সোমবার | ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৪৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ছিলেন আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত লিখছেন জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় / ১২৮২ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২

অক্টোবর, ১৮৫৩। ইউরোপের কৃষ্ণসাগরের চার পাশের দেশগুলো প্রচণ্ড শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছে। তার মধ্যেই চলছে জারের বিরুদ্ধে প্রবল যুদ্ধ। ফ্রান্স, ব্রিটেন, তংকালীন অটোমান সম্রাজ্যের সম্মিলিত শক্তি। এই যুদ্ধ ক্রিমিয়ার যুদ্ধ নামে খ্যাত। হাসপাতালগুলি ভরে উঠেছে অসুস্থ সৈনিকে। হাজার হাজার সৈনিক প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। এখানে সেখানে পড়ে আছে নিথর দেহ। একদিকে মাটি দখলের লড়াই, আর একদিকে প্রাণঘাতী চোট-আঘাত, বিষাক্ত সংক্রমণ, মৃত্যুমিছিল। এইরকম পরিস্থিতি ব্রিটেনের যুদ্ধ-সচিব সিডনি হার্বাট বেশ বিচলিত। সৈন্যদের সেবা শুশ্রুষা করে সুস্থ না করে তুললে অচিরেই যুদ্ধে পরাজয় মেনে নিতে হবে। তাই তিনি কালবিলম্ব না করে আটত্রিশ জনের একটি অভিজ্ঞ নার্স দলকে ক্রিমিয়ায় পাঠানোর মনস্থির করলেন। যার ওপর দায়িত্ব দিলেন তিনি মধ্য তিরিশের যুবতী, শান্ত, বুদ্ধিমতী বিচক্ষণ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। সিডনি হার্বাটের অভিজ্ঞ চোখ বুঝেছিল এই মেয়েই এই কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিতে পারবে। ফ্লোরেন্সই প্রথম মহিলা নার্স, যিনি সৈন্যদলের হাসপাতালে সুপার নিযুক্ত হয়েছিলেন।

উনিশ শতকের সেনা কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা ভাল চোখে দেখেনি। ফ্লোরেন্সকে তাই নিজের ‘মিশন’ সফল করতে ক্ষমতার সঙ্গেও লড়তে হয়েছিল। হাসপাতালে পৌঁছে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে নিজের কর্তব্য স্থির করলেন তিনি। হাসপাতালগুলোর পরিবেশ দেখে একই সঙ্গে অবাক ও হতাশ হলেন তিনি। চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংরা জঞ্জালে ভর্তি। নার্সিংয়ের কাজে যে জিনিস সবার আগে চাই, সেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটেশন বা স্যানিটাইজ়েশনের নামগন্ধও নেই। সর্বত্র ইঁদুর ঘুরে বেড়াচ্ছে, মাছির ভনভন। মিলিটারি হাসপাতালের এ রকম বিশ্রী অবস্থা! এই চূড়ান্ত অব্যবস্থা আর বিশৃঙ্খলা সামলে, সেবার মন নিয়ে আহত আক্রান্ত মানুষকে সুস্থ করে তোলার সাহস দেখানোও বিরাট একটা কাজ। সেই সাহস দেখিয়েছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।

যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তিনি ও তাঁর দল নেমে পড়লেন হাসপাতালগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে এবং রোগীদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের জোগান নিশ্চিত করতে। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম কিছুদিনের মধ্যে মৃত্যুহারকে ৮২ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনে। তাঁর এই সাফল্য তাঁকে আরো উজ্জীবিত করে তুললো। তিনি রাতের বেলা একটা লণ্ঠন হাতে প্রায় তিন-চার মাইল পথ অতিক্রম করে সৈন্যদের সাথে দেখা করতেন, কে কিরকম আছে খোঁজ নিতেন, প্রয়োজনে কারুর বাড়িতে চিঠি লিখে দিতেন, টাকা পাঠাতেন, অসুস্থ সৈন্যদের মনকে চাঙ্গা করে তুলতে নিত্য নতুন পথ অবলম্বন করতেন।

১৮৫৯ সালে প্রকাশিত চার্লস ডারউইনের ‘অরিজিন অব স্পিশিজ়’ জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী বই। ওই বছরেই বেরিয়েছিল ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের লেখা বই ‘নোটস অন নার্সিং’। ছোট্ট বই, প্রথম সংস্করণে পৃষ্ঠাসংখ্যা আশিও ছাড়ায়নি। চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবার অতি গুরুত্বপূর্ণ এক দলিল এই বইয়ের পাতায় পাতায় সহজ সুন্দর ভাষায় লেখা আছে স্বাস্থ্যবিধির জরুরি পাঠ। কিভাবে তুমি শুধু নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নয়, যেখানে অসুস্থ মানুষ থাকবে সেই পরিবেশকে কিভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে তারই পাঠ। মনে রাখতে হবে এই সবই অজানা আর অবিশ্বাস্য ছিল উনিশ শতকের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে। ‘নোটস অন নার্সিং’ বইটির একটি উপশিরোনাম আছে: ‘হোয়াট ইট ইজ় অ্যান্ড হোয়াট ইট ইজ় নট’। এ থেকেই পরিষ্কার, ফ্লোরেন্স আসলে নার্সিংয়ের বর্ণপরিচয় লিখছিলেন।

১৮২০ সালের ১২ মে ইটালির ফ্লোরেন্সে জন্ম নেওয়া মেয়েটির নামকরণ হয়েছিল সুন্দর শহরটার নামেই। পরের বছরই তাঁর পরিবার চলে আসে ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারে। ফ্লোরেন্সর বাবার নাম উইলিয়াম এডওয়ার্ড নাইটিংগেল ও মায়ের নাম ফ্রান্সিস নাইটিংগেল। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন অনেক মেয়েই শিক্ষা কী তা বুঝত না। সেক্ষেত্রে ফ্লোরেন্সের ভাগ্য ছিল খুবই ভালো, তার বাবা উইলিয়াম বিশ্বাস করতেন, মেয়েদেরও শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত। তিনি ফ্লোরেন্স ও তার বোনকে নানা বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। মেয়েদের পড়িয়েছেন বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস ও দর্শন। তিনিই প্রথম পরিসংখ্যানগত তথ্য উপস্থাপনের জন্য ডায়াগ্রামের ব্যবহার করেন।

মাত্র ১৭ বছর বয়সেই নাইটিঙ্গেল বিশ্বাস করতেন স্রষ্টা তাকে সেবিকা হওয়ার জন্যই পাঠিয়েছেন। এ কাজে আগ্রহ প্রকাশ করলে মা-বাবা রাজি হননি। কিন্তু জেদি মেয়ে ফ্লোরেন্স ১৮৫১ সালে নার্সের প্রশিক্ষণ নিতে পারি দিলেন জার্মানিতে। শিক্ষা সমাপ্ত করে ফিরে এসেই তিনি লন্ডনের ‘কেয়ার অব সিক জেন্টলওমেন ইনস্টিটিউটের’ তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৮৫৩ সালে ক্রমিয়ার যুদ্ধে যোগদান করলেন।

ইংল্যান্ড এ ফিরে আসার পর নাইটিঙ্গেল কে জাতীয় নায়িকা হিসেবে স্বাগত জানানো হয়। এই যুদ্ধ তাকে প্রমাণ করার সুযোগ করে দেয়েছিল যে, কিভাবে প্রশিক্ষিত নার্স, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি এবং সুব্যবস্থা জীবন বাঁচাতে পারে। ১৮৫৬ সালের সেপ্টেম্বের রানী ভিক্টোরিয়া তাকে স্কটল্যান্ডে তার প্রাসাদে ডেকে পাঠান এবং তারই পরামর্শ অনুসারে রয়েল কমিশনাল হাসপাতাল তৈরি করেন এবং নার্সিং-এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন, যার নাম ‘কিংস কলেজ ট্রেনিং স্কুল ফর মিড-ওয়াইফ’। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে ৪৫ হাজার পাউন্ড পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। কিন্তু পারিশ্রমিকের টাকা নিজের জন্য ব্যয় না করে তিনি ‘নাইটিঙ্গেল’ নামক ফান্ডে সব জমা রাখেন এবং সর্বপ্রথম লন্ডনে সেন্ট টমাস হাসপাতালে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারটি হলো ‘রয়েল রেড ক্রস’। ১৮৮৩ সালে রানী ভিক্টোরিয়া তাঁকে এ পদক প্রদান করেন। এ ছাড়া প্রথম নারী হিসেবে অর্জন করেন ‘অর্ডার অব মেরিট’ খেতাব। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে নার্সিং-এর জননী বলা হয়। তার আত্মত্যাগ ও চিন্তা-চেতনার জন্য বিশ্বের অন্য পেশা থেকে এ পেশা ব্যতিক্রমধর্মী সেবামূলক পেশা হিসেবে বিবেচিত হয়।

বহু মনীষী ফ্লোরেন্সকে ঈশ্বরের দূত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এখন যারা এ পেশায় নতুন আসেন তারা ‘নাইটিঙ্গেল প্লেজ’ নামে একটি শপথ গ্রহণ করে তার প্রতি সম্মান জানান। তার সম্মানেই ১৯৭৪ সাল থেকে তার জন্মদিন ১২ মে পালিত হয়ে আসছে ‘ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে’। ইস্তাম্বুলে তার নামে চারটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। লন্ডনের ওয়াটারলু ও ডার্বিতে রয়েছে তার প্রতিকৃতি। লন্ডনের সেন্ট থোমাস হসপিটালে রয়েছে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল মিউজিয়াম। ব্রিটিশ লাইব্রেরি সাউন্ড আর্কাইভে সংরক্ষিত রয়েছে তার কণ্ঠস্বর। ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামে একটি নাটক মঞ্চায়িত হয় ১৯২৯ সালে, যার নামভূমিকায় অভিনয় করেন এডিথ ইভানস। তার জীবনী নিয়ে চারটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ১৯১২, ১৯১৫, ১৯৩৬ ও ১৯৫১ সালে।

১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট ৯০ বছর বয়সে এই মহীয়সী নারী চলে যান। মৃত্যুর সময় তিনি নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ারে সেন্ট মার্গারেট চার্চে তাকে সমাহিত করা হয়।

তথ্য অন্তর্জাল থেকে সংগ্রহ করেছি।


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ছিলেন আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত লিখছেন জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়”

  1. Raul Rihan says:

    Sir কাজলদিঘী উপন্যাসটি কি অসমাপ্তই থেকে যাবে? Please ওটার নতুন কিস্তি শুরু করুননা।🥺🥺🙏🏼🙏🏼🙏🏼

  2. Rahul Rihan says:

    Sir কাজলদিঘী উপন্যাসটি কি অসমাপ্তই থেকে যাবে? Please ওটার নতুন কিস্তি শুরু করুননা।🥺🥺🙏🏼🙏🏼🙏🏼

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন