সোমবার | ১৪ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:২৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ : তপন মল্লিক চৌধুরী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (পঞ্চম পর্ব) : জমিল সৈয়দ যশোধরা — এক উপেক্ষিতা নারীর বিবর্তন আখ্যান : সসীমকুমার বাড়ৈ কলকাতার কাঁচাভেড়া-খেকো ফকির ও গড়ের মাঠ : অসিত দাস ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ রামনবমী পালন এবং হুগলী চুঁচুড়ার শ্রীরামমন্দির : রিঙ্কি সামন্ত ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (তৃতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ মিয়ানমারে ভূমিকম্প — প্রতিবেশী দেশের জনগণের পাশে বাংলাদেশ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (দ্বিতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ হুমায়ুন-এক স্মৃতি-এক আলাপ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সনজীদা যার সন্তান : শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ অবসর ঠেকাতেই মোদী হেডগেওয়ার ভবনে নতজানু : তপন মল্লিক চৌধুরী লিটল ম্যাগাজিনের আসরে শশাঙ্কশেখর অধিকারী : দিলীপ মজুমদার রাঁধুনীর বিস্ময় উন্মোচন — উপকারীতার জগৎ-সহ বাঙালির সম্পূর্ণ মশলা : রিঙ্কি সামন্ত রামনবমীর দোল : অসিত দাস মহারাষ্ট্রে নববর্ষের সূচনা ‘গুড়ি পড়বা’ : রিঙ্কি সামন্ত আরামবাগে ঘরের মেয়ে দুর্গাকে আরাধনার মধ্য দিয়ে দিঘীর মেলায় সম্প্রীতির মেলবন্ধন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’ পত্রিকার ২২তম বর্ষ উদযাপন : ড. দীপাঞ্জন দে হিন্দিতে টালা মানে ‘অর্ধেক’, কলকাতার টালা ছিল আধাশহর : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অন্নপূর্ণা পূজা ও বাসন্তী পূজার আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ : তপন মল্লিক চৌধুরী

তপন মল্লিক চৌধুরী / ১২১ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫

এদেশে হিন্দু সমাজে যা ‘দেবোত্তর সম্পত্তি’ বলে গণ্য, মুসলিম সমাজে প্রায় তারই অবিকল সংস্করণ হল ওয়াকফ। পার্লামেন্টে কয়কদিন আগেই প্রবল আকচাআকচির পর সেই মুসলিম ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি পাশ হয়েছে। বিরোধী দলগুলি একজোট হয়েও বিল পাস হওয়া ঠেকাতে পারেনি, রাজ্যসভাতেও তা অনায়াসে উতরে গিয়েছে আর তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সেই বিলটিতে সিলমোহর বসিয়ে দেওয়ায় এখন সেই বিল দেশে একটি আইনে পরিণত হয়েছে। ফলে এদেশ জুড়ে থাকা কোটি কোটি মূল্যের যাবতীয় ওয়াকফ সম্পত্তি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হবে, তার পুরো পদ্ধতিটাই গিয়েছে বদলে। যদিও বিলটিকে চ্যালেঞ্জ করে অন্তত চারটি পিটিশন সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটিতেই দাবি করা হয়েছে যে, এই বিলটি চূড়ান্ত অসাংবিধানিক এবং দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। এখন সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে কী অবস্থান নেয় এবং মামলাগুলি শুনানির জন্য গ্রহণ করে কি না, সেটাই দেখার। উল্লেখ্য, ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড’-সহ ভারতের মুসলিম সমাজের একাধিক সংগঠন একই যুক্তিতে বিলটির তীব্র বিরোধিতা করছে। সরকারের যুক্তি, দেশে মুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তির পরিচালনা পদ্ধতিকে স্বচ্ছ্ব ও দুর্নীতিমুক্ত করে তুলতেই এই আইনটি প্রণয়ন করা দরকার ছিল।

ভারতে ওয়াক্‌ফ বোর্ডে দুর্নীতি যে রয়েছে সেকথা মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিরাও স্বীকার করেন। উল্লেখ্য, বিচারপতি রাজেন্দ্র সাচার কমিটি (২০০৬)-এর বক্তব্য, বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও ওয়াক্‌ফ বোর্ডের রাজস্ব ছিল খুবই কম। কমিটি জানায়, যদি জমিগুলি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার কোটি রুপি আয় করা সম্ভব। অথচ বর্তমানে বার্ষিক আয় মাত্র ২০০ কোটির মতো। কমিটি এও জানায়, ওয়াক্‌ফ-এর রক্ষণাবেক্ষণ করে রাষ্ট্র যে নিজেই বহু জমি দখল করে রেখেছে। কেবল তাই নয়, কমিটি যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে জমি-বাড়ি-সম্পত্তি দখলে রেখেছে তাদের একটি তালিকাও দিয়েছিল। সরকারের যুক্তি, সংশোধীত ওয়াক্‌ফ নাকি এইসব সমস্যার সমাধান করবে এবং সাচার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। কিন্তু তাতেও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে তার একটি কারণ, মালিকানাসংক্রান্ত নীতি পরিবর্তনের ফলে ঐতিহাসিক মসজিদ, দরগা ও কবরস্থানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এগুলির একটা বড় অংশ বহু প্রজন্ম ধরে ব্যবহৃত হলেও বেশির ভাগেরই কোনো লিখিত দলিল নেই। অনেক ক্ষেত্রে অন্তত একশো বছর আগে মৌখিকভাবে কিংবা প্রমাণ ছাড়া দান করা হয়েছে। যদিও ১৯৫৪ সালের ওয়াক্‌ফ আইনে এই সম্পত্তিগুলিকে ‘ব্যবহারভিত্তিক ওয়াক্‌ফ’ বা দখলিস্বত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল কিন্তু সংশোধিত নতুন আইনে এই ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে একটা বিরাট সংখ্যক ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় সম্পত্তির আইনি স্বীকৃতি প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য। আরেকটি উদ্বেগজনক বিষয় হল, সংশোধিত আইনে ওয়াক্‌ফ বোর্ডে এখন থেকে অমুসলিম সদস্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে সব ধর্মের মানুষ রাখা বাধ্যতামূলক করার আইন গ্রহণযোগ্য হতেই পারে যদি তার প্রক্রিয়াকে ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলা যায়। কিন্তু ওয়াকফের ক্ষেত্রে যেভাবে সেটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা হচ্ছে, তাতো সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনৈতিক সুবিধার সবার্থে। কারণ, শুধু তো রাষ্ট্রের মাধ্যমে মুসলমানদের সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং হিন্দু সমাজের মাধ্যমে মুসলিম সমাজ জীবনের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। প্রশ্ন, এদেশে হিন্দু মন্দির পরিচালনা কমিটিতে কি অন্য ধর্মাবলম্বীরা স্থান পান? তাহলে ওয়াক্‌ফ বোর্ডে অমুসলিমদের রাখা হবে কেন? স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে যে ওয়াক্‌ফ সংশোধোনী আইন আসলে এদেশে মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের বৈষম্য ও নিপীড়নের আরেকটি পদক্ষেপ।

প্রসঙ্গত, আগস্ট মাসে বিজেপি জোট সরকার যখন ওয়াকফ আইন সংশোধন করার জন্য আনা বিলে জানিয়েছিল, ওয়াক্‌ফ প্রশাসন আধুনিক এবং আইনের ফাঁকফোকরগুলি বন্ধ করতেই এই বিলটির প্রস্তাবনা। কিন্তু তখন থেকেই কেবল দেশের মুসলিম নেতারাই নয়, বিরোধী দলগুলিও বলেছিল, বিজেপি সরকার মুসলিমদের সম্পত্তির উপর আরও বেশি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সংশোধনী আনতে চাইছে। ওয়াক্‌ফ আইনের নতুন সংশোধনীতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হল কোনটিকে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বলে চিহ্নিত করা হবে, সেই সংজ্ঞাটাই পাল্টে দেওয়া! ঐতিহাসিকভাবে দেশের বহু বাড়ি থেকে জমি এতকাল আইনগতভাবে বৈধ ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বলে স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে কেবল মুখের কথায় বা ওরাল ডিক্লারেশনে। এখন নতুন আইনে কোনো সম্পত্তিকে ওয়াক্‌ফ বলে দাবি করতে হলে ওয়াক্‌ফ বোর্ডকে তার স্বপক্ষে বৈধ নথিপত্র জমা দিতে হবে। আবার সেই জমি যদি সরকারি মালিকানাধীন বা খাস জমি হয় তাহলে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের। নতুন আইনে অমুসলিম ব্যক্তিরাও ওয়াক্‌ফ বোর্ড ও ট্রাইব্যুনালের সদস্য নিযুক্ত হতে পারবেন। এতদিন ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি নিয়ে কোনো বিতর্কের ক্ষেত্রে ওয়াক্‌ফ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। কিন্তু নতুন আইনে বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপেরও সুযোগ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, কোনো পক্ষ চাইলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন। এছাড়া নতুন আইনে দেশের সব ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির জন্য একটি ‘সেন্ট্রালাইজড রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম’ গঠনেরও প্রস্তাব রয়েছে। তার মানে এখন সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তিকে ওই রেজিস্টারে নথিভুক্ত করাতে হবে।

শুধু তাই নয়, নতুন কোনো সম্পত্তি যদি ওয়াক্‌ফ হিসেবে নথিভুক্ত করাতে হয়, সেক্ষেত্রেও এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সংশ্লিষ্ট ওয়াক্‌ফ বোর্ডের কাছে আবেদন পেশ করতে হবে। একটা ব্যাপার স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে সরকারের ভূমিকা এখন থেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি থাকবে, বস্তুতপক্ষে সরকারই ওয়াক্‌ফ বোর্ডের চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী হবে। অর্থাৎ এদেশের জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ বা প্রায় ২০ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় ঐতিহ্য, অধিকার, সংস্কৃতির উপর বিজেপি সরকারের আইনকে অপব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, যা ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটাবে। এদেশে সামরিক বাহিনী ও রেলওয়ের পর ওয়াকফ মালিকানাধীন জমির পরিমাণই সবথেকে বেশি। নতুন ওয়াকফ আইন কাজে লাগিয়ে বিজেপি সরকার যে ওয়াকফ সম্পত্তি যে অবাধে নিয়ন্ত্রণ করবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, আর সেটাই হবে মুসলিমদের উপর চরম আঘাত। সব মিলিয়ে ওয়াকফ সংশোধনী আইন ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন