সোমবার | ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৪০
Logo
এই মুহূর্তে ::
অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কর্ণ এবং তাঁর রথের চাকা : ডা. ইন্দ্রনীল আইচ

ডা. ইন্দ্রনীল আইচ / ২৫৬৫ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ৮ মে, ২০২২

উপরের ছবিটি ভালো করে লক্ষ্য করুন। এই ছবির মধ্যে চারটি আলাদা আলাদা ছবি রয়েছে যাদের প্রত্যেকটিকে আমি ১, ২, ৩ এবং ৪ নম্বরে মার্কিং করেছি। এই ছবিগুলি “ছোটদের মহাভারত” নামক একটি বইয়ের থেকে নেওয়া। আমি যখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি তখন এই বইটা আমাকে কিনে দেওয়া হয়েছিল। মহাভারতের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় এই বইয়ের মাধ্যমেই। বলা হয়, ফার্স্ট ইমপ্রেশন মনে সবচাইতে গভীর দাগ কেটে যায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। এই চারটে ছবি আমি ছোটবেলায় বারবার দেখতাম আর ভাবতাম, “অর্জুনটা একটা পাষন্ড। কর্ণের মতো মহাবীরের সঙ্গে পেরে উঠছিলো না বলেই অন্যায়ভাবে তাঁকে হত্যা করলো”। আমার মনে হয় আপনাদের মনেও এই ধরণের অনুভূতিই এসেছিলো।

যদিও ছবির সঙ্গে ছাপা লেখায় বিস্তর ভুল আছে, তবুও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সতেরোতম দিনে এই ধরণের ঘটনাই ঘটেছিল বলে আমরা সকলে জানি। প্রথমে দ্বৈরথ, তারপরে হঠাৎ কর্ণের রথের চাকা বসে যাওয়া, চাকা তুলতে কর্ণের রথ ছেড়ে মাটিতে নামা, অর্জুনের কাছে কর্ণের চাকা তুলতে কিছু সময় চাওয়া, কর্ণের অনুরোধ না শুনে কৃষ্ণের উসকানিতে অর্জুনের কর্ণের উপর অন্যায় আক্রমণ এবং কর্ণবধ…আমরা সকলে এই ঘটনাপরম্পরা শুনেই অভ্যস্ত। যদি এই ঘটনাপরম্পরা সত্য হয়, তাহলে অর্জুন অবশ্যই দোষী…তার থেকেও বেশি দোষী কৃষ্ণ। কিন্তু এই দু’জনকে কাঠগড়ায় তোলার আগে আমাদের খুঁটিয়ে দেখা দরকার যে কুরুক্ষেত্রের সতেরোতম দিনের বিকেলে ঠিক কি ঘটেছিল।

কর্ণ কুরুক্ষেত্রের ময়দানে নামেন ভীষ্মের পতনের পরে, একাদশতম দিনে। একাদশ থেকে সপ্তদশ, এই সাতদিন তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। এই সাতদিনের মধ্যে তিনি বিপুল সংখ্যক পাণ্ডব সেনা বধ করেছিলেন। যুদ্ধের ত্রয়োদশতম দিনে অভিমন্যু বধের সময় কর্ণ ছিলেন সপ্তরথীর একজন। চতুর্দশতম দিনে কর্ণের সামনাসামনি হয়ে যায় ভীমের সঙ্গে। সেই যুদ্ধে ভীমকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করে নিজের ধনুকের ডগা দিয়ে ভীমের কপালে টোকা মেরে কর্ণ বলেছিলেন, “ওরে পেটুক (ঔদরিক)…আর আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকিস না। এখান থেকে পালিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে খাওয়াদাওয়া কর…ওটাই তোর দ্বারা হবে…যুদ্ধ তোর জন্য নয়”। ভীমের ছেলে মহাবলী ঘটোৎকচ কর্ণের হাতেই নিহত হন। যুদ্ধের ষোড়শতম দিনে পলায়মান নকুলকে নিজের ধনুকের ছিলার মধ্যে আটকে নিয়ে কর্ণ বলেছিলেন, “কি রে, একটু আগে তো খুব বড় বড় কথা বলছিলি…এখন মুখ শুকিয়ে গেছে কেন?” সপ্তদশতম দিনে যুদ্ধে যুধিষ্ঠিরকে পরাজিত করে কর্ণ তাঁর কাঁধে হাত দিয়ে বলেছিলেন, “তোমার এই ধর্মকর্মের দিকে অতিরিক্ত ঝোঁকটা ব্রাহ্মণত্ত্বের লক্ষণ। যুদ্ধক্ষেত্র ক্ষত্রিয়দের জন্য…তোমার জন্য নয়”। ওই সপ্তদশতম দিনেই অর্জুনের মাথা লক্ষ্য করে কর্ণ যখন তক্ষকের ছেলে অশ্বসেনকে ছোঁড়েন, তখন কৃষ্ণ প্রচন্ড বেগে ধাবমান ঘোড়াগুলির লাগাম হঠাৎ টেনে ধরায় ঘোড়াগুলি নিজেদের হাঁটু মুড়ে বসে পরে। এর ফলে অর্জুনের রথ এক হাত মতো নিচু হয়ে যায় এবং অশ্বসেন অর্জুনের মাথার পরিবর্তে তাঁর মুকুটটিকে চুরমার করে দেয়। কৃষ্ণ সেদিন এই অসাধারণ “ডাকিং প্রসিডিওর” না দেখালে হয়তো অর্জুন সেদিন কর্ণের হাতে বীরগতিপ্রাপ্ত হতেন।

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে কুরুক্ষেত্রের মাঠে পাণ্ডবদের প্রায় পাঁচজনই কর্ণের হাতে ভালোই পর্যুদস্ত হয়েছিলেন। কর্ণ কুরুক্ষেত্রে কেবলমাত্র যুদ্ধই করেননি…বলা ভালো বেশ “রেলা”য় যুদ্ধ করেছিলেন এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিপক্ষকে স্লেজিং করতেও ছাড়েননি।

কর্ণের নাম এলেই চলে আসে তাঁর বিখ্যাত কবচকুণ্ডলের নাম। সেই কবচকুণ্ডল যা শরীরে থাকলে তিনি হতেন অবধ্য। সেই কবচকুণ্ডল যা যুদ্ধ শুরুর আগেই কর্ণ দান করে দিয়েছিলেন ইন্দ্রকে। সেই কবচকুণ্ডল, যাকে ছাড়াই কর্ণ কুরুক্ষেত্রের ময়দানে টানা সাতদিন ধরে পাণ্ডবদের বেগ দিয়েছিলেন। প্রশ্ন…কবচকুণ্ডলের মাহাত্ম্য যদি এতটাই হবে, তাহলে তার অনুপস্থিতিতে কর্ণ শ্রীহীন হয়ে পড়লেন না কেন? কবচকুণ্ডলের অনুপস্থিতি কি কর্ণ কেবলমাত্র নিজের বীরত্ব এবং পৌরুষ দিয়ে পুষিয়ে নিয়েছিলেন না কি তাঁর কাছে কবচকুণ্ডলের “ইকুয়াল” বা “বেটার অল্টারনেটিভ” কিছু ছিল? যদিও মহাভারতে এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু লেখা নেই, তবুও সপ্তদশতম দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে কর্ণের কিছু কথাবার্তায় একটু খটকা লাগে।

আমরা সবাই জানি যে অর্জুনের ধনুকের নাম “গাণ্ডীব”। কিন্তু যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে “কর্ণের ধনুকের নাম কি ছিল”…তাহলে অনেকেই হোঁচট খাবেন। মহাভারত বলে, কর্ণের ধনুকের নাম ছিল “বিজয়”। বিশ্বকর্মা নির্মিত এই বিজয় ধনুক প্রকৃতপক্ষে মহাদেবের। মহাদেবের থেকে বিজয় দেবরাজ ইন্দ্রের হাতে আসে এবং তিনি দৈত্যকূলের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন। ইন্দ্রের থেকে বিজয় আসে পরশুরামের হাতে…নিজের কুঠার এবং এই বিজয়ের সাহায্যে পরশুরাম পৃথিবীকে একুশবার ক্ষত্রিয়শূন্য করেন! পরশুরামের থেকে গুরু শিষ্য পরম্পরায় বিজয় আসে কর্ণের হাতে। যদিও অনেক মহাভারত বিশেষজ্ঞের মতে জীবনের সব যুদ্ধে কর্ণ বিজয়কে ব্যবহার করেননি, কিন্তু একথাও সত্যি যে কুরুক্ষেত্রের সপ্তদশতম দিনে কর্ণের হাতে বিজয় ধনুকই ছিল।

সপ্তদশতম দিনে যুদ্ধযাত্রা করবার আগে কর্ণ দুর্যোধনকে বলছেন, “আমি জানি যে অর্জুনের সারথি স্বয়ং গোবিন্দ। আমি এও জানি যে অর্জুনের অক্ষয় তূণীর, অগ্নিদত্ত রথ এবং রথের ধ্বজায় থাকা হনুমান অজেয়। এই সমস্ত বিষয়ে আমি অর্জুন অপেক্ষা হীন। কিন্তু আমার বিজয় ধনুক আছে… যে বিজয় ধনুকের সাহায্যে ইন্দ্র দৈত্যগণকে পরাজিত করেছিলেন এবং আমার গুরু পরশুরাম একুশবার পৃথিবীকে ক্ষত্রিয়শূন্য করেছিলেন। সেই অপরাজেয় বিজয় ধনুক আজ আমার হাতে… যা গাণ্ডীব অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আমার প্রয়োজন কৃষ্ণের সমকক্ষ একজন সারথির… আজ শল্যকে আমার প্রয়োজন”।

ধারে, ভারে, কৌলিন্যে কর্ণের বিজয় অর্জুনের গাণ্ডীবের চাইতে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল বলেই আমার বিশ্বাস এবং হয়তো বিজয়ই সেই “এক্স ফ্যাক্টর” যার উপর কর্ণের একটা সাইকোলজিক্যাল ডিপেন্ডেন্স ছিল বলেই আমার মনে হয়। হয়তো সেই ডিপেন্ডেন্স কবচকুণ্ডলের চাইতেও বেশি ছিল। নাহলে তিনি আলাদা করে বিজয়ের কথা বলতেন না। হয়তো বিজয়ের সাহায্যেই কুরুক্ষেত্রের অধিকাংশ যুদ্ধেই তিনি প্রতিপক্ষের উপর আপারহ্যাণ্ড নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আমি আবার ফিরে আসবো সপ্তদশতম দিনে কর্ণের যুদ্ধযাত্রার প্রসঙ্গে। তিনি দুর্যোধনের সামনে বিজয়ের গুণাগুণ করলেন, সারথি হিসেবে শল্যকে চাইলেন, একই সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু চাহিদা বা রিকোয়ারমেন্টের কথা দুর্যোধনের সামনে রাখলেন। কি চাহিদা? বললেন, “বহু শকট আমার পিছনে পিছনে বাণ ও নারাচ বহন করে চলুক। উত্তম অশ্বযুক্ত বহু রথ আমার পশ্চাতে থাকুক”!

অর্থাৎ সেদিন যুদ্ধে যাওয়ার আগে কর্ণ দুর্যোধনের কাছে নিজের জন্য ব্যাক আপ রথ চেয়েছিলেন! কেন? হয়তো তাঁর অবচেতন মনে সেই ব্রাহ্মণের (মতান্তরে পৃথিবীর) অভিশাপ কাজ করছিলো। হয়তো কর্ণের মনে হয়েছিল যে ক্রুশিয়াল মুহূর্তে তাঁর রথের চাকা মাটিতে বসে যেতে পারে। তখন তাঁর দরকার পড়বে ব্যাক আপ রথের। দুর্যোধনের প্রিয়তম বন্ধু কর্ণ…একই সঙ্গে তাঁর প্রধান সেনাপতি। কর্ণের অনুরোধ তিনি ফেলতে পারবেন না। সুতরাং আমি ধরে নিতেই পারি যে সেদিন কুরুক্ষেত্রে কর্ণের রথের পিছনে অনেকগুলো ব্যাক আপ রথ ছিল।

এইবারে আমি আসবো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের অন্য কয়েকটি ঘটনার প্রসঙ্গে। যুদ্ধের ষোড়শতম দিনে ভীম এবং অশ্বত্থামার যুদ্ধ চলাকালীন দুজনেই একে অন্যের ছোঁড়া অস্ত্রের আঘাতে অজ্ঞান হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে ভীমের সারথি ভীমকে এবং অশ্বত্থামার সারথি অশ্বত্থামাকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। ওইদিনই সহদেবের হাতে মার খেয়ে দুঃশাসন আহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুঃশাসনের সারথি তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। ওই একই দিনে শকুনির ছেলে উলুক যুযুৎসুর ঘোড়া এবং সারথীকে হত্যা করবার পরে যুযুৎসু অন্য একটি রথে উঠে যুদ্ধ করতে থাকেন। সপ্তদশতম দিনে কর্ণ বর্শার আঘাতে যুধিষ্ঠিরের রথ ভেঙে দেওয়ার পরেই যুধিষ্ঠির অন্য একটি রথে উঠে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান। এই ঘটনার কিছু পরে ভীমের হাতে মার খেয়ে কর্ণ অজ্ঞান হয়ে যেতে শল্য তাঁকে রথ সমেত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে আনেন।

সুতরাং একথা বলাই চলে যে নিজের রথ ভেঙে গেলে অন্য রথে গিয়ে ওঠা এবং নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সাময়িকভাবে পিছু হটা…এই দুটোই তৎকালীন সময়ে যুদ্ধের ট্যাকটিক্স হিসাবেই গণ্য করা হতো।

অবশেষে আমি আসবো সপ্তদশতম দিনের বিকেলের ঘটনায়। অর্জুন বনাম কর্ণ। একজন প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছেন… মনে পড়ছে এক একটা অপমানের কথা। ঘূর্ণায়মান মাছের চোখে তীর বিঁধিয়ে যে পাঞ্চালীকে তিনি জিতেছিলেন, সামনে দাঁড়ানো এই সারথীর ছেলেটাই তাঁকে ‘বেশ্যা’ বলেছিল না? বালক অভিমন্যুকে যে সাতজন মিলে ঘিরে ধরে হত্যা করেছিল, এই লোকটা তাদের মধ্যে একজন না? দুর্যোধনের সমস্ত অপকর্মের তিন সাগরেদের মধ্যে একটা তো এই লোকটাই। আজ পেয়েছি ওকে। আজ আর ওর নিস্তার নেই।

অপরজন ভাবছেন নিজের দুর্ভাগ্যের কথা। কথা ছিল কৌন্তেয় হওয়ার… গোটা দুনিয়া তাঁকে চিনলো রাধেয় নামে। যে সিংহাসনের জন্য আজ এই যুদ্ধ… সেই সিংহাসনের প্রকৃত দাবিদার তো তিনিই। তবুও তিনি আজ দাঁড়িয়ে আছেন অধর্মের শিবিরে…কবচকুণ্ডল ছাড়া… একগাদা অভিশাপ মাথায় নিয়ে। চার পাণ্ডবকে তিনি হাতে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছেন… কথা দিয়েছিলেন, “আপনার ছেলেদের গুনতি কমবে না… আমি মরলে অর্জুন বাঁচবে… অর্জুন মরলে আমি… গুনতি কমবে না, পাঁচই থাকবে”। সারাজীবন ধরে তিনি অপেক্ষা করেছেন এই দিনটার। শুভক্ষণ উপস্থিত… স্বাগতম।

যুদ্ধের সূচনা করলেন অর্জুনের রথের ধ্বজায় বসে থাকা হনুমান। আকাশ ফাটানো চিৎকার করে অর্জুনের রথের ধ্বজা থেকে তিনি লাফিয়ে পড়লেন কর্ণের রথের ধ্বজার উপরে। শুরু হলো যুদ্ধ… কুরুক্ষেত্রের ডার্বি। দুজনেই সমান বীর…ধনুর্বিদ্যায় অসামান্য প্রতিভাবান। সমস্ত দেবতা এবং অসুরেরা সেই যুদ্ধ দেখতে এলেন। ময়দানে দুই প্রতিদ্বন্দী…ময়দানের বাইরে তাঁদের সমর্থকরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়লেন। আকাশ, আদিত্যগণ, অব্রাহ্মণ, সূর্য, অসুর এবং প্রেত কর্ণের সমর্থক। ওদিকে চতুর্বেদ, পৃথিবী, দেবর্ষি, ব্রহ্মর্ষি, রাজর্ষি এবং পশুপক্ষীরা অর্জুনের সমর্থক। দুই মহাবীরের দাপটে পৃথিবী তখন কাঁপছে।

যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে কে জিতছিলেন? মহাভারতে লেখা আছে, যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে ভীম রেগে গিয়ে অর্জুনকে বলছেন, “কি করছিস তুই? তোর সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে কি করে কর্ণ অতোগুলো পাঞ্চালকে মেরে ফেললো? তোর শরীরেই বা ওর দশটা তীর লাগলো কি করে? ওর সঙ্গে আদৌ তুই পারবি কি না বল। তুই না পারলে আমাকেই গদা হাতে ওর বিরুদ্ধে নামতে হবে”। কৃষ্ণ অবধি অর্জুনকে বলছেন, “আরে পার্থ, তোমার হয়েছে টা কি? তোমার অস্ত্রশস্ত্রের ধার যদি কমে গিয়ে থাকে তো বলো, আমি আমার সুদর্শন চক্রটা তোমাকে ধার দিচ্ছি”। অর্থাৎ, যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে বিজয়ের প্রভাবে কর্ণ অর্জুনের উপর কিছুটা হলেও আপারহ্যাণ্ড নিচ্ছিলেন।

এরপরেই কর্ণ অর্জুনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষ্ণকেও আক্রমণ করেন। যুদ্ধের উত্তেজনায় অতিরিক্ত টেনে ধরার জন্য অর্জুন নিজেই গাণ্ডীবের ছিলা ছিঁড়ে বসেন। কিন্তু তিনিও অর্জুন। মুহূর্তের মধ্যে ছিলা বদলে তিনি কর্ণকে প্রতি আক্রমণ করে মারাত্মকভাবে আহত করেন এবং একই সঙ্গে কর্ণের পার্শ্ব এবং পৃষ্ঠরক্ষকদের হত্যা করেন।

এরপরেই ঘটে কর্ণের তূণীর থেকে অশ্বসেনের উঠে আসা এবং অর্জুনকে বাঁচানোর জন্য কৃষ্ণের “ডাকিং”। অর্থাৎ এতক্ষণ পর্যন্ত কর্ণ – অর্জুন দ্বৈরথের পাল্লা কর্ণের দিকেই কিছুটা ঝুঁকে ছিল। কিন্তু কর্ণের দুর্ভাগ্য…এর ঠিক পরেই কর্ণের রথের বাম দিকের চাকা মাটিতে বসে যায়!

কর্ণ জানতেন তাঁর অভিশাপের কথা। জানতেন যে জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে তাঁর রথের চাকা মাটিতে বসে যাবে। কিন্তু তিনিও মহাবীর… হাত পা ছড়িয়ে কাঁদার বান্দা তিনি নন। রথের চাকা মাটিতে বসে যাচ্ছে দেখে তিনি ব্রহ্মাস্ত্রকে আহ্বান করলেন… একটা শেষ চেষ্টা। সঙ্গে সঙ্গে ফলে গেল কর্ণের দ্বিতীয় অভিশাপ… গুরু পরশুরামের দেওয়া অভিশাপ… “আমার দেওয়া শিক্ষা যখন তোমার সবচাইতে বেশি প্রয়োজন হবে, তখন সেই শিক্ষার কিছুই তোমার মনে পড়বে না”। ব্রহ্মাস্ত্র ডিটোনেট করবার কায়দা কর্ণ কিছুতেই মনে করতে পারলেন না!

প্রথমে কর্ণ ধর্মকে প্রচন্ড গালিগালাজ করলেন। বললেন, “এতদিন শুনেছিলাম ধর্মই ধার্মিকদের রক্ষা করেন। আমি তো চিরকাল ধর্মাচরণই করলাম। তবুও আজ দেখছি ধর্মই আমাকে বিনাশ করতে উদ্যত হয়েছে”। তারপর চাকা বসে যাওয়া অবস্থায় ওই রথের উপর থেকেই অর্জুনকে প্রতি আক্রমণ করলেন। পুনরায় সমানে সমানে যুদ্ধ।

এরপরেই কৃষ্ণের ভূমিকা। কৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, “এই প্রতিদ্বন্দী দিব্যাস্ত্রের যোগ্য… দিব্যাস্ত্র আহ্বান করো”। কৃষ্ণের উপদেশ মতো অর্জুন হাতে দিব্যাস্ত্র তুলে মন্ত্ৰাভিষিক্ত করে ধনুকে যোজনা করলেন। সঙ্গে সঙ্গে কর্ণের রথের চাকা আরেকটু বসে গেল। এইবার কর্ণ বললেন, “হে অর্জুন, আমার রথের চাকা মাটিতে বসে গেছে। বীরেরা দুর্দশাপন্ন বিপক্ষের প্রতি অস্ত্রক্ষেপণ করেন না। তুমি কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করো। তুমি ক্ষত্রিয়… ধর্মোপদেশ স্মরণ করে আমাকে কয়েক মুহূর্ত সময় দাও। আমি রথের চাকা তোলার জন্য রথ থেকে নীচে নামছি”। এই কথা বলে তিনি রথ থেকে নামলেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এর আগে অবধি কিন্তু কর্ণ রথের উপরেই ছিলেন… চাকা বসে যাওয়া সত্ত্বেও কিন্তু তিনি নীচে নামেননি। আরও লক্ষণীয়, তিনি কিন্তু একবারও বলছেন না যে “আমার রথের চাকা বসে গেছে… অতএব এখনই এই যুদ্ধ বন্ধ করো”। তিনি বলছেন, “আমি রথের চাকা তুলতে নিচে নামছি, সেইজন্য আমাকে সময় দাও”। অর্থাৎ তিনি একটা “টাইম আউট” বা যুদ্ধবিরতি চাইছেন।

পাঠক… ঘটনা পরম্পরা বা ক্রোনোলজির উপরে একটু নজর দিন। প্রথমে কর্ণের রথের চাকা বসলো। কর্ণ যুদ্ধবিরতি চাইলেন না। এরপর তিনি ব্রহ্মাস্ত্র ডিটোনেট করবার কৌশল ভুলে গেলেন। তিনি ধর্মকে গালাগাল দিলেন, কিন্তু যুদ্ধবিরতি চাইলেন না, উল্টে অর্জুনকে প্রতি আক্রমণ করলেন। এইবারে যখন অর্জুন দিব্যাস্ত্র আহ্বান করলেন… কেবলমাত্র তখনই কর্ণ যুদ্ধবিরতি চাইলেন। কেন?

এই ক্রোনোলজি যদি নিজের মনে মনে একটু স্টাডি করেন তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন যে রথের চাকা বসে যাওয়াটা কর্ণকে খুব একটা প্রভাবিত করেনি। তিনি তো ওই অবস্থাতেও দিব্বি যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু অর্জুন যখন হাতে দিব্যাস্ত্র তুলে নিলেন তখন কর্ণ বুঝতে পেরেছিলেন যে দিব্যাস্ত্র ছাড়া দিব্যাস্ত্রের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়…আর দিব্যাস্ত্র ডিটোনেট করবার কৌশল তাঁর মনে পড়ছে না। এই কিস্তিমাত অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য তাঁর একটাই জিনিসের দরকার ছিল। কিছুটা সময়ের। তিনি কিছুটা সময় চেয়েছিলেন। কেন?

হয়তো ব্রহ্মাস্ত্র ডিটোনেট করবার কৌশলকে “রি-কল” করবার জন্য। আমাদেরও তো এমন অবস্থা হামেশাই ঘটে। “আরে পেটে আসছে মুখে আসছে না”, “একটু সময় দে, ঠিক মনে পড়বে”… এমন কথা তো আমরা হামেশাই বলে থাকি। কর্ণ হয়তো সেইজন্যই সময় চেয়েছিলেন। হয়তো। কিংবা এমনও হতে পারে, এই অসহায় অবস্থা থেকে বেরোনোর জন্য তিনি অন্য মতলব খুঁজছিলেন। হয়তো তাঁর মন বলছিলো দুর্যোধন তাঁর জন্য রিএনফোর্সমেন্ট পাঠাবেন। হয়তো। ঠিক কোন কারণে তিনি এই সময় চেয়েছিলেন তা আমার জানা নেই। মহাভারতে কোথাও তা লেখা নেই। কিন্তু এই অতিরিক্ত সময়টুকু যে তিনি এই কিস্তিমাত অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চেয়েছিলেন… সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

যাই হোক… ধর্মের দোহাই দিয়ে কর্ণ অর্জুনের থেকে যুদ্ধবিরতি প্রার্থনা করে রথ থেকে নীচে নামলেন। উত্তর দিলেন কৃষ্ণ। বললেন, “আজ নিজে বিপদে পড়েছিস তাই ধর্মের দোহাই দিচ্ছিস। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় তো তুই ওই রাজসভাতেই ছিলিস। তখন ধর্মের কথা মনে পড়েনি কেন রে? ভীমের উপর বিষপ্রয়োগ, জতুগৃহ, অভিমন্যু হত্যা… তুই তো সব জায়গাতেই ছিলিস। তখন তোর ধর্মের কথা মনে পড়েনি কেন? বেশি ‘ধর্ম ধর্ম’ বলে চিৎকার করে নিজের তালু শোকাস না। যত ইচ্ছে ধর্মের দোহাই দে… আজ তোর রেহাই নেই”।

আমি এখানে একটু থামবো। একবার চটজলদি দেখে নেবো যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরুর আগে যুদ্ধের কি কি নিয়ম বানানো হয়েছিল। ভীষ্ম এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন যুদ্ধের যে নিয়মগুলির প্রনয়ণ করেন তা হলো, “যুদ্ধ নিবৃত্ত হলে বিরোধী দলের মধ্যে যথাসম্ভব পূর্ববৎ প্রীতির সম্বন্ধ স্থাপিত হবে, আর ছলনা থাকবে না। এক পক্ষ বাগযুদ্ধে প্রবৃত্ত হলে অপর পক্ষ বাক্য দ্বারাই প্রতিযুদ্ধ করবেন। যারা সৈন্যদল থেকে বেরিয়ে আসবেন তাঁদের হত্যা করা হবে না। রথীর সঙ্গে রথী, গজারোহীর সঙ্গে গজারোহী, অশ্বারোহীর সঙ্গে অশ্বারোহী এবং পদাতিকের সঙ্গে পদাতিক যুদ্ধ করবে। বিপক্ষকে আগে জানাতে হবে, তারপরে নিজের যোগ্যতা, ইচ্ছা, শক্তি ও উৎসাহ অনুসারে আক্রমণ করা যেতে পারবে। বিশ্বস্ত ও বিহ্বল লোককে প্রহার করা যাবে না। অন্যের সঙ্গে যুদ্ধে রত, শরণাগত, যুদ্ধে বিমুখ, অস্ত্রহীন বা বর্মহীন লোককে কখনও মারা হবে না। স্তুতিপাঠক, সূত, ভারবাহক, অস্ত্র যোগানো যাদের কাজ, ভেরী প্রভৃতির বাদ্যকারকে কখনও প্রহার করা হবে না। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ শুরু এবং সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হবে”।

লক্ষ্য করুন, প্রথমত কর্ণের যুদ্ধবিরতির আবেদনের উত্তর কৃষ্ণ কথার মাধ্যমেই দিচ্ছেন… সেই মুহূর্তে একবারও অর্জুনকে অস্ত্রপ্রয়োগের উপদেশ দিচ্ছেন না। অর্থাৎ বাগযুদ্ধের উত্তর বাক্যের দ্বারাই তিনি দিচ্ছেন। অর্থাৎ কৃষ্ণ এক্ষেত্রে যুদ্ধের নিয়ম মেনে চলছেন। দ্বিতীয়ত কর্ণের যুদ্ধবিরতির আবেদন তিনি একবাক্যে নাকচ করে দিচ্ছেন। অনেকেই বলবেন, এটা যুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘন করা। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন…কর্ণ রথী, যুদ্ধ করছেন আরেক রথীর সঙ্গে। দুজনেই রয়েছেন রথের উপরে। কর্ণের রথের চাকা মাটিতে বসে গেছে। তিনি নিজেই রথ ছেড়ে মাটিতে নেমেছেন। ব্যাক আপ রথ থাকা সত্ত্বেও “বাই চয়েস” তিনি সেই রথে গিয়ে উঠছেন না। তিনি সম্পূর্ণরূপে অস্ত্রসজ্জিত… নিরস্ত্র নন। তিনি যুদ্ধে আগ্রহী…আত্মসমর্পন করতে আগ্রহী নন। প্রশ্ন হল যে তিনি যুদ্ধে বিমুখ কি না? উত্তর… না! তিনি যুদ্ধে বিমুখ নন… একবারও বলছেন না যে “অর্জুন, তোমার সঙ্গে আমি যুদ্ধ করতে চাই না”… তিনি বলছেন “অর্জুন, আমাকে একটু সময় দাও”… অর্থাৎ তিনি “টাইম আউট” বা যুদ্ধবিরতি চাইছেন… এবং দুর্ভাগ্যক্রমে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের নিয়মে এই “টাইম আউট” বা যুদ্ধবিরতির কোনো অপশন দেওয়া নেই… সুস্পষ্ট করে কিছুই বলা নেই যুদ্ধবিরতির সম্বন্ধে… এটা একটা “গ্রে জোন”… ভীষ্ম বা ধৃষ্টদ্যুম্ন যুদ্ধের এই ধরণের কোনো আইন প্রনয়ণ করেননি যে কোনো যোদ্ধা যুদ্ধবিরতি চাইলে তৎক্ষনাত যুদ্ধ থামিয়ে দিতে হবে! অর্থাৎ যুদ্ধবিরতির আবেদন নাকচ করে দেওয়া সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধের আইনসম্মত।

ফিরে আসবো যুদ্ধের প্রসঙ্গে। কৃষ্ণের উত্তর শুনে কর্ণ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর কি? তারপর কি কৃষ্ণ অর্জুনকে ‘অঞ্জলিক’ চালাতে বললেন? না। তারপর কি অর্জুন নিজেই অঞ্জলিক তুলে নিলেন? না। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, এরপরেই ওই চাকা বসে যাওয়া রথের উপর পুনরায় উঠে কর্ণ রিট্যালিয়েট করলেন… প্রবলবিক্রমে প্রতি আক্রমণ! মুহুর্মুহু তীর ছুঁড়লেন অর্জুনের দিকে… ‘ওয়ার ইজ অন’! একটা তীর অর্জুনের বাহু ফুঁড়ে বেরিয়ে গেল। ক্ষতবিক্ষত অর্জুন জ্ঞান হারিয়ে রথের উপর পড়ে গেলেন!

দৃশ্যটা একবার কল্পনা করুন! দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী অন্তিম যুদ্ধে অবতীর্ণ। একজন জ্ঞান হারিয়েছেন। অন্যজন জানেন যে অচেতন প্রতিদ্বন্দীর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাসুদেব কৃষ্ণ… স্বয়ং ঈশ্বর… কোনো সাধারণ তীরের কর্ম নয় ওই অচেতন প্রতিদ্বন্দীর প্রাণ নেওয়া… প্রয়োজন দিব্যাস্ত্রের… আর দিব্যাস্ত্র আহ্বান করবার কৌশল তাঁর মনে পড়ছে না! দুজনেরই কি অসহায় অবস্থা! স্টেলমেট সিচুয়েশন!

এইবার কর্ণ পুনরায় রথের উপর থেকে লাফ দিয়ে মাটিতে নামলেন। তিনি শল্যকে বললেন না যে “মহারাজ, রথের চাকাটা তুলতে আমাকে একটু সাহায্য করুন”। তিনি কোনো সাধারণ সৈনিককে বললেন না যে “ওহে, আমার রথের চাকাটা একটু তুলে দাও তো”। তিনি অন্য কোনো রথে গিয়ে উঠলেন না। তিনি শল্যকে একটা বারের জন্যেও বললেন না যে “মহারাজ, দিব্যাস্ত্র ত্যাগের কৌশল আমার মনে পড়ছে না, আপনি আমাকে শিবিরে ফেরত নিয়ে চলুন”। তিনি রথ থেকে নামলেন এবং মাটিতে বসে যাওয়া রথের বাম দিকের চাকাকে তুলতে প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগলেন!

কেন? আমার জানা নেই। মহাভারতে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নেই। হয়তো কর্ণ অর্জুনের বিরুদ্ধে আজন্মলালিত বৈরিতার ইতি সেইদিনই ঘটাতে চেয়েছিলেন। হয়তো ভেবেছিলেন, “আজ হয় অর্জুন থাকবে নয় আমি থাকবো”। হয়তো যে যুদ্ধবিরতির আবেদন তিনি একটু আগে করেছিলেন, অর্জুনের সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ায় সেই যুদ্ধবিরতি তিনি আপনা থেকেই পেয়ে গিয়েছিলেন… চেষ্টা করছিলেন রথের চাকা তোলার অছিলায় দিব্যাস্ত্র মোচনের কৌশলকে মনে করার। কিন্তু তিনি নিজেই রথের চাকা তুলতে গেলেন কেন… কেন অন্যের সাহায্য নিলেন না… এই প্রশ্নের একটাই যুক্তিগ্রাহ্য কারণ আমার মনে আসে।

আমার মনে হয়, যে মুহূর্তে কর্ণের রথের চাকা বসে গিয়েছিল এবং দিব্যাস্ত্র মোচনের কৌশল তিনি বিস্মৃত হয়েছিলেন, সেই মুহূর্তেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন যে তাঁর শেষ সময় উপস্থিত। এটা বুঝেও সাচ্চা বীরের মতো তিনি শেষ অবধি লড়ে গিয়েছিলেন। মহাভারতের ছত্রে ছত্রে কিছু প্রতীকী ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। স্বর্গারোহন পর্বে যুধিষ্ঠিরের পায়ে পায়ে সেই কুকুরটির স্বর্গের দিকে এগিয়ে যাওয়া যেমন একটি প্রতীকী ঘটনা, ঠিক তেমনই নিজের জীবনের অন্তিম মুহূর্তে নিজের রথের বসে যাওয়া চাকা তোলার চেষ্টাও আরেকটি প্রতীকী ঘটনা, যার মাধ্যমে কর্ণ অর্জুনকে একটি বার্তা দিতে চেয়ে ছিলেন। কী সেই বার্তা?

“শোন… সারাজীবন তো আমাকে তুই ‘সারথির ছেলে’ বলে অপমান করে গেলি। আজ তুই যে এখনও আমার সামনে জীবন্ত রয়েছিস… তার জন্য দায়ী যে ওই কৃষ্ণ… সেও কিন্তু তোর সারথিই। ওই সারথিটা যদি আজ না থাকতো, তাহলে তো আমার তীরটা তোর মুকুটে লাগতো না… তোর মুন্ডুটা উড়িয়ে দিতো। আজ তুই বেঁচে আছিস একটা সারথির অনুগ্রহেই। এখনও অচেতন অবস্থায় তোকে রক্ষা করে চলেছে তোর ওই সারথিই। রণক্ষেত্রে রাজপুত্রদের সারথিরাই রক্ষা করেন। কিন্তু সারথির ছেলেরা যখন যুদ্ধক্ষেত্রে নামেন, তখন তাঁরা তাঁদের নিজেদের সারথির অনুগ্রহের অপেক্ষায় বসে থাকেন না। নিজেদের রাস্তা তাঁরা নিজেরাই তৈরী করে নেন। রথের চাকা তো আমার আজ বসে নি। যেদিন জন্মের পরে পরেই মা আমাকে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন… সেইদিনই বসে গিয়েছিল। সারাজীবন ধরে মা’র সেই ভুলের মাশুল আমি দিয়েছি আর একা চেষ্টা করেছি বসে যাওয়া চাকাটা তোলার। তাই আজ জীবনের অন্তিম মুহূর্তে বসে যাওয়া এই চাকাটাও আমি একাই তুলবো। আমার কারও সাহায্যের দরকার নেই। সারথির ছেলেদের কারও সাহায্যের প্রয়োজন হয় না”।

ঠিক এই মুহূর্তে অর্জুন জ্ঞান ফিরে পেলেন। কর্ণের হাতে বেদম মার খেয়ে তাঁর শরীর তখন টলছে। কোনোমতে হাতে তুলে নিলেন গাণ্ডীব। সামনে কী দেখতে পেলেন তিনি? দেখতে পেলেন কর্ণকে। কর্ণের পিঠে তূণীর, রথের উপরে রাখা বিজয়, পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা শকটের উপর পর্যাপ্ত অস্ত্র। কর্ণের হাত দুটো কোথায়? রথের চাকার উপরে। রথের চাকা কী যুদ্ধাস্ত্র? হয়তো না। হয়তো বা হ্যাঁ। অভিমন্যু এই রথের চাকা তুলেই জীবনের শেষ যুদ্ধ লড়েছিল না? তাহলে রথের চাকাও তো অস্ত্র হিসেবেই পরিগণিত। কর্ণের রথের চাকা মাটিতে বসে গেছে তো কী হয়েছে? যুদ্ধক্ষেত্রে রথ তো ভাঙতেই থাকে। ওর পিছনে তো অনেক ব্যাক আপ রথ রয়েছে। কর্ণ সেই রথে উঠছেন না কেন? যুদ্ধবিরতি তো কুরুক্ষেত্রে বৈধ নয়। তাহলে? তাহলে যুদ্ধ তো শেষ হয়নি… ওয়ার ইজ অন!

কৃষ্ণ বললেন, “পার্থ… ও যেন আর রথে উঠতে না পারে”। অক্ষয় তূণীর থেকে অর্জুনের হাতে উঠে এলো ‘অঞ্জলিক’… তিন হাত চার আঙ্গুল লম্বা ‘যমসদৃশ লৌহদণ্ড’। “আমি যদি তপস্যা ও যজ্ঞ করে থাকি, যদি গুরুজনদের সন্তুষ্ট করে থাকি, তবে এই অস্ত্র আমার শত্রুনাশ করুক”… এই কথা বলে অঞ্জলিক মোচন করলেন অর্জুন…কর্ণ নিশ্চুপ… তিনি একটিও কথা বললেন না! চোখের পলকে কর্ণের মাথা ছিঁড়ে সেই মাথা সমেত কুরুক্ষেত্রের মাটিতে গিয়ে বিঁধলো অঞ্জলিক! কর্ণের শরীর থেকে একটি জ্যোতি বার হয়ে গিয়ে মিশলো সূর্যের সঙ্গে! একটি অভিশপ্ত জীবনের ইতি। ‘কর্ণপর্ব’ সমাপ্ত।

প্রিয় পাঠক… “ছোটদের মহাভারত” বইতে যে তিনটি ফ্রেমের মাধ্যমে কর্ণবধের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, কেবলমাত্র সেই তিনটি ফ্রেমকে বিচারের আওতায় আনলে কর্ণের মৃত্যুর জন্য দায়ী অর্জুন এবং কৃষ্ণ। কিন্তু আসল ঘটনায় ওই তিনটি ফ্রেম ছাড়াও আরও অনেক ফ্রেম আছে, ঘটনা আছে… যেগুলির বর্ণনা অধিকাংশ স্থানেই দেওয়া নেই… বলা ভালো দেওয়া হয় না। যদি দেওয়া হতো, আমাদের যুক্তিবাদী মন ভাবতে বাধ্য হতো যে কর্ণের মৃত্যুর জন্য আসলে কে দায়ী? অর্জুন? কৃষ্ণ? পরশুরাম? না কি কর্ণ নিজেই?

ন্যায় অন্যায়ের বিচার যদি কেবলমাত্র আইনের বইয়ে লেখা বাক্যের মাধ্যমে হয়, তাহলে আমি বলবো যে অর্জুন দ্বারা কর্ণের বধ সম্পূর্ণরূপে বৈধ তথা আইনসম্মত। কর্ণ নিজেকে বাঁচানোর একাধিক সুযোগ পেয়েছিলেন কিন্তু সেই সব সুযোগকে দূরে ঠেলে তিনি নিজের রথের চাকা তোলাটাকেই বেছে নিয়েছিলেন। কেন… সেটা হয়তো কেবলমাত্র তিনি নিজেই জানতেন। কিন্তু মানুষের হৃদয়ের আবেগ যদি ন্যায় অন্যায়ের ভারসাম্যকে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করবার ক্ষমতা রাখে, তাহলে কর্ণবধ মহাভারতে উল্লিখিত অসংখ্য অন্যায়ের মধ্যে একটি… যে অন্যায়ের দায় অর্জুন, কৃষ্ণ এবং কিছুটা হলেও পরশুরামের উপর বর্তায়। তাই কর্ণের মৃত্যুকে আপনি যুক্তির দ্বারা বিচার করবেন না কি হৃদয়ের দ্বারা অনুভব করবেন, সেটা আমি আপনার উপরেই ছেড়ে দিলাম।

প্রশ্ন হলো… মহর্ষি ব্যাস কর্ণের মৃত্যুকে কি ভাবে বিচার করেছিলেন? যুক্তি দিয়ে? না কি আবেগ দিয়ে? আমার মনে হয় আবেগ দিয়ে। তিনি সমগ্র মহাভারতের মধ্যে একটি অদ্ভুত ভারসাম্য রক্ষা করে গেছেন। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের ভারসাম্য তিনি রক্ষা করেছেন ভীমকে দিয়ে দুঃশাসনের রক্ত পান করিয়ে। দুর্যোধনের করা সমস্ত অন্যায়ের ভারসাম্য তিনি রক্ষা করেছেন যুদ্ধের শেষ দিন তাঁর উরু চুরমার করে দিয়ে। কৃষ্ণের সমস্ত ছল, চাতুরী, কূটনীতির ভারসাম্য তিনি রক্ষা করেছেন মৌষল পর্বে কৃষ্ণকে নির্বংশ করে দিয়ে। না… কর্ণকেও তিনি বঞ্চিত করেননি। মহাভারতের মৌষল পর্বে কর্ণের মৃত্যুর প্রকৃত বিচার তিনিই করে দিয়ে গেছেন।

মৌষল পর্বে কৃষ্ণের দেহত্যাগের সাতদিন পরে কৃষ্ণের ষোলোহাজার স্ত্রীকে নিয়ে হস্তিনাপুরের দিকে রওনা দেন অর্জুন। পথে আভির দস্যুরা হামলা করে। প্রিয় বন্ধুর স্ত্রীদের রক্ষা করবার জন্য গাণ্ডীব হাতে তুলে নেন অর্জুন। আহ্বান করেন দিব্যাস্ত্র। কিন্তু সেদিন হাজার চেষ্টা করেও দিব্যাস্ত্র আহ্বান করবার কৌশল মনে করতে পারেননি তিনি। শেষে বাধ্য হয়ে রথ থেকে নেমে গাণ্ডীব দিয়ে আঘাত করতে থাকেন দস্যুদের। অনায়াসে কৃষ্ণের স্ত্রীদের হরণ করে নিয়ে যায় দস্যুরা… পরাজিত হন অর্জুন! এটাই অর্জুনের জীবনের শেষ যুদ্ধ।

জীবনের শেষ যুদ্ধে কর্ণ দিব্যাস্ত্র আহ্বান করবার কৌশল মনে করতে পারেননি। জীবনের শেষ যুদ্ধে অর্জুনও দিব্যাস্ত্র আহ্বান করবার কৌশল ভুলে গিয়েছিলেন। জীবনের শেষ যুদ্ধের অন্তিম মুহূর্তে কর্ণ রথের উপরে ছিলেন না। জীবনের শেষ যুদ্ধের অন্তিম মুহূর্তে অর্জুনও রথের উপর থেকে নেমে এসে ছিলেন। জীবনের শেষ যুদ্ধে কর্ণ হারিয়ে ছিলেন তাঁর প্রাণ। জীবনের শেষ যুদ্ধে অর্জুন হারিয়ে ছিলেন তাঁর সম্মান! মহর্ষি ব্যাসের কি অদ্ভুত বিচার!

সূতপুত্র, সূর্যপুত্র, কৌন্তেয়, রাধেয়, দানবীর, অঙ্গরাজ কর্ণের চরিত্র বিশ্লেষণ করা আমার ক্ষমতার বাইরে। নিঃসন্দেহে তিনি মহাভারতের সবচাইতে ক্যারিশম্যাটিক চরিত্র। তাঁর চরিত্রে ছিল কুন্তীর সৌন্দর্যের সঙ্গে সূর্যের তেজের মিশেল… যে তেজের কাছে বাসুদেব কৃষ্ণের চারিত্রিক তেজকেও মলিন লাগে। তিনি বেঁচে থাকতে পদে পদে অপমান এবং বঞ্চনার স্বীকার হয়ে ছিলেন। মহাভারতের কবি ও স্বয়ং মহাকাল সেই বঞ্চনার প্রতি সুবিচার করবার জন্যই হয়তো মৃত্যুর পরেও কর্ণকে বাঁচিয়ে রেখেছেন মহাভারতের চরিত্র এবং আধুনিক ভারতবাসীর হৃদয়ে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে কর্ণের নামে তর্পন করেছিলেন যুধিষ্ঠির। কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলেছিলেন, “কুরু রাজসভায় দ্যূতক্রীড়ার দিন যখন একে একে সব হারছি… প্রচন্ড রাগ ও হতাশায় ভুগতে ভুগতে হঠাৎ চোখ পড়েছিল কর্ণের পায়ের পাতার দিকে। দেখে ছিলাম, মা কুন্তীর পায়ের পাতার সঙ্গে কি অবিশ্বাস্য মিল! কেন সেদিন বুঝতে পারলাম না? বুঝলে তো আজ এই মহাপাপ করতে হতো না”।

আর আধুনিক ভারত? আধুনিক ভারত কি কর্ণকে মনে রেখেছে? কর্ণ ছিলেন সূর্যের উপাসক…অঙ্গদেশের রাজা। মহাভারতের অঙ্গদেশ হলো আজকের বিহার। কোনো কোনো মহাভারত বিশেষজ্ঞের ধারণা, প্রাক্তন রাজা কর্ণের সূর্যবন্দনাকে আজও বিহারবাসী জীবিত রেখেছেন ছট পুজোর মাধ্যমে। আমি জানিনা তাঁদের এই ধারণা ঠিক না ভুল। কিন্তু যদি ঠিক হয়, তাহলে বলবো যে কর্ণের জীবনের সমস্ত অপমান ও বঞ্চনা নিজের হাতে ধুয়ে মুছে দিয়েছেন স্বয়ং মহাকাল… মহাকাল যার মাথায় হাত রাখেন, কোনো অঞ্জলিক তাকে মারতে পারে না।

পুনশ্চ : কালীপ্রসন্ন সিংহের মতে কর্ণ রথের চাকা বসে যাওয়ার পর দু’বার মাটিতে নেমে ছিলেন। প্রথমবার অর্জুন দিব্যাস্ত্র তুলে নেওয়ার পরে, দ্বিতীয়বার অর্জুন অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরে। কিন্তু রাজশেখর বসুর মতে কর্ণ একবারই মাটিতে নেমে ছিলেন… অর্জুন অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরে। মহাভারতের এই দুটি অথেনটিক ভার্সন এর মধ্যে এই সামান্য তারতম্যের জন্য যুক্তির আকাশপাতাল পার্থক্য ঘটে যায়। তাছাড়া কর্ণের জীবনের অন্তিম যুদ্ধ এতটাই ঘটনাবহুল যে প্রতিটি লাইন ভালো করে না পড়ে ও না বুঝে লেখার চেষ্টা করাটা বাতুলতা… ভুল হতে বাধ্য। দুটি ভার্সন বারংবার ভালো করে পড়ে, সিকোয়েন্স অফ ইভেন্ট সাজিয়ে লিখতে গিয়েই আমার এতো দেরী হয়ে গেল। এরপরেও হয়তো কিছু ভুল থেকে গেছে। থাকলে ক্ষমা করে দেবেন। কর্ণের মনস্ত্বাত্তিক ব্যাপারটা পুরোটাই আমার অনুমান… আমার ভুলও হতে পারে।

তথ্যসূত্র :

(১) মহাভারত : মহর্ষি বেদব্যাস বিরচিত, শ্রী কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত (দ্বিতীয় খন্ড), (২) কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত “মহাভারত” সারানুবাদ : রাজশেখর বসু, (৩) ইন্টারনেট


আপনার মতামত লিখুন :

5 responses to “কর্ণ এবং তাঁর রথের চাকা : ডা. ইন্দ্রনীল আইচ”

  1. Tithi roy says:

    আমার পছন্দের চরিত্র কে এতো সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন‍্য ধন্যবাদ। কি জানি কর্ণ সম্পর্কে কখনো কিছু পরলেই বা শুনলেই চোখ দিয়ে জল পরতে থাকে। আনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা প্রনাম নেবেন।

  2. বিপলব বিশ্বাস says:

    আমার একটা প্রশ্ন যে, কর্ণের রথের চাকা কেন ভুমিতে পুতে গিয়েছিল। কোন অভিশাপের কারণে এমন ঘটনা ঘটলো। প্লিজ

  3. Santosh Kumar Mandal says:

    অনবদ্য বিশ্লেষন,খুব ভালো লাগলো।

  4. সুকান্ত নাহা says:

    আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সুন্দর বিশ্লেষণ।

  5. সৌরভ ঘোষ says:

    কর্ণের রথের নাম কি ছিল?

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন