বৃহস্পতিবার | ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:৫৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
নানা পরিচয়ে গৌরী আইয়ুব : গোলাম মুরশিদ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (ষষ্ঠ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (পঞ্চম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘তোমার নাম’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (অষ্টম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘হাওয়া-বদল’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার প্রবোধিনী একাদশী ও হলদিয়ায় ইসকন মন্দির : রিঙ্কি সামন্ত সেনিয়া-মাইহার ঘরানার শুদ্ধতম প্রতিনিধি অন্নপূর্ণা খাঁ : আবদুশ শাকুর নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘শুভ লাভ’
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কাজলদীঘি, ২২১ নং কিস্তি

জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় / ২০২৯ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
kajaldighi

২২১ নং কিস্তি

কবিতা পরি কি মরি করে দৌড়ে চলেগেল।

শূন্য ঘরটাতে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। মনটাকে কিছুতেই বশে আনতে পারছি না।

তারপর খোলাছাদে চলে এলাম। শেষরাতে যে যেরকম ভাবে পারে শেষ মজাটুকু লুটেপুটে নিচ্ছে। একটা দমবন্ধ করা পরিবেশ।

এলো মেলো চিনতার মাঝে, হঠাৎ সেই সাঁওতাল মেয়েটির নগ্ন মূর্তি চোখের সামনে ভেসে উঠল।

সেই ছেলেটির মুখ, তার চোখের ভাষা। কিঙ্করদার থাপ্পর।

নিজেকে যেন নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম।

সোনা আন্টি আমার গলা জড়িয়ে ধরে দুই গালে কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল।

ডাক্তারদা সেই দৃশ্য দেখে ফিক করে হেসে উঠলো।

মাসীমনি আমার একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে।

মিত্রা, তনু, ইসি, মিলিরা আমার দিকে কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। ওরা হাসছে না। তবু যেন মনে হল ওদের চোখে মুখে হাসির ছটা।

মেয়ে, নম্রতা, অনিকাদের চোখে কে যেন হাজার পাওয়ারের বাতি জেলে দিয়েছে।

শুভ, বসির, পক্কে, ঘণ্টা, সুন্দররা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।

আমায় ক্ষমা করো আঙ্কেল। শুভর গলাটা ধরে এলো।

বেশ বুঝতে পারছি চোখ দিয়ে জল গরাচ্ছে।

বৌদি, ছোটোমা উঠে এসে আমার সামনে দাঁড়াল। মুচকি মুচকি হাসছে।

আমি ছোটোমার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম।

গলাটা শুকিয়ে গেছে। একটু চা খাওয়াবে।

ছোটোমা আমার মাথাটা বুকে চেপে ধরলো।

শুভ তোরা এখন যা। আঙ্কেল কি বললো একটু বোঝার চেষ্টা কর। বৌদির কণ্ঠে স্নেহের ধমক।

ছোটোমার দিকে তাকিয়ে বললো, এবার একটু ছাড়, না হলে আমার ভাগে কম পরে যাবে।

বৌদির বুকে বাঁধা পরলাম।

ধীরে ধীরে বারান্দাটা ফাঁকা হয়ে গেল। সবাই উঠে চলেগেল।

কনিষ্কদের সঙ্গে বাইরের বারান্দার বেঞ্চে বসে কথা বলছি। নীরু বটা ছাড়াও নেপলারা বারান্দার আর এক কোনে বসে আছে।

মাম্পি, মিকি, সুমন্তর ছেলে বাবান, বনির ছেলে পিপটু বারান্দার এক কোনে হুটো পুটি করছে।

যাই বলিস অনি তোর গল্পটা কিন্তু জমপেশ। ওরা ভীষণ রিঅ্যাক্ট করেছে।

কনিষ্কর দিকে তাকালাম।

আমি প্রথম থেকে শুনি নি। মুখরাটা মিলির মুখে শুনলাম। কনিষ্ক বললো।

অনির ঝাড় পোলাইট, যে খেয়েছে হজম করতে তার সাতদিন লেগে গেছে। বটা বললো।

ওভার কনফিডেন্স। নীরু বললো।

এবার দেখবি সব কটা সাত সেয়ানার এক সেয়ানা হয়ে যাবে। বটা বললো।

তুই কবিতাকে থাপ্পর মেরেছিলি। বহুবার শুনেছি। কেন মেরেছিলি আজ বুড়ো বয়সে খোলসা করলি। কনিষ্ক বললো।

আমি হাসছি।

তোর ন্যানোতে হাত দিয়েছিল। নীরু বললো।

হারামী। বটা এক লাথি মারলো নীরুকে।

আমি হাসছি।

ওই দেখ! তোকে ঠ্যাং তুলতে কে বলেছে ?

কেন, তুমি এখনো ম্যানাবোতল মুখে দিয়ে শোও। খোলসা করে বলতে হবে।

তুই না শুতে পারিস, আমি এখনো ম্যানাবোতল মুখে দিয়ে শুই।

নীরুর কথায় কনিষ্ক জোরে হেসে উঠলো।

হারামী তুই শুস না। নীরু বটার দিকে তাকাল।

মাঝে মাঝে।

বটা হাসছে।

কনি এই সময় অনির কানে তুলে দে। না হলে দেখবি বলবে কই আমাকে বলিস নি।

আমি নীরুর দিকে তাকালাম। কি ?

কনি বলবে শুনে নে।

কিরে কনিষ্ক ?

রতনদের কেশটা।

কোনটা।

তোকে বলেছিলাম খেয়াল নেই।

একটু হিন্টস দে, মনে পরে যাবে।

ওদের ওখানের নার্সিংহোম।

মনে পড়েছে, কি সব জায়গা টায়গা দেবে বলেছিল।

হ্যাঁ। আগামী সপ্তাহে জায়গাটা রেজিস্ট্রি হবে। পরের উইক থেকে কাজ শুরু করবো।

টাকা পয়সা।

সব ওদের টিম জোগাড় করবে। সিসটেম আমরা বিল্ড করবো।

চলবে তো ?

ওরা বুঝে নেবে বলেছে।

তোদের আবার যাওয়া আসা করতে হবে।

তা করতে হবে।

তোদের নার্সিংহোম ?

এখন স্টেবেল পজিসন। জায়গা দিতে পারছি না।

বারিয়ে নে।

ওখানে বারাবার জায়গা নেই আশে পাশে বারাব।

মাঝে কি একটা বলছিলি নার্সিংহোম কিনবি।

রতন খোঁজ খবর করে বললো, এর থেকে নতুন তৈরি করা ভাল। তাই মাথা ঘামাই নি।

তোরা কি অনন্যর সঙ্গে কেউ যাবি।

তবে, বলেছিলাম তোকে কনি। খবর ওর কাছে ঠিক চলে যাবে। নীরু বললো।

কনিষ্ক আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

তুই জানলি কি করে ?

মাম্পি সেদিন গলা জড়িয়ে বললো, ফোরেন যাব। প্রথমে বুঝতে পারি নি। মিকি কিছুক্ষণ ভ্যাজারাম ভ্যাজারাম করলো। তারপর আমাকে চোখ মুখ পাকিয়ে বোঝাল। প্লেনে করে যাবে। তুমি আগে যেখানে থাকতে সেখানে।

তখন গেইজ করলাম তোরা হয়তো কেউ অনন্যর সঙ্গে যাবি।

আমি বটাকে বলেছিলাম। বটা বললো, আগো তোর ডিপার্টমেন্টটা গুছিয়ে আয়। তারপর একে একে আমরা সবাই যাব।

ফ্র্যাঞ্চাইচির ধান্ধা করছিস নাকি।

সেরকম একটা পসিবিলিটি আছে। আগে কথাবার্তা বলি।

রাঘবন ভেতর থেকে বাইরের বারান্দায় এলো। পেছন পেছন সবাই।

খাওয়া-দাওয়া হলো, এবার রওনা হবে ?

কথা বলতে বলতে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালাম।

রাঘবন আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। একে একে সবাই ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো।

আমি রাঘবনের দিকে তাকালাম।

ভালই আছিস।

তুমিও বা খারাপটা আছো কোথায়, বেশ তো নিজেরটা গুছিয়ে নিলে। সাক্ষী মানলে ডাক্তারদাকে। এবার আমারটা ?

রাঘবন আমাকে বুকে টেনে নিল। দুজনেই হাসছি।

ব্যালেন্সটা কবে ছাড়বে ?

ব্যালেন্সের পাশে তুইতো চারটে শূন্য বসিয়ে নিয়েছিস।

ওসব কথার মার প্যাঁচ অন্য জায়গায়।

আমি মিথ্যে বলছি প্রমাণ কর।

আমি কেন প্রমাণ করতে যাব। দায় আমার নয়।

রাঘবন হাসছে। একটা কথা বলি।

বলো।

ওদের এখনো ম্যাচুরিটি আসে নি, হুইমজিক্যালি বলে ফেলেছে।

অনিমেষদা, বিধানদা আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।

আচ্ছা স্যার আছেন, বিধানবাবু আছেন, অনিমেষবাবু আছেন, মাসীমনি বড়োমারা আছেন, ম্যায় তোর ভাবি আমার মেয়ে জমাই।

আরও অনেকে আশে পাশে আছে নাম বলে যাও।

রাঘবন হাসছে।

একটা সত্যি কথা বলবি।

জানা থাকলে অবশ্যই বলবো।

টাকাটা কি ওদের জন্য দরকার।

রাঘবন মাম্পিদের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারা করলো।

সবাই হেসে উঠলো।

বলনা। তোর নেক্সট জেনরেশন তৈরি। আর একটু ঘষে-মেজে দিলেই চক চক করবে। আজকে যেমন একটু মেজে দিলি।

এবার তারপরের জেনারেশনের দিকে মনঃসংযোগ করেছিস। ওটাও তোর জীবদ্দশাতে তৈরি করে ফেলবি। মোটামুটি একশো বছরের ভিত পাকা। মরেও শান্তি।

আমি হাসছি। রাঘবন খুব ধীর স্থির ভাবে গুছিয়ে কথা বলছে।

নাগেশকে মোটামুটি লাইন ধরিয়ে দিয়েছিস। বনিকে একটা হিন্টস দিয়েছিস।

অংশুকে আগেই তুলে নিয়েছিস।

কনিষ্ক, নীরু, দেবাশীষ, নির্মাল্যকে তাদের মতো করে খেলার গ্রীণ সিগন্যাল দিয়ে দিয়েছিস।

বসিরকেও দু-একটা টোটকা দিয়েছিস। তাতেই কাজ শুরু হয়েগেছে।

লম্ফঝম্পটা ক্ষণিকের, ওটা থেমে যাবে। তুই নিজেই থামিয়ে দিবি।

সাপ্লাই লাইন তোর হাতে।

রাঘবন একটু থামলো, চোখে চোখ রাখলো।

সর্বশেষ বিনদ, অর্জুন ইদানীং ভাল ছেলে হয়ে যাচ্ছে। একেবারে ইসলামভাই-এর মতো।

পদটা বাগিয়ে খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে।

এটার জন্যও মূল সিঁড়িটা তুই। আমি স্যারের কাছে একটি কথাও গোপন করি নি।

রিটার্ণ কি পাব ?

মিলি-সুরো যেমন মাম্পি-মিকিকে দিয়ে দেয়েছে, বনিকে বলেছি অনি যদি পিপটুকে চায় দিয়ে দিস। বাবানকে এখানে এসে আবিষ্কার করলাম। আর যেগুলো ল্যান্ডা-গ্যান্ডা আছে সব এক একটা পিলার মনে হচ্ছে এই চারটে তোর মেইন পিলার হবে।

এ্যাডমিনিস্ট্রেসনে নাই নাই করে তিরিশটা বছর কাটিয়ে দিলাম। কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।

এটা নিশ্চই অস্বীকার করবি না।

তুমি তো দাদার মতো শুরু করলে।

হ্যাঁ। অবিরত চেনামুখগুলো আজ বরো অচেনা লাগছে।

সামনে থেকে নয়, পেছন থেকে যাদের কারিগর তুই। তোকে নিয়ে কারুর মতামাতি নেই। কিন্তু তুই যাদের নিজে হাতে গড়েছিস, সেই সৃষ্টিগুলো নিয়ে সবার বড্ডবেশি মাতামাতি।

তোর সৃষ্টিতে কেউ কালির আঁচড় টানবে তুই কিছুতেই সহ্য করতে পারবি না।

তুই যে বড্ড বেশি আন্তরিকভাবে স্নেহ, মায়া, মমতায় তাদের লালন পালন করেছিস।

তোর ছেলে-মেয়েরা এতটা বোঝদার এখনও হয় নি।

আমি আন্তরিকভাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, আগামী জন্মে তোর মতো একজন পিতার ঔরসে তনু-মিত্রার মতো মায়ের গর্ভে যেন আমার জন্ম হয়।

আমি আমার স্ত্রী মেয়ে জামাই সবার সামনে এই কথা বলছি।

তোর জন্মস্থান তোর বড়ো হয়ে ওঠা পরিবেশ আমার কাজ করার ইচ্ছেটা দশগুণ বাড়িয়ে দিল।

তোর আনা একটা আঁখের টুকরো কয়েকটা জামরুল সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। দিল্লীতে গিয়ে আমার গৃহদেবতার পায়ে অঞ্জলি দেব।

রাঘবন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। আমি রাঘবনের মুখের দিকে তাকিয়ে।

আজ রাঘবন বড্ড বেশি ইমোশন্যাল হয়ে পড়ছে। আমার মুখের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে। ঘন ঘন চোখের পাতা পড়ছে।

চারদিক নিস্তব্ধ। সবাই আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে।

দাঁড়া আঙ্কেলকে বলে দেব তুই চুরি করেছিস।

হিন্দী মে বোল।

কেন তুই বাংলা বলতে পারিস না।

মাম্পির সুরেলা কণ্ঠ চারিদিকের নিস্তব্ধতাকে খান খান করে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিল।

সবাই ওদিকে তাকালাম। সবার চোখে মুখেই হাসির ছটা।

পিপটু মন দিয়ে জামরুলের রস চুষছে। মিকি, বাবান অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে। মাম্পি কোমড়ে হাত দিয়ে ঝগরুটে মেয়ের মতো সামনে দাঁড়িয়ে।

রাঘবন জোরে হেসে উঠলো।

 

দুপুরের খাওয়াটা বেশ জমপেশ হলো।

কালকে বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া বইছে। ঠিক ঝোড়ো হাওয়া নয়। হাওয়া বইলেই গাছের পাতার সরসরানি শব্দটা তীব্র হচ্ছে। তারপর আবার নিশ্চুপ।

সকালে ওই ঘটনার পর শুভদের চোখে মুখে যে গুমোট ভাবটা ছিল এখন অনেকটা পরিষ্কার।

আমি পুকুরঘাটে মুখ ধুয়ে সোজা এ বাড়িতে চলে এলাম।

উটকো লোকের আনাগোনার অভাব নেই।

সুরোকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বললো সব পার্টির লোক। অনেক দূর দূর থেকে এসে বাবার সঙ্গে দেখা করছে। চিকনা, বাসু, মীরচাচা সবাই দেখলাম বেশ ব্যস্ত। তাদের কথা বলার সময় পর্যন্ত নেই।

এই বাড়িটা এখন ফাঁকা। আমি নিজের ঘরে এলাম। খাটটা বেশ সুন্দর করে গোছান।

পেটটা বড্ড আইঢাঁই করছে। বালিশটা টেনে নিয়ে টান টান হয়ে শুলাম।

মাসীমনিকে দেখে বেশ ভাললাগছে। জীবনে প্রথম বোনের বাড়িতে এল।

মায়ের পেটের বোন বলে কথা। একটা সময় তার কয়েকটা বছর এখানে কেটেছে। রক্তের সম্পর্কের বোনপো এখনো বেঁচে রয়েছে। আমি নজর না দিলেও মাসীমনিকে দেখভাল করার প্রচুর লোক।

মৌসুমী মাসি কাল থেকে এক পাও এ বাড়ি থেক নরে নি।

ছোট গিন্নী এসেছে।

মাসখানেক আগে মাসীমনিকে দেখে মনটা যেভাবে খারাপ হয়েছিল, এখন দেখলে তা হচ্ছে না।

মনে হচ্ছে মাসীমনিকে আরও কয়েকটা বছর বাঁচিয়ে রাখতে পারব।

মাসীমনি এখন অনেকটা সুস্থ।

মনের সঙ্গে রোগের একটা অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক রয়েছে।

মন ভাল থাকলে রোগ অনেকটা সেরে যায়।

শুয়ে শুয়েই কয়েকটা ম্যাসেজ করলাম।

উত্তরও মিললো। আপাতত স্থিতাবস্থা। সব ঠিক আছে।

ফোনটা মাথার শিয়রে রেখে জানলার দিকে তাকালাম।

আমার খাটে শুয়ে তেঁতুল তলা পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যায়।

নিঝুম দুপুর কেমন ঝিমিয়ে আছে।

একটাই পরিবর্তন চোখে পরলো। গাছের পাতাগুলো বেশ সতেজ, ঝকঝকে, চকচকে।

খাঁ খাঁ করছে চারদিক।

সামনের আতা-সপেদা গাছটায় অনেক আতা-সপেদা হয়েছে।

গাঙ্গুলী ঘরের পুকুর পার দিয়ে কারা যেন খামার পেরিয়ে এদিকে আসছে।

চিনতে পারলাম না।

কলকাতায় এরকম অলস দুপুর ভাবাই যায় না।

কালকে বিকেল থেকে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত ওরকম একটা ছোট খাট প্রলয় হলো, এখন পরিবেশটা দেখলে তা বোঝাই যাচ্ছে না।

মাটির ওপরের অংশটা দেখলে বোঝা যায় কাল বৃষ্টি হয়েছে।

আফতাবভাইরা কাল রাতে কে কেমন ছিল জিজ্ঞাসা করার ফুরসৎ হয় নি। এখানে আসাতক নিজের তালে ছিলাম। নিজের ভাললাগা সময়গুলো দাম দিয়ে কিনেছি।

সুজিতদাকে দেখছি কিন্তু কথা বলার ফুরসৎ পাই নি।

আশা রাখি খারাপ লাগবে না। খাওয়া দাওয়া হাত-পা ছড়িয়ে মনের সুখে ঘোরা।

অনির মুখে অনেক গল্প শুনেছে। এবার বাস্তবটা চোখে দেখছে।

সাগর অনাদি বাঁচার তাগিদে উঠে পরে লেগেছে। এই ফাঁকে আমাকে আমার কার্যদ্ধার করতে হবে। কোন মতেই ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

ছুরকিটাও ব্যাটা কাল থেকে একবারও এলো না।

হয়তো এসেছিল, ভ্যাজাল দেখে পালিয়ে গেছে।

বুবুন।

নিচ থেকে মিত্রার গলা পেলাম।

উঃ আবার জালাতন শুরু করবে। একটু একা থাকবো তার উপায় নেই।

সারা দিলাম না।

হাতটা চোখের ওপর দিয়ে, ঘুমবার ভান করে মটকা মেরে পরে রইলাম।

দুবার, তিনবার ডাকার পর আর সারা শব্দ পেলাম না।

যাক বাবা কিছুক্ষনের জন্য নিশ্চিন্ত।

সকালে বলছিল বিকেলে সব পীরসাহেবের থানে যাবে।

শয়তান। তাই বলি কেন সারা শব্দ নেই। মটকা মেরে পরে থাকা।

আমি চোখের ওপর থেকে হাত সরালাম।

মিত্রা একা।

ওঠ। মিত্রা ছুটে এসে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো।

ঝামেলা করিস না। ভরা পেট নড়াচরা করলে এখুনি সব মুখ থেকে বেরিয়ে যাবে।

মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। চোখে হাসি।

ঠায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু পরার চেষ্টা করলো।

পুকুর ঘাট থেকে কখন এলি ?

অনেকক্ষণ।

বলে এলি না।

ঝামেলা করবি তাই।

ঝামেলা ছাড়া জীবনটা সহজ সরল ভাবে কাটাতে পারবি ?

কেন পারব না।

মিত্রা মাথার শিয়র থেকে ফোনটা তুলে নিল। ওর ভারি বুক আমার মুখে চাপা পরলো।

খুনসুটি করতে ভুল করলাম না।

উ।

মিত্রা উঠে বসে কিল বাগিয়ে এগিয়ে এলো।

আমি হাতটা ধরে ফেললাম। হাসছি।

শয়তান, আমার লাগে না।

দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, বাঁচার তাগিদে….।

সব সময় কূট বুদ্ধি তাই না।

সর।

মিত্রা আমাকে ঠেলে সরিয়ে হাফ শোওয়া অবস্থায়, বুকে মাথা রাখলো।

কথা বলতে বলতেই মোবাইলের কি টিপতে শুরু করেছে।

কানে তুললো।

আমি রে আমি….বাবু চিত্তাল….শোন আমার মোবাইলটা সুরো যে ঘরে রয়েছে সেই ঘরের খাটে পরে আছে নিয়ে আয়।

মিত্রা মোবাইলটা মাথার শিয়রে ছুঁড়ে দিল।

কাকে ফোন করলি।

কেন জানিস না।

একা হচ্ছে না, দোসর জোগাড় করতে উঠে পরে লেগে গেলি।

মিত্রা হাসছে।

ঘুমের বারোটা না বাজালে চলছিল না।

বিকেলে পীরসাহেবের ওখানে যাব। বড়োমা ছুঁক ছুঁক করছে। সকাল থেকে তোকে ধরতে পারে নি। মেজাজ তিরিখ্খি। এবার বোম ব্লাস্ট করবে।

তোরা চলে যা।

সে কিরে! তোর জন্য এতো কিছু আর তুই কিনা….।

আমার ঘুম পাচ্ছে।

একটু অপেক্ষা কর তোকে ঘুম পারাচ্ছি।

মিত্রা আমার দিকে হাসি হাসি চোখে তাকিয়ে।

মিত্রা বুক থেকে মাথা সরিয়ে উপুর হয়ে শুল। আমার মুখের কাছে মুখ।

তোর শুনতে ইচ্ছে করে না।

কি ?

তখন তুই যে গল্পটা বললি, তা শুনে কার কি রিপার্কেসন।

শুনে কি হবে, রোগ হয়েছিল ওষুধ দিলাম। রুগী যদি ঠিক মতো উঠে দাঁড়ায়, হাঁটা-চলা করে, বুঝবো রোগ সারল, না হলে হাই ডোজ দেব।

মিত্রা বাচ্চা মেয়ের মতো খিল খিল করে হেসে উঠলো।

নীরু তোকে ডিটো নকল করে।

কেন ?

তুই তো গো-গ্রাসে গিলে উঠে এলি।

ছেল মেয়েদের অস্বস্তি হচ্ছিল।

তুই চলে আসার পর খেতে খেতে ডাক্তারদা সকালের প্রসঙ্গটা আনল। নীরু বললো, স্যার….।

তারপর তুই যা বললি একবারে ডিটো, লাইন টু লাইন শব্দটুকু পর্যন্ত মিস নেই।

শ্রীপর্ণা ফুট কাটল।

নীরু ঝাঁজিয়ে উঠলো, ঝাঁটার বাড়ি কে খেয়েছিল, তুমি না আমি।

বড়োমা পর্যন্ত নীরুর কথায় হেসে ফেললো।

তুমি যদি খেতে তাহলে আমার ডায়লগটা তুমি বলতে।

সেই শুনে নম্রতা বললো, মশাই-এর কথায় তোমরা কিছু মনে করো না।

ব্যাশ আগুনে ঘৃতাহুতি।

করলে ঠকবি। ও ভেবে কথা বলে, না ভেবে বলে না।

এই যে আমি কনিষ্ক বটা। ম্যাক্সিমাম অনিকেত। আমরা শুধু এই চারজন নয়। আমাদের অনেক বন্ধু, আমাদের ব্যাচেরই আরও গোটা পনেরো আমাদের নার্সিংহোমের সঙ্গে এ্যাটাচ।

একসময় সবাই কিন্তু অনির সঙ্গে আড্ডা মারতাম।

আমরা তিনজন আর অনিকেত ম্যাক্সিমাম সাত্যকি ছাড়া কারুর টিকি দেখতে পাস।

ওরাও কিন্তু অনির বন্ধু। আবার আমরাও অনির বন্ধু। পার্থক্যটা চোখে দেখে বোঝার চেষ্টা কর।

কনিষ্ক, আমি, বটা কম কথা শুনি নি। কম লাথি ঝেঁটা খাই নি। অন্নপ্রাসণের ভাত পর্যন্ত পেট থেকে বমি করিয়ে দিয়েছে।

অনিকেতের কথা ছেড়েই দিলাম। অনির কথায় গাধা থেকে খচ্চর, খচ্চর থেকে ঘোড়া বানাচ্ছি। অনির চোখে এখনো অনিকেত ঘোঁড়া তৈরি হয় নি।

অনেকবার সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। অনিকেত কিন্তু কিছু মনে করে নি, কুত্তার গায়ে এঁটুলে পোকার মতো সেঁটে আছে। অনিকেতকে গিয়ে অনির নামে কিছু বল দেখি।

আমরা যতটা রি-অ্যাক্ট করবো, অনিকেত তার থেকে বেশি রি-অ্যাক্ট করবে।

ওর শরীর খারাপের সময় আমরা ওর কাছে গেছি ও যায় নি। আমরা কয়েক ঘণ্টার জন্য বাড়ি গেছি। ও বউকে বলে দিয়েছে খাবারটা পারলে নিয়ে এসো, না হলে এখানে খেয়ে নেব।

তোদের সামনে ওর মুখের ভাষা বলতে পারি না। শুনলে হাড়ে টিউবারকুলসিস হয়ে যাবে।

আবার আমাদের কোন সমস্যা হোক। তখন অনির আর এক রূপ।

বটার গুহ্যদ্বারে ফোঁড়া হয়েছিল। সাতদিন ও বটার পাশ থেকে নড়ে নি।

বটামামার মুখ থেকে কেশটা শুনে নিস।

তোরা এই টুকুতে ভিরমি খেলে এখন থেকে ফুটে যা। আমাদের আর সব বন্ধুরা যেমন টাচ উইথ অনি রয়েছে সেরকম থেকে যা।

আমরা তিনজন অনিকে ছুঁয়ে নেই, জাপ্টে ধরে আছি। অনিকেত এখন অনেকটা জাপ্টে ধরতে শিখেছে।

আবিদ, রতন, নেপলা, সাগির কত উদাহরণ তোদের দেব। ক লিখতে গেলে একসময় কলম ভেঙে যেত। আজ বেশ ঝরঝরে ইংরাজী বলে।

ওর স্কুলের ছাত্র হলে টেবিল, চেয়ার, ব্ল্যাকবোর্ড পাবি না। বইখাতা, স্লেট-পেন্সিল পাবি, সঙ্গে বেত এসেন্সিয়াল।

ওর কথা, গাধা থেকে ঘোড়া বানাতে গেলে, স্যাকরার ঠুক ঠাকে হবে না, কামারের এক ঘা।

আমরা কেউ নিঃসার্থ ভাবে ওর পেছনে পরে নেই। যা দিয়েছি, তার হাজার গুন ফিরিয়ে দিয়েছে।

আবার ওর ভাষাতেই বলি, শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।

এর মধ্যে কত সমস্যা হয়েছে। বুঝতেই পারি নি কিভাবে সমাধান হলো।

আমি, বটা, কনিষ্ক, অনিকেত আলোচনা করেছি। রতনকে পর্যন্ত ডেকে বলেছি।

রতন বলেছে, তুমি বিশ্বাস করো কনিষ্কদা কিছু জানি না।

ইদানীং শুনতে পাচ্ছি সেই সময় ওর অপারেটর ছিল চিনা, চাঁদ।

চিনা, চাঁদ সেই সময় রতনদের এ্যান্টি, সম্পর্ক ভাল ছিল না।

গত চার-পাঁচদিন অনেক ঘটনা অনেক গল্পের সম্মুখীন হলি। তোর মশাই-এর কোন হেলদোল দেখছিস। এখানে যারা বসে আছে তারা টেনসন নিচ্ছে, ও খেল-দেল লাটের বাঁট নবাবের মতো উঠে চলেগেল।

মিঃ রাঘবনকে তুই ছুঁলি। তার মেয়ে জামাই-এর সঙ্গে এক পংক্তিতে বসে খাওয়া দাওয়া করছিস। তোর ব্যকগ্রাউন্টটা খুব একটা খারাপ নয়।

নিজের পরিচয়ে একটা এ্যাপয়েন্টমেন্ট জোগাড় করতো দেখি কেমন হিম্মত।

শতকরা একশোভাগ গ্যারেন্টি দিচ্ছি, এ জম্মে হবে না।

অনেক বকে ফেলেছি। ছোটোমা কালকের দু-একটা সাপের কুচি আছে। রান্নাটা বেশ জমেছিল।

নম্রতা হাঁ করে নীরুর দিকে তাকিয়ে। নীরু একবার নম্রতার দিকে তাকাল।

বুঝলি নম্রতা এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ জন্মায় দেওয়ার জন্য। আর কিছু মানুষ জন্মায়, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শুধু নেওয়ার জন্য।

কেউ কোন কথা বলছে না।

নীরু খেয়ে যাচ্ছে। নম্রতা কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে বললো, আর কিছু বলবে না।

নীরু হাসলো।

উনুনের আগুনটা নিভে গেছে। একটু কয়লা দিয়ে আবার খুঁচিয়ে দে, দেখবি গন গন করে উঠবে।

খোঁচালাম বলে তবু কিছু পেলাম।

নীরু একগাল হাসল। আজকের ধাক্কাটা খুব পোলাইট। পরের ধাক্কটা তোদের গনগনে তেলে ভাজবে। যদি সহ্য করতে পারিস, তাহলে সুখাদ্য তৈরি হবি। না হলে পুরো তেঁতো হয়ে যাবি। মুখে তোলা যাবে না।

উই মাস্ট ডু ইট। নম্রতার গলা গনগন করে উঠলো।

কথাটা মনে রাখিস। আমাদের অন্যান্য বন্ধুদের মতো টাচ উইথ অনি করিস না।

তোমার স্বভাবটা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে মিত্রাদি, শুধু একা একা খাব করলে হবে।

মিলি ঘরে ঢুকলো। পেছনে তনু, অদিতি, টিনা, ইসি।

মিলি মিত্রাকে ঠেলে সরিয়ে আমার মুখের কাছে বসে পরলো।

তনু শব্দ করে হাসছে।

কেন তোর নেই, আমাদেরটা নিয়ে টানা টানি করছিস কেন। মিত্রা বললো।

আমাদের তিনজনেরটা নিরস বুঝলে মিত্রাদি।

আমারটাকে বাদ দিচ্ছিস কেন। ইসি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

মিলি। কনিষ্ক নিচ থেকে ডাকল।

মিলি মিত্রার দিকে তাকাল।

দেখছো।

মিত্রা হাসছে।

আমি ওপরে, অনিদা জেগে আছে। মিলি ওখানে বসে বসেই চেঁচাল।

আমি মিলির দিকে তাকিয়ে হাসছি।

দিদি, বড়োমারা আসছে। তনু মিত্রার দিকে তাকাল।

কি করতে ?

এলে জিজ্ঞাসা করো।

মিত্রা আমার দিকে তাকাল।

কনিরে শালা টান টান হয়ে খটাঙ্গে লাট খেয়েছে। নীরু ঘরে ঢুকলো।

পেছনে বটা, কনিষ্ক।

তিনজনে সোফাতে বসলো।

কনিষ্ক পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করলো।

খাবি।

না।

এখুনি বড়োমারা আসছে। তনু বললো।

মিলি নিচে গিয়ে দরজার হুকটা লাগিয়ে দিয়ে এসো। কনিষ্ক বললো।

কেন, তুমি যেতে পারছো না।

কনিষ্ক আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। তিনজনেই সিগারেট ধরাল।

মিত্রা কনিষ্কর দিকে তাকাল। নীরুর কথাটা বললাম।

কেন, না হ্যাজালে চলছিল না। নীরু চেঁচিয়ে উঠল।

মিত্রা হাসছে।

নীরু আমার দিকে তাকিয়ে। আমি বটার দিকে ইসারা করলাম।

আজ ম্যানাবোতল মুখে নিয়ে শোবে বলেছে। নীরু আস্তে করে বললো।

কনিষ্ক হেসে উঠলো।

হাসলি কেন ? বটা বললো।

নীরু সোজা উঠে দাঁড়িয়ে আমার পায়ের কাছে চলে এল।

কনিষ্ক তখনো হেসে যাচ্ছে। মিত্রা হেসেই জিজ্ঞাসা করলো ম্যানাবোতল কি ?

এবার টিনা, মিলি, অদিতি তিনজনেই জোড়ে হেসে উঠলো।

সত্যি অনিদা তোমার কি বিটকেল বুদ্ধি। মিলি বললো।

কেন তুমি শুনতে পাও নি। কনিষ্ক বললো।

মিলি মাথা দোলাল। না।

তুমি কনিষ্কদাকে জিজ্ঞাসা করো না। আমি তোমাকে বলবো। টিনা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো।

হারামী ওই জন্য উঠে গেলি। বাঁচবি ? বটা নীরুর দিকে তাকালো।

অনি বাঁচাবে। কথাটা তুই প্রথমে বলেছিলি, আমি সাপোর্ট করেছিলাম।

অনিদা। নেপলা ষাঁড়ের মতো নিচ থেকে চেঁচাল।

আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।

মিত্রা জোড়ে হেসে উঠলো।

ঘুমবিনা ?

তোর জন্য।

কিছুক্ষণ পরই সিঁড়িতে পায়ের শব্দ, চেনা গলা ভেসে আসছে।

নেপলা প্রথমে ঢুকলো।

অর্ক ভেতরে এসে একবার রগরটা দেখ।

আমার চোখে মুখে বিষ্ময়। অর্ক এলো কোথা থেকে ?

সত্যি সত্যি অর্ক ভেতরে এলো, পেছনে অরিত্র, সুমন্ত, সন্দীপ।

আমার দিকে তাকিয়ে হেসেই চলেছে। দেখলাম সায়ন্তন উঁকি মারল।

অবাক হয়ে যাচ্ছ ? অর্ক এগিয়ে এলো।

মিলিদি কনিষ্কদার পাশে গিয়ে বসো। ম্যাডাম আপনি ওপাশে চলে যান।

কেন রে। মিলি খ্যার খ্যার করে উঠলো।

আমি উঠে বসলাম। তোরা!

আরও আছে একটু অপেক্ষা করো।

আমি সন্দীপের দিকে তাকালাম। কাগজটা তোরা লাটে তুলে দিলি।

তাতে তোমার কি। তুমি কি কাগজের মালিক ? অরিত্র বলে উঠলো।

অর্ক খাটে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।

সন্দীপ হাসছে।

দ্বীপায়ন দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই ভেতরে এসো। সন্দীপ বললো।

দ্বীপয়নও এসেছে!

দ্বীপায়ন ভেতরে ঢুকলো।

অনিদা কই গো ? বাজখাঁই গলার শব্দ।

চেনা চেনা, তবু কেন জানি অচেনা ঠেকছে।

ও মাসি, এই সিঁড়ি দিয়ে উঠবো। কি অন্ধকার গো।

আমি কনিষ্কর দিকে তাকালাম।

কিরে! কবিতার গলা মনেহচ্ছে!

অর্ক হাসলো। ব্রেকিং নিউজ।

ওই তো অনিদা, তোমার ঘরদোর কি ভালো গো।

কবিতা ঘরে ঢুকে সোজা আমার পায়ের কাছে মাটিতে এসে বসলো।

পা-টা একটু নীচে ঝোলাও তো দেখি।

তোরা এই অসময়ে!

কেন গো, আসতে নেই।

আমি পা নামাবার আগেই কবিতা পায়ে হাত ছোঁয়াল।

ও বৌমা ভেতরে আয়।

আবার বৌমা পেলি কোথা থেকে!

দেখলাম বাসন্তী-ভিকি আমার দিকে এগিয়ে আসছে।

এবার আমি অর্কর অর্গল থেকে মুক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম।

বাসন্তীর কপালে সিঁদুরের রেখা চিক চিক করছে। আমার চোখে মুখে বিষ্ময়।

দু-জনেই নীচু হয়ে পায়ে হাত দিল।

আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। আমি বললাম।

বাসন্তী জেদ করলো। ভিকি বললো।

বিয়ে করলি কবে ?

কাল রাতে দিদার মন্দিরে বসে সিঁদুর লেপে দিয়েছি।

আমায় বলিস নি তো!

বড়দিদাকে বললাম। বললো, কাল এখানে চলে আয়।

যা এবার গিয়ে দুজনে সকলকে পেন্নাম কর। কবিতা বলে উঠলো।

আমি কবিতার দিকে তাকালাম।

আগে ঠাকুরকে পেন্নাম করলাম। তারপর তোমাকে। এবার সকলকে।

দামিনীমাসি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

কেন ?

তুমি আমার ঠাকুর।

আবার মার খাওয়ার কল করছিস।

সে তুমি এখনো আমাকে মারতে পার।

মিত্রারা হাসছে।

হাসছো কেন গো বউমনি।

তোমার অনিদাকে জিজ্ঞাসা করো।

অনিদাকে জিজ্ঞাসা করার বল আমার নেই। অনিদা আমার জ্যান্ত ঠাকুর। অনিদার জন্য ঘর পেয়েছি, সংসার পেয়েছি, ছেলে পেয়েছি, বৌ পেয়েছি, তোমাদের সামনে এসে দু-দন্ড দাঁড়াতে বসতে পেয়েছি, আমি বেশি কিছু চাই নি, আমার মতো মেয়ে অনিদার কাছে যা চেয়েছি সব পেয়েছি। বানের জলে কোথায় ভেসে যেতুম, তবু এখন অনিদার জন্য একটা ড্যাঙায় রয়েছি, এটাই বা কম কিসে।

নিস্তব্ধ ঘর, কবিতা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। চোখটা ছল ছলে।

আমি দামিনীমাসির দিকে তাকালাম।

তুমি জানতে ?

মাসি মাথা দোলাল। হ্যাঁ।

কই আমায় বলো নি।

মামনিকে বলেছি।

মিত্রার দিকে তাকালাম।

বলবো কখন। কাল রাতে ওরকম ভঁস ভঁস করে ঘুমলি, সকাল থেকে উঠে নৌক চরালি….।

আবার হাসি।

আঁখের গল্পটা বলুন। অরিত্র বললো।

শুনেছো ? মিত্রা তাকাল অরিত্রর দিকে।

ঢুকতেই ছোটোমা ছোটগল্প দিল।

বাসন্তী আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

তুই হাসছিস কেন। আমি বললাম।

তুমি গাছে উঠতে পার ?

সে কিরে! তুই যদি সকাল বেলা দেখতিস, অবাক হয়ে যেতিস। গাছে উঠে বাঁদরের মতো নেচে নেচে জামরুল পারলো। তনু বললো।

বাসন্তী হাসছে।

সব গল্প, বুঝলি বাসন্তী। আমি বললাম।

ছোটদিদাও গল্প বললো ?

আ মোলো যা, দাঁড়িয়ে রইলি কেন, সকলকে পেন্নাম কর। কবিতা বাসন্তীর দিকে তাকিয়েছে।

বাসন্তী-ভিকি কোমড় নোয়াতে শুরু করেছে।

কবিতা। আমি আবার খাটে বসলাম।

বলো। বলেই আমার পায়ের কাছ ঘেঁসে বসলো।

চিকনাকে দেখলি।

হুঁ।

মীরচাচা।

দু-জনেই লিচে ছিল।

তোর গতরটা দিনে দিনে বেশ সুন্দর হচ্ছে।

দেখলাম বাসন্তী প্রণাম করতে করতেই ফিক করে হাসল।

কবিতা ইশারায় চোখ পাকাচ্ছে। বৌমা আছে।

তুমি মাইরি সত্যি একটা যন্তর পিস। অর্ক বলছে হাসছে।

আমি বাসন্তীর দিকে তাকিয়ে আছি।

এই সেদিন ভিকির অন্নপ্রাসন খেয়ে এলাম। আজ ব্যাটা বিয়ে করে ফেললো।

সেদিন তুমি খাও নি পরে খাবে বলেছিলে। আর যাও নি।

ভিকিটা বেশ সন্ডাগন্ডা হয়েছে কি বল কবিতা ?

তুমি কি বলতে চাও বলো দিনি।

সাগিরের চেহারাটা দেখেছিস।

হ্যাঁগো, একবারে খোদার খাসি।

কোমড়ে কাপর জড়িয়ে সেই লাথিটার কথা মনে পরছে।

হ্যাঁ।

যব্বর মেরেছিলি।

ওই জন্য মানুষ হলো।

দামিনীমাসি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। হাসছে না তবু হাসছে।

আচ্ছা তোর ভাগের নোটগুলো তখন সাগির ফেরত দিয়েছিল।

একপয়সাও দেয় নি।

এখন চাইছিস না কেন।

সে বলতে, বলে কি তোমায় দিয়েছে।

তোর বিশ্বাস হয়।

হয় না তো।

কখন বেরিয়েছিস।

সক্কাল বেলা। অর্কদাকে ফোন করলুম।

অর্ক কবিতার মুখের দিকে তাকাল।

ভুল বললুম।

কি!

কবিতা হেসে ফেললো।

তুমি বড়ো নম্বরী ঢিল ছুঁড়ে দেখছো ফলে লাগে কিনা। আমিও কবিতা মনে রাখবে, হ্যাঁ।

যা বাবা আমি কোথায় ঢিল ছুঁড়লাম।

বুঝিনা ভেবেছ।

নেপলা হাসছে। কবিতাদি।

মেলা বকিস না। তোরা বেশি সব্বনেসে। আমি থাকলে গলার নলিটা ছিঁড়ে ফাঁসি কাঠে ঝুলে যেতাম।

(আবার আগামীকাল)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন