সোমবার | ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:৫০
Logo
এই মুহূর্তে ::
উৎপন্না একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মারাঠাভুমে লাডকি বহিন থেকে জয়, ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী প্রচারে হার : তপন মল্লিক চৌধুরী কিন্নর-কৈলাসের পথে : বিদিশা বসু হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (চতুর্থ পর্ব) : অভিজিৎ রায় ভনিতাহীন চলন, সাইফুর রহমানের গল্প : অমর মিত্র সাইফুর রহমান-এর বড়োগল্প ‘করোনা ও কফিন’ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (তৃতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় নানা পরিচয়ে গৌরী আইয়ুব : গোলাম মুরশিদ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (ষষ্ঠ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (পঞ্চম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কাজলদীঘি, ২১৭ নং কিস্তি

জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় / ১৯৭৫ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০
kajaldighi

২১৭ নং কিস্তি

তনু, মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

তিনজনে জড়াজড়ি করে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলাম। বাইরে বৃষ্টির বেগ তখন বেশ কিছুটা কমে এসেছে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। গাছের পাতা সবুজ হতে শুরু করেছে।

বুকের কাছে জলের স্পর্শ পেলাম।

তনুর মুখটা তুলে ধরলাম। চোখের পাতা ভিঁজে কাদা হয়েগেছে।

মিত্রার মুখটা তুলে ধরলাম। দুজনেই কাঁদছে।

এ কি! তোরা কাঁদছিস কেন?

তুমি এমনভাবে তোমার জীবনের কথা বলো, কান্না পেয়ে যায়। তনুর গলাটা ভাড়ি ভাড়ি।

মিত্রা কোনও কথা বললো না। আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখেছে।

না তনু আমার অন্তরের অনুভূতিটা তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। হয়তো কাকীমা এতটা ভাবেনি। আমি তখন ছোটো ছিলাম। আমার মুখের কথায়, আমার কষ্টের কথায়, কাকীমার চোখে জল চলে এসেছিল।

কিন্তু আমি বড়ো হয়ে অনুভব করলাম সেদিন কাকীমার এই কথাটা মনে হয়নি তারই বা প্রমাণ কি আছে। আমি তো কাকীমার মনের মধ্যে কখনও ঢোকার চেষ্টা করিনি।

থাক তোকে আর বলতে হবে না। মিত্রা বললো।

আমি চুপ করে গেলাম।

তিনজনেই চুপ চাপ খামারের দিকে তাকিয়ে বসে আছি।

হঠাৎ একটা চিঁ চিঁ ডানা ঝাপটানর শব্দে বারান্দার ওই পাশে চমকে তাকালাম।

দেখলাম বাইরের সেই প্যাঁচাটা একবারে বারন্দায় কার্নিশে এসে বসেছে। জলে ভিঁজে গায়ের রংটা অনেক বেশী ধব ধবে। গা দিয়ে জল চুঁইয়ে পড়ছে। ঘন ঘন ডানা ঝাপ্টাচ্ছে।

দিনের আলো ওদের অন্ধ করে দেয়। কিছুই দেখতে পায় না। তার থেকে সময় থাকতে থাকতে সঙ্গিনীর কাছে ফিরে চলো।

একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে ডানা মেলে উড়ে কার্নিশে গিয়ে বসলো।

মিত্রা, তনু দুজনেই ব্যাপারটা দেখে হেসে ফেললো।

চল ভেতরে যাই।

একটু বোস না। আলোটা ফুটতে দে।

ভেতরে খাটে শুয়ে শুয়ে দেখি চল। আমার কেমন যেন ঘুম ঘুম পাচ্ছে।

তুই এখন ঘুমবি!

কখন উঠেছি বলতো। একটু ঘুমিয়ে নিই।

ঠিক আছে ভেতরে চল।

তিনজনেই উঠে দাঁড়ালাম।

আজ নিচে কেউ শোয় নি।

না। চিকনা সব নতুন বাড়িত ব্যবস্থা করেছে।

তাহলে নিচের ঘর ফাঁকা।

না। তোর ছেলে-মেয়ে, বসিররা দখল করেছে। তাদের কথায় তুই যেখানে থাকবি তারাও সেখানে থাকবে।

ঘরে এলাম। দেখলাম তনুর কাদামাখা ম্যাক্সি সোফার ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে।

একবার সোফাটার দিকে তাকিয়ে, তনুর দিকে তাকালাম।

হেসে ফেললাম।

একবারে হাসবে না।

তখন পাহাড় পর্বত গিরিখাত যা দেখলাম না…।

তুমি চাইলে এখনও দেখাতে পারি। মনে করিয়ে দিচ্ছ কিন্তু। ঘুমতে দেব না।

ঠিক আছে বাবা তুমি শক্তিমতী। তোমার অফুরন্ত দম।

তনু মুখ টিপে হাসলো।

আমি বিছানায় এসে শুয়েছি।

তনু তখনও সেন্টার টেবিলটার সামনে দাঁড়িয়ে। মিত্রা শরীর থেকে চাদরটা খসিয়ে সোফার ওপর ছুঁড়ে দিল।

দিদি সন্দেশ খাবে না।

তুই কি বলতো!

তোমার খিদে পায় নি?

দাঁত মেজেছিস।

বড়োমা নেই, বলার কেউ নেই। মুখটা একটু জল দিয়ে কুলকুচি করে নিলেই হবে।

মিত্রা হাসছে।

তোর কথা ডাইরীতে নোট করে রাখছে।

করুক, ও খাবে না?

মিত্রা খাটে এসে আমার শরীরে হেলান দিল।

কিগো বসে পরলে, মুখে জল দেবে না।

খেয়ে জল খেলে মুখ ধোয়া হয়ে যাবে।

মিত্রা আমার দিকে তাকাল।

তোর মতো বলতে পেরেছি।

আমি হাসছি।

তনু মিষ্টির বাক্স নিয়ে এলো।

সত্যি সত্যি এনেছো!

হুঁ মশাই। বড়োমা কাল ছেলের জন্য পাঠিয়েছে। বলেছে, সকালে ঘুম থেকে উঠলে দিবি। রাতে ঠিক মতো খেল না। ওর মতি গতি বোঝা মুস্কিল।

আমি একটু কাত হয়ে একটা সন্দেশ তুলে মুখে দিলাম।

আর একটা নাও। তনু বললো।

না।

একটু জল দাও।

তনু জলের বোতলটা এগিয়ে দিল।

জানিস বুবুন কাল তোর মেয়ে একটা দামী কথা বলেছে। ওকে আবার নম্রতা সাপোর্ট করলো।

মিত্রার দিকে তাকালাম।

তনু সেন্টার টেবিলে মিষ্টির বাক্সটা রেখে লাফিয়ে খাটে উঠে এলো।

বুঝলে মা, তুমি-ছোটোমা বাবার রোমান্সটা ঠিক এনজয় করতে পারলে না।

আজ ঝড় ওঠার সময় বাবার চোখ দুটো দেখলাম। ওই চোখ দেখলে যে কোন মেয়ে ফিদা হয়ে যাবে।

তনু খিল খিল করে হসে উঠলো।

আমাকে কি বললো বলো।

মায়ের এ্যাবসেন্সে তুমি তো বাবাকে পেয়েছিলে এনজয় করতে পারোনি। জীবনে কি পেলে তিনজনে। খালি স্যাক্রিফাইস। বাবা একদিক থেকে স্যাক্রিফাইস করে গেল তোমরা দুজনে আর একদিক থেকে স্যাক্রিফাইস করে গেলে।

তবে হ্যাঁ, বাবার পার্সোনালিটিকে স্যালুট করতে হয়।

জানো মনি, মশাই যখন কই মাছগুলো ধরে ধরে ওপরে ছুঁড়ে ফেলছিল আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম। বার বার ভালপাহাড়ের কথাটা মনে পড়ে যাচ্ছিল। এই মশাই ভালপাহাড়ে আমাদের সবার সামনে কি ভাবে কথা বলছিল। আমার তো পটি হয়ে যাচ্ছিল আর একটু হলে। নম্রতা বললো।

সবচেয়ে ভাল বলেছে বসির। তনু বললো।

আমি ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি।

ফিরে এসে আফতাবভাইকে বললো, তুমি কোনওদিন মায়ের কাপর দিয়ে মাছ ধরেছো। আমি বোনের ওর্না দিয়ে মাছ ধরেছি। এটা আমার লাইফের একটা মাইলস্টোন।

ওদের ভাইবোনের সে কি হাসাহাসি। তনু থামলো।

তারপর তুই পক্কেকে গালাগাল দিয়েছিস।

বলে কি, মামী আমি জলে উল্টে পড়ে ভয়ের চোটে জলের মধ্যেই ছিরিক ছিরিক একটু করে ফেলেছি। কেউ বুঝতে পারেনি। ভাবলাম এই বুঝি হাতের কঞ্চিটা আমার পিঠে পড়লো। বুড়ো বয়সে মামার হাতে মার। প্রেস্টিজে পুরো গ্যামকসিন।

বড়োমারা সবাই ওদের কথা শুনে হেসে গড়াগড়ি খায়।

ওই রকম ফাঁকা মাঠে যখন মেঘ আলো করে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল তখন বুকের ভেতরটা একটু ধুকপুক ধুকপুক করছিল তারপর মামা বললো, মনের সুখে ভেঁজ, আম কুড়ো। তখন আমরা সকলে ফুল পিক আপে। দিদি দুটো আম গেঁড়িয়ে ওখানেই খেয়ে নিয়েছে, বসিরভাই ভাগ বসিয়েছে।

আজ কিন্তু তোকে নিয়ে একটা ফাটা ফাটি মিটিং হবে।

কিসের!

একনম্বর বসির-অনিকা ফাইন্যাল। আফতাববাই কিছুতেই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না। কালকে রাঘবন, ডাক্তারদাকে বলে কাজ হাসিল করেছে, আফতাবভাইও ডাক্তারদার পেছনে আদা-জল খেয়ে লেগে পড়েছে।

ডাক্তারদা বলেছিল তুমি বলছো না কেন।

আমাকে সরাসরি না বলে দেবে। তবু নাজমা বললে দু-বার ভাববে।

দাঁড়াও দিদি, একটা একটা করে শুনতে হবে, সময় অল্প। বাবু ব্যস্ত হলেই সব ভুলে যাব।

তনু আমার বুকের কাছে উঠে এলো।

সকালে অনিকাদের রসিয়ে রসিয়ে চিতপটাং-এর গল্পটা বলবো।

দাঁতগুলো ঘুসি মেরে ভেঙে দেব। তনু দাঁতে দাঁত চিপলো।

মিত্রা এতক্ষণ ঠেসান দিয়ে বসেছিল। এবার গোঁতাগুঁতি করে কাত হয়ে শুল।

নে নে শুরু কর। তনু আজ তোর ইন্টারভিউ নেবে।

তনু ভেতরে কিছু পরা নেই ফেটে ফুটে গেলে বিপদ।

তোমার থেকে আমাদের বেশি ক্ষতি। নিজের ক্ষতি কে চায় বলো।

তনু আমার মুখটা টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল।

আচ্ছাই যন্ত্রণা।

যন্ত্রণা কিসের। ভেতর ভেতর জিলিপির প্যাঁচ মেরে চলেছ, কাক পক্ষী কেউ টের পাচ্ছে না।

কোথায় প্যাঁচ মারলাম!

রাঘবন কি এমনি এমনি প্রাইমিনিস্টারের ক্যাবিনেটে সচিব হয়েছে। আমরা ঘাসে মুখ দিয়ে চলি তাই না?

রাঘবনকে জিজ্ঞাসা করো।

রাঘবন তার নিজের প্রমোশনের কথা নিজে জানতে পারলো না। তুমি জানলে কি করে?

তনু পুরো ঝগরুটে মেয়ের মতো কথা শুরু করে দিয়েছে।

মিত্রা হেসে আমার বুকে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

একবারে হাসবে না দিদি, সুযোগ পেলেই পিছলে পালান।

অমনভাবে ধমকাচ্ছ কেন, ভালভাবে বলা যায় না।

আমার কথার ধরণে তনু হেসে ফেললো।

পারলি থাকতে। মিত্রা তখনও শরীরে ঢেউ তুলে তুলে হেসে চলেছে। ওর শরীরের ঢউয়ে আমি স্নাত। এখনও ওরা দুজনে আমার শরীরে নেশা ধরায়।

মাথার বালিশটা একটু উঁচু করলাম। জানলার দিকে তাকালাম।

আকাশের মুখ ভার।

বৃষ্টিটা থেমে গেছে। পাতা থেকে জল চুঁইয়ে মাটিতে পড়ছে। কোটি কোটি জলের ফোঁটার আওয়াজ একসঙ্গে। ভারি অদ্ভূত সুর। তাল, লয়ের কোনও বালাই নেই। তবু মনটা কেমন আনমনা করে দেয়। একাকী চোখ বন্ধ করে, এই শব্দ শুনতে ভীষণ ভাল লাগে।

এই ঘোলাটে মেঘে জল নেই শুধু ভয় দেখান সার।

একটা দমকা হাওয়া উঠলে কোথায় উড়ে চলে যাবে তার ঠিক ঠিকানা নেই।

তনু-মিত্রা দুজনেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। চোখা চুখি হলো।

এ কি সেই ভিখারাম?

এরা আমাকে আজ নিস্তার দেবে না। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম।

তনু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

জয়পুরে পাথরের ব্যবসা ছিল। তোমার সঙ্গে একবার আমার ওখানে গেছিল।

হ্যাঁ।

বাবাঃ সে আজ এততো বড়ো লোক!

হাইটটা ঠিক আছে। একটু বেশি পয়সা করে ফেলেছে।

কথা বলার ছিড়ি দেখছো। তনুর গলায় সেই তেজ।

তুই চিনিস! মিত্রা বললো।

জীবনে একবার দেখেছি। ওর মতোন বয়স। কি ওর থেকে বছর দেড়েকের ছোট।

কই আগে বলিস নি!

কতো লোকের কথা তোমায় বলবো। পর্শু রাতে রাঘবনের কথা শুনে হঠাৎ কেন যেন মনে হলো নামটা খুব শোনা শোনা মনে হচ্ছে। কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না। তারপর মনে হলো—আরে, ওর সঙ্গে একবার মনে হয় আমার ওখানে গেছিল! তাই জিজ্ঞাসা করলাম এ সেই ভদ্রলোক কিনা।

তনু আমার মুখের দিকে তাকাল।

ও তোমায় এতো পয়সা দেবে কেন? কেন রাঘবন ওকে বাঁচাবার জন্য তোমার কাছে তদ্বির করবে।

জানো তনু জীবনে খুব তাড়াতাড়ি পয়সা করতে গেলে সৎপথে থাকা চলবে না। তোমাকে অসৎপথ অবলম্বন করতে হবে। আর একবার পয়সা হয়ে গেলে তোমাকে ছোঁয়া খুব মুস্কিল।

আমি চেষ্টা করলে হয়তো ভিখারামের মতো অনেক পয়সার মালিক হতে পারতাম। তাহলে হয়তো তোমাদের হারাতাম। আমি যে কোন মূল্যে তোমাদের পেতে চেয়েছি। হারাতে চাই না।

দামিনী মাসির কিছু কিছু কথা আমাকে এখনো বেশ নাড়া দেয়। তার মধ্যে একটা কথা আমি মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত ভুলবো না।

কি? মিত্রার ঠোঁটে অস্ফুট স্বর।

একবার ওখানে একটা মেয়ে মার্ডার হয়েছিল।

মেরিনাদি?

না তার আগে।

হরবকত এ সব লেগেই থাকতো। আজ মার্ডার, কাল স্যুসাইড। পর্শু কোনও নতুন মেয়েকে নিয়ে এসে কেউ গণিকা পল্লীতে তুলেছে। সেই নিয়ে ঝামেলা।

সেই ঝামেলাটা একটু অন্য দিকে মোর নিয়েছিল। সেই প্রথম দামিনীমাসি আমার কাছে হাত পেতেছিল। আমিও দু-হাত ভড়ে দামিনীমাসিকে সাহায্য করেছিলাম।

কি কথা?

মদ মেয়েছেলে নিয়ে ব্যবসা করবো, খুন যখম হবে না, পুলিশে টানাটানি করবে না, তাহলে সেটা কিরকম ব্যবসা।

কথাটা শুনে ওরা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।

হ্যাঁরে। সহজ সরল সাধারণ কথা, কিন্তু একটু ভেবে দেখ এর মধ্যে অনেক গভীর তত্ব লুকিয়ে আছে। দামিনীমাসি কথাটা কতটা বুঝে বলেছিল বলতে পারবো না। কিন্তু শব্দগুলো আমি সেই সময়ে মগজে খোদাই করে নিয়েছিলাম, পরবর্তী জীবনে প্রত্যেকটা শব্দকে আমি আমার জীবনে ইমপ্লিমেন্ট করেছি। যত ইমপ্লিমেন্ট করেছি তত নেশায় পেয়ে বসেছে।

ভিখারাম সামান্য পাথরের ব্যবসা থেকে আজ কয়েক ট্রিলিয়ান ডলারের মালিক। বিদেশী ব্যাঙ্কে ওর কতটাকা আছে তার হিসেব-নিকেষ করার জন্য ওর একটা নিজস্ব টিম আছে।

এই রকম একটা মানুষকে শুধু রাঘবন কেন কেন্দ্রের অনেক মন্ত্রী-সন্ত্রী সমীহ করে। এদের অদৃশ্য অঙ্গুলী হেলনে সরকার পড়ে, সরকার গড়ে।

প্লিজ তুই গল্প ঝারিস না। তোর কোনটা সত্যি কোনটা গুল, বোঝা মুস্কিল। মিত্রা চোখ-মুখ কুঁচকে বললো।

আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

তাহলে থাক, তোদের শুনতে হবে না।

আচ্ছা বল বল, তোর সব কথা আমাদের ঠিক ঠিক হজম হয় না।

হজম করে লাভ কি? ভেবে নে এটাও একটা গল্প। আমার মুখ থেকে গল্প শুনছিস।

তনু দুই কনুইয়ে ভর দিয়ে উপুর হয়ে শুলো। ভেতরে কিছু পরেনি। ম্যাক্সির ওপরের অংশটুকু দিয়ে নিরাভরণ বুকের অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে পেড়েছে।

আমার চোখ চলে গেল।

তনু বুঝতে পেড়েছে।

হেসে ফেললো।

দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলো, খুলে বসি, ভালোকরে দেখবে।

তোর আবার কি হলো! খিঁচিয়ে উঠলি কেন? মিত্রা বললো।

দেখতে পাচ্ছ না। এই টুকু ফাঁক হয়েছে অমনি ড্যাব ড্যাব করে তাকাচ্ছে।

তনু আমার দিকে তাকাল।

আমি হাসছি।

চোখটা একবারে গেলে দেব।

তনু আঙুল বারাল। আমি ওর আঙুলটা ধরে ফেললাম।

মিত্রা হাসছে।

শয়তান। তনু বললো।

আমি হাসছি।

বল বল দেরি করিস না। এখুনি বড়োমা এসে সুর তুলে ডাকবে মিত্রা। ও মিত্রা… ওরে বাবা, তোদের কি ঘুম রে। ভাঙতেই চায় না।

তনু হাসছে।

তুমি তো বেশ ভাল নকল করতে পার।

কতোবার পিক পয়েন্টে এসে বড়োমা ঝামেলা করেছে। আর ও খিল খিল করে শয়তানের হাসি হেসেছে।

আমার দিকে তাকাল। বল।

কি বলছিলাম বল।

ভিখারাম। তোর সঙ্গে আলাপ হলো কি করে?

ব্যাটা দুবাইতে পাথর বেচতে যেত। একবার বম্বে থেকে দুবাই যাচ্ছি। ফ্লাইটে আলাপ। একথা সে কথায় জানাল পাথরের ব্যবসা। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ট হলাম।

তখন তুই গেড়ুয়া?

মাস পাঁচেক হলো সবে নিয়েছি।

বম্বেতে কি করতে এসেছিলি।

বিনদের সঙ্গে দেখা করতে।

তারপর?

প্রথমে ব্যাটা ভেবেছিল আমি সাধুটাধু হবো। হয় তো দুবাইতে আমার আশ্রম আছে।

তারপর হাল্কা হাল্কা সব বললাম।

তখন ও তোর পরিচয় জানে।

না। আমি তখন প্রেমানন্দ। দেবা, অনাদিও প্রেমানন্দের সঙ্গে কথা বলতো। জালটা গুটিয়ে নেওয়ার পর ব্যাটা বুঝতে পেরেছে আমি অরিজিন্যালি কে। তবে দেবা, অনাদি আরও পড়ে জেনেছে।

ওরা তোকে দেখেনি?

দেখলে তো কেশ জণ্ডিস হয়ে যাবে।

মিত্রা, তনু হাসছে।

ভিখারাম দুবাইতে আসা যাওয়া করে। আমার সঙ্গে দেখা করে। ফোনে কথা হয়।

বুঝতে পারি ব্যাটা দুবাইতে কিছু করার জন্য উসখুস করছে।

একদিন কথায় কথায় বললাম এসব যেমন চলছে চলুক তার থেকে বরং হুণ্ডির ব্যবসা করো।

বড্ড রিক্স। প্রচুর লাইন বাট্টা করতে হবে। আয়ের থেকে ব্যায় বেশি।

মাড়োয়ারিগুলো আর কিছু চিনুক না চিনুক নোটটা ভাল চেনে বুঝলি।

আমার এই নোট চেনাটা ওদের কাছ থেকে পাওয়া।

বললাম, তুমি পাথর নিয়ে এসে এখানে দোকানে দোকানে বেচছো। ক পয়সা পাও? তার থেকে এখানে একটা ছোটখাটো দোকান করো। দেশ থেক পাথর এক্সপোর্ট করো।

এক্সপোর্ট করে টাকা ইনকাম করতে পারলে তোমার অনেক এ্যাডভান্টেজ। বিনিময়ে তুমি সমপরিমাণ টাকা ইমপোর্টে করতে পারবে। সরকার তোমাকে অনেক সুযোগ সুবিধা দেবে।

আমি বলছি বটে ও ব্যাটা আমার মুখের দিকে হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকে।

ভাবে সাধু ব্যাটা বলে কি।

দোকানটাকে সামনে রেখে পেছনে তুমি হুন্ডির ব্যবসা লাগাও।

কি রকম!

এবার ওকে ধীরে ধীরে ব্যাপারটা বোঝালাম।

কোনও দেশই চায় না তার দেশের টাকা বিদেশে যাক। কিন্তু ট্যুরিস্ট ভিসায় যারা বেরাতে যায়, সরকারকে তাদের ডলার দিতে হয়। সেটা খুব লিমিটেড। ডলারটা যেহেতু ইন্টারন্যাশন্যাল মানি। লেন্ডিং-এর একটা বড়ো মাধ্যম। তাই সচরাচর কেউই বেশি খরচ করতে চায় না। অনেক পয়সা ওয়ালা মানুষের কাছে বেরাতে যাওয়ার জন্য এই ডলারটা নস্যি। তারা দেশ ছেড়ে বিদেশে ফুর্তি করতে আসে। ফুর্তি করার সময় পয়সার হিসেব থাকে না। সামান্য ডলারে তাদের কিছু হয় না। দেশের দোকানে তুমি তাদের কাছ থেকে টাকা নাও। আর এখানকার দোকান থেকে সমপরিমান টাকা ডলারে ট্রান্সফার করে দাও।

মাঝখান থেকে তুমি একটা কাট মানি রাখো। সেই লোকটার কোনও ঝক্কি ঝামেলা নেই। তোমাকে সে সামান্য উপরি টাকা দিতে নিমরাজি হবে না। তোমায় শুধু খাতা কলমটা বেশ ভাল মেইনটেন করতে হবে।

কথাটা ভিখারামের মনে ধরলো।

আমিই ওকে ওখানে জায়গা কিনে দোকান বানিয়ে দিলাম।

নেপলা, সাগিররা জানতো?

দেখেছে। তবে ও যে ভিখারাম সেটা অতোটা গুরুত্ব দেয়নি। তাছাড়া ওরা আগ বাড়িয়ে কোনও কিছু জানার চেষ্টা করতো না। ওদের কাছে ভিখারাম পাতি একজন পাথর ব্যবসায়ী। অনেক ভারতীয়ই ওখানে পাথরের ব্যবসা করছে। দুবাইয়ের দোকানে ওর এক দেশোয়ালী আত্মীয়কে বসিয়ে দিল। একটু একটু করে ব্যবসা শুরু করলো।

আমি বেশ কিছু পার্টি দিলাম। বছর তিনেকের মধ্যে ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠলো। কিন্তু ওর দোকান দেখে বোঝার উপায় নেই। টাকা আসা মানেই তাকে ঘরে রাখা নয়। ঘরে রাখলে তো বাচ্চা দেবে না। ইনভেস্ট করতে হবে। আমি সেই পথটাও ওকে বাতলে দিলাম।

আমি তখন ওর বুদ্ধিদাতা। ভালো বন্ধু। নেপলাদের ব্যবসা শুরু করার সময় ওর কাছ থেকে টাকা নিলাম। ইন্টারেস্ট সমেত ওকে ফেরতও দিয়ে দিলাম। ব্যাটা প্রথম নিতে চায়নি। ওকে জোর করে ফেরত দিলাম।

ভিখারামের নেশা ধরলো। ব্যবসা চালাতে গেলে ওই মদ, মেয়েছেলর মতো দাদাও পুষতে হবে।

মুখার্জীর কেশটা হওয়ার পর বিনদকে বছর খানেক নিজের পয়সায় টেনেছি। ওই সময়টা আমার খুব টাফ টাইম গেছে। বিনদ তখন বেকার। বিনদকে ওর কাছে ভিড়িয়ে দিলাম। এও বললাম, ঘুণাক্ষরেও যেন ভিখারাম জানতে না পারে তুই আমার ক্লোজ।

তোর কাজ ওর ব্যবসার উন্নতি। আর আমাকে সাহায্য। কি কি সাহায্য করতে হবে তার একটা গাইড লাইন ওকে দিয়ে দিলাম। বিনদও খুব তাড়াতাড়ি ভিখারামের কাছের লোক হয়ে গেল।

আফতাবভাই-এর ইন্ডিয়াতে টাকা আসতো ভিখারামের থ্রু দিয়ে।

আবার এখান থেকে টাকা যেত ভিখারামের থ্রু দিয়ে।

কিসের টাকা? মিত্রা বললো।

মুম্বাইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আফতাবভাই টাকা ঢালতো। বিনদ বুদ্ধিটা দিয়েছিল। ওরও কিছুটা স্বার্থ ছিল। আমি আফতাবভাই-এর মিডিয়েটর হলাম, বম্বে লবি সামলাত বিনদ।

তুই সব সময় মিডিয়েটর?

হ্যাঁ। বড় মজা বুঝেছিস, ঠিক মতো হ্যান্ডেল করতে পারলে, গাছেরও খাও, তলারও কুড়োও।

মিত্রা হাসছে।

তবে কি জানিস সবাই আমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতো। ওরা এটা ভেবেই নিশ্চিন্তে থাকতে পারতো, আমি কখনই কারুর ক্ষতি করতে পারি না। আমার সোর্সেই সরকারের আনাচে কানাচে ভিখারামের যাতায়াত শুরু হলো। কেউ সৎ নয় বুঝলি। রাজনীতিতে প্রত্যেকটা ক্ষমতাবান লোক কোরাপ্টেড। প্রত্যেকের বিদেশী ব্যাঙ্কে টাকা আছে। কারুর কম কারুর বেশি। আন ওয়ান্টেড মানি। যারা ওপরতলায় আছে সবাই জানে। কিন্তু আদ্ভূত একটা সহাবস্থান। আমি এই ইনভিসিবিল সংবাদ সংগ্রহ করে রাখি। উইথ ডকুমেন্টস।

আজ তোর সঙ্গে আমার সৎভাব আছে কালকে থাকবে এ গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। তখন আমি আমার কাজ হাসিল করার জন্য আমার পথ অবলম্বন করি।

কেউ নিজের ক্ষতি চায় না। সে আমার সঙ্গে কমপ্রমাইজ করতে বাধ্য হয়। আমি ঠিক এই জায়গাটায় সকলকে বেঁধে রেখেছি।

একবারে সুদে আসলে তুলে নিস। মিত্রা বললো।

আমি হাসছি।

তুই আমাকে মালিক না বানালে কিংবা তোর কাগজে আমার স্থান না হলে। অনি কোনও দিন এই জায়গায় পৌঁছতে পারত না। অনি তখন আর দশটা মানুষের মতো একবারে সাধারণ গেরস্থ। একটা বিয়ে করতাম। গোটা পাঁচেক ছেলেমেয়ে হতো। তাদের ভরণ পোষণের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি। রাতে বৌ ফিরলে মুখ ঝামটানি দিত। ঝগড়া হত….।

মিত্রা তনু দুজনেই হে হে করে হেসে উঠলো।

তুই সত্যি পারিস।

এটাই বাস্তব। আমি যা করছি আর দশটা মানুষের কাছে স্বপ্ন। ম্যাজিক।

তোকে এই জায়গায় একটু ইন্টারাপ্ট করে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, বলবি?

কি!

মনে হচ্ছে সেই গল্পটার একটা লিঙ্ক খুঁজে পাচ্ছি। তাই জিজ্ঞাসা করছি।

দিদি ওইটা? তনু বললো।

মিত্রা মাথা দোলাচ্ছে।

বল কি জানতে চাইছিস।

তোর তো অনেক ভ্যারিয়েশন। এটাও সেরকম।

আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে। চোখে জিজ্ঞাসা।

চিকনার ঘটনাটা যেদিন ঘটলো তার দিন চারেক আগের ঘটনা। তোর কিছু মনে পড়ে?

একটু সূত্র ধরিয়ে দে মনে পড়ে যাবে।

তুই কার্জন পার্কের একটা বাড়োয়ারী বাথরুমের কাছে মিনিট পনেরো দাঁড়িয়েছিলি। তারপর একজন ভদ্রলোক বাথরুম থেকে বেরতে তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আকাশবানী ভবনের দিকে চলে যাস। টাউনহলের কাছে গিয়ে তাকে তুই ছেড়ে দিস। তুই কিছু টাকাও তোর মানিপার্টস থেকে তাকে দিয়েছিলি। লোকটা কলকাতার যত বাথরুম আছে তাতে ধবল-শ্বেতী, লিঙ্গ বর্ধকের বিজ্ঞাপন, ওই ধরনের হ্যান্ডবিল পেস্ট করে।

আমি মুচকি হাসলাম। আবিদ বলেছে?

মিত্রা, তনু দুজনেই হেসে গড়া গড়ি খায়।

তুই তো আবিদকে দেখেও না দেখার ভান করেছিলি। যেন ওকে চিনিসই না। চাঁদ পরে খবরটা বার করে।

কি খবর?

ও তোর ইনফর্মার।

তোকে একদিন কথায় কথায় বলেছিলাম। মিডিয়ার কি অপরিসীম ক্ষমতা আছে তুই অনুভব করার চেষ্টা কর। মাথায় রাখবি, তোর পাশে জনসাধারণ আছে। তুইই ইচ্ছে করলে একমাত্র সব ব্যাপারটা এক রাতের মধ্যে জনসাধারণের কাছে, তাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারিস।

এর যে কি অনুরণন তা তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।

ঠিক মতো দানা বাঁধাতে পারলে এই জনমত ঠেকান সরকারের কর্ম নয়। এক নিমেষে সরকারের অনেক কিছু ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে। আমি তা প্রমাণ করে দেখিয়েছি। আমি আমার এই সামান্য ক্ষমতা ভীষণ ভাবে ব্যবহার করি। তবে অন্যায়ভাবে কখনই নয়।

ওই ভদ্রলোক তোকে কিসের ইনফর্মেসন দেয়।

নাই বা জানলি।

একটু বলো না। ভীষণ শুনতে ইচ্ছে করছে। কথা দিচ্ছি কাউকে বলবো না। তনুর চোখে মুখে কাকুতি মিনতি।

আমি হাসলাম।

তুমিও তো একদিন চিত্র সাংবাদিকতা করেছো।

করলাম কই, অফিসে ঢুকলেই বলতো এখানে চলে যা কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে আয়।

এর বাইরে তোমার জানার ইচ্ছে ছিল না। তাই জানো নি।

ঠিক আছে, আগে বলো।

ও আমার সরকারী দপ্তরের ইনফর্মার।

সরকারী দপ্তরের! একজন ধ্বজভঙ্গ বিজ্ঞাপন….। মিত্রার চোখে মুখে বিষ্ময়।

তোমরা নিজেরাই যদি অবাক হও। প্রবীরদা আরও বেশি অবাক হবে। অনিমেষদা শুনলে আকাশ থেকে পরবে। আর রাঘবন ভিক্ষারামের কথা ছেড়ে দাও। ওরা এতটা তলিয়ে কখনই দেখে না।

দিদি প্লিজ হাত বাড়িয়ে জলের বোতলটা একটু দাও। গিলে নিই। গলাটা শুকিয়ে গেছে।

তুই যা শুরু করেছিস।

মিত্রা পাশ ফিরে বোতলটা দিল। তনু বোতলের ছিপিটা খুলে কোঁতকোঁত করে নিমেষের মধ্যে বোতলটা হাফ করে দিল।

ছিপিটা লাগাতে লাগাতে বললো। বলো।

কি বলবো ?

ইন্টারেস্টিং গল্প। না শুনলে হজম হবে না।

আমি কি পাবো।

রাতে একবার আলাদা করে ঘারে চরবো।

সে তো রেগুলার একবার করে চরো।

মিত্রা হাসছে।

বলো বলো, কেন ভ্যানতারা করছো।

খুব শোনার ইচ্ছে, তাই না ?

হবে না।

বুড়ো বয়সে একটু বেশি ঘারে চরার ইচ্ছে হয়, তাই না ?

আমার একার নয়, সবার। শেষের সময় সকলের একটু বেশি চাগাড় দেয়।

মিত্রা হেসেই যাচ্ছে।

দিদি তুমি একবারে হাসবে না। শয়তানটার রস চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে।

তনু আমাকে চটাস করে একটা থাপ্পর মারলো।

একটু হাত দিই।

সে তুমি সারাদিন ধরে বসে থাকো না। আপত্তি করবো না।

জানো তনু এই দুর্বলতা শুধু তোমার আমার নয়। তোমার আমার মতো সকলের।

আমি খুব ঠান্ডা স্বরে কথাটা বললাম।

তনু একটু চমকে আমার দিকে তাকাল। বুঝলো আমি কোন কিছুর ইঙ্গিত করছি।

আমি মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগটুকু নিয়ে আমার কাজ হাসিল করি।

এইবার তনু-মিত্রার চোখ চক চক করে উঠলো।

ভাবছো কি আজগুবি কথা বলছি।

ওদের চোখের ভাষায় আকাশ চুম্বী বিষ্ময়।

ওই লোকটা সরকারী অফিসের বাথরুমের আনাচে কানাচে বিজ্ঞাপন সাঁটানর পাশা পাশি দেশজ পদ্ধতিতে তৈরি লিঙ্গ বর্ধক তেল, অনেকক্ষণ যাতে সেক্সটাকে এনজয় করা যায় তার ওষুধ বেচে। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী যেমন কেনে, তেমনি হায়ার অফিসাররাও কেনে।

ওদের দুজনের ঠোঁটে হাসির ঝিলিক।

তোমরা বলবে আমি বুঝি কি করে।

আমি যে কোন কাজ করার আগে আদ্যপ্রান্ত স্টাডি করি। এটা আমার বদ অভ্যাস।

হায়ার অফিসাররা ওর কাছ থেকে ডাইরেক্ট কেনে না। তবে হাত ঘুরে তাদের কাছেও দু-একটা ফাইল পৌঁছে যায়। এ পৃথিবীতে কে চায় না, তার যৌবনটা সারাটা জীবন অটুট থাকুক। কি পুরুষ, কি মহিলা।

আমরা আধুনিক হয়েছি। তবু ওষুধের দোকানে দাঁড়িয়ে কন্ডোম চাইতে আমাদের এখনো দ্বিধা হয়। চুলের রং সত্তর বছর পর্যন্ত কালো করে বার্দ্ধক্য ঢাকি।

নিজে দোকানে না গিয়ে অন্য কারুর মাধ্যমে কন্ডোম কেনাই। এই অন্য কেউটাই আমার সোর্স। এরাই আমার ইসকাবনের টেক্কা।

দুজনে দু-দিক থেকে আমার গালে চকাত করে একটা শব্দ করে চুমু খেল।

মিত্রা আমার মাথার চুল ঘেঁটে দিয়ে আস্তে করে বললো, সত্যি তোর মাথা। তুই কতো সূক্ষ্মভাবে একটা ব্যাপারকে চিনতা করিস, তারপর ডিসিসনে আসিস।

তুই ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবিস দেখবি আমি একটুও জল মেশাই নি।

কেউ কখনো ভাবতে পারবে, ওইরকম একটা লোক এই কাজ করতে পারে।

আমি সেটাই ভাবছি! তনু বললো।

জীবনের সবচেয়ে অমূল্য জিনিষ বুঝলে তনু।

তনু মুচকি মুচকি হাসছে।

এই অমূল্য ওষুধের বিনিময়ে দু-একটা ওয়েস্টেজ জেরক্স কাগজ যদি ওষুধের ফাইল প্যাকিং করার জন্য চাই, তুমি দেবে না।

কৃপাকে তুমি এইভাবে ট্যাপ করেছ ?

অনেকটা। তবে ওর বেশি খাঁই। মাঝে মাঝে ও হোটেলের ঠিকানা দিত। দু-তিন নম্বর গ্রেডের মডেল হোটেলে পাঠাতে হতো।

মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে।

হাসছিস কেন ?

কে দিত ?

ওটা বিনদ সামলাত। আমি শুধু বিনদের কানে পৌঁছে দিতাম।

ওরা কিছু ভাবতো না।

তার কোন অবকাশ ওদের দিতাম না। তবে বিনদ আর এক কাঁটা ওপরে। ব্যাটা স্পাই ক্যামেরায় ভিডিও করে রাখতো।

আমায় একদিন কথায় কথায় বলেছিল। তুমি মদ খাও না। তবে পেগটা বেশ ভাল বানিয়ে দাও। কিভাবে বানাচ্ছ তার ছবি তুমি যদি দেখতে চাও, তোমাকে দেখাব। আমি ক্যামেরায় ধরে রেখেছি।

উপকাহিনী শোনা হয়েগেছে, বোঝা হয়েগেছে, এবার মূল কাহিনিতে আয়। মিত্রা পাশ ফিরে বুকে উঠে এলো।

সেটা আবার কি!

যেখানে থেমেছিলি।

মনে নেই।

আফতাবভাই, ফিল্মইন্ডাস্ট্রি, ভিখারাম।

ও হ্যাঁ। এই যে তুই এখনকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দেখছিস। এখন একটা ফ্যাসান হয়েছে, প্রত্যেকটা প্রোডাকসন হাউস তাদের ছবির জন্য বিদেশে স্যুটিং করতে যায়। বিশেষ করে গানের অংশ।

কেন্দ্রীয় সরকার হয়তো বিদেশে শ্যুটিং করতে যাওয়ার জন্য অ্যালট করলো তিনলাখ ডলার। কিন্তু ওই পয়সায় বিদেশে শ্যুটিং হয়? হয় না।

ভিখারাম তখন সাহায্য করে। যত পয়সা লাগুক তোমার কোনও চিনতা নেই। তুমি শুধু ভিখারামের দোকানে টাকা পৌঁছে দাও। ভিখারাম বিদেশে শ্যুটিংয়ের যা খরচ দিয়ে দেবে। এছাড়াও আর একটা পথ আছে, তোদের বলবো না। সময়ে তোরা সব ধরতে পেড়ে যাবি। তোদের চোখের সামনেই সব ঘটনা ঘটবে। বলতে পারিস আমি আসল খেলা এবার শুরু করবো। দুনিয়াটাকে আমি একবার দেখে নিতে চাই।

মিত্রা হাসলো। তনু আমার চোখে চোখ রেখেছে।

এই ব্যাপারটা বিনদ খুব নিপুন হাতে সামলাত।

ভিখারামের ব্যবসা বাড়ে, আমার বুদ্ধি বারে।

ওকে একদিন বোঝালাম, এবার শুধু মিডিলইস্ট নয়। বিভিন্ন কান্ট্রিতে দোকান করো। ব্যবসাটা বারাও। হিসাবটা ভাল বুঝতে পেরেছো।

ব্যাটা কনসেপ্টটা ভালো খেল।

তুমি ব্যবস্থা করো, আমি রূপিয়া লাগাব।

লণ্ডনে ও যখন দোকান কিনল তখন একদিনের জন্য ও তনুর ওখানে গেছিল।

এখন সারা পৃথিবীর পঁচিশটা দেশে ওর দোকান আছে। পাথরের ব্যবসা আই ওয়াশ। ভেতরে ভেতরে হুণ্ডির ব্যবসা। ওখানকার দোকানে টাকা দাও। ইণ্ডিয়াতে এসে ওর দোকান থেকে টাকা নিয়ে নাও। কতো মানুষ পাথর কেনে রে, এতো টাকা ওরা কামাবে?

সব শালার নয় হুণ্ডি না হয় মহাজনী ব্যবসা। প্রশাসন জানে না? সব জানে।

ওই যে বললাম তাদেরও স্বার্থ আছে। দেশে যে কটা পার্টি আছে। ধরে নে, প্রত্যেকটা এক একটা ইন্ডাস্ট্রী। দেখবি সেই ইন্ডাস্ট্রীতে হাজার হাজার লোক কাজ করছে। তাদের মাসে মাসে মাইনে দিতে হয়। আমরা সহজ সরল পরিভাষায় বলি পার্টির হোল টাইমার।

প্রত্যেকটা পার্টিকে পার্টির ডেকরাম অনুযায়ী ঠাটবাঁট বজায় রাখতে হয়।

পয়সা আসে কোথা থেকে? ভিখারামের মতো কয়েকজন দেয়। আন্তর্জাতিক মানের দুটো ব্যাঙ্কের ব্যাপার আমি জানি যেখানে ভিখারামের যথেষ্ট দাপট আছে। যে যখন সরকারে আসে ওরা সুদে আসলে তা তুলে নেয়। কর ফাঁকি থেকে আরম্ভ করে অন্যান্য সব কিছু।

ভিখারাম তোকে এতো সমীহ করে কেন? মিত্রা বললো।

রাইট ট্র্যাক। তনু বললো।

মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।

আমি যে শিশুটার জন্ম দেব। যে শিশুটাকে লালন-পালন করে বড়ো করবো। তার নারি-নক্ষত্র আমার নোখদর্পনে থাকবে না, তা হয়?

অনিসা তোর পেটে হয়েছে, তুই অনিসার পেটে হোসনি। অনিসা যদি আজ তোকে বলে তুমি কি জানো, তোমার থেকে আমি বেশি জানি। তা কি হয়? ভিখারামের কেশটাও অনেকটা তাই।

একটু খুলে বল।

আজ ওর যথেষ্ট পয়সা হয়েছে। পয়সা হলে মানুষের ক্ষমতা বাড়ে। এখন ওর অহঙ্কারে মাটিতে পা পড়ে না। ধরাকে ও সরাজ্ঞান করতে শুরু করেছে। ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে শুরু করলো। আমি সময়ের দাসত্ব করি, তক্কে তক্কে ছিলাম।

বিনদ বহুবার আমার কানের পোকা বার করে দিয়েছে। তুমি কিছু একটা করো। না হলে বলো সরিয়ে দিচ্ছি। এভাবে চলা যায় না।

ওকে বাবা-বাছা করে বুঝিয়েছি দাঁতে দাঁত চেপে চুপচাপ থাক। শুধু আমাকে কাগজপত্র সাপ্লাই করে যা। বাকিটা আমি বুঝে নেব।

কয়েক বছর ধরেই বিনদের সঙ্গে ওর খটা মটি চলছে।

হাবে ভাবে ও বুঝিয়েছে বিনদের প্রয়োজন ওর কাছে ফুরিয়ে গেছে। সেখানে দেবা স্থান দখল করেছে। আমিই ভিখারামকে দেবার টিপটা দিয়েছিলাম। জাস্ট বাজিয়ে দেখার জন্য। ভিখারাম দেখলাম টপ করে গিলে নিল।

লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।

মিত্রারা থম মেরে বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

তুই যেমন কাউকে চাকরিতে এ্যাপয়েন্টমেন্ট দেবার জন্য তার কোয়ালিফিকেসন, তার অভিজ্ঞতা খুঁটিয়ে দেখিস। দেখিস তাকে তুই যে দায়িত্ব দিচ্ছিস সেটা সে পালন করতে পারবে কিনা। তেমনি ভিখারামও দেবার ইন্টারভিউ নিল।

কি রকম!

(আবার আগামীকাল)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন