েছি আওরঙ্গজেব কীভাবে মীর জুমলার পরিকল্পনায় বীজাপুর আক্রমন করেছিল, আওরঙ্গজেব কীভাবে বীজাপুরী আমলাদের মুঘলদের সাহায্য করতে প্ররোচিত করয়েছিলেন, কীভাবে তিনি সিংহাসন দখলের লড়াইতে দারার চালগুলোকে অসামান্য বুদ্ধিমত্তায় কিস্তিমাত করালেন, মীর জুমলাকে রাজধানীতে ডেকে নেওয়ার দারার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দক্ষিণে কীভাবে ঢাল হয়ে উঠে মীর জুমলাকে রক্ষা করেন এবং তাঁর নিজের স্বার্থও রক্ষিত হয়; সব তথ্য বিশদে আলোচনা করেছি। মনে রাখা দরকার দক্ষিণের রাজনীতির নানান জটিলতা সমাধানে আওরঙ্গজেব মীর জুমলার পরিকল্পনার ওপর ভরসা রাখতেন। তাই মুঘল সুবাদার স্বাভাবিকভাবে নিজের এবং মুঘল সাম্রাজ্যের স্বার্থে মীর জুমলাকে খণ্ডেশের প্রশাসক নিযুক্ত করলেন।

পঞ্চম অধ্যায়ে সুজার বিরুদ্ধে মীর জুমলার যুদ্ধ উদ্যম আলোচনা করেছি অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গীতে। যদুনাথ সরকার তাঁর বইতে খুব বেশি তথ্য আলোচনা করেন নি। আমি অনেক বিশদে আলোচনা করেছি। এই অধ্যায়ের ৬টি পর্বের প্রত্যেকটিতে কিছু না কিছু মৌলক তথ্য পাঠক খুঁজে পাবেন। কোরায় মীর জুমলার আগমনের যে ভুল তারিখ ইতিহাসে লিপিবদ্ধ ছিল, সেটিকে ঠিক করয়েছি; খাজওয়া যুদ্ধে কথিত যশোবন্ত সিংহের পরামর্শ কানে না দেওয়ায় যশবন্তের পক্ষ পরিবর্তনের যে যুক্তি দেওয়া হত এবং আওরঙ্গজেবের খাজওয়ায় বিজয় বিষয়ে নতুন ভাবনা পেশ করেছি। দ্বিতীয় পর্বে পাটনা থেকে রাজমহল পর্যন্ত সাম্রাজ্যের সেনার অগ্রগতি সম্বন্ধে নতুন বিবরণ দিয়েছি। তৃতীয় পর্বে সুতিতে নাওয়ারা নিয়ে অভিযান, ১৬৫৯-এর ৩ মের মুখোমুখি যুদ্ধে মীর জুমলার ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে নতুন রণনীতি ছকা এবং ওডিসাকে আওরঙ্গজেবের দখলে রাখার পরিকল্পনা রূপায়ন নিয়ে এক্কেবারেই নতুন তথ্য নির্ভর বর্ণনা করেছি। আমার কাজে এটাও পরিষ্কার যে সুজাকে ঘিরে ফেলার অন্তিম পরিকল্পনা মীরজুমলার ছিল, আওরঙ্গজেবের নয়। মহম্মদ সুলতানের পালানো এবং কিভাবে মীর জুমলা এই গুরুত্বপূর্ণ পর্বটি সামলালেন সেসবও বিশদে আলোচিত হয়েছে। চতুর্থ পর্বে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলায় মীরজুমলার কর্মকাণ্ড বিশেষ করে হুগলী দখলে রাখা নিয়ে আর পাটনা থেকে দাউদ খানের মালদার দিকে অগ্রগমনের তথ্য বিশেষ করে বেলঘাটা আর গিরিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত যুদ্ধ আলমগিরনামা এবং তারিখ-ই-শাহসুজার তথ্য অবলম্বনে আকিল খাঁয়ের তথ্যগুলিকেও নতুন করে ওজন করে দেখে নিয়েছি এবং এসবগুলো এক্কেবারে টাটকা তথ্য। পঞ্চম পর্বে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের নিরাপত্তা বিধান, সমধায় মীর জুমলার কাজকর্ম, এবং মহম্মদ সুলতানের শাহী সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীতে নতুন করে ফিরে আসা নতুন ভাবনা। ষষ্ঠপর্বে সিংহাসন দখলের লড়াই চলতে থাকা অবস্থায় ইয়োরোপীয়দের সঙ্গে মীর জুমলার সম্পর্ককেও নতুন আলোয় দেখেছি।

ষষ্ঠ অধ্যায়ে মীর জুমলার অধীনে বাংলার প্রশাসন বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই আলোচনা এক্কেবারেই মৌলিক। এই প্রথম বাংলা সুবায় সুবাদারের নিযুক্তির উদ্দেশ্যে পাঠানো আওরঙ্গজেবের জারি করা ফরমান ব্যবহার করেছি।

সপ্তম অধ্যায়ে মীর জুমলার কোচবিহার এবং আসামে শেষ এবং অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়ে সেনা অভিযানও বিশদে আলোচিত হয়েছে। এর আগে বিষয়টি ব্লখম্যান এবং গেইট, স্যর জে এন সরকার এবং ড এস এন ভট্টাচার্য আলোচনা করেছেন ঠিকই কিন্তু মীর জুমলার দৃষ্টিভঙ্গীতে আসাম অভিযান এবং যুদ্ধ উদ্যমের বিশদ বিবরণ ও বিশ্লেষণ এই প্রথম বিশদে আলোচিত হল। পুরোনো এবং জানা সূত্র আরও বিশদে বিশ্লেষিত হয়েছে এবং সম্প্রতি প্রকাশিত অসম বুরুঞ্জির কিছু খণ্ড থেকে তথ্য আহরণ করেছি। এই অধ্যায়কে পাঁচটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে কোচবিহার অভিযান পূর্বদেশে মীর জুমলার যুদ্ধ পরিকল্পনা বিষয়ে বুঝতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় অধিপর্বে গড়গাঁওএর পানে অভিযান আলোচনা করেছি। তৃতীয় অধিপর্বে কামরুপ আর অসমে মীর জুমলার রণকৌশল আর প্রশাসনিক ভাবনা নতুন তথ্যের আলোয় আলোচিত হয়েছে। তৃতীয় পর্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে দৈবদুর্বিপাকের বর্ষা, বন্যা এবং মন্বন্তরে মীর জুমলার দুর্দশা। চতুর্থ পর্বে নতুন করে আক্রমন শাসানো এবং তার মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ার শুরু আর শান্তির চিন্তাভাবনা উঠে এসেছে। পঞ্চম পর্বে আসাম থেকে পশ্চাদাপসরণ এবং সেই সংক্রান্ত রণনৈতিক আর প্রশাসনিক সমস্যাবলী আলোচনা করেছি।

শেষের সপ্তম অধ্যায়ে মীর জুমলার চরিত্র এবং মানুষ, নেতা, সেনাপতি এবং রাজদূত হিসেবে তার কৃতি বিষয়ে আলোচনা করেছি। তার সঙ্গে রাজনীতিতে উচ্চনৈতিকতা বজায় রাখতে না পারায় ইতিহাসে তাঁর যতখানি গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল সেই গুরুত্ব অর্জন করতে পারলেন না ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করেছি।

তথ্যগুলো আমরা এমনভাবে ব্যবহার করেছি যাতে মীর জুমলার জীবনের নানান গুরুত্বপুর্ণ ঘটনা পাঠকের সামনে ঠিকভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করা যায়। বিশ্লেষণের জন্যে প্রত্যেক অধ্যায় কয়েকটা অধিঅধ্যায়ে বিভক্ত করয়েছি। গোটা একটা স্তবক বা গোটা অধিঅধ্যায়ের তথ্যগুলিকে সংহত করে একটি পাদটিকায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিতর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে অনেক জোড়াপাতা (এপেন্ডিক্স) জোড়া হয়েছে। ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক আলোচনা কোনও একটা বিশেষ অধ্যায়ে না আলোচনা করে তার জীবনের নানান সময় সারণির পর্বে পর্বে আলোচনা করা হয়েছে, যাতে তার জীবনের চলতে থাকা সমস্যা আর গৃহীত নীতির সঙ্গে এই ঘটনার যোগসূত্র তৈরি করা যায়। ইওরোপিয় তথ্য মুল সূত্রানুযায়ী দেওয়া হয়েছে, কিছু কিছু সময়ে অপ্রচলিত শব্দ বুঝতে ব্রাকেটে আধুনিক প্রচলিত শব্দ লিখে দিয়েছি।

কাজটি করার সময় বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন সময়ে আমার উদারভাবে সাহায্য করেছেন, আমি প্রত্যেকের কাছে বিনীতভাবে কৃতজ্ঞ রইলাম। আমি গর্বিত যে স্যর যদুনাথ সরকার আমায় এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে অকাতরে প্রচুর পাণ্ডুলিপি, বই, মানচিত্র, এটলাস তার গ্রন্থাগার থেকে ব্যবহার করতে দিয়ে, গবেষণাটিকে নির্দিষ্ট পানে বয়ে যাওয়ার সুযোগ করেদিয়েছেন পুত্রসম ভালবাসায়। এছাড়া ড এস সি সরকার পাটনা কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, বর্তমান প্রধান ড কে কে দত্ত নানাভাবে আমায় সাহায্য করেছেন। তাঁদের সংগ্রহের ভাণ্ডার থেকে নানান কিছু ব্যবহার করতে দিয়ে এবং বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। একই দপ্তরের খান সাহেব এস এন আসকারি বেশ কিছু পাণ্ডুলিপি ব্যবহার করতে দিয়ে আমায় কৃতজ্ঞ করে রেখেছেন। আন্নামালাই ইউনিভার্সিটির ইতিহাস, রাজনীতি বিভাগের প্রধান রাও বাহাদুর সি এস শ্রীনিবাসাচারী কর্ণাটক রাজাক্কল সবিস্তার চরিত্রমের অনুবাদ করে দিয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এন কে সিনহা আমায় নানাভাবে সাহায্য করেছেন। কলকাতার ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি, ওয়েয়েন্টাল পাবলিক লাইব্রেরি পাটনা, বিহার রিসার্চ সোসাইটির গ্রন্থাগারটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরা তাদের সংগ্রহ দয়া করে ব্যবহার করতে দিয়েছেন। (চলবে)


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন