বয়স ৩০ পেরিয়েছে বেশ কিছু দিন হলো। সংসার বেশ ভরভরন্ত। তবু মনের কোণে কিছু অতৃপ্ত বাসনারা উঁকি দিয়ে বেড়ায়। হয়ত তথাকথিত সমাজের চোখে সে সব গর্হিত অপরাধ, তবু মন কি কোন নিষেধ বিধি মেনে চলে কোনকালে? সে আরও নিষিদ্ধতার প্রতি আকর্ষিত হয়। এমন কোন মহিলাও আছে এ সমাজে, যারা তাদের আত্মকথা গোপনে নিজের সাথে নিজে বলে যায়। কিন্তু কোথাও কাউকে বলার সাহস জোগাড় করে উঠতে পারে না। এমন গোপন কিছু গল্পের ঝুলি যদি নিষিদ্ধতার বেড়াজাল ভেঙে সামনে আনা যায়, তবে হয়ত সমাজের কালিমা এসে পড়বে… কিন্তু কিছু মানুষের দমবন্ধ কথারা খোলা আকাশে উড়ান দেবে খোলা হাওয়ায়!
প্রিয় রোদ্দুর,
আজ একটা চিঠি তোমাকেই লিখলাম। তোমাকে রোজ অনেক কথা মনে মনে বলি, সে সব লিখতে ইচ্ছে হলেও লিখি না। মনে হয় যে, তোমার এত ব্যস্ততার মাঝে এত বড় লেখা পড়ার সময় কোথায়? আর এ সব ন্যাকামো হয়তো বা তোমার পছন্দ নয়। তবু আজ শুধু তোমাকেই বলতে চাই, অনেক কথা।
একটা স্বপ্নের কথা… ঈশ্বরের কাছে করা প্রার্থনার কথা… অসম্পূর্ণ জীবনের কথা।
পরজন্ম, ভগবান এ সবে বিশ্বাস কম আমার, তবু একান্ত ব্যক্তিগত জায়গায় খুব বিশ্বাস করতে মন চায়। তাই আমার এই আশা নিশ্চয় পূরণ হবে, কি বলো?
সামনের বার বয়সের ফারাক, দূরত্বের ব্যবধান থাকবে না… প্রথম প্রেমের অনুভূতি যখন মেয়ে হিসেবে মনে জায়গা করে নেবে, ঠিক তখনই তোমার সাথে পরিচয় হয় যেন! আমার প্রথম এবং শেষ প্রেম যেন তুমিই হও। অন্য কোথাও অন্য কারোর মধ্যে প্রেমের খোঁজ করার প্রয়োজন যেন না হয়!
আমার শরীর মন জুড়ে শুধুই তোমারই রাজত্ব হবে। আমাদের সম্পর্কের স্বীকৃতি সমাজেও থাকবে অটুট। বিয়ের মত বন্ধনে গোপনে নয়, একেবারে সামাজিক বন্ধনে জুড়ে যাবো আমরা। আমি যেন এতটাই নিজেকে শরীরে মনে সবেতে সুন্দর রাখতে পারি, যাতে আমার স্বামী হিসেবে তুমি অন্য কোথাও কারোর মধ্যে আমার চেয়ে বেশি ভালবাসা খুঁজে না পাও। আমরা শরীরে শরীরে এতটাই নিবিড় সুখে থাকবো, সব ঝগড়া ঝামেলা মুহূর্তে আমাদের সংসার থেকে বিদায় নেবে।
আচ্ছা ধরো… পরজন্মেও তুমি এমন কাজে ব্যস্ত থাকলেও, আমি সারাদিনের শেষে অধীর ভাবে তোমার অপেক্ষায় থাকবো বাড়ি ফেরার। তুমি রোজ দিনের শেষে একান্ত আমার কাছে ফিরে আসবে। আমি অতি যত্নে তোমাকে আগলে রাখবো। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে একটি বার অন্তত তোমার বুকে মাথা রেখে জাপটে জড়িয়ে থাকবো তোমায়… ওটাতেই সব সুখ আমার। বলো… এমন স্বপ্ন কি ঈশ্বর আমার পরজন্মে পূরণ করবে না? কথা দিচ্ছি এখনই… তোমায় অভিযোগের জায়গাই দেবো না, এতটাই ভালো থাকবো আমরা। তাই বলে কি আমরা তখনও ঝগড়া অশান্তি করবো না? করবো অনেক অনেক, তবু সে সব বেশি সময় টিকবে না। আমরা একে অপরের কাছে তীব্র আকর্ষণে ছুটে আসবো। ঝগড়ার কারণ যাই থাকুক, আমি সবার আগে নিজের ভুল স্বীকার করে তোমার কাছে আসবো… আমি যে তোমার গোমড়া মুখ দেখতে একটুও ভালবাসি না। আমরা এমন একটা সুখী সংসার কি পাবো না বলো?
এই ধরো, কোন বিশেষ দিনগুলোতে আমি তোমার পাশে থেকে তোমার হাত ধরে ভালোবাসা ভরা শুভেচ্ছা জানাতে পারবো। আবার সাতসকালে তোমার নিষ্পাপ ঘুমন্ত মুখ দেখে ঘুম ভাঙবে রোজ আমার। নিশ্চুপে একটা আলতো চুম্বন করে দিনের শুরুটা করবো আমি। এই আশাটুকু তো পূরণ হতেই পারে, বলো?
আমাদের এত ভালবাসার চিহ্ন হিসেবে আমাদের মাঝে একটা ফুটফুটে প্রাণ থাকবে। ও জন্মে তার তো কোনো স্বীকৃতি পেতে বাধা থাকবেনা। আমাদের দুজনের ভালবাসার ফসল, আমাদের মাঝে বেড়ে উঠবে। এটাও তো এক অপূর্ব স্বপ্ন, ঈশ্বর কি সে ভালবাসার সম্পদ আমাদের পরজন্মে দেবেন না? এ জন্মের এই অধরা ইচ্ছেটা পূরণ করতে পরজন্মে আমাদের মেলাতেই হবে!
আমরা দুজন একসাথে পাহাড়ের কোলে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দেখবো ঠান্ডায় জড়াজড়ি করে। পাহাড়ি ঝর্ণার জলে পা ডুবিয়ে ভিজবো দুজন হাতে হাত রেখে।
আবার ধরো, সমুদ্রে প্রবল ঢেউয়ে তুমি আমাকে আঁকড়ে জড়িয়ে রাখলে, ডুবতে দিলে না একটুও। আমরা দু-জন নোনা জল মাখামাখি হয়ে প্রবল শারীরিক মিলনে ভেসে যাবো সমুদ্র সাক্ষী রেখে।
এমন ভাবেই আমরা স্বপ্ন পূরণ করবো অনেক খানি।
তোমার যেকোনো কাজের জায়গায় উন্নতিতে আমি গর্বিত হয়ে সবার সামনে বলতে পারবো বুক ফুলিয়ে। তোমাকে নিয়ে সবাই যখন ভালো বলবে, আমার মনে প্রবল খুশির ঝলক হবে নিজের লোকের জন্য। গোপনে খুশিকে লুকিয়ে কাউকে না বলার মত কষ্ট পেতে হবে না ঐ জন্মে। গর্বিত স্ত্রী হিসেবে সবার সামনে ঘুরবো।
তোমার পছন্দের রঙে সাজে নিজেকে রোজ সাজিয়ে রাখবো। আর নিজের মনের মত করে গড়বো সংসার আমাদের। আমার ইচ্ছে মত যখন তখন তোমার জন্য যা খুশি তাই কিনতে পারবো, লুকিয়ে উপহার হবে না তখন আর, আমি নিজের অধিকারে তোমার জন্য করতে পারবো এ সব কিছু। এমন স্বাধীনভাবে তোমার সাথে মিশে যেতে পারবো না, বলো? এটুকু তো ঈশ্বর আমায় দিতেই পারেন পরজন্মে!
সুখের সময় নয় শুধু, অসুখে-কষ্টে-দুঃখেও আমরা একে অপরের কান্না ভাগ করে নেবো। কষ্টের মুহূর্তে জড়িয়ে থেকে তোমার সব ব্যথা নিজের করে নেবো। আমাদের সবচেয়ে অসময়ে একেবারে পাশে থেকে চোখের জলে মাখামাখি হবো, একে অপরের শক্তি হবো বেঁচে থাকার।
আমাদের এই প্রেমের সংসার এমন করেই সারাজীবন কেটে যাবে, এমন হবে তো, বলো? আমরা দুজন একে অপরের প্রতি এতটাই আকর্ষিত থাকবো চিরকাল, এ বন্ধন আমরণ চলবে অটুট। আমরা এতটাই সুখে থাকবো দু-জন, শরীরে শরীরে মিশে থাকবো, আমাদের দেখে ঈর্ষান্বিত হবে চারপাশ। ইচ্ছে হলেই একে অপরের শরীরের চাহিদা মেটাবো, কোন সমাজ, কোন দূরত্ব, কোন সময়… কিছু বাধা হবে না আমাদের। এইটুকু তো স্বপ্ন আমার!
তোমার দেওয়া এক বছর আগের গোপন সিঁদুর, পরজন্মে সবার সামনে চিরদিনের সিঁদুরদানের মত তোমার হাতে মেখে পবিত্র সম্পর্কে জুড়ে যাই যেন… এইটুকুই স্বপ্ন।
ঈশ্বর আমার এই প্রার্থনা পূরণ করবেন তো?
আজকের এই বিশেষ দিনটি যেন পরজন্মে সত্যি হয় ভীষণ রকম।।।
— তোমার মেঘ
(শেষটুকু আগামীকাল)
লেখিকা : অঙ্কের শিক্ষিকা, উত্তর চব্বিশ পরগনার পৃথিবা রাধারাণী গার্লস হাই স্কুল, হাবড়া।