ট্রেড এন্ড কমার্সিয়াল অর্গানিজেশন ইন বেঙ্গল ১৬৫০-১৭২০, উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু দ্য ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
ষষ্ঠ অধ্যায়
চিনি, সুতো এবং অন্যান্য রপ্তানি পণ্য
বাংলা থেকে যে নানান ধরণের, বিপুল পরিমান সুতিবস্ত্র রপ্তানি হত, তার বৈচিত্র কী ছিল এবং তার ঠিকঠাক শ্রেণীবিভাগ কীভাবে করা হত, এই বিষয়ে আজ গবেষণা করা খুবই সমস্যাজনক কাজ। বাংলার অর্থনীতির ইতিহাসে কাপড়গুলোর নাম থেকে কাপড়ের চরিত্র চিহ্নিত করার আন্দাজময় যে প্রক্রিয়া চলে আসছে, সেটা যে বাস্তবের কাছাকাছি পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়। কোম্পানির খাতাপত্রে উল্লিখিত সুতির পিসগুডডের সংখ্যা ছিল আমার হিসেবে ন্যুনতম ৭৫টি, হয়ত আরও বেশি। আজ অম্বর, মাহামুদিয়াতি, আচাবানি, আবরোঁয়া, বুলচোল, কুপি, দুদামি ইত্যাদি কি ধরণের কাপড় ছিল তা আজ খূঁজে বের করা প্রায় দুঃসাধ্য। এই সব সীমাবদ্ধতাকে মাথায় রেখেই, কোম্পানি যে সব টুকরো কাপড় (পিসগুডস) রপ্তানি করত তাকে তিনভাগে ভাগ করলাম, প্রথটি রেশম টুকরো কাপড়, দ্বিতীয়টি মেশানো টুকরো কাপড় যা রেশম আর সুতি মেলানো মেশানো কাপড় এবং তৃতীয়ত সুতি টুকরো কাপড়, একরঙা এবং ছাপা। এছাড়াও ছিল বিপুল পরিমানে কাঁথা, টেবলক্লথ, প্লাস, ভেলভেট ইত্যাদি, তবে রুমাল বা লুঙ্গি সাধারণত সম্পূর্ণ সূতি বা রেশমে হত, তবে সেটা মাঝে মাঝে সুতি-রেশমের মেলানো-মেশানো সুতোতেও বোনা হত।
ব্রিটিশেরা বাংলার সুতির কাপড়কে বলত তাফেতা আর ডাচেরা বলত আরমোসিজনেন (‘een Indische sijden stof; taf’)। তাফেতা শব্দটা মধ্যযুগের ইওরোপের একটা শব্দ যার অর্থে সূক্ষ্ম বস্ত্র, রেশমী, রেশমের মত চকচকে। ইওরোপিয়রা যখন এই শব্দটা ভারতে নিয়ে এল এর সঙ্গে জুড়ল ফারসি তাফতা, বা চকচকে সুতো, যা সে সময় রেশমের প্রতিশদ হিসেবে ব্যবহৃত হত। বাংলায় অধিকাংশ তাফেতা তৈরি হত মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারের আশেপাশে। সে সময় তাফেতার কতকগুলি বৈচিত্র ছিল যাদের নাম রেস্টেস বা ডুরে তাফেতা বা সোনালি পাম্বার যা জোরালো সোনালী রঙের এবং মোটা রেশমের সুতোতে তৈরি (ডি বি, ৮৯ খণ্ড, ২৬৬; খণ্ড ৯৩, ৩২-৩৬)। ব্রিটিশ কোম্পানি আরও কিছু রেশম টুকরো কাপড় রপ্তানি করত, তাদের নাম সারসেনিট, জামওয়ার এবং রেশমি লুঙ্গি যা কাশিমবাজার এলাকায় উতপাদিত হত, রেশমি রুমাল বা গলবন্ধ আর এটলাস যা হুগলীতে বোনা হত। রেশমি রুমাল ঢাকাতেও তৈরি হত।
সপ্তদশ শতাব্দের শেষের দিকে বাংলা থেকে যত কাপড় ইওরোপিয় কোম্পানি রপ্তানি করত, সেই তালিকায় একমাত্র তাফেতাই রপ্তানির খাতায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেলেও পরবর্তী শতাব্দের প্রথম দুদশকে সে তার সেই গুরুত্ব হারিয়ে ফেলতে থাকে। আমরা যে সময় নিয়ে আলোচনা করছি, মনে হয় সেই সময়জুড়ে সুতি রেশমের মেলানো মেশানো কাপড় আর সুতির কাপড় সব থেকে বেশি রপ্তানি হত। মেলানোমেশানো কাপড়গুলোর মধ্যে ছিল, আলাবানি, টুকরোনি, কারিদারি বা ছোরাদারি, চাকলেস, চেরকোনা, কাস্টি, ডুরিয়া, এলাচি, গিঙ্ঘ্যাম, জামদানি, নেহালিওয়ার, নীলা, পেনিয়াসকোস, সুসি, শীরসাকার আর ম্যান্ডিলা (বিভিন্ন ধরণের টুকরো কাপড়ের বিশদ বর্ণনার জন্যে দেখুন জোড়াপাতা সি, বাঙলার কোন অঞ্চল থেকে কোন পণ্য যেত তার বর্ণনা আর তালিকার জন্যে দেখুন জোড়াপাতা ডি)। গিঙ্ঘ্যাম আর নীলা হুগলী আর বালেশ্বরে বোনা হত এবং এটি কোম্পানির রপ্তানি তালিকার শীর্ষে ছিল স্পতদশ শতের শেষ সময়ে এবং হুগলী আর মালদাতে বোনা ডুরিয়া অন্যান্য মেলানো মেশানো বস্ত্রর পরিমানকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল অষ্টাদশ শতকের প্রথম দুই দশকে। (চলবে)