বুধবার | ২৮শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৪০
Logo
এই মুহূর্তে ::
মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার ক্যের-সাংরী কথা : নন্দিনী অধিকারী সুপারি তথা গুবাক থেকেই এসেছে গোয়ার নাম : অসিত দাস রোনাল্ড রসের কাছে জব্দ ম্যালেরিয়া : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় উনিশের উত্তরাধিকার : শ্যামলী কর কেট উইন্সলেটের অভিনয় দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জিং ভূমিকার ৩টি চলচ্চিত্র : কল্পনা পান্ডে হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলা — আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংকট : সুব্রত কুমার দাস সিন্ধুসভ্যতার ভাষা যে ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার প্রমাণ মেলুহা তথা শস্যভাণ্ডার : অসিত দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (শেষ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস জাতিভিত্তিক জনগণনার বিজেপি রাজনীতি : তপন মল্লিক চৌধুরী গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালশাঁসের চাহিদা : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সিন্ধুসভ্যতা ও সুমেরীয় সভ্যতায় কস্তুরীর ভূমিকা : অসিত দাস

অসিত দাস / ২৮১ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ৪ মে, ২০২৫

আজকাল সিন্ধুসভ্যতার নয়া আবিষ্কার বলে বিভিন্ন মাধ্যমে যা চালানো হচ্ছে, প্রাবন্ধিক-গবেষক অতুল সুর ৭৫ বছর আগে তাঁর ‘সিন্ধুসভ্যতার স্বরূপ ও সমস্যা’ বইটিতে সেটা হুবহু লিখে গেছেন। সিল ও ট্যাবলেট তথা ক্ষুদ্রাকৃতি সছিদ্র ফলকগুলি যে পণ্যবাহী আধারের গায়ে বেঁধে লাগিয়ে দেওয়া হত বহির্বাণিজ্যের প্রয়োজনে, সে কথা তিনি ৭৫ বছর আগেই লিখে গেছেন। তিনি লিখেছেন, “যে সীলমোহরগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো দিয়ে মাটির উপর ছাপ দিয়ে লেবেল তৈরি করে, লেবেলগুলো বাণিজ্যের পণ্যপূর্ণ ঝুড়ির সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হত।… সীলমোহরগুলিতে একটা জন্তুর প্রতিকৃতি ও তার উপর-ভাগে এক ছত্র লেখা থাকত। মনে হয় লেখাগুলি হচ্ছে ব্যক্তিবিশেষের নাম, আর জন্তুর চেহারাগুলি ‘টোটেম’ বা গোষ্ঠী বা সংঘ-বাচক।”

হরপ্পা-সভ্যতা তথা সিন্ধুসভ্যতায় কস্তুরীর প্রচলন ছিল কিনা তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ প্রায় নেই। তবে অতুল সুর ১৯২৮ সালে মহেঞ্জোদারো খননকার্যে তাঁর সরেজমিনে অভিজ্ঞতার কথা লিখতে গিয়ে বহু হরিণের হাড়ের সন্ধান পাওয়ার কথা লিখেছেন। কস্তুরী হরিণের কথা আলাদাভাবে বলেননি যদিও। তবে কস্তুরীর সপক্ষে পরোক্ষ প্রমাণ আছে ভূরি ভূরি। মেসোপোটেমিয়া সঙ্গে নৌবাণিজ্য এবং স্থলবাণিজ্য হত সিন্ধু উপত্যকার। মেসোপটোমিয়ায় কস্তুরী তথা মৃগসুগন্ধির ব্যবহার হত ব্যাপকভাবে। মেসোপোটেমিয়ার প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতায় এর ব্যবহার ছিল সবচেয়ে বেশি। মেসোপটেমিয়ায় কস্তুরী আসত হিমালয় অঞ্চল থেকে। সরাসরি আসত, না ঘুরপথে, তা কোথাও বলা নেই। তবে সিন্ধুনদ দিয়ে হিমালয় অঞ্চল থেকে সেডার কাঠ, মণিমুক্তো, বহুমূল্য পাথর, প্রাণীদেহের অংশবিশেষ সিন্ধু উপত্যকায় যে আসত, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আছে। সিন্ধু নদে ভাসিয়ে ভাসিয়ে বড় বড় কাঠের গুঁড়ি সিন্ধুউপত্যকায় আনা হত হিমালয়ের পাদদেশ থেকে। এই কাঠ দিয়েই গৃহনির্মাণ, জাহাজ ও বাণিজ্যতরী নির্মাণ করা হত। হাতির দাঁত, কস্তুরী মৃগনাভি হিমালয় অঞ্চল থেকেই আসত। সিন্ধু উপত্যকাতেও হাতি ও হরিণ ছিল, হাতির দাঁত ও মৃগনাভি এখানেও সুলভ ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রাপ্ত ইউনিকর্ন-চিত্রিত ফলক যে আসলে হরিণের প্রতীক তা বেশ বোঝা যায়। প্রতিটি ইউনিকর্নের মুখের নীচে মাটিতে যে পাত্রটি রাখা থাকে, সিন্ধুলিপি-বিশেষজ্ঞ ইরাবথম মহাদেবন তাকে Incense Burner বা ধূপদানী ভেবেছেন। আর একটু তলিয়ে দেখলে একে কস্তুরীদানী বলে চিহ্নিত করা যায়।

হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর খননে প্রাপ্ত স্নানঘরে আয়না, অস্থি ও হাতির দাঁতের চিরুনি, মেয়েদের চুলের কাঁটা, ওষ্ঠরঞ্জক পাওয়া গেছে। তার সঙ্গে খালি প্রসাধনীর মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে অনেক। এগুলোতে সুগন্ধি থাকত বলে বিশেষজ্ঞরা ভাবেন। কী সেই সুগন্ধি? ভেষজ সুগন্ধির সঙ্গে কস্তুরীও থাকত সম্ভবত। সিন্ধুসভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক খননে একটি পরিস্রাবণ যন্ত্র পাওয়া গেছে। একই যন্ত্রের মুক্তছিদ্র ও বদ্ধছিদ্র নমুনা পাওয়া গেছে। যেগুলির ছিদ্র বন্ধ করা থাকত, সেগুলিতে আকরপদার্থ থেকে তরল সুগন্ধি তৈরি করা হত বলে মনে করা হয়। কস্তুরী হল মৃগনাভির একটি জমাট অংশ। সেটি এই যন্ত্রে বাষ্পীয় পরিস্রাবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশুদ্ধ সুগন্ধিতে পরিণত করা হত।

এই বিশুদ্ধ কস্তুরী নৌপথে ও স্থলপথে টিন, রুপো, সোনা, তুলো, মণিমুক্তার সঙ্গে মেসোপটেমিয়া, ইজিপ্ট ইত্যাদি জায়গায় পাঠানো হত। গুজরাটে আবিষ্কৃত লোথাল বন্দর সিন্ধুসভ্যতার নৌবণিজ্যে প্রধান ভূমিকা নিত।

হিমালয়ান মাস্ক ডিয়ার, যা আগে ছিল আলপাইন মাস্ক ডিয়ার গোত্রের অন্তর্গত, হাজার হাজার বছর ধরে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারতের কাশ্মীর, নেপাল প্রভৃতি অঞ্চলে বাস করে। কস্তুরী মৃগ-র নাম কেই বা না শুনেছেন! তাদের দেহে লুকানো কস্তুরীর গন্ধে হরিণীরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় মিলনঋতুতে। বলা যায় হরিণের তূণের অস্ত্র এই কস্তুরী। আবার এই দুর্লভ কস্তুরীর লোভেই শিকারীরা তাদের বধ করে। কথায় আছে আপনা মাংসে হরিণা বৈরী।

হিমালয়ের পাদদেশ থেকে হরিণ শিকারীরা কস্তুরী সংগ্রহ করে সিন্ধুনদে ভাসিযে দেওয়া কাঠের গুঁড়ির সঙ্গে এসে পৌঁছাত সিন্ধু উপত্যকায়। সিন্ধুনদের তীর ধরে স্থলপথেও তারা আসত হাতির দাঁত, দামি পাথর, ও কস্তুরী নিয়ে।

বাস্তবিকই কস্তুরী ছিল সিন্ধুসভ্যতার একটি প্রধান বাণিজ্যপণ্য। কিন্তু টিন, রুপো, সোনাদানা, তুলা, পলা-নীলা-গোমেধের কথা বলা হলেও কস্তুরী যেন কাব্যে উপেক্ষিত। কোথাও তার উল্লেখ নেই। অথচ যে জায়গার সঙ্গে সিন্ধুসভ্যতার বাণিজ্য ছিল দৈনন্দিন ব্যাপার, সেই মেসোপটেমিয়ায় কস্তুরী ছিল ব্যাপকভাবে আদৃত। সুমেরীয় সভ্যতারও প্রধান সুগন্ধি ছিল কস্তুরী।

তাহলে কি সিন্ধুউপত্যকা থেকেই সরবরাহ করা হত সেই কস্তুরী? কে দেবে জবাব?

রবীন্দ্রনাথের কবিতা দিয়েই শেষ করা যাক, —

পাগল হইয়া বনে বনে ফিরি

আপন গন্ধে মম

কস্তুরীমৃগসম।

ফাল্গুনরাতে দক্ষিণবায়ে

কোথা দিশা খুঁজে পাই না।

যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই,

যাহা পাই তাহা চাই না।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন


StatCounter - Free Web Tracker and Counter StatCounter - Free Web Tracker and Counter