ছোটবেলায় রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে একটি ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে কাগজ পোড়ানোর চেষ্টা করেছি আমরা কম বেশি সবাই। আর এই টেকনিকই কাজে লাগিয়ে নিপুণ দক্ষতায় শিল্প সৃষ্টি করেছেন মাইকেল পাপাডাকিস (Michael Papadakis)। আর্ট সৃষ্টির সর্বত্রব্যাপ্ত। এই ব্যাপক দৃষ্টিকোন থেকে শিল্পকলাকে বোঝার চেষ্টায় সফল হয়েছেন মাইকেল।
শিল্পীর ছবি আঁকার তুলি (Brush) হলো ম্যাগনিফাইং গ্লাস এর দ্বারা উৎপাদিত সূর্যের শক্তিশালী রশ্মি এবং ছবির চিত্রপট (canvas) হলো কাঠ (wooden sheets)। বর্তমানে কাঠের ক্যানভাস ছাড়াও তিনি কাঁচ, মেটাল, চামড়া, পাথর ব্যবহার করেন।
ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ৩০ বছর বয়সী এই গ্রীক-আমেরিকান শিল্পী একটি ম্যাগনিফাইং গ্লাসের মাধ্যমে প্রতিসৃত এবং প্রতিফলিত (refracted and reflected) সূর্যালোক ব্যবহার করে কাঠের উপর শিল্প তৈরি করেন। ব্রাশের পরিবর্তে তার কয়েক ডজন ম্যাগনিফাইং গ্লাস রয়েছে যা তিনি কাঠের ক্যানভাস থেকে অল্প দূরত্বে রেখে ব্যবহার করেন। শক্তিশালী সূর্যের রশ্মিকে ছোট ছোট জায়গায় ফোকাস করে কাঠ পুড়িয়ে কালো বা ব্রাউন রং উৎপন্ন করে সব ছবি গুলোর ইমেজ তৈরী করা হয়। এই উৎপাদিত কালো বা ব্রাউন রং-ই ওনার ছবির রং — এ এক বিশেষ অনন্য শিল্পের টেকনিক আবিষ্কার।
কলেজ শেষ করার পর নিজের শিল্পী সত্বাকে খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেন মাইকেল। চীনের জিনজিয়াং (Xinjiang province) প্রদেশের একটি সম্প্রদায়ের সঙ্গে থাকাকালীন এক বন্ধুর টেবিলে একটি ম্যাগনিফাইং গ্লাস ও জানালা দিয়ে আগত সূর্যের আলো দিয়ে শিল্প সৃষ্টির কনসেপ্ট তাঁর মনে আসে প্রথম।
এরপর সূর্যকে পথপ্রদর্শক করে এক হাতে একটি ম্যাগনিফাইং গ্লাস এবং অন্য হাতে কাঠের টুকরো নিয়ে পামির পর্বতশ্রেণীর উচ্চ মালভূমি জুড়ে ১৪ মাস ভ্রমণ করেন। স্থানীয় মানুষের জন্য সূর্যালোক শিল্প তৈরি করেন। এটি ছিলো তাঁর জীবনের একটি “রৌদ্রোজ্জ্বল” সময়। তারপর মঙ্গোলিয়া, চীন, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক এবং গ্রিস পেরিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরেন।
এখান থেকে তিনি ম্যাগনিফাইং চশমার ব্যবহার করা বন্ধ করে ফ্রেসনেল লেন্স এবং সৌর সংগ্রাহক (Fresnel lenses and solar collectors) সঙ্গী করেন।
২০১৩ সালে দেশে ফিরে আসার পর, তিনি কলোরাডোতে চলে যান এবং সূর্যালোকের বিভিন্ন রূপ নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন। তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে প্রতিসৃত সূর্যালোক এবং প্রতিফলিত সূর্যালোক একে অপরের থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেন তারা দুই বিপরীত মেরুর, যেমন জল বনাম বরফ, বা ইতিবাচক বনাম নেতিবাচক গোছের। সূর্যালোকের এই দুটি রূপ একে অপরের প্রতিটা দিক থেকে বিরোধিতা করে, তবুও যখন একত্রিত হয়, সুন্দরভাবে একে অপরের প্রশংসা করে।
যে কোন একটা চিত্র সম্পূর্ণ করতে কয়েক ঘণ্টা থেকে সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। দরকার পড়ে অসম্ভব ধৈর্যের। তিনি অ্যারে বা আয়না ব্যবহার করেন ক্যানভাসের বড়ো অংশ ও ম্যাগনিফায়িং গ্লাস ব্যবহার করা হয় ছোট অংশ পোড়ানোর জন্য। শীত এবং গ্রীষ্মের জন্য আলাদা আলাদা ক্যানভাস ও টেকনিক ব্যবহার করা হয়।
এই আর্টকে বলা হয় “হেলিওগ্রাফি”।
হেলিওগ্রাফি (ফরাসি ভাষায়, héliographie) হেলিওস (গ্রীক), যার অর্থ “সূর্য”, এবং গ্রাফেইন (লেখা) হল ফটোগ্রাফিক প্রক্রিয়া যা ১৮২২ সালের দিকে জোসেফ নিসেফোর নিপেস দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল। এই ফরাসি উদ্ভাবক (Nicephore Niepce) হেলিওগ্রাফি নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রথম ছবি ক্যাপচার করে সমগ্র বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন। ফটোগ্রাফির এই আবিস্কার এবং বিকাশ শিল্প বিপ্লবের চাকাকে গতিশীল করেছিল।
ছবি আঁকার সময় তিনি নিজের “নিরাপত্তা”-এর বিশেষ খেয়াল রাখেন। শিল্প সৃষ্টির সময় সূর্যরশ্মি যাতে চোখের ক্ষতি করতে না পারে চোখের জন্য ইউভি (UV) সুরক্ষামূলক চশমা এবং ত্বকের সুরক্ষর জন্য ইউভি (UV) সুরক্ষামূলক পোশাক ব্যবহার করেন। তার হাতে সবসময়ই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকে এবং কখনোই এমন কোন এলাকায় কাজ করেন না যেখানে জ্বলনযোগ্য পদার্থ বা দাবানলের আশঙ্কা থাকে।
“দ্য ন্যাশনাল হেরাল্ড”-এর একটি সাক্ষাৎকারে মাইকেল জানান, সূর্যের রশ্মি ব্যবহার করার শিকড় বহু শতাব্দী পুরানো। আর্কিমিডিস এই টেকনিক ব্যবহার করতেন অস্ত্র তৈরি করতে। বর্তমানে তিনি ব্যবহার করেন শান্তিপূর্ণ এবং সুন্দর কিছু তৈরি করতে।
২০১৬ সালে, তিনি এই আর্ট ফর্মটি বিশ্বের সাথে শেয়ার করা শুরু করেন এবং লাইভ ইভেন্টে পারফর্ম করতে শুরু করেন। এক বছর পরে, তিনি যারা শিখতে ইচ্ছুক তাদের শিল্পের এই ফর্মটি শেখাতে শুরু করেছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেন শিশুরা এই ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। তিনি বলেন, “সম্ভবত যদি আমরা খুব অল্প বয়স থেকেই শিশুদের সত্যিকারের সূর্যের শক্তির সঙ্গে পরিচয় করাতে পারি, তাহলে তারা বড় হবে এবং কম বিপর্যয়কারী মানুষ তৈরি হবে। আমি আশা করি যে হেলিওগ্রাফি অন্ধকারে বসবাসকারীদের জন্য আশার ধারনা দিতে পারে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে আলো জ্বলুক!
কোভিড-১৯ এর সময় মাইকেল অনেক কম কাজ করেন। কিন্তু তিনি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিশ্ব সমস্যা এবং বর্তমান ঘটনাগুলিকে একটি বিনয়ী কিন্তু শক্তিশালী উপায়ে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেন।
শিল্পের প্রয়োজন অনুপ্রেরণা এবং সৃজনশীলতা কারণ যখন এই দুটি জিনিসকে একত্রিত করা হলে সৃষ্টি হয় সর্বদা বিমুগ্ধ, বিস্মিত বিশ্বসৃষ্টি। মাইকেল তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা, দক্ষতা একত্রিত করে চিরায়ত ও চিরন্তন নৈসর্গিক প্রকৃতির সূর্যালোকের সাহায্যে শিল্পকে এক তাত্ত্বিক মাত্রা দিয়েছেন। এখানেই তাঁর সার্থকতা।।
Source : various news articles and videos.
বেশ বেশ। ভারী সুন্দর।
A new information… thank you for your sharing
অত্যাশ্চর্য ঘটনা
Great to see such new forms of drawing evolving…Impressive on part of the artist and the writer for bringing up these information 😊.
সবাইকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ🌹🌹