পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার অন্ত নেই। বিজেপি নেতারা পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের পদক্ষেপের বড়াই করে থাকেন, তা যে কতটা অন্তঃসারশূন্য তা আবার প্রমাণ হলো। পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে দুর্ভোগের অন্ত নেই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা শ্রমিকদের। এমনকী ঔরেয়ার দুর্ঘটনা আতঙ্ক বাড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশে থাকা শ্রমিকদের। এর মধ্যেই মহারাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর হেঁটে ফেরার পথে এক দম্পতি-সহ চারজন পরিযায়ী শ্রমিক ট্যাঙ্কার ট্রাকের ধাক্কায় মারা গিয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটে বারোয়ানিতে।
রবিবার ১৭ মে সকালে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ বর্ডারে গাজীপুরে কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক জড়ো হন। ঔরেয়ার দুর্ঘটনার পর পরিযায়ী শ্রমিকদের বাহাদুরপাড়ায় করে ফেরানোর আশ্বাস দেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সেই আশায় নিজেদের রাজ্যের বর্ডারে এসে জড়ো হন গরিব, অসহায় পরিযায়ী শ্রমিকরা। কিন্তু তাঁদের বৈধ পাস না থাকায় রাজ্যে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। বলা হয়, বাস বা ট্রেনে করে রাজ্যে ঢুকুন। এইটুকু বলেই দায়িত্ব শেষ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের। কী করে ফিরতে পারবেন তা বুঝেই উঠতে পারছেন না পরিযায়ী শ্রমিকরা।
দিল্লি-ইউপি বর্ডারে ময়ূর বিহার এক্সটেনশনের কাছে কিছু পরিযায়ী শ্রমিককে আটকে দেয় পুলিশ। অনেক পথ হেঁটে পরিযায়ী শ্রমিকরা ওই অবধি পৌঁছেছিলেন। এক মহিলা জানান, বাড়িভাড়া দিতে না পারায় বাড়ির মালিক বের করে দেন। হাতে টাকা নেই। না খেতে পেয়ে এমনিতেই মরব। তাই হেঁটেই উত্তরপ্রদেশের হারদোইতে ফিরছিলাম। কিন্তু পুলিশ যেতে দিচ্ছে না। বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থাও করছে না।
এদিন উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে সাহারানপুর-আম্বালা হাইওয়েতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আড়াই হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরা বিহারের বাসিন্দা। তাঁদের জন্য ট্রেনের ব্যবস্থা করুক সরকার, এই দাবিতেই বিক্ষোভ চলতে থাকে। পরে পুলিশের পদস্থ কর্তারা আশ্বাস দেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে বাসের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
লুধিয়ানা থেকেও শিশুদের সাইকেলে বসিয়ে বা হাঁটিয়ে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের গ্রামে ফিরছে বহু শ্রমিক পরিবার। উত্তরপ্রদেশের বরেলি জেলার এক পরিযায়ী শ্রমিক বললেন, এভাবে গ্রামের বাড়ি ফিরতে দিন সাতেক সময় লাগবে। না, উত্তরপ্রদেশের সরকার এঁদের ফেরানোর কোনও পদক্ষেপ যে করেনি তা স্পষ্ট। যতই রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল উত্তরপ্রদেশ সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে দালালি করুন না কেন!
নাগপুরে দেখা গেল একটা বড়ো লরি ভাড়া করে ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁদের একজন বললেন, বাধ্য হয়ে নিজের রাজ্যে ফিরছি। মাস্ক পরেছি, কিন্তু এই লরিতে কি আর সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলা যায়?
বিজেপি-শাসিত গুজরাটের সুরাটেও হাঁটছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। পরিযায়ী শ্রমিকদের লাগাতার বিক্ষোভেও যে সরকারের টনক নড়েনি তা প্রমাণিত। সুরাট থেকে বিহারের সীতামারীর উদ্দেশ্যে হেঁটে রওনা দেওয়া এক পরিযায়ী শ্রমিক জানালেন, খাবার পাচ্ছি না। বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করছে না কেউ। তাই দেখি কতটা যেতে পারি!
রবিবার ১৭ মে পরিযায়ী শ্রমিকরা উত্তরপ্রদেশের রায়পুরা জাট এলাকায় মথুরা-আগ্রা হাইওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের দাবি, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় তাঁদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করুক সরকার। অন্যদিকে রাজস্থানে আটকে পড়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের বহু পরিযায়ী শ্রমিক। যোগী সরকার কিছু না করায় তাঁদের আলোয়ার ও ভরতপুর থেকে ৫০০টি বাসে উত্তরপ্রদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে কংগ্রেস।