ট্রেড এন্ড কমার্সিয়াল অর্গানিজেশন ইন বেঙ্গল ১৬৫০-১৭২০, উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু দ্য ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
ষষ্ঠ অধ্যায়
চিনি, সুতো এবং অন্যান্য রপ্তানি পণ্য
এই তালিকা থেকে পরিষ্কার, কোরা রেশমের রপ্তানির সর্বোচ্চ পরিমানের সময়টা ছিল, ১৬৮১/৮২ থেকে ১৬৮৫/৮৬ অবদি। এই সময়ের পঞ্চবার্ষিক রপ্তানির পরিমান এবং গড় রপ্তানির পরিমাণ অন্য কোনও পঞ্চবার্ষিকী রপ্তানির সময় ছুঁতে পারে নি। ১৬৯৮/৯৯-এ দ্বিতীয়বারের জন্যে বিপুল কোরা রেশম কেনার সময় আসে এবং ১৭০০/০১ সালের সর্বোচ্চ রপ্তানির পরিমান ছিল ২,০৬,২৫৬ পাউন্ড। তার পরের সময়ে গড় বছরে রেশম কেনার পরিমান পড়তে থাকে ১৭১০/১১ থেকে ১৭১৪/১৫ সময়ের মধ্যে এবং এই সময়ে সর্বোচ্চ যে অঙ্কের রেশম ইওরোপে বাংলা থেকে রপ্তানি হয় তার পরিমান হল, ৬২,৭০১ পাউন্ড ১৭১২/১৩-তে। কিন্তু আমাদের আলোচ্য সময়ের শেষ পঞ্চবার্ষিকী সময়ে গড় বাৎসরিক রপ্তানির পরিমান আবার বিপুলভাবে বাড়ে এবং ১৭১৭/১৮তে ১,৮১,৯৪৯ পাউন্ড পরিমান পৌঁছয় যা আগের শতকের আশির দশকের গড় বাৎসরিক রপ্তানির পরিমানকে ছাড়িয়ে যায় (বাংলার বাতসরিক রেশম রপ্তানির জন্যে দেখুন জোড়াপাতা বি তালিকা (৪)।
ব্রিটিশদের তুলনায় হল্যান্ডে পাঠানো ডাচ কোম্পানির রপ্তানি অনেক বেশি পরিমান ছিল (বাংলার রেশমের বাৎসরিক ডাচ রপ্তানির জন্যে দেখুন এই অধ্যায়ে কে এর খণ্ড বলা হয়েছে তার ৬১ পাতা)। ১৭০১/০২, ১৭০২/০৩ এবং ১৭০৪/০৫ ডাচেরা মোট ৬,৩৪,৮১৪ ডাচ পাউন্ড পরিমান রপ্তানি করে, বাৎসরিক গড় ২,১১,৬০৫ ডাচ পাউণ্ড। অষ্টাদশ শতকের প্রথম দুই শতাব্দীতে ডাচ কোম্পানির বাংলা রেশমের রপ্তানির পরিমান দেখানো হয়েছে কোরা রেশমের ডাচ পঞ্চবার্ষিকী রপ্তানি পরিমান —
বছর মোট পরিমান/ডাচপাউণ্ড গড়/ডাচপাউণ্ড
১৭০৫/০৬-১৭১০/১১ ৬,০৭,৬১০ ১,২১,৫২২
(১৭০৯/১০ বাদ দিয়ে)
১৭১১/১২-১৭১৫/১৬ ৮,২৭,৮৭১ ১,৬৫,৪৭৪
১৭১৬/১৭ এবং ১৭১৯/১৯ এই দুই বছরে ডাচেরা ৩,৫৭,৬৫০ ডাচ পাউন্ড, গড়ে ১,৭৮,৮২৫ পাউণ্ড প্রতিবছর বাংলার কোরা রেশম হল্যান্ডে রপ্তানি করে। এটাও মনে রাখা দরকার ডাচেরা বিপুল পরিমান বাংলা রেশম জাপানে রপ্তানি করত। ফলে আমরা এই অঙ্ক অনুসরণ করে ধারণা করতে পারি, অন্তত বাংলার কোরা রেশমের ক্ষেত্রে ডাচেরা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ব্রিটিশদের তুলনায় অনেক বেশি কোরা রেশম রপ্তানি করত।
একই সঙ্গে এটাও দেখা গুরুত্বপূর্ণ যে মোট রপ্তানির তুলনায় কোম্পানি বাংলা থেকে কত রেশম রপ্তানি করত (জোড়াপাতা বিএর ৩ তালিকা)। ১৬৬৩/৬৪তে কোম্পানি তার মোট রপ্তানির তুলনায় রেশম রপ্তানি করত ৪ শতাংশ। শতাব্দের সাতের দশকে শেষের দিকে এই পরিমানটা ৭ থেকে ১৩ শতাংশ অবদি ঘোরাফেরা করত। ১৬৭৮/৭৯তে আস্তে আস্তে রপ্তানির পরিমান বাড়তে থাকে। ৩৪ শতাংশ থেকে শুরু করে ১৬৮২.৮৩তে ৪৫ শতাংশে পৌঁছয়। এর পরে প্রচুর ওঠানামা করতে থাকলেও আশির দশকে যে উচ্চতায় পৌঁছেছিল সেটা আর ধরা যায় নি। ১৭০৪/০৫ সালে মোট রপ্তানির তুলনায় রেশমের অংশিদারি ছিল ৩১ শতাংশ, সেই দশকের প্রথম দুদশকের সব থেকে বেশি শতাংশ আর ১৬৯৭/৯৮তে এই অংশিদারি ছিল মোট রপ্তানির মাত্র ২ শতাংশ (প্রাগুক্ত)।
বস্ত্র
কোম্পানির রপ্তানির তালিকায় থাকা অন্য দ্রব্যের প্রতি যদি নজর ঘোরাই তাহলে আমরা দেখতে পাব, বাংলা থেকে রপ্তানিযোগ্য বস্তুর মূল্যমান এবং পরিমানে ছিল সবার থেকে বেশি। এটা আমরা সক্কলে জানি যে কোম্পানি সপ্তদশ শতকের প্রথমপাদে ভারতীয় হাতে বোনা কাপড়ের দিকে নজর ঘোরানোর একটাই গ্রহণযোগ্য কারণ ছিল, তারা ইন্দোনেশিয় দ্বীপপুঞ্জে মশলার রাণী গোলমরিচের সঙ্গে অন্যান্য মশলার যে ব্যবসাটা করতে চাইছিল, সেটা করতে হত ভারতীয় সুতি বস্ত্র হাত বদল করেই। তারপরেই ইওরোপিয় কোম্পানিগুলোর কাছে ভারতের সঙ্গে ইওরোপের, ভারতীয় বিভিন্ন অঞ্চলে উতপাদিত বস্ত্রের ব্যবসার নতুন দিগন্ত খুলে গেল। মনে রাখতে হবে ভবিষ্যতে যেটা ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির প্রধানতম লাভের ব্যবসা হয়ে উঠবে, প্রাথমিকভাবে সেটা ছিল ইন্দোনেশিয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে ইওরোপিয়দের মশলা ব্যবসার উপজাত ব্যবসা মাত্র। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার বস্ত্র ব্যবসার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল, ১৬৮০-র দশকের পর থেকে ইওরোপে ক্যালিকোর চাহিদা বিপুল বাড়তে শুরু করায় এবং বাংলার ইওরোপিয়-মুঘল যুদ্ধের সময়টুকু বাদ দিলে, পরবর্তী দশকগুলিতে ঐ চাহিদার ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকে। (চলবে)