ট্রেড এন্ড কমার্সিয়াল অর্গানিজেশন ইন বেঙ্গল ১৬৫০-১৭২০, উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু দ্য ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
ষষ্ঠ অধ্যায়
চিনি, সুতো এবং অন্যান্য রপ্তানি পণ্য
চিনি
১৬৫০-এর পর থেকে ব্রিটিশ ইট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার চিনি খুব কম পরিমানে ইংলন্ডে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রিটিশ বাজারে যেহেতু ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ব্রাজিলিয় চিনির দখল ছিল তাই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার চিনি খুব বেশি লন্ডনে রপ্তানি করে নি। কিন্তু কোম্পানির আন্তঃএশিয় বাণিজ্যে বেশ কয়েক বছর বাংলার চিনি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ছিল, বিশেষ করে সুরাট এবং পারস্যের বাজারে। কিন্তু এখানেও সপ্তদশ শতকে খুব তাড়াতাড়ি ব্রিটিশ, ডাচ কোম্পানির রপ্তানি করা জাভা চিনির আধিপত্য বাজার থেকে বার করে দেয় (কে গ্লানম্যান, ডাচ এশিয়াটিক ট্রেড, ১৫২)। যদিও চিনি ছিল পরম্পরার জাহাজের খোল ভরার পণ্য — ব্লাস্ট, কিন্তু ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলা বাণিজ্যের কুঠিয়ালেরা তাদের রপ্তানি বাণিজ্যে চিনির বদলে সোরাকে সেই কাজে ব্যবহার করেছে।
বাংলার চিনির প্রতি কোম্পানির আগ্রহ তৈরি হয়, কোম্পানির কর্তাদের বাংলায় আসার পর থেকেই। ১৬৩৪ সালে ব্রিটিশ কুঠিয়ালেরা লন্ডনের কর্তাদের জানিয়েছিল, বাংলার চিনির দাম ব্রিটিশ পাউণ্ডের আড়াই পেন্স (ওসি, ৫ অক্টোবর, ১৬৩৪, ১৫৩৬, ১৫ খণ্ড)। ১৬৪৯ ব্রিটিশ কুঠিয়াল সোয়ালি মেরিন বলেন প্রয়োজন হলে প্রচুর পরিমানে চিনি তারা আগরা বা তার আশেপাশে থেকেই কিনতে পারেন, শুধু চিনি কেনার জন্যে সুদূর বাংলায় যাবার দরকার নেই, কিন্তু কোম্পানির বাংলা কর্তারা মনে করে দিচ্ছিলেন বাংলার চিনির গুণমান দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনও জায়গার চিনির থেকে অনেক ভাল এবং শস্তাও (ওসি, ৩১ জানু, ১৬৪৯, ২১১৩, ২১ খণ্ড; ইএফআই, ১৬৪৬-৫, ২৫৫)। একই বছরে এই কুঠিয়াল সোয়ালি মেরিনই লন্ডনের কর্তাদের জানাল বাংলার চিনি শস্তা এবং ভাল, তাই (অন্য) কোনও চিনি কেনা হয় নি (ওসি, ৫ এপ্রিল, ১৬৪৯, ২১২১, ২১ খণ্ড; ইএফআই, ১৬৪৬-৫৪, ২৫৮)। ১৬৫০-এর ডিসেম্বরে কোম্পানিতে জেমস ব্রিজম্যান চিঠি লিখে জানান যে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে বাংলায় বিপুল পরিমানে চিনি পাওয়া যায়, যার প্রতি বেল সাড়ে সাত থেকে আট টাকা এবং জাহাজ ছাড়ার সময় দাম ৫০% বেড়ে দাঁড়ায় ১১-১২টাকায় (ওসি, ১৬ ডিসে, ১৬৫০, ২১৮৮, ২২ খণ্ড; ইএফআই, ১৬৫১-৫৪, ৩৩৭-৩৮)। ১৬৫১তে বে অঞ্চলের কুঠিয়ালেরা বাংলাকে জানায় তারা যেন মোট বিনিয়োগের একের আট শতাংশ চিনি ব্যবসায় বিনিয়োগ করে (ওসি, ১৯ ফেবরুয়ারি ১৬৫১, ২২০৮, ২২ খণ্ড; ইএফআই, ১৬৫১-৫৪, ৪৫)। কিন্তু তথ্যের অভাবে আমরা আজ আর বলতে পারি না পঞ্চাশের দশক থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত কোম্পানি চিনি ব্যবসায় কত পরিমান ইওরোপে রপ্তানি করেছিল।
১৬৫৭তে ৩০০ টন বাংলার চিনি সংগ্রহ করেছিল ব্রিটিশেরা (ডিবি, ৩১ ডিসে, ১৬৫৭, ৮৪ খণ্ড, ৩৮৮)। পরের বছর বাংলা চিনির চাহিদা অল্প বাড়ে। ১৬৫৯ সালে লন্ডনের কর্তারা ৭০০ টন সাদাতম শুকনোতম চিনির বরাত দেন (ডিবি, ২৮ জানুয়ারি, ১৬৫৯, ৮৪ খণ্ড, ৪১২)। কিন্তু বাংলা চিনির ব্রিটিশ চাহিদা খুবই কম সময়ের জন্যে টিকল। ১৬৬০-এর ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনের কর্তারা চাহিদা ৪০০-৫০০ টনে নামিয়ে আনে এবং এর দাম বলা হল ১০-১২ পাউণ্ড প্রতি টন। এই দামে যদি পাওয়া যায় তবেই কোম্পানি এটা কিনবে। চাহিদা কমিয়ে দেওয়ার কারণ স্পষ্ট। ইংলন্ডে চিনির সরবরাহ বিপুল, বিভিন্ন দেশের বাগিচা থেকে যত শস্তার চিনি আসছে সেগুলি দেশের বাজার ছেয়ে ফেলছে। ফলে তাদের পক্ষে বাংলার দামি চিনি তাদের দেশে বিক্রি করা খুব কঠিন কাজ হয়ে উঠছিল (ডিবি, ২২ ফেব, ১৬৬০, ৮৫ খণ্ড, ২৮৪)। ১৬৬০-এর সেপ্টেম্বরে কর্তাদের থেকে এরকম হতাশাব্যাঞ্জক আদেশ আসছে বাংলায়। কুঠিয়ালদের ইংলন্ড বা পারস্যের বাজারে বিক্রির জন্যে বাংলার চিনিতে বিনিয়োগ করতে বারণ করে কারণ বাজারে চিনির দাম এতই কমে গিয়েছে যে সেই বিনিয়োগ থেকে লাভ তোলা খুব কঠিন (ডিবি, ১৪ সেপ্ট, ১৬৬০, ৮৫ খণ্ড, ৩৩৫; ৮ জানু, ১৬৬১, ৮৫ খণ্ড, ৩৬৭)। আমাদের মনে হয় এর পর থেকে ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলার চিনিতে আর বিনিয়োগ করে নি। শুধু ১৬৫৮/৫৯ সালে উল্লেখ পাচ্ছি বালেশ্বর থেকে ইওরোপের দিকে ছেড়ে যাওয়া লাভ আর ব্ল্যাকমোর নামক দুই জাহাজে ৩৫৯৩ পরিমান অর্থাৎ ৭৬৩২.৫ মণ বা ৫,৭২,৪৪০ পাউণ্ড চিনি রপ্তানি হিওয় আর মূল্য ছিল ৩৩,১৬৩ টাকা বা ৪১৪৫ পাউণ্ড (রাওল, সি-৩৯৫, ১৭, ২৫এ)। (চলবে)