শনিবার | ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:২৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (তৃতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় নানা পরিচয়ে গৌরী আইয়ুব : গোলাম মুরশিদ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (ষষ্ঠ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (পঞ্চম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘তোমার নাম’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (অষ্টম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘হাওয়া-বদল’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার প্রবোধিনী একাদশী ও হলদিয়ায় ইসকন মন্দির : রিঙ্কি সামন্ত সেনিয়া-মাইহার ঘরানার শুদ্ধতম প্রতিনিধি অন্নপূর্ণা খাঁ : আবদুশ শাকুর
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কাজলদীঘি, ২১৪ নং কিস্তি

জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় / ১৯৯৭ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
kajaldighi

২১৪ নং কিস্তি

আমি পা দিয়ে জলটাকে ঘুলিয়ে দিচ্ছি। ঘণ্টারা তখনও অনিকার ওর্ণা ডুবিয়ে রেখেছে। কল কল শব্দে জল ওর্ণাটাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

বাবা সাপ। মেয়ের চিল চিৎকারে বুকটা কেমন ছ্যাঁত করে উঠলো।

তাকিয়ে দেখলাম ওরা পাঁচ হাত দূরে ছিটকে গেছে। ভয়ে চোখ মুখ পাংশু। নম্রতার ওর্ণা মাটিতে লুটপুটি খাচ্ছে। লম্বামত কি যেন চাপা দেওয়া ওর্ণার ভেতর লাফা লাফি করছে। পরি কি মরি করে ছুটে পাড়ে এসে উঠলাম। পক্কেরাও অনিসার ওর্ণা গুটিয়ে নিয়ে চলে এসেছে।

নম্রতার ওর্ণাটা তুলে ঝারতেই দেখলাম দুটো বেশ লম্বা-চওড়া কুচে মাছ। যারা আগে দেখে নি, তার সাপ বলেই ভুল করবে। প্রায় হাতদেড়েক লম্বা। দুটোরই মুখটা চিপে ধরলাম।

একটা কিচ কিচ আওয়াজ হলো।

মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

তুমি হাসছো! কামড়ে দেবে।

ওদের চোখে মুখে বিষ্ময় তখনো যায়নি।

নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ছোট ছোট গুঁড়ো চিংড়ি পায়ের কাছে নাচা নাচি করছে।

আয়, ধরবি আয়, কামরাবে না।

তুমি আগে মেরে ফেলো।

এগুলো মাছরে বোকা।

মাছ!

অনিকার চোখে মুখে বিষ্ময়। এতক্ষণ ভয়ে কথা বলছিল না।

মামা সত্যি! এরকম মাছে আগে দেখিনি। পক্কে এগিয়ে এলো।

ছাগল আগে চিংড়িগুলো বাছ, লাফিয়ে লাফিয়ে জলে চলে যাবে।

কি মাছ মামা? অনিকা এগিয়ে এসেছে।

মেয়ের ঘোর এতক্ষণে কেটেছে। ধরে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বাবা যখন বলছে তাহলে সাপ নয়। অনিসা, নম্রতা পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো।

কুচে মাছ। সিঙ্গি, মাগুর, গুলের জাত ভাই। ঠিক মতো রান্না করতে পারলে মাংসর মতো টেস্ট।

সুন্দর কাছ ঘেসে দাঁড়াল।

সত্যি! সুরোদিদাকে বলতে হবে ব্যাপারটা।

এদের প্রচুর রক্ত। রুগীদের ঠিক মতো রেঁধে দিলে শুয়ে থাকা রুগী দুদিনে উঠে দাঁড়াবে।

বোন একটা চিকনাদা আর মীরদাদাইকে কেটে খাওয়াতে হবে। সুন্দর বললো।

অনিসা এখন অনেকটা স্বাভাবিক। মাছ দুটো সমানে লেজ ঝাপ্টে যাচ্ছে।

ড্যাড একটু ধরবো। সুন্দর বললো।

ধর।

কামড়ে দিলে।

দেবে।

তখন আমি অ্যাল। সুন্দর জিভ বার করলো।

তাহলে তুই গ্রীনিজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলবি।

অনিসা হাসলো।

তোর এখনও ভয় করছে?

আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জা লজ্জা চোখে হাসলো।

তুই যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি।

তুমি ভয় পাও?

তোরা আছিস তাই।

বসিরের দিকে তাকালাম।

তোর পাঞ্জাবীর একটা হাতা একটু গিট্টু মার।

কেন!

ওই হাতার মধ্যে দুটোকে ঢুকিয়ে দিয়ে একটা প্যাঁচ মেরে দিই।

মামা চিংড়ি আর চুনো গুলো বেছে নিই। পক্কে বললো।

বাছ।

আমি ওদের সঙ্গে বসে কিছুটা মাছ বাছলাম। শুভকে বললাম নামবি না ফিরে যাবি।

নামবো।

চল।

দিদি তোরা মাছ বাছ আমরা আবার নামি। সুন্দর এগিয়ে গেলো।

প্রায় মিনিট পনেরো হয়ে গেছে। ওরা মাঝে মাঝে উঠে ওর্ণা ঝেড়ে দিয়ে চলে আসছে।

আমি নদীর এপারে যেখানে বাঁশ ঝাড়টা নদীর বুকে ঝুঁকে এসেছে সেখানে দাঁড়ালাম। দেখলাম জলটা যেখানে গিয়ে মিশেছে সেখানে বেশ কয়েকটা গর্ত। এই গর্ত সিঙ্গি, মাগুর, শোলের বাসা। নতুন জল পেয়ে ব্যাটারা নিশ্চই বেরবে। অনেকদিন অভ্যেস নেই। গর্তে হাত ঢোকালে যদি কাঁটা মারে।

শুভ এদিকে আয়।

শুভ তোরা এখানে ধরে দাঁড়িয়ে থাক আমি, ঘণ্টা যাই। পক্কে বললো।

যা। বসিরভাই, আঙ্কেলের মতো তুই অনন্য জলটা একটু ঘেঁটে দে। শুভ ওদের দিকে তাকালো।

পক্কে, ঘণ্টা এগিয়ে এলো।

বলো।

আমি তখন জল থেকে ডাঙায় উঠেছি।

এই গর্তগুলো দেখছিস?

হ্যাঁ।

ওর্ণাটাকে একটু উঁচু করে ধর।

মাছ কই। পক্কে বললো।

খালি বক বক করে, যা বলছি কর না।

দু-জনে জলে বসে পরলো। একটা হাত জলে ডুবিয়ে আমি যেমন করে বললাম, তেমন করে ওর্ণাটা ধরলো। আমি একটা কচি বাঁশের ডগা ভাঙলাম।

ওটা কি করবে?

খোঁচাব।

কোথায়!

গর্তের মধ্যে।

ঘণ্টা আমার কথা শুনে হাসছে।

মামা কিচ্ছু হজম হচ্ছে না।

হজম হতে হবে না। জলের মধ্যে ওর্ণাটেকে ভাল কের চেপে ধরবি। যেন না পালায়।

কি মাছ?

সিঙ্গি, মাগুর থাকতে পারে।

ওই গর্তের মধ্যে!

হ্যাঁ।

কাঁটা মারলে?

একটু যন্ত্রণা হবে।

ওরা দুজন ওর্ণাটাকে টানটান করে ধরলো।

আমি গর্তের মধ্যে কাঠি ঢোকালাম।

বুদ বুদ করছে। বুঝলাম একটু খাটতে হবে।

আমি বাঁশের ডগটা অনেকটা ঢুকিয়ে দিলাম।

ভুঁট করে একটা আওয়াজ হয়েই একটা বড়ো শোল মাছ লাফিয়ে পক্কের মুখে পরলো। ঘণ্টা মামাগো করে জলের মধ্যে উল্টে পরলো।

কি হলোরে ঘণ্টাদা। সুন্দর চেঁচাল। অনন্য, বসির জলের মধ্যে দিয়েই ছুটে আসছে।

জলের মধ্যে তখন ঘণ্টা খাবি খাচ্ছে।

পক্কে খিল খিল করে হাসছে। ঘণ্টার অবস্থা দেখে ওরাও সকলে হেসে গড়াগড়ি।

আমি রাগে চেঁচিয়ে উঠলাম। ছাগল ধরতে পারলি না। বীরপুরুষ হয়েছে।

দাও দাও ওর ঘার মুটকে। তখন থেকে ফর ফর করছিল। অনিকা নদীর ওপার থেকে চেঁচাচ্ছে।

শুভ সুন্দর হাসতে হাসতে এগিয়ে এসেছে। ঘণ্টা ততক্ষণে ওর্ণা গুটিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।

দেখলাম জল ঝরে পরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওর্ণাটা নড়াচড়া করছে। তারমানে সব পালায় নি। এখনো দু-একটা আছে। ঘণ্টা জল থেকে উঠে বসলো। মুখ কাদায় লেপালেপি।

হাসছে।

তুমি শুধু শুধু আমার ওপর রাগ করছো।

কত কষ্ট করে খোঁচা খুঁচি করে বারকরলাম।

কি করবো, আমার মুখে লাফিয়ে পরলো।

বসির তখন চেঁচিয়ে অনিকাদের ধরাবিবরণী দিচ্ছে।

শুভরা হাসতে হাসতে জলে বসে পড়েছে।

তোদের আর মাছ ধরতে হবে না।

আমি জলে নেমে এলাম।

মামা তুমি রাগ করলে বুকটা ধড়াস ধড়াস করে। পক্কে তখনও জলে বসে।

উঠে আয়। এবার যেতে হবে।

নদীর পাড়ে উঠতে মেয়েরা হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পড়েছে।

নম্রতা চেঁচিয়ে উঠলো।

পক্কে, মাছের থাপ্পর। দারুণ এক্সক্লুসিভ।

না-রে নম্রতাদি এইসা মোটা। ইয়া লম্বা।

বাতেলা কম দে।

ওর কথার বলে ঢঙে সকলে হাসে।

পায়ে কাদা লেগেছিল রগড়ে ধুয়ে উঠে এলাম।

বাবা দেখছো কতো মাছ।

মেয়ে আমাকে পোঁটলাটা দেখাল।

ভেজে খেতে হবে। দেখবি এই মাছের টেস্টই আলাদা।

নম্রতা হেসে গড়িয়ে পড়ছে। পিকু থেবড়ে মাটিতে বসেছে।

কিরে তুই ওইরকম ভ্যাবলার মতো বসে আছিস কেন। জলে নামতে পারতিস।

ভিতুর ডিম, সাঁতার জানে নাকি, যদি জলে ডুবে যায়। নম্রতা বললো।

না না তুই ওরকম বললে হবে। ওর তাগদটা অন্য জায়গায়। আমি বললাম।

ড্যাড।

সুন্দরের দিকে তাকালাম।

পেছন দেখাচ্ছে।

ভ্যাট। অনিসা বললো।

সকলে হেসে গড়া গড়ি খায়।

পা ধুবি না।

আবার কাদা লাগবে। অনিসা বললো।

চল আর দেরি করিস না। এরপর তোর মা আমাকে কাপর কেচে দেবে।

আমি একটা ছোট্ট ম্যাসাজ করে দিয়েছি।

কেন করতে গেলি।

চিনতা করবে না।

ঠিক আছে তোরা এগিয়ে যা আমি যাচ্ছি।

মেয়ে চোখ পাকাল আমার দিকে।

তুমি নিশ্চই আবার বদ বুদ্ধি এঁটেছ?

হেসে ফেললাম। না রে তোরা একটু এগো, আমি তোদের পেছন পেছন যাচ্ছি।

নদীর ধার দিয়ে দিয়ে সিং-এর ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়া।

কেন পুকুর ধার দিয়ে উঠে পরি?

তাই যা।

ওরা এগোতেই আমি বাঁশ বাগানের ভেতরে ঢুকলাম। আকাশের মুখ ভার। তারমানে আবার ঢালবে। জলভরা মেঘ উড়ে চলেছে।

আঁখ বাড়ির সামনে এসে বিমল সাঁতের বাড়ির দিকে লক্ষ্য করলাম। না কেউ দাওয়ায় বসে নেই। কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। যাওয়ার সময় দেখেছিলাম আঁখ গাছগুলো কেমন ঝিমচ্ছে। এখন বেশ চনমনে লাগছে। হাওয়ায় দুলছে। একটা সর সর আওয়াজ ভেসে আসছে।

আবার ভাল করে উঁকি মারলাম। না দাওয়ায় কেউ বসে নেই।

এখন খুব বেশি একটা খাটতে হবে না। বর্ষার জল পেয়ে গাছের গোড়ার মাটি বেশ নরম। হামাগুড়ি দিয়ে আঁখ বাড়িতে ঢুকে পরলাম। দেখে দেখে মোটা মোটা তিনটে আঁখ গোড়ার মাটিটা একটু সরিয়ে উপরে নিলাম। কিন্তু বাঁধা আছে টানতে গেলেই আওয়াজ হবে। খুব সাবধানে খড় দিয়ে বাঁধা গিট্টুটা আলগা করে আঁখ তিনটে বার করে আনলাম। আবার যেই ভাবে ছিল টেনে গিঁট মেরে দিলাম।

বুড়ো বয়সে দৌড়লে হবে না। এইখানে বসে বসেই কাজ সারতে হবে। লম্বা লম্বা আঁখ ভেঙে টুকরো করলাম। একটা আঁখের শুকনো পাতা দিয়ে ভালকরে বাঁধলাম।

লম্বা করে পাঞ্জাবীর তলায় ঢুকিয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এলাম।

বাঁশবাগানের ভেতর ঢুকে ধরে যেন প্রাণ এলো।

পেছন ফিরে আর তাকালাম না।

হন হন করে হেঁটে নদীর পাড়ে চলে এলাম।

এখান থেকে অনিসাদের দেখতে পাচ্ছি না। তবে ওদের কথা শুনতে পাচ্ছি।

পক্কেদা তুই বাবার মতো পারবি না।

থামতো দুবার জাল ফেলে মাছতো ধরেছি। মামা এলে দেখবি ভড়কে দেব।

আমি পাঞ্জাবীর পকেটে হাত ঢুকিয়ে আঁখ চেপে ধরে আছি।

কাছে আসতেই দেখলাম ঘণ্টা, পক্কে মাছ ধরছে।

আমাকে দেখেই পক্কে চেঁচিয়ে উঠলো।

মামা যে শোল মাছটা ওখান থেকে পালিয়ে এসেছিল ব্যাটাকে এখানে ধরেছি।

ও তো তোর বন্ধু ছিল।

পক্কে নীচু হয়েছিল সোজা হয়ে দাঁড়াল।

দেখলাম একটা জল ঢোঁড়া সাপ নড়তে নড়তে এগিয়ে যাচ্ছে।

পক্কে তোর বাঁ দিকটা একটু তাকা।

কেন!

তাকা না।

পক্কে, ঘণ্টা একবার তাকিয়েই মামাগো বলে, পরি কি মরি করে দুজনে ছুটে এলো।

কি হলো।

আগে বলো নি কেন!

কি হতো।

তোমার মতো গলাটা চিপে ধরতাম।

যা এখন গিয়ে ধর।

বাড়িতে গিয়ে কুচে ধরে একটু প্র্যাক্টিশ করি।

বাবা তোমার হাতে কি হয়েছে গো! মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে।

কই কিছু না।

মেয়ে এগিয়ে এসেছে।

তোমার বাঁ হাতটা নড়ছে নাতো?

মেয়ে কাছে এগিয়ে এসে আমার হাতটা ধরতেই আঁখের স্পর্শ পেয়েছে।

হাসি হাসি মুখে চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকাল।

আমি বোকার মতো হাসছি। আমার বাম হাতটা তখনো পাঞ্জাবীর পকেটে ঢোকান।

ওরা পায়ে পায়ে কাছে এগিয়ে এসেছে।

কি রে বোন! অনন্য বলে উঠলো।

মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে। চোখে হাসি মুখ গম্ভীর।

তুমি না….।

চুয়াঢ় তুই ইদিকে একবার আয় ডাঙে তোর ছাল খিঁচবো।

তাকিয়ে দেখলাম চিকনা নদীর ওপারে বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে চিল্লাচ্ছে। মেয়েরা ওর রকম সকম দেখে হেসে ফেললো। চিকনা গাঁইয়া ভাষায় আমাকে বলে চলেছে।

অনিকা খেজুর কুলের কাঁদিটা হাতে তুলে দেখাচ্ছে।

আবার তুই আঁখ বাড়িতে ঢুকে আঁখ চুরি করছু।

মিয়াপুরু চেঁচাউঠু কেন রে। তুই দেখছু। আমিও চেঁচিয়ে উঠলাম।

ছেলেমেয়েরা সকলে হেসে উঠলো।

কি বললে! অনিসা বললো।

কিছু না। হেসে ফেললাম।

অনিকা এগিয়ে এলো।

প্লিজ মামা আর একবার।

আমার কথা শুনে মেয়েরা যেমন হেসে উঠলো, চিকনাও হেসে ফেলেছে।

হাসতে হাসতেই চিকনা ওখান থেকে চেঁচাল, গুরুমা দেখবে এসো।

মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে হেসেই চলেছে। ইসারায় বললাম, চুপ থাক। এখনও কেউ জানে না।

তুই আয় ইদিকে তোকে জাঁতা গাঢ়বো।

তোকে।

প্রথমে যার মুখটা বাঁধের ওপর ভেসে উঠলো। সেটা নেপলা তারপর সাগির, অবতার।

আমাদের দেখে ওদের হাসি আর থামে না।

নেপলা চেঁচাল বসির তোমার জামা কই।

মাছ ধরেছি।

নেপলা চিল চিৎকার করে হেসে উঠলো।

শুভ ওপারে চলে যা।

তুমি চলো।

কেন ভয় পাচ্ছিস?

না।

তাহলে?

সকলে একসঙ্গে পার হই।

আমি এগিয়ে এলাম।

মামা আমি তোমার সঙ্গে। অনিকা এগিয়ে এলো।

আমি মসাই-এর পাঞ্জাবী ধরছি।

মেয়ে আমার বাঁদিক কিছুতে ছাড়ে না।

মিত্রারা এসে ভিড় করলো। একে একে সব পরিচিত মুখ এসে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়েছে।

দিদি, ছোটোমা আমাদের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে ওখানে বসে পড়লো।

দিদি বসিরের অবস্থা দেখছো। নেপলা বললো।

ও কোনওদিন খালি গা হয় না।

আজ মামার পাল্লায় পড়েছে।

ওর বাবা দেখলে হার্টফেল করবে।

দাদাকে একবার ডাকো।

ডাকতে হবে না। খবর চলে গেছে।

আম্মি এ দেখো। বসির চেঁচাল।

ও কেয়া হ্যায়।

সাওয়াপ।

এখনও চুরি করার সখ আছে। নীপা চেঁচাল।

একবারে আমার বাবাকে চোর বলবে না। মেয়ে চাঁচাল।

শুভ মাথায় পোঁটলা তুলেছে।

ওরে ওগুলো কি। মিত্রা চেঁচাল।

আম। পক্কে চেঁচাল।

আমি জলে নামলাম। দুই দিকে অনিকা, অনিসা জাপ্টে ধরেছে পেছন থেকে নম্রতা কাঁধ ধরেছে।

বাবা, মা তোমার থেকে চোখ সরাচ্ছে না। অনিসা ফিস ফিস করলো।

দেখতে দে।

মশাই ওখানের থেকে এখানে বেশি কাদা।

মামাগো। পক্কে চেঁচাল।

কি হলো।

পা তো গামবুট হয়ে যাচ্ছে।

হতে দে, পুকুর ঘাটে নেমে খড় দিয়ে ঘসে নিবি, সাবান লাগবে না।

বোন কাদা বেশি জলটা কম। অনিকা বললো।

মশাই আস্তে হাঁটো। নম্রতা বললো।

হাঁটছি কই। তোরা যে ভাবে জাপ্টে ধরে আছিস।

একবার পেছন ফিরে তাকালাম দেখলাম সবাই জলে নেমে এসেছে।

আমরা নদীর মাঝা মাঝি।

ঘণ্টা মাছগুলো আবার জলে ভাসিয়ে দিস না।

নিজে ভেসে যাব, তবু মাছ ছারবো না।

উ।

মেয়ে পা হরকাল। ওকে ধরতে গিয়ে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে হাতটা তাড়াহুড়ো করে বার করতে গিয়ে পাঞ্জাবী ফেঁসে গেল। বগল থেকে ঝুপ করে আঁখের বোঝা নদীর জলে। চারিদিকে একটা অট্টহাসির শব্দ ম ম করে উঠলো।

কোনওপ্রকারে মেয়েকে ধরেফেলেছি। আমিও যে টাল খাইনি তা নয় সামলে নিয়েছি।

ছাগলী চেপে ধরতে পারিস না। শুভ পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।

মেয়ের ততক্ষণে থাই পর্যন্ত ভিঁজে গেছে। পেছন দিকটাও ভিঁজে গেছে।

তুই চেঁচাচ্চিস কেন। মেয়ে তরপে উঠলো।

এই টুকু জল মাটি দেখা যাচ্ছে উনি চিৎপটাং।

কাদা দেখতে পাচ্ছিস না।

আমরা পা মাথায় করে হাঁটছি।

আমি নীচু হয়ে আঁখগুলো তুলছি।

মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে গেছে।

সরি।

মশাই আঁখ কোথায় ছিল! নম্রতার চোখ গোল গোল।

আবার হাসির ঢেউ চারদিকে আছাড় খেয়ে পড়ছে।

তুই আয়, আমি ডাঙ লিয়ে এঠি বুইসছি। চিকনা আবার চেঁচিয়ে উঠলো।

তোর গো মুয়ে দৃষ্টি পরু।

একবারে ঠাট গাঁইয়া ভাষায় চিকনাকে গাল দিয়ে উঠলাম।

হাসি থামেনি।

শুভ, অনিসাও থামে নি।

নম্রতার হাতে আঁখের বোঝাটা দিলাম। তিনটে আঁখকে প্রায় দশ টুকরো করেছি।

নম্রতা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

ওই জন্য তখন তুমি ফুরুত।

আমি হাসছি।

অনিসা ঠিক বলেছে। বাবা দুষ্কর্ম করতে গেল।

এটা একটা নেশা বুঝলি। ড্রাগের থেকেও ডেঞ্জার। এর জন্য কাকার হাতে কতো মার খেয়েছি। এখন কাকা নেই, আমাকে মারার মতো কেউ নেই।

নম্রতা জড়িয়ে ধরলো।

তোমায় না জেনে হার্ট করে ফেলেছি।

না রে এখানে এলে আমার অবচেতন মনটা কেন জানিনা মাতাল হয়ে ওঠে। তখন আমি একটা অন্য মানুষ হয়ে যাই। এই পাগল প্রকৃতি আমার শরীরের সমস্ত তন্ত্রীকে এক মোহময়ী আবেশে আচ্ছন্ন করে রাখে। আমি তখন অনেকটা নেসার ঘোরে থাকি।

নম্রতা আমার মুখের দিকে চোখ তুলে তাকাল।

আর কার কি হয় বলতে পারবো না। আমার তো হয়।

মেয়ে, শুভ, অনিকা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

দেখ আমি চাইলে হয় তো সামন্ত জ্যেঠু আঁখ বাড়িটাই কেটে দিয়ে যাবে। কিন্তু এই তিনটে আঁখ চুড়ি করার মধ্যে কি যে মজা তোদের ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না।

মেয়ে, অনিকা, নম্রতার চোখ চক চক করছে। শুভর চোখ স্থির।

দেখে ফেললে গলা উঁচিয়ে দুটো গালাগাল দেবে। ছুটে পালাব। কেন জানিনা সামন্ত জ্যেঠুর ওই গালাগালটার মধ্য আমি আমার কাজের এ্যাচিভমেন্ট খুঁজে পাই। দেখলি না তোদের চিকনা মামা আমাকে কেমন গালাগাল দিল।

নম্রতা হেসে ফেলেছে। জড়িয়ে ধরেছে।

এটা একটা নেসা।

আমাদেরও নেসা লেগেছে।

ঘাটের দিকে তাকালাম। তনু, মিত্রা জড়াজড়ি করে হেসেই চলেছে। ভিড়ের মধ্যে নীরু, বটা, কনিষ্ককে দেখতে পাচ্ছি। ওরাও হাসছে। বড়োমা, জ্যেঠিমনি, আন্টি, দামিনীমাসি আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন বলাবলি করছে।

অনিকা তোর কোঁচরে কি? তনু চেঁচিয়ে উঠলো।

কঁয়েতবেল।

হে হে হে আবার হাসি।

আমি ছোটোমার দিকে তাকালাম।

সাগরেদগুলো ভাল জুটিয়েছিস।

ঘাটের কাছাকাছি এসে গেছি। নীরু পায়ে পায়ে সবার আগে নেমে এসেছে।

সাবধান, হড়কা আছে। ধরে ধরে উঠবি। আমি বললাম।

নম্রতা আঁখগুলো দে আমি ধরি। নীরু বললো।

কেন!

তোর উঠতে সুবিধা হবে।

আমি এগুলো নিয়ে উঠতে পারবো।

নম্রতাদি একবারে দিবি না। এতক্ষণ ওপরে দাঁড়িয়ে হ্যা হ্যা করছিল। অনিসা বললো।

রাগ করিস কেন, তোর বাবাকে কতো ভালোবাসি বল।

আর পটাতে হবে না। কাঁচা আম চিবিয়ে খাও।

ওটা তো খাবই। অতো কষ্ট করে বয়ে আনলি।

নম্রতা, নীরুর কথায় হাসছে।

একটা দে। আমরা তিনজনে মিলে ভাগ করি। ওপরে গেলে আর পাব না।

ওরা তিনজনেই হাসছে।

একটা, বেশি চাইছি না। নীরু আবার বললো।

নম্রতা আমার মুখের দিকে তাকিয়েছে।

দে না, অনি ভাল ছেলে, কিছু বলবে না।

নম্রতা একটা আঁখ ওর হাতে দিল। নীরু আমার দিকে তাকাল।

চুরি করলি।

নম্রতা একটা আঁখ নিয়ে নীরুকে তারা করলো।

বাবারে কনিষ্ক বাঁচা, এরা তো এক একটা বাঘিনী।

হাসি থেমে নেই।

একে একে সবই ওপরে উঠে এলাম।

ড্যাড, মিসন সাকসেসফুল।

আমি সুন্দরের দিকে তাকিয়ে হাসছি।

আজকের ব্লগের হেডিং।

ইয়েস।

মিত্রা, তনু আমার দিকে কুত কুত করে তাকিয়ে। চোখ বলছে তোকে একা পাই শরীরে একটা মাংসও থাকবে না। সব খুবলে নেব।

এগুলো কাইনু পাইছু। চিকনা সামনে এসে দাঁড়াল।

তোহরে খেত নু লিছি।

তুই সামন্ত জ্যেঠুর আঁখ বাড়িতে ঢুকিসনি।

না।

তোকে অনিসা জিজ্ঞাসা করেনি, বাবা তুমি কোথায় যাচ্ছ।

তুই থামবি। বাসু চেঁচাল।

আরে কি সুন্দর বাচ্চাদের মতে হামাগুড়ি দিয়ে সুরসুর করে সামন্ত জ্যেঠুর আঁখ বাড়িতে ঢুকে পড়লো।

হাসি শুরু হলো।

বেশ মাছ ধরছিল। আমি বাঁশ ঝাড়ের ভেতর লুকিয়ে বসে বসে দেখছি। যেই শোলটা লাফিয়ে পালিয়ে গেল। ঘণ্টাকে দেরেমুশে গাল দিল। রেগেমেগে উঠে গেল।

তারপরই দেখি অনিসাকে কি বললো। অনিসা ওই কথা বললো।

সবাই চিকনার ক্যারিকেচার দেখে ঢেউ তুলে তুলে হাসছে।

তখনই বুঝেছি ও আঁখ চুরি করবে। গাছগুলো ওরকম লক লক করে হাওয়ায় দুলছে।

চোর চোরকে চেনে। কি বলো? মিত্রা বললো।

হ্যাঁ। চিকনা হেসে ফেললো।

আবার হাসির ঢেউ।

হ্যাঁগো গুরুমা।

ঠিকই তো।

সবাই হাসছে।

আমি একটু বাঁধ থেকে নেমে গেলাম। ও এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়াল। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে গেল। তারপর নিজেই ধন্দেতে পড়ে গেলাম ওদিকে তো গু-বোন নেই।

ধ্যুস ধ্যুস করে বাসু চেঁচাল।

অনেকক্ষণ বসে আছি। কিছুতেই বেরয় না। তারপর দেখলাম বেরলো। খালি হাত।

ভাবলাম আমি হয়তো ভুল ভেবেছি। ও নদীর ওপার দিয়ে চলেছে আমি এপার দিয়ে। বাঁ-হাত কিছুতেই নরে না তখনি বুঝেছি পাঞ্জাবীর তলায় আঁখ গোঁজা আছে।

আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে হাসছি।

তুমিও ওরকম করতে। তনু বলে উঠলো।

হ্যাঁ। না না।

সবাই জোরে হেসে উঠলো। চিকনা আমার দিকে তাকাল।

গাছে উঠেছিলি কেন।

চিকনা আমার হাতটা ধরে মোচরালো।

আমি হাসছি।

গতসপ্তাহে গাছে উঠতে গিয়ে প্যান্ট ফাটাইছু। পাঞ্জাবী তোল।

ঘরে চল পাজামা খুলে দেখাচ্ছি।

সবাই জোরে হেসে উঠলো।

চিকনা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও চিকনাকে জড়িয়ে ধরেছি।

এদের সাহস আছে। বসিরকে দেখে আমি অবাক। ও যে ভাবে জল ভাঙছিল।

ব্যাটা চিংড়িমাছ বেছেছে।

বসির! চিকনা হেসে উঠলো।

তুই পারিস।

এই সাইজের পাকা কই ধরেছি। হাতের তালু দেখালাম।

কোথায়!

হারুজানার কালায়।

ওইখানে গেছিলি এদের নিয়ে!

এইপাসের গাছে আম দেখতে পেলাম না।

চিকনাদা দুটো সাপ ধরেছি। অনিসা বললো।

কোথায়?

বসিরভাই-এর পাঞ্জাবীর হাতায়।

চিকনা হাসছে।

ওগুলো কুচে। তুই তখন সেই জন্য সাপ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলি।

অনিসা মাথা দোলাচ্ছে।

তুই চেঁচিয়ে উঠতেই তোদের খুঁজে বার করলাম। না হলে খাল পেড়িয়ে শ্মশানের দিকে যাচ্ছিলাম।

বড়োমার সামনে এসে দাঁড়ালাম।

বড়োমা আমাকে এক দৃষ্টে দেখে যাচ্ছে হাসিহাসি চোখ।

সোনাআন্টি, দামিনীমাসি, জ্যেঠিমনি হাসছে। নীরু, কনিষ্ক, বটা আঁখ চিবচ্ছে।

বুঝলে বড়োমা আঁখগুলো বেশ মিষ্টি। নীরু বললো।

বড়োমা নীরুর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।

গালফুলিয়ে কোনও লাভ নেই। তার থেকে বরং আঁখ চেবাও মারির ম্যাসেজ হবে।

হাসি থেমে নেই।

ছোটোমা, তনু, মিত্রা বসিরকে নিয়ে পড়েছে। দিদি ঘন ঘন ঢেউ তুলে হাসে।

বুঝলে বড়োমা সেদিনের থেকে আমগুলোর সাইজ বেশ বড়ো। দু-একটা পাকা আমও আছে। নীরু আবার আঁখ চিবতে চিবতে বললো।

পুকুরের ওপারে হই হই হতেই তাকালাম। দেখলাম ভজু, ভেঁদোদা নাচছে।

সামনে বিধনদা, ডাক্তারদাদা, মাসীমনি, সুরোমাসি, কাকীমা।

আমরা বাঁশবাগানের ভেতর দিয়ে শরু পথ ধরে পুকুরের এপারে এলাম। সামনে আন্টি, দামিনীমাসি আমার পাশে বড়োমা। পেছনে জ্যেঠিমনি।

কাছে আসতেই ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো।

সোনা তখনই তোমায় কুচের গল্প বলছিলাম। দেখ কুচে কাকে বলে। বুঝলে, অনির সঙ্গে আমার ট্যিলিপ্যাথি আছে।

ডাক্তারদাদা, সুরোমাসির দিকে তাকাল।

সুরোদি বেশ কোষে ঝাল দিয়ে কুচেটা রান্না করবে। কতদিন খাইনি।

তরিজুত করে গেলোনটা ঠিক আছে। বড়োমা দাঁতে দাঁত চিপলো।

যা বাবা, শোনো বড়োর কথা। পৃথিবীতে গেলনের জন্যই আসা।

ডাক্তারদাদা আমার দিকে তাকাল।

কইগুলো জব্বর ধরেছিস। একবারে পাকা কই। কলকাতার বাজারে হাজার টাকা কিলো দিলেও কেউ দিতে পারবে না।

তোর অনিদার কথা ছাড়। ওটা একটা পাগল। এখানে এলে ওর পাগলামো বেরে যায়।

দেখলাম সুরো অনিমেষদার হাত ধরে ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো।

পেছনে আফতাবভাই, দাদা, মল্লিকদা, রাঘবন।

আমাকে দেখে আফতাবভাই সারাটা শরীরে ঢেউ তুলে হেসে উঠলো।

একটু দূরে বসিরের কাদামাখা শরীর দেখে চেঁচিয়ে উঠলো।

নাজমা এ ক্যায়া তুমারা বেটা।

নেহি তুমারা।

ডাক্তারদাদা, অনিমেষদা-বিধানদাকে মাছের গুনাগুণ বোঝান শুরু করে দিয়েছে।

দেখলাম ভজু, ভেঁদোদা আলাদা আলাদা করে মাছ গোছাচ্ছে।

সুরোদি চিংড়ি মাছ দিয়ে গোটা কয় কড়া করে বড়া ভাজো তো, সন্ধ্যার চা-টা একটু মৌজ করে খাই। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো।

বড়োমা একবার কট কট করে ডাক্তারদাদার দিকে তাকাল।

হাসি থেমে নেই।

 

স্নান সেরে পুকুর ঘাট থেকে সোজা এবাড়িতে চলে এলাম। তখনও মেয়েরা পুকুরে দাপাদাপি করে চলেছে। ছোটোমা পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে চিল চিৎকার করে চলেছে।

ওরে এবার ওঠ। অনেক হয়েছে। আর জলে পরে থাকিস না। শরীর খারাপ হবে।

কে কার কথা শোনে।

আমি খিড়কি পাশ দিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে বারান্দায় এলাম। রান্নাঘরটা বেশ ঝক ঝক করছে। মনে হয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার পর এখনো ব্যবহার হয় নি।

সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এলাম।

নিজের ঘরের সেকলটা খুললাম। বাইরেটা মেঘলা তাই ঘরের ভেতর অন্ধকার।

আলো জাললাম।

ঘরটা আলোয় আলোকিত হলো।

সব জায়গায় পরিবর্তন। ঘরে আর সেই ষাট পাওয়ারের লালচে বাল্পের আলো নেই তার বদলে সব সিএফএল লাগান হয়েছে। আগের থেকে ঘরটা আরও উজ্জ্বল দেখতে লাগছে যেন দিনের আলোয় বসে আছি।

মনে মনে হেসে ফেললাম।

একদিন এই ঘরে একটা লম্ফ জুটতো না।

বেশ মনে পড়ে। মৌসুমি মাসি একটা পাট কাঠি জ্বালিয়ে দিত আমি কোনও প্রকারে এসে বিছানায় উঠে পড়তাম। রাতে বাথরুম পেলে অন্ধকারে হামাগুড়ি দিয়ে বাইরের বারান্দায় চলে যেতাম। খরের চালে করতাম সেটা গড়িয়ে নিচে চলে যেত। ভাগ্যিস মাটির বাড়ি ছিল।

আলমাড়িটার স্থান পরিবর্তন হয়েছে। ফলে ঘরের জায়গাটা আরও বেরে গেছে।

সোফার পাশে ঢাউস দুটো ব্যাগ পড়ে রয়েছে। মিত্রা, তনু, আমার জামাকাপর আছে। দু-দিনের জন্য আসা। কত জামাকাপর পরবে কে জানে তবু সঙ্গে আনা চাই।

নিজেই আলমাড়ির মাথায় হাত রেখে চাবিটা বার করলাম। আলমাড়ি খুলে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করে বিছানায় রাখলাম।

আলমাড়ির দরজাটা বন্ধ করতে যাব। খিল খিল করে হাসির শব্দ।

পেছন ফিরে তাকালাম। তনু, মিত্রা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে।

কখন এসেছে বুঝতে পারিনি।

তোকে কি বলেছিলাম। মিত্রা, তনুর দিকে তাকিয়েছে।

শত চেষ্টা করেও কয়লার ময়লা ধুতে পারবি? পারবি না।

মিত্রা আমার দিকে তাকাল।

বুনো কোথাকার। মিত্রা তেরে এলো।

যা বাবা!

কেন মুখ ছিল না। ডাকতে পারিসনি।

অসুবিধে হলে ডাকবো।

তোকে এই রং-ওঠা পাজামা, পাঞ্জাবী পরতে কে বলেছে?

কেন বিয়ে বাড়ি যাব নাকি। ঝকঝকে পরতে হবে।

তোর আর পাজামা পাঞ্জাবী নেই।

আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসছি।

হাসি বার করে দেব। নোড়া দিয়ে সব দাঁত কপাটি ভেঙে দেব।

মিত্রা হাত মুঠো করে তেরে এলো।

দিদি লাইটটা নিভিয়ে দিই।

আমি তনুর দিকে তাকালাম।

তোমার তো বহুত এনার্জি, এবার আমাদের পেছনে একটু খরচ করো।

তনু লাইট নিভিয়ে এগিয়ে এসেছে।

একবারে ধরবে না।

কেন শুনি। আমরা কি অচ্ছ্যুত।

মিত্রা এরি মধ্যে খাটের ওপর একটা বাক্স তুলে আমার একটা ভাল পাজামা-পাঞ্জাবী বার করে ফেলেছে। আমার বার করা পাজামা, পাঞ্জাবী আলনায় রাখলো। তনু আমার টাওয়েল চেপে ধরেছে।

তনু খারাপ হয়ে যাবে।

কিসের খারপ হবে শুনি।

তনু এখন ছেড়ে দে। দিদি চলে আসতে পারে। রাতে ওকে বাটনা বাটবো।

দুজনেরি চোখে মুখে দুষ্টুমি ঝিকমিক করছে।

মিত্রা পাজামা, পাঞ্জাবী বার করে খাটে রেখে বাক্সটা আবার সোফার পাশের খালি জায়গাটায় রাখলো। দেখলাম সঙ্গে ড্রয়ার, গেঞ্জিও আছে।

তনু লাইটটা জেলে দাও। আমি বললাম।

তনু এগিয়ে গিয়ে লাইট জ্বাললো।

আমি পাজামা নিয়ে গলাতে শুরু করলাম।

কিরে ভেতরে কিছু পরবি না! মিত্রা বলে উঠলো।

থাকবো এই ঘরে। ম্যাক্সিমাম ওই বাড়ি। ভেতরে পরে কি করবো?

ছেলে-মেয়েরা আছে।

থাকুক।

থাকুক কিরে! তোর কোনও মান সম্মান না থাকতে পারে। আমাদের আছে।

আচ্ছাই মুস্কিল।

মেয়েকে বলতে পারিস না।

আমি হাসছি। মিত্রা আমার হাতে ড্রয়ারটা ধরিয়ে দিল।

বাধ্য ছেলের মতো ওদের কথা শুনলাম। নিজেকে ধোপ-দুরস্ত করে তুললাম।

(আবার আগামীকাল)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন