মঙ্গলবার | ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:৪১
Logo
এই মুহূর্তে ::
মমতার স্পষ্ট বার্তা — আগে বাংলার মানুষ আলু খাবে, তারপর বাইরে পাঠানো হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (দ্বিতীয় পর্ব) : রহমান হাবিব লঙ্কা চাষ বাড়ছে, লাভবান চাষিরা, রপ্তানি বাড়াতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পাশাপাশি, তবে প্রাণ নেই, চিহ্ন বইছে ভেলুগোন্ডা, রবিবার জল সরার পরে : অশোক মজুমদার নলিনী বেরার কবিতা — স্বভূমি, স্বদেশ, স্বজন : ড. পুরুষোত্তম সিংহ অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (প্রথম পর্ব) : রহমান হাবিব রংবাহারি ক্যাপসিকাম : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যের কৃষকমান্ডিতে কৃষকদের ধান বিক্রিতে দালাল মুক্ত করার নির্দেশ সরকারের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘উচ্ছেদ’ আমাদের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং নানা মত : তপন মল্লিক চৌধুরী বেঙ্গল গোট গ্রামীণ অর্থনীতিতে এনে দিতে পারে স্বচ্ছলতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পিটার নাজারেথ-এর ছোটগল্প ‘মালদার’ অনুবাদ মাসুদ খান আমরা নারী-আমরাও পারি : প্রসেনজিৎ দাস ঝুম্পা লাহিড়ীর ছোট গল্প “একটি সাময়িক ব্যাপার”-এ অস্তিত্ববাদ : সহদেব রায় ঝুম্পা লাহিড়ী-র ছোটগল্প ‘একটি সাময়িক বিষয়’ অনুবাদ মনোজিৎকুমার দাস ঠাকুর আমার মতাে চিরকালের গৃহীর চিরগুরু : সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ভাবাদিঘির জট এখনও কাটেনি, বিষ্ণুপুর থেকে জয়রামবাটি রেল চলাচল শীঘ্রই : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (শেষ পর্ব) : অভিজিৎ রায় উৎপন্না একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মারাঠাভুমে লাডকি বহিন থেকে জয়, ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী প্রচারে হার : তপন মল্লিক চৌধুরী কিন্নর-কৈলাসের পথে : বিদিশা বসু হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (চতুর্থ পর্ব) : অভিজিৎ রায় ভনিতাহীন চলন, সাইফুর রহমানের গল্প : অমর মিত্র সাইফুর রহমান-এর বড়োগল্প ‘করোনা ও কফিন’ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (তৃতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় নানা পরিচয়ে গৌরী আইয়ুব : গোলাম মুরশিদ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায়
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কাজলদীঘি (২৩৩ নং কিস্তি) : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় / ২৪৬৯ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০
kajaldighi

গাড়িগুলো যেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে, মানুষগুলোও তেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে। অনিসা, অনন্যদের গ্রুপটা একটা জায়গায় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকের হাতে চায়ের গ্লাস। বুঝলাম চা ওখান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আফতাবভাই ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে।
আমি ভোলার দোকানে এসে ঢুকলাম। পেছন পেছন নীরু, কনিষ্করা।
মাত্র দুটো ছানার জিলিপি পড়ে আছে। ভোলা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
কাউকে দিতে হবে না আমাকে দে। নীরু বলে উঠলো।
বানাস নি কেন? কনিষ্ক বললো।
কতো বানাব। দুশোটা বানিয়েছিলাম বড়োমা নিয়ে নিয়েছে।
কনিষ্ক হেসে ফেললো।
ও দুটো নীরুকে দিয়ে দে। আমি বললাম।
গোটা কয় দানাদার পরে রয়েছে।
চিনির ডেলা? কনিষ্ক বললো।
কোন দিন ভোলার কাছে চিনির ডেলা খেয়েছ?
ওটাও কি বড়োমা নিয়ে নিয়েছে?
কি করবো, তিনরকমের মিষ্টি বানিয়েছিলাম। বড়োমা দুশোটা করে নিল। বাকি যে টুকু আছে তোমাদের জন্য। গাঁয়ের ঘরে অতো ছানা পাই কোথা বলো।
নীরু আমার পাশে বসেছে।
ভোলা সকলকে প্লেটে করে দিল।
মিত্রা, তনু, ইসি, নয়না দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল।
ভোলা চা দেবে না।
একটু দাঁড়ান দিচ্ছি।
মিত্রা একবার নীচু হয়ে দোকানের ভেতর উঁকি মারলো।
তনু ওই দ্যাখ। খুঁজে পাচ্ছিলি না।
মিত্রা ভেতর এলো। পেছন পেছন ওরা সবাই। নীরুর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
নীরু ছানার জিলিপি মন দিয়ে খাচ্ছে। নীরু একবার টেরিয়ে মিত্রার দিকে তাকাল।
বন্ধুর পাশে একটু চান্স হবে। মিত্রা বললো।
না।
তনু শব্দ করে হাসলো।
নীরু গম্ভীর হয়ে তাকাল তনুর দিকে।
এত হাসি কিসের।
আমাদের ভাগে কম পরে যাচ্ছে।
কনিষ্ককে বলো।
তুই আবার শুরু করলি। কনিষ্ক বললো।
নীরু হেসে ফেললো।
বৌটা কি মাইরি, স্বামীকে কোথায় পাশে থেকে একটু-আধটু সাপোর্ট করবে, তা না ফুরুত ফুরুত করে উড়ে বেরাচ্ছে।
মিত্রারা হেসেই যাচ্ছে, এবার ভোলা পর্যন্ত হেসে ফেললো।
তুই হাসছিস কেনরে মর্কট। নীরু ভোলার দিকে তাকাল।
তোমার জন্য দুটো রসগোল্লা আলাদা সরিয়ে রেখেছি।
দে। নীরু গম্ভীর।
ভোলা নীরুকে রসগোল্লা দিল, আমাদের সকলকে দানাদার দিল।
অনিকেত। বটা বললো।
অনিকেত জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল বটার দিকে।
আমাদের নার্সিংহোমে প্যাথলজি সেকসনের ওই অপারেটর ছেলেটার নাম যেন কি, ভুলে গেছি।
নীরু শরীর কাঁপিয়ে হে হে করে হাসতে হাসতে হাতের ডিসটা পায়ের কাছে নামিয়ে রাখলো।
আমি বটার দিকে তাকালাম। সবাই কম বেশি মুচকি মুচকি হাসছে।
তোকে বলবো। এই কেশটা তুই ভাল ট্যাকেল করতে পারবি। বটা গম্ভীর, তবু হাসছে।
বেশিদিন আগের নয় সপ্তাহ তিনেক আগের কেস।
হারামী। না বললে পেটের ভাত হজম হচ্ছে না। নীরু চেঁচালো।
মিত্রারা মুচকি মুচকি হাসছে। বেঞ্চে বসেছে। ভোলা চা দিচ্ছে সকলকে।
বটা। কনিষ্ক বললো।
এখন ছাড়িস না। বটা তাকিয়েছে কনিষ্কর দিকে।
অনেকটা রাস্তা।
আমি নীরুর দিকে তাকিয়েছি।
না রে অনি, বটার গল্প, বুঝিস তো। নীরু বাঁ কপালে আঙুল ছুঁইয়ে ইসারা করলো হেডে মাথা নেই।
তুই যে ওকে হারামী বললি। আমি বললাম।
ও তো সব সময় বলি।
অনিকেত মনে হয় মিত্রাদের ফিস ফিস করেছে। মিত্রারা সকলে জোড়ে হেসে উঠলো।
আমি মিত্রাদের দিকে তাকালাম। নীরু, অনিকেতের দিকে তাকাল।
ওমনি লাগান-ভাগান চালু।
মিত্রারা তখন নীরুর দিকে তাকিয়ে হেসেই চলেছে।
ওর অতো খাই ঢুকলে বাই কিসের? নীরু আবার ঝাঁঝিয়ে উঠলো।
কনিষ্ক, বটা ফিক ফিক করছে।
তুই বল শুনি। আমি বললাম।
সবার সামনে বলা যাবে না। তোকে আলাদা করে বলবো। মাঝে মাঝে ওরকম মিস ক্যারি হয়ে যায়।
মিস ক্যারি হয়ে যায় মানে!
আমার নয়।
মিত্রাদের হাসি থামে নি। নীরু একটা একটা কথা বলে মিত্রারা হাসে।
এই ভোলা, বড়োমাদের চা দিয়ে আয়। নীরু বললো।
বড়োমাদের চা দেওয়া হয়ে গেছে।
আর একবার দিয়ে আয়।
বলো না, দোকানের বাইরে গিয়ে একটু দাঁড়া।
এতোই যখন বোঝ, যাচ্ছ না কেন।
ভোলা হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
আমি নীরুর দিকে তাকিয়েছি।
অপারেসনটা ঠিক ঠাকই করেছিলাম বুঝলি, কি করে যে আবার বেধে গেল বুঝতে পারছি না।
গিঁট মারতে ভুলে গেছলি। আমি বললাম।
সকলে আবার জোড়ে হেসে উঠলো।
শ্রীপর্ণা কি করেলো কি জানি, পুরো কেশ আমার ঘারে। ভাগ্যিস আইন আদালত পর্যন্ত গড়ায় নি। তাহলে আমার রেজিস্ট্রেসন ক্যানসেল। বাটি নিয়ে গড়িয়াহাট ব্রিজের তলা। বাবু একটা টাকা দেবেন চা খাব।
আমি নীরুর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছি।
ব্যাটাকে বলেছি, তোর বৌ-এরটা আর অপারেসন হবে না। তোরটা করিয়ে নে। ব্যাটা কিছুতেই রাজি হলো না। বলেছি মর ব্যাটা, আমি কিছু জানি না।
মিত্রারা ঢেউ তুলে তুলে হাসছে।
ওরে বাবারে দিদি আর পারছি না। হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যাবে। তনু বললো।
দিদি এই ডাক্তারদের পাল্লায় পরলে আমারা তো গিও।
কেন তুমি বাধিয়েছ নাকি? তোমারটা ঠিক ঠাক অপারেসন করে দেব। সারা জীবনের মতো নিশ্চিন্ত। নীরু বললো।
ওরা হেসেই যাচ্ছে।
তোকে দিয়ে করাব কেন? আমি বললাম।
সরি সরি ভুল হয়েগেছে।
দ্বিতীয়বার যেন না হয়।
কিগো মিত্রাদি এত হাসি কিসের? শ্রীপর্ণা নীচু হয়ে দোকানে ঢুকলো।
শ্রীপর্ণাকে দেখে মিত্রারা আবার এক চোট ঢেউ তুলে তুলে হেসে নিল।
শ্রীপর্ণা প্রথমটা ধরতে পারে নি। অনিকেত ইসারায় বললো, সেই কেশ।
শ্রীপর্ণা হেসে ফেললো। সে তো ওর ফল্ট।
আমার কিসের? নীরু খিঁচিয়ে উঠলো।
কেন তোমায় যখন বললাম, এখানে ভেসাকটমি লেখা আছে, হাজবেন্ড সাইন করেছে, তুমি বললে সবে মাত্র প্রথম ক্যারি করলো ভেসাকটমি কিসের, শেলাই করে ছেড়ে দাও।
শ্রীপর্ণা মিত্রার দিকে তাকাল।
বলো মিত্রাদি। পেসেন্ট ওর, আমাকে যেভাবে ইনস্ট্রাকসন দেবে, আমি সেইভাবে কাজ করবো। আমিও ক্লিন করে শেলাই করে ছেড়ে দিয়েছি। রেজাল্ট যা হবার তাই হয়েছে, সাত-আট মাস পর আবার ভদ্রমহিলা ক্যারি করেছে।
হাসি থেমে নেই।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। নীরুর দিকে তাকালাম।
ডাক্তারীশাস্ত্র তুই বুঝিস না, নো ঝামেলা। নীরু চেঁচাল।
দোকানের বাইরে এলাম।
নেপলারা দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। আমাকে দেখে ওখান থেকেই চেঁচাল।
বেরবে তো?
ওরা সবাই রেডি।
অনেকক্ষণ।
যে যার মতো গাড়িতে উঠে বসলাম। আবার যাত্রা শুরু।
এবার আমাদের গাড়ি সবার পেছনে। একেবারে প্রথম গাড়িটা অনিমেষদাদের, দ্বিতীয়টা বড়োমাদের। পরপর লাইন দিয়ে গাড়ি চলেছে। সবার পেছনের গাড়িটায় বাসুরা বসেছে ওই গাড়িতে ছুড়কিরাও রয়েছে।
নার্সিংহোম পেরিয়ে হাইওয়েতে গাড়িটা এসে দাঁড়াল। দেখলাম, অনিমেষদাদের গাড়ির সামনে সুকান্ত দাঁড়িয়ে। বেশ কিছু পুলিশ এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেশ বুঝলাম বড়োবাবুদের হুকুম। দুটো অপরিচিত গাড়ি রয়েছে।
নেপলা আমাদের গাড়িটা সব গাড়িকে টপকে একবারে সামনে নিয়ে এসে দাঁড় করাল।
একটু তফাতে দেখলাম আরও দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে। গাড়ির গায়ে ডাক্তারদের স্টিকার।
অভিমন্যু, ঝিনুক, চিকনা থামার সঙ্গে সঙ্গে পেছনের দরজা খুলে নেমে গেল। নেপলা আমার দিকে তাকিয়ে বিটকেল হাসি হাসলো।
ওই ভাবে হাসছিস কেন?
বোঝ ঠেলা।
নেপলা পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির দিকে চলেগেল।
আমি পেছন দিকে ফিরে কনিষ্কর দিকে তাকালাম।
কিরে কনি, সামনে নতুন গাড়ি পেছনে নতুন গাড়ি, আবার কারা এলো?
তোকে ফর ফর করতে বলেছি। নীরু দাঁত বার করে হাসছে।
অনিসা, অনিকা, নম্রতা আমার গাড়ির দিকে হেঁটে আসছে।
এরা আবার এদিকে কি করতে আসে। কনিষ্ক বললো।
বুকিং করতে। নীরু বললো।
তুই জেনে বসে আছিস। বটা বললো।
অনিসা গাড়ির সামনে এসেই মাম্পির গালটা টিপে দিল।
আমরা খেলছি।
খেলো।
অনিসা আমার মুখের দিকে তাকাল। হাসছে।
বাবা ঝিমলি মনি, শ্রীনিবাসন আঙ্কেল এসেছে।
পেছন ফিরে কনিষ্কর দিকে তাকালাম।
সবারই ইচ্ছা অনিচ্ছা বলে কিছু আছে।
মানে!
মানে আবার কি, অনেকদিন এক সঙ্গে কোথাও যাই নি। তাছাড়া ঝিমলিরা আমাদের মুখে এই সব গল্প শুনেছে, আসার চান্স পায় নি, চান্স পেল….।
নার্সিংহোম ডকে?
তুই চালাস। নীরু ঝাঁঝিয়ে উঠলো।
কিরে নীরু অনি এত ফর ফর করছে কেন?
সামনের দিকে ঘাড় ঘোরালাম। অতীন, নীতিন, বলাই, সাত্যকি দাঁড়িয়ে হাসছে।
আমি সত্যি ওদের দেখে একটু অবাক হয়েগেছি। এরই মধ্যে ওদের মধ্যে চোখে চোখে কথা হলো। সেটা আমার চোখ এড়াল না।
তোরা ধরে কেলাতে পারছিস না। সাত্যকি বললো।
সবাই হাসছে।
ওখানে কি মোচ্ছব করতে যাচ্ছি।
তোর কি। নীরু বললো।
চপ। মাম্পি চেঁচিয়ে উঠলো।
সবাই হেসে ফেললো।
ও। দুষ্টু। এক থাপ্পর।
এ কি রে কনি! তোর মেয়ে তো….। সাত্যকির কথা শেষ হল না।
ওর না। নীরু বললো।
তারমানে!
গাই-বাছুর সমেত রেস্ট্রি হয়েগেছে।
নীরু আঁ আঁ করে উঠলো।
বটারা আবার নীরুর ঘার মাথার চুল থাই চেপে ধরেছে।
বাবা আমরা যাই, মনসা মন্দিরে গিয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলবো।
অনিসারা হাসতে হাসতে চলে গেল।
বলাই হাসতে হাসতেই বললো। সাত্যকি ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না।
বলাই আমার মুখের দিকে তাকাল।
কি রে অনি?
চোখের সামনে দেখছিস তো।
কনি আমার লাগছে। নীরু চেঁচাল।
বললি কেন।
বেশ করেছি।
কনি কনি অনিমেষদা। সাত্যকি নীচু গলায় বললো।
কনি নীরুকে ছেরে দিল।
ছারলি কেন, ধের রাখ, দেখি কতো ক্ষমতা। নীরু চেঁচাল।
গলা টিপে দেব। বটা দাঁতে দাঁত চিপে বললো।
অনিমেষদা, সুকান্ত এসে গেটের সামনে দাঁড়াল।
তোদের এখনো বয়স হলো না।
কনিষ্ক মুখ ঘুরিয়ে নিল। সুকান্ত দেখলাম মুখ টিপে হাসছে।
অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকাল।
তুই একটু নাম।
কেন?
সুকান্ত একটা খবর নিয়ে এসেছে।
ভাল হয়েছে।
আমি অনিমেষদার দিকে তাকালাম। সুকান্ত আমার চোখে চোখ রাখল না। চোখে ইশারা করে, মাথা নীচু করে নিল।
কি খবর?
তুই তো জানিস।
আমি যদি জেনেই থাকি, তুমি এর মধ্যে মাথা গলাচ্ছ কেন?
একটু মন দিয়ে শোন।
শোনার দরকার নেই। সরকার ওকে এই কাজের জন্য পয়সা দেয়। কাজটা ওর।
তুই তো প্যাঁচ মেরে রেখেছিস।
কলা ছাড়িয়ে দেব সব সময়, তারপর গিলবে। কলাটা নিজে ছাড়াতে পারে না। হাতে কুষ্ঠ-ব্যাধি হয়েছে। তাই যদি হয়, আমি থাকতে তোমার কাছে গেছে কি করতে?
এই তো চোখের সামনে তোর কাজের ছিরি দেখছি। এই কারনে গেছে।
ও কি থানার সাব ইনস্পেক্টর, গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেরাবে।
একটা সাজেসন দে।
কিসের সাজেসন? এসপিটা কে? তুমি না ও?
ঠিক আছে, ঠিক আছে অন্যায় হয়েছে।
যাও গাড়িতে গিয়ে বসো। যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
অনিমেষদা আর একটা কথাও বললো না। সুকান্তও আমার দিকে তাকাল না। দুজনেই সুর সুর করে চলে গেল। কনিষ্ক একবার ঘার ঘুরিয়ে ওদের চলে যাওয়া দেখলো।
কেশটা কি অনি? কনিষ্ক আমার মুখের দিকে তাকাল।
আমি হেসেফেললাম।
উরি শালা, এখানেও স্কিম!
সবাই আমাদের দুজনের দিকে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে।
একচুয়েলি তা নয়। কেউ হয়তো অনিমেষদার কানে ফুস করেছে। অনিমেষদা সুকান্তকে ডেকে ক্লারিফাই করেছে। সুকান্ত পুরো দোষটা আমার ঘারে চাপিয়ে দিয়েছে। অনিমেষদা আমার কাছে চলে এসেছে।
তারমানে সুকান্ত ভেতর ভেতর অপারেসন চালিয়ে যাচ্ছে?
তাহলে কি, বসে থাকবে নাকি।
ওই জন্য গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে চারপিশ হাওয়া!
নেপলা, চিকনা, অভিমন্যু, ঝিনুক? নীরু বললো।
তোরা কেউ ধরতে পেরেছিস। কনিষ্ক বললো।
এস ইউজুয়াল গাড়ি থামলে যেমন নামে তেমনি নেমেছে। বটা বললো।
তোর কোর টিম ছাড়া তুই কাউকে বিশ্বাস করিস না, তাই না?
আমি হাসলাম।
কনিষ্ক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
নেপলাকে ডাক। সাত্যকি তোরা গাড়িতে গিয়ে বসে পর।
আঙ্কেল আঙ্কেল হিস। মাম্পি চেঁচিয়ে উঠলো।
কোথায় রে?
সামনে তাকাতে দেখলাম, মাম্পি জামা তুলে দাঁড়িয়ে।
নীরু, বটা জোরে হেসে উঠলো।
আমি মাম্পির প্যান্টটা কোমর থেকে টেনে নামিয়ে গাড়ির থেকে নীচে নেমে দাঁড়ালাম।
আঙ্কেল আমি। মিকি চেঁচাল। বাবানও আঙ্কেল আঙ্কেল করে চেঁচাচ্ছে।
ওদের দুজনকেও নামালাম।
নীরুরা হেসেই চলেছে। বটা, সাত্যকিরাও সবাই হাসছে।
অনি তো বেশ করিতকর্মা হয়ে উঠেছে। সাত্যকি বললো।
তবে কি, এমনি এমনি বললাম তোদের।
নীরু কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে কনিষ্ক হাত তুলেছে।
মারবি না। তুই প্রুভ করে দেখা। আমার কথাটা মিথ্যে। নীরু চেঁচাল।
আমি আবার তিনটেকে গাড়িতে তুললাম। মাম্পিকে প্যান্ট পরালাম।
কিরে সখ মিটছে? মিত্রার গলা পেলাম।
পেছনের দিকে তাকালাম। মিত্রা জানলা দিয়ে মাথা বার করেছে। পাশে তনু। কেউ গম্ভীর নেই।
নারল তুই হিসি করবি। মাম্পি বলে উঠলো।
তোর বাবা করবে। নীরু বলে উঠলো।
মাম্পি কনিষ্কর দিকে তাকাল। যাও যাও মিকির মতো করো।
আবার কথা বলে। আমি বললাম।
ওয়াটার বটল।
মার কাছে পাঠিয়ে দেব। পিঠে গুম গুম দেবে।
কনিষ্ক হাসতে হাসতেই পেছন থেকে ওয়াটার বটলটা নিয়ে মাম্পির হাতে দিল।
নীরু সাত্যকিদের দিকে তাকাল। এবার আমার কথাটা বিশ্বাস হলো।
কনিষ্ক নীরুর দিকে তাকাল।
সরি সরি, আর বলবো না।
নেপলা, অভিমন্যু, ঝিনুক, চিকনা এলো। সবাই হাসছে।
কিরে কাজ মিটলো। কনিষ্ক নেপলার দিকে তাকাল।
বিষ খোপরা বুঝলে কনিষ্কদা।
আজকে জানলি?
জেনেছি অনেকদিন।
ফিডব্যাক দিলি।
আমরা এখন ভদ্রসোভ্য হয়ে যাচ্ছি।
সাত্যকিরা চলে গেল। নেপলারা যে যার মতো নিজের জায়গায় বসলো। আমি নেপলার দিকে তাকালাম। নেপলা তখনো হাসছে। গাড়ির দরজা বন্ধ হলো।
এসি চালাব?
না।
নেপলা গাড়ি স্টার্ট দিল। পাশ দিয়ে রতনের গাড়ি, মিত্রাদের গাড়ি হুস হুস করে বেরিয়ে গেল।
কিরে!
রতনদা চেনে, তাই এগিয়ে গেল।
আমরা ওদের পেছন ধরলাম।
গাড়ি চলছে। মাম্পিরাও গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
দেবা।
বল।
আগের বার যাওয়ার সময় তবু একটু কফি খাইয়েছিল, এবার একবারে শুকনো।
নেপলা একবার আমার মুখের দিকে তাকাল। আমিও তাকালাম। নেপলা ফিক করে হাসলো।
হাসছিস কেন?
হাসি পেল তাই।
আমি সামনের ভিউংগ্লাস দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি।
অভিমন্যু।
কফি নেই। বিস্কুট আছে। চিববে?
নেপলা শরীর কাঁপিয়ে হাসলো।
ওই দেখো! বোকার মতো হাসে?
চিকনা।
গুরুমাকে কিছু বলি নি।
কনিষ্ক, নীরু পেছন থেকে হেসে উঠলো।
আমি পেছন দিকে তাকালাম।
বুঝে হাসলি, না, না বুঝে হাসলি।
তোর হাতড়ান দেখে হাসছি। কনিষ্ক বললো।
তুমি জানো না কনিষ্কদা বড়ো খলিফা। নেপলা বললো।
কনিষ্ক আমার কাঁধে টোকা মারলো। পেছন ফিরে তাকালাম। একটা বিস্কুটের প্যাকেট এগিয়ে দিল। পেছন থেকে অভিমন্যু, চিকনারা হেসেই চলেছে।
বিস্কুটের প্যাকেট হাতে দেখেই তিনজনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তুই না, আমি ফার্স্ট। মাম্পি বললো।
মিকি হাত তুলেছে মারার জন্য।
কাউকে দেব না। একলা খাব।
তিনজনেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
প্যাকেটটা খুলতেই তিনজনে একটা করে নিয়ে নিল। আমি নেপলার দিকে এগিয়ে দিলাম। নেপলা দুটো তুলে নিল।
দেবা ফ্লাক্সটা খোল। কনিষ্ক বললো।
বিস্কুট খাওয়া শেষ হোক।
চিকনা, সুকান্ত কেশ মিটলো? কনিষ্ক বললো।
ও এখন অনির মতো নম্বরি হয়েগেছে।
অনিমেষদাকে কলা-টলা করে অনেক কিছু বলে দিল।
ওর জন্য বৌদি দাদার কাছে কিছুটা কথা শুনলো।
নেপলাদা তোরটা ঢালবো। ঝিনুক চেঁচাল।
হাফ।
কনিষ্ক আমার দিকে কফির কাপ এগিয়ে দিল। মাম্পিরা আবার ঘুরে দাঁড়াল কফির কাপে বিস্কুট ডোবাল।
কনি, তুই এইভাবে ম্যানেজ করতে পারবি না। অনিকেত বললো।
নীরু কনিষ্কর দিকে তাকাল।
কনিষ্ক হাত তুলেছে।
এবার আমি বলি নি। গায়ে কফি পরে যাবে।
সকলে হাসছে।
নেপলা আমরা কাছা কাছি চলে এসেছি। আমি বললাম।
সেই জন্য রতনদা ডান দিকে চাপলো।
হ্যাঁ।
সামনে ওই যে পতাকা উড়ছে।
হ্যাঁ।
বেশিক্ষণ সময় লাগল না। আমরা পৌঁছে গেলাম। অজকে দেখলাম অন্যান্য দিনের তুলনায় ভিড়টা একটু বেশি। সেদিনকার মতো ফাঁকা ফাঁকা নয়। একটু অবাক হলাম।
একটার পর একটা গাড়ি পর পর দাঁড়িয়ে পড়েছে।
মন্দির ঘিরে যারা ভিড় করে আছে। সবাই আমাদের দিকে উৎসুখ চোখে তাকিয়ে।
কিরে অনি আজকে এতো ভিড়ভাট্টা কেন! কনিষ্ক বললো।
আমারও একই প্রশ্ন।
কোন উৎসব-টুৎসব নাকি।
হবো হয়তো, এদেরতো বারো মাসে তেরো পার্বন। আজ এটা কাল সেটা।
নেপলা গাড়ি ঘুরিয়ে মন্দির থেকে একটু দূরে গাড়ি দাঁড় করাল।
আঙ্কেল আমরা চান করবো। মাম্পি বললো।
না। পূজো দেব।
টিপ পরবো।
মাম্পির মুখের দিকে তাকালাম।
নীরুরা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে।
কনিষ্কদা অনিদা কি এউ গাড়িয়ে। দারুর গলা পেলাম।
হ্যাঁ।
গাড়ির জানলায় শিবু-দারুর মুখটা ভেসে উঠলো।
তুর বডিগার্ড গুলান সত্যি জব্বর হইছে। দারু বললো। দু-জনেই হাসছে।
মাম্পি-মিকি একবার ওদের দিকে তাকায় একবার আমার মুখের দিকে তাকায়।
ক্যাডবেরি এনেছে? মাম্পি চোখ মুখ পাকাল।
আনছি, তুই লিচে আয়, দিব।
আজ দুজনের কেউ ঝামেলা করলো না। শিবু গাড়ির দরজা খুলতেই মিকি-মাম্পি দারুর কোলে উঠে পরলো। বাবান শিবুর কোলে।
বড়োমারা কোথায়রে?
শ্যাম আছে সেঠি। দারু বললো।
বাবাঃ, ফুল ব্যাটেলিয়ান?
অনিমেষদা-বিধানদা আইসছে। দারু হাসছে।
এত ভিড় কিসের রে?
মোদের বাহা পরব সরহুল উৎসব চলতিছে।
ওই জন্য মেয়েগুলোর মাথায় শালফুল।
হ।
আজ তাহলে এপাশ দিয়ে যাব না। বড়ো রাস্তা দিয়ে যাব।
হবে নি।
কেন।
বড়োমা আইগেনু কয়া রাখছে।
তোর কি মাথা খারাপ। এতগুলো লোক। বন-বাদারে কিছু হলে….।
তুকে ভাবতে হবে নি। মনকার টুকু আনন্দ করতি ইচ্ছা করে নি।
বাবা।
পেছন ফিরে তাকালাম। অনিসারা সকলে এসে জড়িয়ে ধরেছে।
মামা এখান থেকে আমাদের গাড়িতে। অনিকা বললো।
এই তো দারু আঙ্কেল গাড়ির মাথায় বসবে তোদের সব কিছু বলে দেবে।
মাম্পিরা ছট-ফট করতে শুরু করেছে। দারু শিবুর দিকে তাকিয়ে বললো।
যা এনকাকে বড়োমার কাছকে লিয়ে যা।
দারু দুটোকেই কোল থেকে নামিয়ে দিল।
ডারু আঙ্কেল নেহি হামারা সাথ তুম যাওগে। বসির বলে উঠলো।
সামনের দিকে তাকালাম। মিত্রারা মন্দিরের চাতালে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। একহাতে খই-মধুর ঠোঙা আর একহাতে দুধের ভাঁড়।
এই পাশের রাস্তাটা ভাল নয়। তাই বড়ো রাস্তা দিয়ে যাব।
এই বুদ্ধিটা তোমায় কে দিল। নম্রতা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
হাসলাম।
তুই তো আগেরবার দেখলি হাতি-ভাল্লুক আছে। তারা করলে সমস্যায় পরে যাব।
তোমায় ভাবতে হবে না। শ্যাম আঙ্কেল, দারু আঙ্কেল আছে ম্যানেজ করে নেবে।
ওদের সঙ্গেই পায়ে পায়ে মন্দিরের কাছে এগিয়ে এলাম। মন্দিরের ঠিক নিচটাতেই ডাক্তারদাদা, শুভরদাদু খই-মধু খাচ্ছে। মাথায় লাল তিলক।
দুজনকে দেখে আমি হেসেফেললাম।
অমৃতের স্বাদ গ্রহণ করছি, তুই এখন তাকাবি না। ডাক্তারদাদা বললো।
শুভরদাদু হাসছে।
কপালে লালটিপ কে লাগাল।
বান্ধবী।
পূজো হয়েগেছে?
হ্যাঁ। এখনো ভেতরে বসে ভ্যাজারাম ভ্যাজারাম করছে।
অনিমেষদা, বিধানদা?
ওই মাঠের দিকে গেল।
দাদা, মল্লিকদা?
বললাম দোকানটা কিনে নাও। দর কষাকষি করতে গেছে।
বুবুন। মিত্রা চেঁচাল।
যা, এবার তোর ডাক পড়েছে।
ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
এই পার্টটুকু শান্তিতে করতে না দিলে বিপদ আছে বুঝলে।
সে আর বলতে। সেই জন্য তো বলার আগেই কাজ সেরে নিয়েছি।
আমি মন্দিরের চাতালে উঠে এলাম। তনু-মিত্রা দাঁড়িয়ে। দুজনেরই কপালে লাল টিপ।
তনু মুখ টিপে হাসল।
ভেতরে কে আছে?
সবাই।
তোরা বাইরে চলে এলি?
কাজ হয়ে গেল।
এক সঙ্গে বসা-বসির কোন পার্ট নেই?
থাকলে ডাকবে।
আমি ভেতরে এলাম।
বড়োমা, ছোটোমা, দামিনীমাসি, মাসীমনি, আন্টি বসে। একপাশে কবিতা, বাসন্তী দাঁড়িয়ে আছে। বাসন্তীর সঙ্গে চোখা চুখি হলো।
ও পুরুত ঠাকুর, অনি এসেছে। ওর মাথায় মায়ের ফুল ছুঁইয়ে দাও। বড়োমা বলে উঠলো।
আমি হাঁটু ভাঁজ করে বসলাম।
ব্রাহ্মণ মশায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ভাল আছেন?
উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
দেখলেন তো, এই কয়েকদিন আগে এসেছিলাম, আবার চলে এলাম।
আপনার জন্য এই অজ জায়গাটা একটু আলোর মুখ দেখবে। আমাদের ছেলেপুলেদের কিছুটা কর্মসংস্থান হবে।
না না আমি না। সরকারের পক্ষ থেকে এই সব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
আমি মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলাম।
ব্রাহ্মণ মশাই আমার মাথায় ফুল ছোঁয়ালেন, টিপ পরালেন, চরণামৃত দিলেন, খেলাম।
বড়োমা আমার হাতে একটু শুকনো খই দিল। প্রসাদ। মুখে দিলাম।
ছোটোমা আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে।
তোমাদের পূজো দেওয়া শেষ। বড়োমার মুখের দিকে তাকালাম।
হ্যাঁ।
এবার চলো। অনেকটা পথ। যেতে যেতে দুপুর গড়িয়ে যাবে।
আপনারা কি আজই ফিরবেন? ব্রাহ্মণ মশায়ের মুখের দিকে তাকালাম।
আজ না, কাল দুপুরের দিকে বেরবো। সন্ধ্যের আগেই কলকাতা পৌঁছে যাব। কেন?
আপনার সঙ্গে দুটো কথা বলতাম।
এখন বলা যাবে না?
আজ এখানে পরব চলছে। সবাই পূজো দিতে আসছে।
কিসের পরব? বড়োমা বললো।
আজ এদের সরহুল উৎসব, কেউ কেউ বলে বাহা উৎসব।
সেটা কিগো পুরুত ঠাকুর।
আপনার ছেলে জানে, ওকে জিজ্ঞাসা করবেন। আমার থেকে উনি ভাল বলতে পারবেন।
আসি।
আমি বুকের ওপর হাতদুটো জড়ো করে নমস্কারের ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালাম। ব্রাহ্মণ মশাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। বাইরে বেরিয়ে এলাম।
মিত্রা-তনু তখনো বাইরেটায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাছে এলাম।
সন্দেশ পেলি? মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকাল। তনু হাসছে।
না। একটুখানি খই দিল।
তোকেও দেয় নি!
দেখলাম ঠাকুরের সামনে সাজান রয়েছে।
তাহলে ঠিক আছে, কি বল তনু?
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসছি।
সকালবেলা বলাইরা কলকাতা থেকে নিয়ে এসেছে একবারে টাটকা।
দেবার কথা ছিল নাকি?
আমি চাইতে এক ঝুড়ি মুখ করলো। ভাবলাম নিশ্চই তোকে দেবে। তাহলে লাইন দিতাম।
সেই জন্য দাঁড়িয়ে আছিস।
হ্যাঁ।
তোদের অশেষ ধৈর্য।
কষ্ট করলে, কেষ্ট মেলে বুঝেছিস।
আর সব কোথায়?
কি জানি। এখানেই ধারে কাছে কোথাও আছে।
ডাক্তারদাদার মতো খই-মধু খা।
দুবার খাওয়া হয়েগেছে।
আর একবার খা।
তাহলে টিফনটা সাঁটাতে পারবো না।
আর দেরি করিস না। আবার তো ঝর্ণার কাছে গিয়ে দাঁড়াবি।
আমি নিচে নেমে এলাম। ওরা আমার দু-পাশে।
আজ আলু-পরটা নেই। নতুন খাবার, জমপেশ করে খেতে হবে।
মিত্রার মুখের দিকে তাকালাম।
হ্যাঁরে। অর্ডার দিয়ে বিরিয়ানী আনা হয়েছে। দুশো প্যাকেট।
শুধু বিরিয়ানী!
না। চিকেন আছে।
স্পেশ্যাল।
হুঁ।
আর।
ভোলার দোকানের মিষ্টি।
কলকাতার মিষ্টি?
ওটা মনে হয় শ্যামেদের বাড়িতে গিয়ে কপালে জুটবে।
খাওয়াটা তাহলে খুব জোর হবে বল।
তনু হে হে করে হেসে উঠলো।
তুই তো ও সব খাস না। তোর প্যাকেটটা দিয়ে দিস।
আগে থেকে বুক করলি।
অনেক ভাগীদার বুঝেছিস, দু-জনের ভাগে কম পরে যাচ্ছে।
আমি হাসছি।
শ্যাম এসে সামনে দাঁড়াল।
বড়োমা কাই?
কেন?
এঠি সময় লষ্ট করলে সেঠি যাইতে বেলা হয়্যা যিবে।
মন্দিরের ভেতরে আছে, ডেকে আন।
শ্যাম চলে গেল।
তুই আমাদের গাড়িতে উঠবি?
মিত্রার দিকে তাকালাম।
না থাক। ছেলেরা আগে বুক করেছে।
কেন তোদের জন্য তো সময় ঠিক করা আছে।
সেটা যেন আবার কাউকে ভাগাভাগি করে দিস না।
আমি হাসছি। চল গাড়িতে উঠে বসি।
একটু এগোতেই দাদা-মল্লিকদার সঙ্গে ধাক্কা খেলাম। আমাকে দেখেই দাদা বলে উঠলো।
তোর বড়োমা কোথায়?
মন্দিরে।
শেকড় গেড়েছে?
গিয়ে জিজ্ঞেস করো।
সে কি বলার জো আছে। মরন-টরন বলে দশটা কথা শুনিয়ে দেবে।
দোকান কিনলে?
দাদা হেসে ফেললো।
সামন্তর খাওয়ার নেশাটা এখনো গেল না বুঝলি। এখানে এসে আবার সিনিয়ার মুখার্জীকে সঙ্গে পেয়েছে। একবারে সোনায় সোহাগা।
মল্লিকদার দিকে তাকালাম।
খৈ-মধু খেলে?
অনেকটা।
গল্পের সঙ্গে মিলছে।
মিলবে না মানে।
এখান থেকে যেতে কতটা সময় লাগবে। দাদা বললো।
ঘণ্টা তিনেক। মাঝে তোমরা আবার স্নান-টান করবে শুনলাম।
আমি ওসব করে বেরিয়েছি।
মল্লিকদার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। মল্লিকদা চোখ পাকাল।
মল্লিকদার চোখ পাকান দেখে তনু-মিত্রা মুখ নীচু করে হাসছে।
যাও বড়োমাকে নিয়ে এসো। আমি গাড়িতে উঠে পরছি।
যাই।
আমি এগিয়ে গেলাম।
মিত্রারা জোরে হেসে উঠলো।
সত্যি তুই পারিস।
কেন?
মল্লিকদা কি ভাবলো।
আমার সঙ্গে মল্লিকদার সম্পর্ক আর তোদের সঙ্গে মল্লিকদার সম্পর্কের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
সেই সম্পর্কের জেরেই টুকটাক এইরকম কথা হয়। তনু বললো।
আমি হাসছি।
গাড়ির কাছে আসতে দেখলাম বটা, কনিষ্ক, নীরুর তুমুল যুদ্ধ চলছে। আমার আর সব বন্ধুরা নীরব দর্শক। হাসি ছাড়া ওদের তিনজনকে উপহার দেওয়ার মতো কিছু নেই।
কিরে এখনো শেষ হয় নি?
হবে কি করে? বটা বলে উঠলো।
তারমানে!
জিজ্ঞাসা কর কি করলো। কনিষ্ক বললো।
না-রে অনি। নীরু বললো।
কনিষ্ক যে বলছে।
একটু দুধ দিয়ে খই খেলাম তাই হিংসে করছে।
দুধ দিয়ে খই মানে!
খিদে লেগেছিল।
ওষুধ নিয়ে এসেছিস।
ও নিয়ে ভাবিস না। কিছু হলে পুরো শিল করে দেব।
আমি হাসছি।
ম্যাডাম বিরিয়ানির গন্ধটা শুঁকে এলাম। পুরো রেওয়াজী। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
মিত্রারা কোন কথা বলছে না, হেসে যাচ্ছে।
আমি গাড়ির দরজাটা খুলতেই কনিষ্ক বললো।
তুই এই গাড়িতে!
কেন?
মিলি বাচ্চা গুলোকে বুঁচকিদের গাড়িতে তুলে দিল।
তারমানে!
নীরু তালি মেরে বলে উঠলো, তবে বলেছি কি? সঙ্গে সঙ্গে কনিষ্ক ওর ঘারটা টিপে ধরলো।
আমি হাসছি, মিত্রারাও হাসছে।
এতগুলো ওই গাড়িতে ধরবে না।
ঠিক হবে। তুই চলে যা। বটা বললো।
আমি এগিয়ে গেলাম। মিত্রাদের গাড়ির কাছে আসতে মিলি গাড়ির জানলা দিয়ে মুখ বারাল।
মিত্রাদি অনিদা আমাদের গাড়িতে?
না।
বুঁচকিদের গাড়িতে?
মিত্রা মাথা দোলাল।
অনিদা সেবারের মতো ওখান থেকে আমাদের গাড়িতে।
আমি সামনের দিকে তাকালাম। দেখলাম বিনদ, অর্জুন গাড়ির মাথায়। সুন্দররা সকলে ওখানে দাঁড়িয়ে। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম।
(আবার আগামীকাল)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন